Golperjogot

Golperjogot

Love Never Ended Part 12 | Come Back Sad Love Story

Love Never Ended

ইলোরা জাহান ঊর্মি

রাইফ দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে আভার হাতের দিকে তাকাতেই ওর পুরো পৃথিবী যেন থেমে গেল। আভার শরীর অবশ হয়ে ঢলে পড়তে গেলে রাইফ খপ করে ওকে ধরে ফেলল। এক মুহূর্তের জন্য রাইফ আভার ওপর ওর যতো রাগ অভিমান সব ভুলে গেল। দুহাতে আভাকে জাপটে ধরে বিচলিত কন্ঠে বলল,

রাইফ: আভা। আভা এসব কী করে হলো? কে গুলি করলো তোমাকে?

আভার হাত দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। প্রচন্ড যন্ত্রণা করছে। মাথাটা ভার হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি হয়তো জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে। রাইফের বিচলিত মুখটা দেখে আভা অতিকষ্টে মুখ খুললো।

আভা: রাইফ,ঐ গাছের আড়ালে কেউ একজন ছিল যে গাড়ির টায়ারে গুলি করেছে। ঐ লোকটা তোমার দিকে গান তাক করেছিল। তখন আমি তোমাকে তাড়াতাড়ি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছি। নাহলে গুলিটা তোমার গায়ে লেগে যেতো।(মিনমিনে গলায় থেমে থেমে কথাগুলো বলল আভা)

{ Love Never Ended Heart Touching Love Story Bangla }

রাইফ: তুমি কেন সামনে চলে এলে? দেখো,তোমার হাত দিয়ে প্রচুর রক্ত পড়ছে। কেন এমন করলে আভা?(ছলছল চোখে তাকিয়ে কিছুটা রাগান্বিত কন্ঠে বলল রাইফ)

আভা যন্ত্রণায় কুঁকিয়ে উঠলো। তার নিঃশ্বাস দ্রুতগতিতে বইছে। সহ্য করতে না পেরে আভা রাইফের কোর্টের কলার খাঁমচে ধরলো। জোরে জোরে নিঃশ্বাস ছেড়ে হাঁপাতে হাঁপাতে অস্পষ্ট কন্ঠে বলল,

আভা: রাইফ,রাইফ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। রাইফ কিছু একটা করো প্লিজ। সহ্য করতে পারছি না আমি।

রাইফ: একটা গাড়িও চোখে পড়ছে না। ওয়েট ওয়েট,আমি এক্ষুনি আসিফকে ফোন করে গাড়ি নিয়ে আসতে বলছি। তুমি একটু কষ্ট করে গাড়ির মধ্যে বসো।

রাইফ আভাকে ধরে ধরে গাড়ির কাছে নিয়ে খুব সাবধানে ওকে পেছনের সিটে শুইয়ে দিলো। তারপর আভার ওড়নার একপাশ কিছুটা ছিঁড়ে নিয়ে ওর হাত বেঁধে দিলো। গাড়ি থেকে বেরিয়ে রাইফ তাড়াতাড়ি আসিফকে ফোন করলো। কয়েকবার রিং হওয়ার পরেই আসিফ ফোন রিসিভ করলো। রাইফ আসিফকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বিচলিত কন্ঠে বলল,

{ Emotional Heart Touching Love Story }

রাইফ: হ্যালো আসিফ। আসিফ শোন,কেউ গুলি করে আমার গাড়ির টায়ার পাংচার করে দিয়েছে। আমাকেও গুলি করেছিল কিন্তু আমাকে সরিয়ে আভা সামনে চলে আসে আর ওর গায়ে গুলিটা লেগেছে। ওর অবস্থা অনেক খারাপ। প্রচুর ব্লেডিং হচ্ছে। ইমিডিয়েটলি একটা গাড়ি নিয়ে চলে আয়।

আসিফ: হোয়াট! গুলি কে করলো?(অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো আসিফ)

রাইফ: এসব নিয়ে পরে ভাবা যাবে। প্লিজ তুই তাড়াতাড়ি আয়।

আসিফ: আচ্ছা তোরা এখন কোথায় আছিস সেটা বল।

রাইফ: আমি তোকে লোকেশন সেন্ড করছি। তুই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পর।

আসিফ: ওকে ওকে। তুই লোকেশন সেন্ড কর আমি এক্ষুনি আসছি।

রাইফ ফোন কেটে দিয়ে আসিফকে জায়গার লোকেশন সেন্ড করে দিলো। তারপর দৌড়ে গাড়িতে উঠে দেখলো আভা ব্যথায় গোঙাচ্ছে। রাইফ আভার মাথার কাছে বসে আলতো করে আভার মাথাটা নিজের পায়ের উপর রাখলো। আভার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। সে নিভু নিভু চোখে রাইফের দিকে তাকালো। রাইফ আভার গালে হাত রেখে ধরা গলায় বলল,

রাইফ: আভা একটু সহ্য করো প্লিজ। আসিফ এক্ষুনি গাড়ি নিয়ে চলে আসবে। তুমি কেন করলে এরকম?

আভা কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে মৃদু কন্ঠে বলল,

………………

আভা: আমি এটা না করলে তোমার গায়ে গুলি লেগে যেতো।

রাইফ কিছুটা জোরে বলে উঠলো,

রাইফ: লাগলে লাগতো। জীবনের প্রতি আমার কোনো মায়া নেই। মৃতের মতো বেঁচে থাকার চেয়ে একেবারে মরে যাওয়া অনেক ভালো। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না আভা।(বলতে বলতে রাইফের দু’চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো)

আভা রাইফের কান্না দেখে আর ওর কথা শুনে থমকে গেল। রাইফের কথার কোনো মানে বুঝতে পারলো না সে। এতো যন্ত্রণার মাঝেও আভা ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসির রেখা টেনে আহত চোখে তাকিয়ে বলল,

আভা: দশ বছর ধরে যাকে এতো ভালোবাসি তাকে কী করে নিজের চোখের সামনে গুলিবিদ্ধ হতে দেখতাম বলো? 

Also, Read Those Heart- Touching Come Back Sad Love Story

  1.  Love Never Ended Part – 1

  2.   Love Never Ended  Part – 2

  3.   Love Never Ended  Koster Golpo Bangla P – 7

  4.   Love Never Ended  Part – 8

  5.   Love Never Ended  Part – 9

  6.  Love Never Ended  Part  – 10

  7. Love Never Ended Part 11

আভার কথা শুনে রাইফ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। এসব কী বলছে আভা? ওর তো বিয়ে হয়ে গেছে। তাহলে দশ বছর ধরে তাকে ভালোবাসে এর মানে কী? হাসবেন্ড থাকা সত্ত্বেও ও তাকে কীভাবে ভালোবাসে?

 রাইফ কিছু‌ জিজ্ঞেস করার আগেই আভা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করলো। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে তার। আভা ওর গালে রাখা রাইফের হাতটা মুঠোয় চেপে ধরে অতিকষ্টে বলল,

আভা: রাইফ,রাইফ আই রিয়েলি লাভ ইউ। আই অলওয়েজ লাভ ইউ।

কথাগুলো বলতে বলতে আভা জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। রাইফ আভার গালে হাত রেখে মৃদু ঝাঁকুনি দিয়ে আভাকে কয়েকবার ডাকলো। আভার বলা শেষ কথাগুলোই যেন রাইফের কানের কাছে বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। রাইফের চোখ দিয়ে অনবরত পানি গড়িয়ে আভার গালের উপর পড়ছে। রাইফ এবার আভার মাথাটা বুকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে উঠলো। 

আভা এখন অন্যের বিয়ে করা বউ বা ওকে ছোঁয়ার অধিকার যে রাইফের নেই এই কথাগুলো রাইফের মাথা থেকে সম্পূর্ণ বেরিয়ে গেছে। চোখের সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষটার এমন অবস্থা দেখে কী করে এসব ভেবে সরে থাকবে রাইফ?

কিছুক্ষণের মধ্যেই আসিফ গাড়ি নিয়ে সেখানে পৌঁছে গেল। আসিফ রাইফের গাড়ি দেখে তাড়াতাড়ি ছুটে এসে গাড়ির খোলা জানালা দিয়ে ভেতরে তাকাতেই দেখলো রাইফ আভাকে বুকে জড়িয়ে অশ্রু বিসর্জন করছে। আসিফ রাইফের নাম ধরে ডাকতেই রাইফের হুঁশ ফিরলো। 

আসিফের সাহায্যে রাইফ আভাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। তারপর আভাকে পাঁজা কোলে করে নিয়ে আসিফের গাড়িতে উঠলো। আসিফের সাথে ড্রাইভারও এসেছে। আসিফ ড্রাইভারকে বলল আশেপাশের কোনো গ্যারেজের লোক এনে রাইফের গাড়ি ঠিক করে অফিসে নিয়ে যেতে। রাইফ আভাকে নিয়ে পেছনের সিটে বসলো আর আসিফ ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। 

Also, Visit Those  Romantic Love Story Article

দ্রুত ড্রাইভিং করার কারণে খুব তাড়াতাড়িই তারা হাসপাতালে পৌঁছে গেল। আভাকে নিয়ে হাসপাতালের ভেতরে ঢুকতেই কয়েকজন ওয়ার্ডবয় এসে ট্রলিতে করে আভাকে ওটিতে নিয়ে গেল। রাইফ ধপ করে পাশের চেয়ারটাতে বসে পড়লো। গায়ের কোর্টটা খুলে পাশে রেখে দুহাতে মুখ ঢেকে নীরবে কাঁদতে শুরু করলো। 

আসিফ রাইফের পাশে এসে ওকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করলো। আসিফ জানে ওর সান্ত্বনায় রাইফ কিছুতেই থামবে না। তাই রাইফ একটু দূরে গিয়ে রুহিকে ফোন করলো। আসিফের মুখে সব কথা শুনে রুহি স্তব্ধ হয়ে গেল। তৎক্ষণাৎ সে ইয়ানাকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

রুহি হাসপাতালে পৌঁছে দেখলো রাইফ একটা চেয়ারে স্তব্ধ হয়ে বসে নীরবে চোখের পানি ফেলছে। ওটির ভেতরে আভার অপারেশন চলছে। ডাক্তার বলেছে গুলিটা খুব গভীরভাবে ক্ষত সৃষ্টি করেছে। অপারেশন করে গুলি বের করতে হবে। 

ইয়ানাকে আসিফের কোলে দিয়ে রুহি রাইফের কাছে গিয়ে ওর মাথায় হাত রেখে ডাকলো। রুহির ডাক শুনে রাইফ একপলক ওর দিকে তাকিয়ে হুট করে রুহিকে জড়িয়ে ধরে সশব্দে কেঁদে উঠলো। রুহি যেন সান্ত্বনা দেয়ার মতো কোনো কথাই খুঁজে পাচ্ছে না। তার গলাটা আটকে আসছে। 

ভাইয়ের কান্না দেখে রুহির চোখ দিয়েও দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। রুহি রাইফের পিঠে হাত বুলিয়ে দিলো। আসিফকে ডেকে রুহি জিজ্ঞেস করলো,

রুহি: আভার বাড়ির কাউকে খবর দিয়েছো?

আসিফ: না আপু। এমন পরিস্থিতিতে মাথা থেকেই বেরিয়ে গিয়েছিল।

রুহি: ওর হাসবেন্ডকে খবর দাও।

{ Bangla love story , Bangla Valobashar Golpo }

আসিফ মাথা নাড়িয়ে অন্যদিকে চলে গেল। সামিদের ফোন নাম্বার না থাকায় আসিফ অফিসের ল্যান্ড লাইনে ফোন করলো। ফোন ধরলো অফিসের ম্যানেজার। আসিফ ম্যানেজারকে বলল সামিদকে ডেকে দিতে। এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ফোন করে তাকে চাইছে শুনে  সামিদ কিছুটা অবাক হলো। 

তাড়াতাড়ি হাতের কাজ রেখে গিয়ে সে ফোন ধরলো। ফোন ধরে আসিফের মুখে আভার গুলিবিদ্ধ হওয়ার কথা শুনে সে থমকে গেল। মুহূর্তে তার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল। ওপাশ থেকে আসিফ ফোন কেটে দিতেই সামিদ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ছুটলো। সামিদ রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা ট্যাক্সি ডেকে ড্রাইভারকে বলে হাসপাতাল রওনা দিলো। 

কিছুদূর যেতেই পুনরায় তার ফোন বেজে উঠলো। ফোন রিসিভ করে তার মুখটা আবার ফ্যাকাশে হয়ে গেল। মুহূর্তে তার পুরো পৃথিবী যেন থেমে গেল। তার গলা দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। বিপদ যখন আসে আঁটঘাট বেঁধেই আসে। সামিদেরও এখন সেই দশা। কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থেকে সে শান্ত স্বরে ড্রাইভারকে গাড়ি ঘুরাতে বলল।

Click Here For Next Part  চলবে

Writer- ইলোরা জাহান ঊর্মি

Love Never Ended Part 12
Love Never Ended Part 12

Leave a Comment