Golperjogot

Golperjogot

বেপরোয়া ভালোবাসা – পর্ব ১০ রোমান্টিক গল্প | মোনা হোসাইন

বেপরোয়া ভালোবাসা – পর্ব ১০ রোমান্টিক গল্প | মোনা হোসাইন

Beporoya Valobasha

Mona Hossain { Part 10 }


সকাল ৬ টা বেজে ৪০ মিনিট ঘুম ভেঙেও যেন ভাংগছে না। চোখ পিটপিট করে তাকাল আদিবা সারা শরীরে কেমন অস্বস্তিকর ব্যাথা গলার দিকটা একটু বেশিই ব্যাথা করছে। আদিবা বেশ চেষ্টা করে উঠে বসল সাথে সাথেই ভিমরি খাওয়ার অবস্থা। তারপাশে আয়েশ করে ঘুমিয়ে আছে আদিত্য।

আদিত্য,আদিবার জীবনের একমাত্র শনি যে কিনা ছোট বেলা থেকেই আদিবার ঘাড়ে চড়ে আছে। আদিবা চারপাশটা ভাল করে দেখে নিল। না সে নিজের রুমে নয় আদিত্যের রুমে আছে।

ধীরে ধীরে রাতের সব ঘটনা মনে পড়তে লাগল। রাতে আদিবা নিজের রুমেই ঘুমিয়েছিল কিন্তু আদিত্য তাকে জো**র করে এই রুমে নিয়ে এসেছে তারপর যা যা করেছে সেসব ব্যাখ্যা দেওয়ার ক্ষমতা আদিবার নেই। আদিবা কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমিয়ে গিয়েছিল।

আদিবা তাড়াতাড়ি উঠে নিজের ঘরে যাওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু তাতে সফল হতে পারল না। আদিত্য দরজা লক করে রেখেছে। কিভাবে লক করেছে সেটা আদিবার জানা নেই শুধু এইটুকু জানে যে দরজাটা খোলার ক্ষমতা তার নেই। কিছুক্ষন চেষ্টার পর ব্যার্থ হয়ে ফিরে আসল। এখন কী করবে মাথায় ঢুকছে না। সবাই জেগে যাওয়ার আগেই এখান থেকে যাওয়া উচিত সবাই যদি জানে সে আদির সাথে রাত কাটিয়েছে মানসম্মান থাকবে না।

আদিবা কোন উপায় না পেয়ে আদিকে গিয়ে ডাকল,
-"শুনতে পাচ্ছেন...??

-".......

-"ভাইয়া শুনতে পাচ্ছেন...

আদি চোখ বন্ধ রেখেই আড়মোড়া ভেঙে জবাব দিল,
-"কি হয়েছে সাত সকালে এভাবে চেঁচামেচি করছিস কেন?

-"দরজাটা খুলে দিন..

আদি এবার চোখ খোলল
-"দরজা খুলে দিব মানে ...?

-"রুমে যাব না?

-"এটা কী বন জংগল ?

-"আমি আমার রুমে যাব সেটাই বলেছি সবাই যদি জেগে যায় মুখ দেখাব কি করে..?

-"কেন মুখে আবার কী হয়েছে যে মুখ দেখাতে পারবি না...

-"আপনার কী একটুও লজ্জা নেই...? এত অভিনয় কী করে করেন?এতকিছুর পরেও কথা বলছেন..?

-"লজ্জা পাওয়ার মত কিছু করেছি বলে তো মনে পড়ছে না।

-"কী করতে বাকি রেখেছেন...?

-" যতটা করার কথা ছিল ততটা করি নি ঠোঁট, থেকে কোমড় পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিলাম এর বাইরে যাই নি...

-"আপনি কতটা নিচে নেমে গেছেন ভাবতে পারছেন?

-"যে মেয়ে ক্লাস নাইনে থাকতে প্রেম করতে পারে সে এখন আমাকে উপড় নিচ শিখাচ্ছে...?

-"আপনি...

-"ভুল কিছু বল্লাম? তুই এসবে অভ্যস্থ না..?

-"চুপ করুন,আপনার সাথে কথা বলতে আমার রুচিতে লাগছে..

পড়ুন  লাভার নাকি ভিলেন – পর্ব ২১ থ্রিলার গল্প | মোনা হোসাইন

-"উচিত কথা সবারেই গায়ে লাগে।

-"আর একটাও বাজে কথা বলবেন না। দরজা খুলুন আমি যাব..

-"নিজেকে আয়নায় দেখেছিস?

-"মানে...?

-"গলায় লাভ বাইট চকচক করছে জামা আর চুলেরও নাজেহাল অবস্থা...

-"আপনি আমার ভাই ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে...কী করে পারলেন..?

-"পারলাম আর কই কান্নার জন্যে তো পুরো কোর্স কমপ্লিট হল না যাইহোক ঘৃনাই যখন করবি তাহলে এইটুকু আর বাকি থাকবে কেন বাকিটুকুও করে ফেলি...

-"আপনি চুপ করবেন?

-"আচ্ছা করলাম কিন্তু প্যান প্যান করবি না,ঘুমাম।

-"দরজাটা খুলে দিয়ে ঘুমান

আদি উত্তর দিল না। উল্টো ঘুরে শুয়ে পড়ল।

-"এসবের মানে কী?কোনধরনের হেয়ালি এটা..?

-"আর একটা কথা বলবি তো থা প্প ড় মে**রে সবকটা দাঁত ফে*লে দি*ব।

-"মান সম্মান শুধু আমার যাবে না আপনারও যাবে.

-"গেলে যাবে. আমার সম্মান নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।

-" সবাইকে বলে দিব আপনি জো**র করে আমার সাথে...

-"তোর সাথে কি...? কী করেছি বল?

-".....

-" চুপ কেন বল কি করেছি? কিছুই করি নি আমার সাথে বাড়াবাড়ি করবি তো কাল যা যা ছাড় দিয়েছি আজ দিব না.

-"আপনি এত ক্যারেক্টার লেস হবেন ভাবতেও পারিনি

-"যা যা ভাবার ভাব কিন্তু এখন ঘুমাতে দে।আমার ঘুম ভাঙবি তো তোর কপালে দুঃখ আছে

-"দরজাটা খুলুন

-"তুই ভাল কথার মেয়ে না দাঁড়া মাকে ডাকছি
বলেই আদি মা বলে গলা ছাড়ল আদিবা কি করবে ভেবে না পেয়ে তাড়াতাড়ি গিয়ে আদির মুখ চেপে ধরল।

-"পা গ ল হয়ে গেছেন? আপনি এমন ছেলে মানুষি কেন করছেন?

-"কারন ছেলে মানুষির বয়স টা তোর সাথে কাটাতে পারি নি। বলে আদি,আদিবাকে জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ল। আদিবা নিজেকে ছাড়াতে ছ ট ফ ট করতে লাগল।

-'উম আদিবা অনেক বাড়াবাড়ি করেছিস আর না...ঘুমাতে দে..

আদির সাথে শক্তিতে পেরে উঠল না আদিবা তাই বাধ্য হয়েই আদির সাথে শুয়ে রইল। প্রায় ঘন্টাখানিক পর আদিবার খুঁজ শুরু হল কারন সকালের নাস্তা সে বানায়। তাই সে না থাকায় নাস্তার ব্যবস্থা হয় নি তারউপড় বাসা ভর্তি লোকজন নানান রকমের কাজ।

আদিত্যের মা আদিবাকে গলা ছেড়ে ডাকছেন আদিবা শুনতে পাচ্ছে কিন্তু উত্তর দেওয়ার উপায় নেই। কেটে গেল আরও কিছুক্ষন আজ আদিবার কপালে দুঃখ আছে সেটা সে জানে।

প্রায় ৯ টার কাছাকাছি আদির ঘুম ভাংগল শুধু শুধু ভাংগে নি আদির মা দরজায় কড়া নাড়ায় ভেঙেছে।

আদি বেশ ধীরে সুস্থে উঠে বসল যেন কোন কিছুই ঘটে নি কিন্তু এদিকে ভয়ে আদিবার হাত পা কাঁপছে চোখ মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে দরজা খোলার সাথে সাথে তার দিকে ভয়ানক ঘুর্নিঝড় বয়ে আসবে সন্দেহ নেই।

পড়ুন  সিনিয়র গার্লফ্রেন্ড-বাংলা প্রেমের গল্প শেষ পর্ব 4 | Senior Girlfriend

আদি আদিবার দিকে তাকাল আদিবা ভিতু হরনীর মত আদির দিকে তাকিয়ে আছে,
-"এমন মুখ করে থাকার কী আছে..? দেখে মনে হচ্ছে শোক দিবস পালন করছিস। বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দে...আমি দেখছি মা কেন ডাকছে।

আদির কথাটা আদিবার পছন্দ হয়েছে। হ্যা ওয়াশরুমেই একমাত্র জায়গা যেখানে সে লুকাতে পারে তাই আর কিছু না ভেবে ওয়াশরুমে চলে গেল।

আদি গিয়ে দরজা খুলল,
আদির মা আর জুঁই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মায়ের হাতে চায়ের ট্রে।

চা টা এগিয়ে দিয়ে রুবিনা বেগম বললেন,
-"সরি বাবা চা দিতে দেরি হয়ে গেল। আরও আগেই দিতাম কিন্তু...

-"আমি সকালে চা খাই না মা। কফি খাব।

-"ওহ আমি এখনী করে আনছি...

-" তোমার করতে হবে না মা। আদিবা হাতের কাজ টা শেষ করে বানিয়ে দিবে...

-"আদিবা দিবে..?

-"হ্যা ওয়াশরুমে আমার কাপড় ধুচ্ছে কাল ধুয়ার কথা ছিল কিন্তু ধুয় নি তাই সকালে ধুচ্ছে। কাপড় ধুয়ে কফি বানাবে।

-"ওমা তাই..? ও এখানে আর আমরা ওকে খুঁজে হয়রান হয়ে যাচ্ছিলাম।

-"কেন খোঁজাখুঁজির কি আছে? ওত ছোট বাচ্চা না যে হারিয়ে যাবে।

-"না মানে সকালে নাস্তা ও বানায় তাই..

-"অহ কিন্তু ও তো ব্যাস্ত। আজ অন্য কাউকে বলো নাস্তা বানাতে...

রুবিনা বেগম আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেলেন সাথে জুঁই ও...কিছুদূর গিয়ে জুঁই বলতে শুরু করল

-"কাকিমনি কি বলতো, আমার কী মনে হয় আদি ভাইয়া এখনো আদিবাপু কে ভালবাসে আর ওকেই বিয়েই করবে...

-"অসম্ভব এ কিছুতেই হতে পারে না।

-"কিন্তু ওর হাবভাবে তো এমনটাই মনে হয়।

-" আদি অন্য যাকেই পছন্দ করোক আমরা মেনে নিব কিন্তু আদিবাকে কিছুতেই না।

-"কেন আদিবাপুকে না কেন..?

-"আদিবার জন্য আমরা অনেক বছর আদিত্যকে কাছে পাইনি আমি চাই না আবারো এমন কিছু ঘটুক। যে করেই হোক আদিবাকে আদিত্যের জীবন থেকে বিদায় করতে হবে। আমি আজকেই এর একটা বিহিত করব।

এদিকে রুবিনা বেগম চলে যাওয়ার পর আদিত্য বলল,

-"ম্যাডাম বাইরে আসতে পারেন মা চলে গেছে।

আদিবা বাইরে আসল তারপর ফ্যালফ্যাল করে তাকাল আদির দিকে।

-'আগেই ত বলেছিলাম ভয় পাওয়ার কিছু নেই যেটা সামলাতে পারব না সেই কাজ আমি করিনা এখন নিচে যা আমার জন্য কফি নিয়ে আয়।

আদিবা কথা বাড়াল না চলে যেতে চাইল।

-"এই দাঁড়া চুল ঠিক করে গলা ঢেকে তারপর যা..আর রাতের ব্যাপারে কাউকে কিছু বলবি না।

পড়ুন  মুখোশ – রহস্যময়, রোমান্টিক প্রেমের গল্প পর্ব ১৭ | মোনা হোসাইন

আদিবা মাথা নাড়ল তারপর ওড়না দিয়ে ভাল করে গলা ঢেকে চুল ঠিক করে নিচে গেল। আদিবা নিচে যাবার কিছুক্ষন পরেই আদি নিচে নেমে আসল। এসেই টেবিলে বসল বাকিরাও আছে আদিবা রান্না ঘরে কফি বানাচ্ছে কাজের মহিলা আর রুবিনা বেগম নাস্তা।

রান্নাঘর আর খাবার টেবিল কাছাকাছি হওয়ার সব কথায় শোনা যায়। আদিকে দেখে আদিত্যের বাবা বললেন,

-"আদি তুমি এতদিন পর দেশে এসেছো তাই আমি চাচ্ছি একটা গেট টুগেদার আয়োজন করে সবার সাথে তোমাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতে তোমার কোন আপত্তি নেই তো...??

-"নাহ আপত্তি কিসের...যা ভাল বুঝো করো কিন্তু এই দেশে থাকার আবদার করো না। আমি এখানে বেশিদিন থাকব না আবার ফিরে যাব

-"সে নাহয় পরে দেখা যাবে আপাতত আজ সন্ধ্যায় বাসায় থেকো...আর চাইলে তোমার পুরনো বন্ধুদের দাওয়াত করতে পারো।

-"আইডিয়া টা খারাপ দাও নি। আমার সবার সাথে দেখা করা উচিত। আচ্ছা তাহলে পার্টির আয়োজন করা যাক।

-"আমি সব আয়োজন করেই রেখেছি ক্যাটারিং এর লোক কিছুক্ষনের মধ্যে চলে আসবে তুমি তোমার বন্ধুদের দাওয়াত করে দাও।

-"আদি হ্যাসূচক মাথা নেড়ে খেতে শুরু করল।

খাওয়া শেষে ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসল। তারপর সব পুরোনো বন্ধুদের ফোন করে দাওয়াত দিতে শুরু করল। আর আদির বাবা আত্মীয়দের দাওয়াত দিচ্ছেন এর মধ্যে আদিবা কফি নিয়ে এসে আদিত্যের সামনে রাখল।

হটাৎ করে আদিবাকে দেখে থেমে গেল। ভূত দেখার মত চমকে উঠে তাকাল আদিবার দিকে এমন একটা ভাব যেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভুলটা এই মাত্র সে করে বসেছে।

-'ক ক কী হয়েছে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? কোন ভুল করেছি?

-"বিরাট বড় ভুল... বলেই আদি উঠে গিয়ে বাবার সামনে দাঁড়াল।

-"বাবা পার্টি বাসায় না করে অন্য কোথাও করা যায় না..?

-"কিন্তু সবাইকে ত বাসার কথা বলে দিয়েছি।

-"আই সি...উফফ আমি কী করে ভুলে গেলাম।

-"কেন কোন সমস্যা হয়েছে...?

-" সমস্যা তো হয়েছেই। আচ্ছা হোক আমি সামলে নিতে পারব বলে আদি বাইরে চলে গেল...

পরবর্তী পর্বের জন্য ক্লিক করুন :>> চলবে

Writer :- মোনা হোসাইন

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Home
Stories
Status
Account
Search
Scroll to Top