Bekar Sela
M.T Minhaz { Part 5 }
রেডি হয়ে চলে গেলাম পার্কে আরুফার সাথে দেখা করতে। গিয়ে দেখি আরুফা একা একা বসে আছে, আমাকে দেখে বললো..
আরুফাঃ কেমন আছো।
আমিঃ ভালো তুমি কেমন আছো।
আরুফাঃ হুম, ভালো।
আমিঃ কী জন্য ডেকেছো।
আরুফাঃ আজ হঠাৎ এই কথা কেন? এবাবে কখনই তো আমার সাথে কথা বলো না।
আমিঃ মন খারাপ করো না, তোমার সাথে একটা কথা বলতে চাই।
আরুফাঃ হুম, বলো।
আমিঃ তার আগে বলো, আমার কথা শুনার পর তুমি নিজের কোন ক্ষতি করবে নাতো।
আরুফাঃ ঠিক আছে বলো।
আমিঃ আমি এই রিলেশন রাখতে চাইনা।
আরুফাঃ কি বলছো এসব, তোমার মাথা ঠিক আছে।
আমিঃ আমার মাথা ঠিক আছে, আমি যেটা বলছি সেটা সত্যি।
আরুফাঃ প্লিজ এমন ভাবে বলো না, আমার কষ্ট হয়।
আমিঃ আমি তোমাকে আর ভালোবাসতে পারবোনা। (অনেক কষ্ট হয়েছিলো এই কথা বলতে)
আরুফাঃ আমি কোন অপরাধ করেছি নাকি, আর অপরাধ যদি করেই থাকি তাহলে বলো, সেটা আমি শুধরে নিবো।
আমিঃ তুমি কোন অপরাধ করোনাই, তুমি অনেক ভালো মেয়ে, আমার থেকে হাজার গুন ভালো কাওকে পাবে।
আরুফাঃ আমার কাওকে দরকার নেই, তুমি হলেই চলবে।( কান্না করতে করতে)
আমিঃ আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারবোনা, এর পর যদি আমার সামনে আসো, তাহলে আমার মরা মুখ দেখবে।
এই কথা বলাতে আরুফা আমার থেকে একটু দূরে চলে গেছে, তারপর বলতে লাগলো..
আরুফাঃ না এমন কথা বলো না, ঠিক আছে তুমি যখন আমাকে ভালোবাসতে পারবেনা, তখন আমিও আর বলবো না ভালোবাসি। তুমিই আমার প্রথম ভালোবাসা, চেয়েছিলাম তোমার সাথে এই জীবন টা পার করবো, তা আর তুমি হতে দিলে না, ভালো থেকো।
আরুফা কান্না করতে করতে চলে গেছে, আর আমি দাড়িয়ে আছি, চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো। মনে মনে বলতে লাগলাম, আরুফা আমাকে ক্ষমা করে দিও, এছাড়া আমার কোন পথ ছিলো না।
এখানে না দাড়িয়ে থেকে বাসার ভিতর ডুকে আম্মুকে বলতে লাগলাম,
আমিঃ কাল সকালে আমাকে ডাক দিও।
আম্মুঃ আচ্ছা, খেয়ে নে ফ্রেশ হয়ে।
আমিঃ এখন খাবোনা।
এই বলে আমার রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে ইচ্ছে মতো কাঁদলাম। কাদতে কাদতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি মনে নেই।
সকালে আম্মু আমার রুমে এসে আমাকে ডাকতে লাগলো, আমি ঘুম ঘুম চোখে বললাম...
আমিঃ এখন ঘুমাতে দেও তো আম্মু।
আম্মুঃ তুই তো বললি সকালে আমাকে ডেকে দিতে।
আম্মুর কথা শুনে লাফ দিয়ে উঠে পরলাম। তারপর আম্মু চলে গেলো, আমি রেডি হয়ে, ব্রেকফাস্ট করে আরুফার বাবার অফিসে চলে গেলাম কাগজ পত্র নিয়ে, গিয়ে দেখি আরুফার বাবার রুমে দুই তিনজন বয়স্ক লোক বসে আছে, আমাকে দেখে আরুফার বাবা ওদেরকে বিদায় জানিয়ে আমাকে চেয়ারে বসতে বললো। আমি চেয়ারে বসে, তারপর বলতে লাগলাম।
আমিঃ কেমন আছেন স্যার।
আরুফার বাবাঃ ভালো, তুমি কেমন আছো
আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ, ভালো।
আরুফার বাবাঃ কাগজ পত্র এনেছো তো।
আমিঃ হুম, স্যার।
তারপর কাগজ পত্র আরুফার বাবাকে দিলাম। কাগজ দেখে বললো..
আরুফার বাবাঃ তোমার সার্টিফিকেট দেখে আমার খুব পছন্দ হয়েছে, তোমাকে আমার অফিসে নিলাম, তার উপরে চুক্তির কথা তো মনেই আছে।
আমিঃ জি স্যার, কবে থেকে জয়েন করতে হবে স্যার।
আরুফার বাবাঃ কাল থেকেই জয়েন করতে পারো।
আমিঃ ওকে স্যার, আজ আসি।
আরুফার বাবাঃ হুম, ভালো করে বাসাই যেও।
তারপর অফিস থেকে বের গেলাম, মিষ্টির দোকানে, সেখান থেকে মিষ্টি কিনে বাসাই চলে আসলাম। দরজার কলিং বেল বাজাতে আম্মু দরজা খুলে দিলো, আমার হাতে মিষ্টির কার্টুন দেখে বললো....
আম্মুঃ কিরে আজ হঠাৎ মিষ্টি কেন।
আমিঃ আগে মিষ্টি টা খেয়ে নেও তারপর বলছি।
তারপর আম্মুকে মিষ্টি খাওয়াতে লাগলাম। খাওয়া শেষে বললাম...
আমিঃ আব্বু কোথায়।
আম্মুঃ তোর আব্বু বাহিরে গেছে
আমিঃ আজ থেকে আর আব্বুর চাকরি করতে হবে না।
আম্মুঃ তোর আব্বু যদি চাকরি না করে তাহলে সংসার চলবে কি করে।
আমিঃ তোমার বেকার ছেলে আজ থেকে আর বেকার থাকবেনা, আমি চাকরি পেয়েছি(খুশিতে জরিয়ে ধরলাম আম্মুকে)
আম্মুঃ সত্যি বলছিস, তুই চাকরি পেয়েছিস।
আমিঃ হুম আম্মু।
আম্মুঃ আজ আমি অনেক খুশি হয়েছি, আমার থেকে বেশী খুশি হবে তোর আব্বু।
আমিঃ আমাকে খেতে দাও খিদে পেয়েছে, আর আব্বু আসলে মিষ্টিটা খেতে দিও।
আম্মুঃ হুম, তা তো দিবো ফ্রেশ হয়ে আয়, খাবার রেডি করছি।
তারপর রুমে চলে আসলাম, আজ অনেক খুশি লাগছে আম্মুর খুশি দেখে। আম্মু এতদিন এটাই আশা করছিলো আমার কাছ থেকে। আজ তাদের আশা টা পূরন হয়েছে, কিন্তু মাঝখান দিয়ে আমার ভালোবাসাটা কোরবানি হয়ে গেছে, এটা মনে করতে বুক টা চিন চিন ব্যাথা করছে।
নিজেকে সামলে নিয়ে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে, তারপর ফ্রেশ হয়ে টেবিলে এসে দেখি আম্মু খাবার নিয়ে বসে আছে। খেয়ে রুমে চলে আসলাম। মোবাইলে এফবিতে ডুকে দেখলাম আরুফার কোন মেসেজ দেয়নি, অন্য সময় হলে এফবি টা মাথাই রাখতো মেসেজ দিতে দিতে।
আজ ফাকা ফাকা লাগছে এফবি, তাই অফলাইনে চলে আসলাম। কিছুই ভালো লাগছে না।
বিকালে বেড়িয়ে গেলাম বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে, গিয়ে দেখি হারামি গুলো বসে আছে। আমাকে দেখেই বললো...
সাজিদঃ কিরে আজকাল কোথায় থাকিস, তোর তো খুজ পাওয়া যাইনা।
আমিঃ কি করবো বল, আড্ডা দেওয়া সময় শেষ, এখন সংসারের হাল ধরার সময় হয়ে গেছে তাই বেশী বিজি থাকি।
সাজিদঃ হুম, খুব মিস করবো আগের দিন গুলো, চাইলেই আর কোন দিন ফিরে পাবো না সেইদিন গুলো।
আমিঃ বাদ দে অতিতের কথা, কি করছিস সবাই।
নাহিমঃ কি করবো আর সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছি।
আমিঃ দোস্ত আজ চাকরি পেয়েছি।
সবাইঃ এ্যাঁ
আমিঃ এ্যাঁ নয় হ্যাঁ।
সাজিদঃ সত্যি বলছিস তো।
আমিঃ আরে মিথ্যা বলবো কেন, হুম।
সাজিদঃ চাকরি যখন পেয়েছিস তখন আমাদের ট্রিট তো দিতেই হবে।
আমিঃ হুম, চল আজ সবাইকে আমার পক্ষ থেকে ট্রিট দিবো।
তারপর রেস্তুরেন্টে গিয়ে যা দেখলাম, চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো.............