Golperjogot

Golperjogot

Emotional Sad Story Bangla Love Never Ended Part 3 | গল্প

Love Never Ended

ইলোরা জাহান ঊর্মি { Part 03 }

সন্ধ্যা সাতটা। রাইফ চুপচাপ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে। সামনের টেবিলে তার দৃষ্টি আটকে আছে। তার ঠিক সোজাসুজি সামনের চেয়ারে বসে থাকা অফিসার নীরবতা ভেঙে হঠাৎ বলল,

অফিসার: রাইফ তুমি বাসায় ফিরে যাও। এখানে এভাবে আর কতোক্ষণ বসে থাকবে?রাইফ: জ্বী যাচ্ছি।‌ আঙ্কেল কোনো ইনফরমেশন পেলে কাইন্ডলি আমাকে জানাবেন প্লিজ।(শান্ত স্বরে বলল রাইফ)অফিসার: ঠিক আছে জানাবো। চিন্তা করো না। যা হবার হয়ে গেছে। দেখছো তো আলম শিকদারের বন্ধুর কতো বড় ক্ষতি হয়ে গেল অথচ আমরা কিছুই করতে পারছি না। এখন শুধু ধৈর্য ধরা আর খোঁজ করা ছাড়া কিছু করার নেই।রাইফ: হুম। আচ্ছা আঙ্কেল এখন তাহলে আমি আসছি।(চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে)অফিসার: ঠিক আছে। সাবধানে যেও। আল্লাহ হাফেজ।রাইফ: আল্লাহ হাফেজ।

রাইফ হাঁটছে। পা দুটো সামনে এগোতে চাইছে না। অফিসারের কথাগুলো মনে পড়তেই সে আরো দূর্বল হয়ে গেল।

Sad Story Bangla

বিকেলে রাইফ আভার বাসা থেকে বেরিয়ে কী করবে ভেবে পাচ্ছিলো না। হঠাৎই তার মনে হলো যে থানায় গেলে কেউ না কেউ কিছু খবর নিশ্চয়ই দিতে পারবে। আভার বাবা নিশ্চয়ই কিছু বলে গেছেন। অফিসারের সাথে রাইফের পূর্ব পরিচয় ছিল। রাইফকে থানায় দেখে অফিসার একটু অবাক হয়েছিলেন। পরে রাইফ তাকে সবকথা খুলে বলল।

অফিসার যখন জানতে চাইলো আভার পরিবারের সাথে তার কী সম্পর্ক তখন রাইফ বলল আভা ওর খুব ভালো বন্ধু। পরক্ষণেই অফিসারের মুখে যা শুনলো সেটা শুনে রাইফ যেন আকাশ থেকে পড়লো।

আভার বাবার বিরুদ্ধে নাকি আগে থেকেই অনেক অভিযোগ ছিল। বরাবরই তিনি প্রচুর পরিমাণে ঘুষ খেতেন। এজন্য তাকে কয়েকবার ওয়ার্নিংও দেয়া হয়েছিল। শেষমেশ যখন চাকরি হারানোর উপক্রম হলো তখন তার এক ব্যবসায়ী বন্ধুর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে লোকটার সব টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন।

তার ঐ বন্ধু নাকি কোনো কারণে বিজনেসের অনেক টাকা ওনার কাছে জমা রেখেছিলেন। থানার সবার ধারণা আলম শিকদার তার পরিবার নিয়ে দূরে কোথাও পালিয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই সব থানায় খোঁজ লাগানো হয়েছে।…………..

রুমে ঢুকে রুহি কিছুটা অবাক হলো। এই সময় তো রাইফ এভাবে ঘর অন্ধকার করে রাখে না। তাহলে আজ হঠাৎ কী হলো! অন্ধকারের মধ্যে হাতড়ে হাতড়ে রুহি লাইটের সুইচ অন করলো। রাইফ দুহাতের উপর থুতনি রেখে বিছানার এক কোণে বসে ছিল। অগত্যা তীব্র আলো চোখে পড়ায় চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো। ভাইয়ের দিকে চোখ পড়তেই রুহি চমকে উঠলো।

রাইফের চোখ জোড়া ভেজা ভেজা লাগছে। তার মানে ও এতোক্ষণ ঘর অন্ধকার করে বসে বসে কাঁদছিল। যে ছেলেটা কখনো কোনো খারাপ পরিস্থিতিতে ঘাবড়ে যায়না। বরং মাথা ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করে,সে ছেলেটা আজ এভাবে নিঃশব্দে কাঁদছে! রুহি তাড়াতাড়ি দৌড়ে গিয়ে ভাইয়ের পাশে বসলো। বোনকে দেখে রাইফ অন্য দিকে তাকিয়ে চোখ মুছে মাথা নীচু করে বসে রইল। রুহি চিন্তিত কন্ঠে বলে উঠলো,

Emotional Love Story Bangla

রুহি: ভাই,কী হয়েছে তোর?রাইফ: ……………।(চুপচাপ মাথা নীচু করে বসে আছে)রুহি: এই ভাই। কী হয়েছে? চুপ করে আছিস কেন?(রুহি রাইফের গায়ে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলল)রাইফ: ………………….।(পূর্বের ন্যায় বসে আছে)রুহি: ভাই। ভাই কী হয়েছে বল প্লিজ। দেখ এবার কিন্তু আমার টেনশন হচ্ছে। কিছু তো বল প্লিজ। তুই চুপ থাকলে আমি কীভাবে বুঝবো কী হয়েছে?(উত্তেজিত কন্ঠে বলল রুহি)রাইফ: …………..।(মুখ দিয়ে টু শব্দটি পর্যন্ত বের করছেনা)

রুহি বুঝতে পারলো না হঠাৎ রাইফ পাথরের মতো বসে আছে কেন। রেসপন্স না পেয়ে রুহি রাইফের বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বসালো। তারপর রাইফের গালে এক হাত রেখে আদুরে গলায় বলল,

রুহি: তুই জানিস না তোকে নিয়ে আমি কতো টেনশনে থাকি? তাহলে চুপ করে আছিস কেন? তুই তো কখনো এমন আচরণ করিস না। হঠাৎ কী হলো তোর? প্লিজ ভাই বল আমাকে। আমার খুব টেনশন হচ্ছে। আচ্ছা তুই তো আভার খোঁজে বেরিয়েছিলি। কোনো খোঁজ পেলি?(অস্থির হয়ে বলল রুহি)

এবার রাইফ চোখ তুলে বোনের দিকে তাকালো। রুহি দেখলো রাইফের চোখ দুটি ছলছল করছে। রাইফ কোনো কথা না বলে বোনকে জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে কেঁদে দিল। এই একটা জায়গায় এসেই রাইফ আটকে যায়। ছোট বেলায় মাকে হারিয়ে বাবা আর বোনের আদরে বড় হয়েছে। বোনের বিয়ের এক বছরের মাথায় বাবাও মারা যায়। তারপর থেকে বোনই তার সব।

Related Story

দুলাভাইও তাকে খুব ভালোবাসে। এরা দুজন যেন রাইফের বাবা-মা। তাদেরও রাইফ বলতে প্রাণ। সবাইকে এড়িয়ে গেলেও এই দুটি মানুষকে রাইফ কোনোদিনো এড়াতে পারেনি। রাইফ খুব শক্ত ধরণের ছেলে। সহজে কোনোকিছুতে না ঘাবড়ে যায়,না ভেঙে পড়ে।

বাবার মৃত্যুর পর আজ প্রথম রাইফের চোখে পানি দেখেছে রুহি। রাইফের এহেন কাজে রুহি খানিকটা চমকে উঠলো। ভাইয়ের চোখে পানি দেখেই সে আন্দাজ করে নিয়েছে বড় কিছু হয়েছে। রাইফ বোনকে জড়িয়ে ধরে নিঃশব্দে কেঁদেই চলেছে। রুহি রাইফের পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

রুহি: আমি বুঝতে পারছি হয়তো বড় কোনো সমস্যা হয়েছে। নইলে আমার ভাইয়ের চোখে পানি আসার কথা না। বল না কী হয়েছে। তুই কাঁদলে আমার কতোটা কষ্ট হয় বুঝিস না?(বলতে বলতে রুহির কন্ঠ জড়িয়ে এলো)

রুহি রাইফকে সোজা করে বসিয়ে চোখ মুছে দিল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে রাইফ একে একে সব কথা খুলে বলল। সব শুনে রুহি যেন আকাশ থেকে পড়লো। এমন কিছু হবে তা কল্পনার বাইরে ছিল। রুহি জানে রাইফ আভাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসে। এতো বছরে আভা রাইফের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। যে অভ্যাস চাইলেই পরিত্যাগ করা যায় না।

Bangla Valobashar Golpo

সেদিনের পর রাইফ কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল। যেখানে গিয়েছে সেখানেই আভাকে খুঁজেছে। বেশিরভাগ সময় নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছে। রুহি আর তার হাসবেন্ড রওশন অনেক চেষ্টা করেও রাইফকে ঠিক করতে পারেনি। লেখাপড়ার প্রতিও কিছুটা অবহেলা তৈরি হয়েছে। এভাবে দিন গুনতে গুনতে রাইফ চার বছর কাটিয়ে দিল।

এই চার বছরে রওশন অনেকবার রাইফকে বলেছে তার কোম্পানিতে এমডি পদে জয়েন করার জন্য। কিন্তু রাইফ কিছুতেই রাজি হয়নি। একঘেয়ে জীবন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে তার। আজও রাইফ বিশ্বাস করে একদিন কোনো এক প্রান্তে সে হঠাৎ আভাকে পেয়ে যাবে। তখন আর আভাকে হারিয়ে যেতে দেবে না। তার ধারণা আভা আজও তাকে আগের মতোই ভালোবাসে।

আভাকে যেদিন পাবে সেদিন সে সর্বপ্রথম জিজ্ঞেস করবে কেন আভা তাকে এই চারটা বছর এভাবে কষ্ট দিলো? কী দোষ করেছিল সে? আচ্ছা আভা যদি এতো দিনে অন্য কাউকে ভালোবেসে ফেলে। না না,এমন হলে রাইফ আভাকে জোর করে হলেও নিজের কাছে রেখে দেবে। আভা শুধুমাত্র রাইফের ভবিষ্যৎ।

বর্তমান,

রাইফ চোখ বন্ধ করে বিছানায় পড়ে আছে। হঠাৎ কানের কাছে বাচ্চার ডাক শুনে চোখ মেলে তাকালো।

ইয়ানা: লাইফ,লাইফ। এই লাইফ ওঠো।(ছোট হাত দিয়ে রাইফের হাত ধরে টানতে টানতে মিষ্টি কন্ঠে ডাকলো ইয়ানা)রাইফ: কী হয়েছে প্রিন্সেস?(উঠে বসতে বসতে বলল রাইফ)ইয়ানা: আম্মী দিনাল কলতে দাকছে। তালাতালি ওঠো।(তাড়া দেখিয়ে বলল ইয়ানা)রাইফ: ওকে,চলো।

Also Read

রাইফ ইয়ানার হাত ধরে দোতলা থেকে নেমে এলো। টেবিলের সামনে এসে একটা চেয়ার টেনে বসে ইয়ানাকে কোলে বসালো। ইয়ানা রুহি আর রওশন এর একমাত্র মেয়ে। বয়স তিন বছর হলেও কথা শুনলে মনে হয় ছয় সাত বছর। কারোর নিষেধ না শুনে সারাক্ষণ রাইফকে নাম ধরে ডাকতে থাকে। যতোক্ষণ রাইফ বাসায় থাকে ততোক্ষণ রাইফের পেছনেই লেগে থাকে। রাইফও ইয়ানাকে মাত্রারিক্ত ভালোবাসে। রাইফ ইয়ানার জন্মের পর থেকে তাকে ভালোবেসে প্রিন্সেস বলে ডাকে।

রাইফ,ইয়ানা,রুহি আর রওশন একসাথে বসে ডিনার করছে। রাইফ চুপচাপ খাবার মুখে তুলছে। ইয়ানাকে রুহি কোলে বসিয়ে খাইয়ে দিচ্ছে। রুহি,রওশান কোনো কথা জিজ্ঞেস করলে রাইফ দুএকটা উত্তর দিচ্ছে। রওশন হঠাৎ রাইফকে ডাকলো,

Sad Love Story In Bangla

রওশন: রাইফরাইফ: হুঁ।(খেতে খেতে ছোট একটা শব্দ করলো রাইফ)রওশন: কাল আমি বিজনেসের কাজে সিঙ্গাপুর যাবো,জানো?রাইফ: হ্যাঁ। বুবু বলেছিল।রওশন: আমি চলে গেলে এদিকটা‌ তোমাকে সামলাতে হবে।রাইফ: আমার ইচ্ছে করছে না।রুহি: ইচ্ছে না করলেও করতে হবে ভাই। ও চলে গেলে কার ওপর দায়িত্ব দিয়ে যাবে?রাইফ: কোম্পানিতে কী বিশ্বস্ত লোকের অভাব?রওশন: বিশ্বস্ত হলেও সবাইকে বিশ্বাস করা যায় না। তাছাড়া তোমার এখান যথেষ্ট বয়স হয়েছে কাজ করার।রুহি: আর কতোদিন এভাবে বসে থাকবি বল তো? তোকে বুঝাতে বুঝাতে মুখ ব্যথা হয়ে গেছে আমাদের। এবার অন্তত না করিস না। জয়েন করে নে প্লিজ।

রওশন: একা সবদিক সামলাতে আমাকে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। কবে বুঝবে তুমি? তুমি জয়েন করলে আমার ঘাড় থেকে বোঝাটা অনেকটা হালকা হতো। যদি দেশে কাজ করতে ইচ্ছে না করে তাহলে তুমি আমার বদলে দেশের বাইরে যেতে পারো। এতে কাজও করা হবে আর সিঙ্গাপুরও ঘুরা হবে।রুহি: ভাই এবার আর না করিস না প্লিজ। একা একটা মানুষ আর কতোদিক সামলাবে বলতো? এটাই তো তোর কাজ করার পারফেক্ট সময়। আর কবে করবি?

রাইফ চুপচাপ বসে মুখে খাবার তুলছে আর কথা শুনছে। কোনো উত্তর দিচ্ছে না।

রওশন: দুদিন পর যখন বিয়ে করবে তখনও কী এভাবে বাড়িতে বসে থাকবে?ইয়ানা: লাইফ বিয়ে কলবে? কবে কলবে? এই লাইফ তুমি কবে একটা বউ আনবে? আমি তোমাল বউয়েল সাথে খেলবো।(কিউট ফেস করে তোতলাতে তোতলাতে বলল ইয়ানা)

ইয়ানার কথাটা শুনে রাইফ খাবার মুখে তুলতে গিয়েও নামিয়ে নিলো। খাওয়া বন্ধ করে শীতল চোখে রুহি আর রওশনের দিকে তাকালো। রুহি আর রওশনও মেয়ের কথা শুনে আহত চোখে রাইফের দিকে তাকালো।

রাইফ: ঠিক আছে তোমরা যা চাও তাই হবে। আমি কালই জয়েন করবো।

কথাটা বলে রাইফ আর এক মুহূর্তও বসলো না। হাত ধুয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দ্রুত পায়ে সেখান থেকে চলে গেল। রুহি আর রওশন তার চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

Click Here For Next :– চলবে

Writer :- Elora Jahan Urmi

Golperjogot Status

3 thoughts on “Emotional Sad Story Bangla Love Never Ended Part 3 | গল্প”

Leave a Comment