Golperjogot

Golperjogot

বেপরোয়া ভালোবাসা – পর্ব ১৫ রোমান্টিক গল্প | মোনা হোসাইন

 বেপরোয়া ভালোবাসা

Mona Hossain { Part 15}

-” সিনেমা টা এখানে না করে হোটেলে করলে ভাল হত না…?? পার্কে তো বাচ্চারাও আসে।হঠাৎ আদির কন্ঠ শুনে চমকে উঠল আদিবা। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে না। এখন ক্লাস টাইম আর পৃথিবী উল্টে গেলেও আদিত্য কখনো ক্লাস মিস দেয় না তাহলে এখন সে পার্কে কী করছে? আদিত্যকে দেখে তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়াল আদিবা। আজ আর রক্ষে নেই। এমনিতেও আদিত্য যেভাবে আদিবাকে শাসন করে এই বিষয় টা আদিত্য কিছুতেই মেনে নিবে না।আসলে আদিবার কারো সাথে বন্ধুত্ব করার অনুমতি নেই আর সেটা যদি কোন ছেলের সাথে হয় তাহলে তো আর কথাই নেই। আদিবা এতক্ষন যার সাথে বসে ছিল সেই ছেলেটি আদিবার চেয়ে বয়েসে বড় এমনকি আদিত্যের চেয়েও বড়। কিন্তু তাতে কি আদিত্য কোন কিছু পরোয়া করার ছেলে নয় সে এগিয়ে এসে দুজনের মুখোমুখি দাঁড়াল।ভয়ে আদিবার হাত পা কাঁপছে। আদিকে কি করে ম্যানেজ করবে মাথায় ঢুকছে না।আদি,আদিবার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,-“আমাদের পার্কে ছেলে মেয়ে একসাথে বসা যায় না আপনারা জানতেন না..?আদিবা আমতা আমতা করে বলল,-“ভ ভ ভাইয়া আমি…..-“আমি আপনার সাথে কথা বলছি না ম্যাডাম। আপনি বাসায় যান আমরা ভাইয়ার সাথে একটু কথা বলব।আদিত্যের কথা শুনে আদিবা তাকিয়ে দেখল আদি একা আসেনি সাথে তার বেশ কয়েকজন বন্ধুও আছে। আদিবা বুঝতে পারল খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে আর সেটা আটকানোর ক্ষমতা তার নেই।আদিবার অবস্থা দেখে পাশের ছেলেটি বলল,-“পার্ক তো কারোর একার না তাই না? পার্কে যে কেউ আসতে পারে।-“আসতে বাঁধা নেই কিন্তু ছেলে মেয়ে একসাথে বসে ঢং করাতে নিষেধ আছে।-“নিষেধ করলেই শুনতে হবে?-“হ্যা হবে কারন পার্কটা আমাদের এলাকার তাই এখানে কী রুলস থাকবে সেটা আমরাই ঠিক করব।-“মাস্তানি হচ্ছে…? এখনো দুধের হাত পড়েনি আর মাস্তানি করছো…?বলেই আদিত্যের কলার টেনে ধরল ছেলেটি।এমন কান্ডে আদিত্য সহ বাকিরা সবাই জ্বলে উঠল। আদিবা কি করবে বুঝতে না পেরে তাড়াতাড়ি এগিয়ে বলল,-“নীলয় ভাইয়া ছাড়ুন প্লিজ। কী করছেন এসব?নীলয় ছাড়ার আগে আদিত্য নিজেই কলার ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,চেহারাটা মনে রাখলাম আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি আবার দেখা হবে বলে আদিত্য সেখান থেকে চলে গেল।সাথে সাথে আদিবা বলল,-“আমি এখন যাই নীলয় ভাইয়া।নীলয়কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আদিবা তাড়াতাড়ি বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। কিছুদূর আসার পরেই রাস্তায় আদিত্যের সাথে দেখা হল সেদিন বাসায় ফিরে আদিত্য খুব মে*রেছিল আদিবাকে।পুরোনো স্মৃতিগুলো মনে হতেই গা সিওরে উঠল আদিবার এর মধ্যেই নির্জন এক জায়গায় এসে গাড়ি থামল,-“গাড়ি থেকে নাম..-“ভ ভ ভাইয়া আমি মানে…”” নামবি নাকি টেনে নামাতে হবে…গাড়ী থেকে নেমে দাঁড়াল আদিবা। জায়গাটা অসম্ভব সুন্দর চারদিকে সবুজ অরন্য তার পাশেই বয়ে চলেছে ছোট নদী মনে হচ্ছে যেন ছবির ফ্রেমে আঁকা কোন ছবি। কিন্তু এসব দেখে নয়ন ধন্য করার সুযোগ নেই আদিবার কারন তার পাশে চোখ গরম করে দাঁড়িয়ে আছে আদিত্য।ভয়ে ভয়ে আদির দিকে তাকাল আদিবা, উদ্দেশ্য আদির মনের মরিগতি বুঝার চেষ্টা। আদিকে সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদি বলে উঠল,””” ঠিক হয়ে দাঁড়া তো কয়েকটা ছবি তুলি।আদির কথায় অবাক হল আদিবা এখন তার ছবি তুলতে ইচ্ছে করছে? কি অদ্ভুত এই তো শাস্তি দিতে চেয়েছিল?এখন ছবি তুলবে..?”””ছবি দিয়ে কি হবে ভাইয়া…??””” তুই মরার পর সবাই ছবি দেখে স্মৃতিচারন করবে তাই তুলে রাখব।””” আপনি সত্যি সত্যি আমাকে মে*রে ফেলবেন…””” সন্দেহ আছে..??এত কথা না বলে সুন্দর করে দাঁড়া।বলতে বলতে আদিবাকে দাঁড় করিয়ে দিয়ে ক্যামেরা হাতে ছবি তুলতে শুরু করল। এদিকে আদিবার বেশ ভয় লাগছে কিছুক্ষন পরেই সে মা*রা যাবে ভেবেই কান্না পাচ্ছে। কিন্তু কান্না করতে পারছে না।-“আচ্ছা আমি যদি পালিয়ে যাই কেমন হবে ব্যাপারটা? কিন্তু পালিয়ে যাব কোথায়? আমি ত এখানে কিছুই চিনি না হারিয়ে যাব নাতো. সে যাই হোক মরে যাওয়ার চেয়ে হারিয়ে যাওয়া অনেক ভাল। যেমন ভাবনা তেমন কাজ আদি ক্যামেরায় মনোযোগ দিয়ে ছবি দেখছে এটাই সুযোগ চোখের পলকেই সরু রাস্তা ধরে কাশবনের ভিতরে পা বাড়াল আদিবা। আদি যেন তাকে দেখতে না পায় তাই চোখ বন্ধ করে দিল এক ছুট আর পিছনে তাকায় নি। যেভাবেই হোক পালাতে হবে এখন এটাই তার একমাত্র লক্ষ্য।ছুটে এসে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। যাক আদি তার পিছনে আসে নি দেখে স্বস্তি পেল। নিচে বসে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিল কিন্তু যখন উঠে দাঁড়াল অবাক হয়ে গেল,-“একি আমি কোথায় চলে এসেছি চারদিকে ত শুধু কাশবন সরু রাস্তাটাই বা কোথায় উধাও হয়ে গেল?চারদিকে চোখ বুলিয়ে গাঁ সিওরে উঠল এখান থেকে বেরুনোর কোন রাস্তা দেখা যাচ্ছেনা সবদিকে মাথাসমান কাশবন। আদিবা কিছুক্ষন এদিক ওদিক ছুটাছুটি করে বুঝতে পারল বেরুনোর কোন রাস্তা নেই। এখান থেকে বের হওয়া অসম্ভব।-“এখন আমি কি করব ভাইয়াকে ডাকব? কিন্তু ও তো আমাকে মে*রে ফেলবে একে ত পাত্রপক্ষের সামনে গিয়েছি এখন আবার পালিয়েছি আজ আর রক্ষা নেই।যদিও আদিবা আদিত্যকে ডাকতে চায় না কিন্তু এখান থেকে বের হওয়া জরুরী তাই বাধ্য হয়ে আদিকে ডাকতে লাগল কিন্তু আদির কোন সাড়াশব্দ নেই,-“তারমানে কী আমি হারিয়ে গিয়েছি?আদিবার খুব কান্না পাচ্ছে এবার। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারল না কেঁদে দিল। কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে বেরুনোর অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু রাস্তা খুঁজে পাই নি মাথাটা ধরে আসছে।আদিবা মাথায় হাত দিয়ে নিচে বসে পড়ল তখনী হটাৎ কারো গলা শুনে চমকে উঠল সে,-এত সহজে শখ মিটে গেল? কাঁদছিস কেন যা আরো একটু ছুটাছুটি করে আয়।আদির কন্ঠ শুনে যেন দেহে প্রাণ ফিরে পেল আদিবা। আর কিছু না ভেবে দৌড়ে গিয়ে আদিকে জড়িয়ে ধরল। আদি কিছুটা অবাক হল আদিবা তাকে নিজে থেকে কখনো জড়িয়ে ধরবে এটা যেন তার ভাবনার বাইরে ছিল।আদি শান্ত হাতে আদিবার মাথায় হাত রেখে বলল,-“ভয় পেয়েছিস..?আদির কথায় বাস্তবে ফিরল আদিবা তাড়াতাড়ি আদিকে ছেড়ে দিয়ে ইতস্তত হয়ে বলল,-“ভাইয়া আ আ আমি মানে…-“এমন একটা থাপ্পড় মারব সব কটা দাঁত পড়ে যাবে কি ভেবেছিলি? তুই দৌড়ে আমার চোখ ফাঁকি দিতে পারবি?”””ভুল হয়ে গিয়েছে সরি…””” কিসের সরি যা না যা… এবার যা তুই কতদূর যেতে পারিস দেখি।””” বলেছি তো ভুল হয়ে গিয়েছে আর কখনো এমন করব না…চলুন বাসায় যাই প্লিজ।””” আমি রাস্তা চিনি কে বলল? আমি এই রাস্তা চিনি না তোর পিছন পিছন চলে এসেছি…-“এখন কী হবে তাহলে…!!-“একা একা যাবি নাহলে এখানে বসে কাঁদতে থাক।বলেই আদি হাঁটা দিল, সাথে সাথে আদিবা কেঁদে উঠল।

পরবর্তী পর্বের জন্য ক্লিক করুন :>> চলবে

Writer :- মোনা হোসাইন

Leave a Comment