Golperjogot

Golperjogot

বেপরোয়া ভালোবাসা – পর্ব ২১ রোমান্টিক গল্প | মোনা হোসাইন

বেপরোয়া ভালোবাসা – পর্ব ২১ রোমান্টিক গল্প | মোনা হোসাইন

  বেপরোয়া ভালোবাসা 

    Mona Hossain { Part 21 }


আদি কিছুটা এগিয়ে গিয়ে থামল। সাথে সাথে আদিবা ছুটে গিয়ে আদির সামনে দাঁড়াল। নেহাৎ কম জায়গা নয় তারউপড় আদিকে থামতে দেখে রাস্তাটুকু রীতিমত দৌড়ে এসেছে আদিবা এসেই হাঁফাতে হাঁফাতে বলল,

-"অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া..আমি জানতাম আপনি আমায় রেখে যাবেন না।

আদি নির্বিকার জবাব দিল,
-"তো আমি কখন বলেছিলাম আমি তোকে রেখে চলে যাব? আমি আগেই বলেছি তুই যদি বাসার রাস্তায় আসিস আমি সারা রাস্তা তোকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাব।

-"তাহলে চলে আসলেন কেন? কত ভয় পেয়েছিলাম জানেন?

-"ভয়ের কিছু নেই আমি তোকে রেখে যাব না। তবে আমি যেহেতু বাইকে যাব তুই আমার সাথে তাল মিলাতে পারবি না তাই প্রতিবারেই আমি কিছু দূর গিয়ে দাঁড়াব তুই আবার আমার পর্যন্ত গেলে আমি আরও একটু এগিয়ে গিয়ে থামব এবং তোর জন্য অপেক্ষা করব।

-"মানে কী?

-"চিন্তার কোন কারন নে আমি এত দূরেও যাব না ঠিক ততটাও দূরে থামব যেখান থেকে তোকে দেখা যাবে,চোখের আড়াল করব না তাই একদম ভয় পাস না। একটা ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারিস আজ যাই ঘটে যাক রাস্তায় যত সমস্যাই হোক না কেন আমি সারা পৃথিবীর সাথে যু*দ্ধ করে হলেও তোকে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে বাসা পর্যন্ত নিয়ে যাব। এই শাস্তিটা না দিতে পারলে আমার আত্মা শান্তি পাবে না।

-"আপনি কী মানুষ? একটা মেয়েকে ৬০ কিলোমিটার রাস্তা দিয়ে হাঁটিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে যাবেন তাও বড় মুখ করে বলছেন লজ্জা করছে না?

-" নাহ তো একটুও করছে না। যে নিজেই নিজের পরিচয় ভুলে যায় সেই পরিচয় আমার মনে রাখার কী দায় পড়েছে? তোর মাঝে মেয়ের কোন লক্ষন আছে? মেয়ে থাকবে শান্ত শিষ্ট,দেখলেই শান্তি লাগবে, শান্তমনে ঘর সংসার সামলাবে, ঘরে বসে চিন্তা করবে ভবিষ্যতে বাচ্চা কাচ্চার কি নাম রাখবে তা না করে সে কেন সন্ধ্যা বেলা ব্যাগ হাতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়বে? তাও একা একা? এতদূরের রাস্তায় যখন যা খুশি ঘটতে পারে সেসব নিয়ে কেন ভয় পাবে না?

আদির কথায় আদিবা অবাক লাগছে নাকি রাগ উঠছে নিজেই বুঝে উঠতে পারল না।বিরক্তি নিয়ে বলল

-"তার মানে বিয়ের আগেই আমার বসে বসে বাচ্চার নাম ঠিক করা উচিত ছিল?

-"এক্সাক্টলি,জামাই কি পছন্দ করে আর কি পছন্দ করে না, , সে মেয়ে বাবু চায় নাকি ছেলে বাবু, কয়টা বাচ্চা নিবে সেসব নিয়ে ভাবা উচিত ছিল।

পড়ুন  লাভার নাকি ভিলেন সিজন ২ – পর্ব ১৩ থ্রিলার গল্প | মনা হোসাইন

-"বাহ আমি মনে হচ্ছে জানি আমার জামাই কে হবে...তার ইচ্ছে অনিচ্ছার ব্যাপারে চিন্তা করব।

-"জানবি না কেন? এত কেয়ারলেস হলে তো চলবে না।

-"আপনি কি জানেন আপনার মানুষিক ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন...

-"নাহ,তবে এটা জানি তোর মাথায় বুদ্ধি কিছুটা বাড়ানো দরকার।বুদ্ধি থাকলে আমি কি বলেছি বলার আগেই বুঝে ফেলতি যাইহোক এমনিতেই যেতে যেতে সকাল হয়ে যাবে আর এমন গল্প করতে থাকলে হয়ত কালকেও পৌঁছাতে পারবি না।

বলতে বলতে আদি আবারো বাইকে স্টার্ট দিল। আদিবা এবার কিছু বলল না কারন সে জানে কিছু বলে লাভ নেই। আদি এ জীবনে কোনদিনি তার কথা শুনে নি।

প্রায় এক ঘন্টা ধরে আদিবা হাঁটছে আর মনে মনে আদির চোদ্দগুষ্টিকে গালি দিচ্ছে।

-"আমি যদি এর প্রতিশোধ না তুলতে পারি আমার নাম আদিবা নয়। অনেক হয়েছে এসব আর মেনে নেওয়া যাচ্ছে না কিন্তু এখন বাসায় ফিরব কী করে? এমন কিছু করতে হবে যাতে ভাইয়া নিজেই আমাকে নিয়ে যায়। কিন্তু কি করব?

ভাবতে ভাবতে গিয়ে আদির কাছে দাঁড়াল। তখন আদি বলল,

-"উঠ,সামনে বাজার আছে আমি চাই না তুই বাজারের সবাইকে রুপ দেখিয়ে দেখিয়ে যা তাই এখন নিয়ে যাব বাজার পেরিয়ে নামিয়ে দিব।

আদির কথায় রাগে গাঁ জ্বলে উঠল আদিবার কিন্তু অবশেষে সুযোগ এসেছে এই সুযোগ কোনভাবে মিস করা যাবে না তাই ঝগড়া না করে আদির পিছনে উঠে বসল। আদি নিজমনে ড্রাইভ করে এসে বাজার পেরিয়ে থামল সাথে সাথে আদিবা পিছন থেকে আদিত্যকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরল। এক মিনিটের আদি থমকে গেল পরমুহুর্তে আবার নিজেকে সামলে নিয়ে ধমক দিয়ে বলল,

-"এসব কি ধরনের অসভ্যতা?

আদিবা ঠোঁট নাচিয়ে বলে উঠল
-"কোনটা অসভ্যতা?

-"বেহায়া মেয়ে কোথাকার আবার প্রশ্ন করছিস? জড়িয়ে ধরেছিস কেন সাহসে? ছাড় বলছি।

-"কেন ছাড়ব কেন আপনি যদি ভাই হয়ে বোনের সাথে এত বেপরোয়া হতে পারেন আমি হতে দোষ কোথায়।

-"তুই কি বলছিস কোন ধারনা আছে তোর?

-"আলবাত আছে।

-"তোর দেখছি চরিত্রে সমস্যা আছে।

-"আমি কখন বললাম আমার চরিত্র ভাল..? সেদিন তো আপনি নিজেই বলেছিলেন আমার চরিত্র ভাল না তাহলে আজ হটাৎ ভাল হয়ে যাবে কী করে?

-'তোর তো সাহস কম না আমার কথা আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছিস...নাম বলছি নাহলে একধাক্কায় নিচে ফেলে দিব।

-"ফেলুন দেখি কেমন পারেন বলে আদিবক আরও একটু জড়িয়ে ধরল আদিকে।

-"এতো আচ্ছা ঝামেলা হল দেখছি এই তোর লজ্জা করছে না?

-"উম আসছে লজ্জা ওয়ালা। যে ছেলে বিয়ের আগে নিজের বোনের গলায় মুখ ডোবাতে পারে তার মুখে সভ্যতার বুলি মানায় না বুঝেছেন?

পড়ুন  লাভার নাকি ভিলেন – পর্ব ২০ থ্রিলার গল্প | মোনা হোসাইন

-"আদিবার বাচ্চা আমি কিন্তু তোকে..?

-"কি করবেন মা*রবেন? আমার হাত নেই বুঝি?

-"তুই দেখছি সব সীমা পেরিয়ে গেছিস।আজ একবার বাসায় ফিরি তারপর তোর হবে।

-"কচু হবে আমার...এত ফালতু কথা না বলে বাইক স্টার্ট দিন তো...

আদি আর কিছু না বলে ড্রাইভ শুরু করল আদিবা তাকে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে যাতে আদি তাকে কোনভাবে ফেলে দিতে না পারে। উপড়ে উপড়ে রাগ দেখালেও আদি ব্যাপারটা বেশ উপভোগ করছে। আদিবা তার সাথে মিশে আছে ভাবতেই ভাল লাগা কাজ করছে। দেখতে দেখতে বাসায় পৌঁছাল তারা। বাইক থামিয়ে ধমক দিয়ে বলল,

-"এবার তো ছাড়বি নাকি?

আদিবা ছেড়ে দিয়ে নিচে নেমে দাঁড়াতেই আদি রাগি চোখে তাকাল আদিবার দিকে তাতে আদিবার বয়ে গেছে সে মুখে ভেংচি কেটে গিয়ে কলিংবেল চাপল।
আদিবা ভালমতই দাঁড়িয়ে ছিল কিন্তু দরজা খোলার সাথে সাথে মুহুর্তেই যেন সব বদলে গেল আদি এসে আদিবাকে টেনে ভিতরে গিয়ে সোফায় ছুঁড়ে ফেলে আদিবা অবাক হয়ে তাকাল সাথে সাথে আদি চেঁচেয়ি উঠল

-"সাহস হল কী করে বাসা থেকে বের হওয়ার?

আদি আর আদিবাকে একসাথে বাসায় ঢুকতে দেখে সবাই ভূত দেখার মত চমকাল।আদিবার ফিরে আসাটা কেউ ভালভাবে নেয় নি কিন্তু আদির রাগের মাঝে কিছু বলার সুযোগ পেল না কেউ।

-"সবাই একটা কথা কান খুলে শুনে নাও আজ আদিবার খাওয়া বন্ধ এমনকি একফোঁটা পানিও আর আজকের পর ও বাসার বাইরে তো দূর,আমার পারমিশন ছাড়া নিজের রুম থেকে বের হলে আমি পা ভেঙে দিব যেন আর কোনদিন হাঁটতে না পারে

-"আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন কিসব আবল তাবল বলছেন?

-"ওহ আমি আবল তাবল বলছি? রাস্তায় যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটত তার দায় কে নিত?

-"আমার লাইফ আমার ইচ্ছেয় চলবে। আমি কোথায় যাব কখন যাব আপনাকে কইফত দিতে হবে কেন?

-"তাই নাকি তুই তাহলে সত্যি সত্যি মুখে মুখে তর্ক শিখে গেছিস? আচ্ছা সমস্যা নেই তোর চাপা কি করে বন্ধ করতে হয় আমার ভাল করেজ জানা আছে।বলে আদি,আদিবার হাত ধরে টানতে লাগল। আদিবার সাথে সাথে বাসার অন্যরাও অবাক হয়ে তাকাল কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারল না।

আদি আদিবাকে টানতে টানতে নিয়ে আবারো ওয়াশরুমে ছুড়ে ফেলে দিল এবার আদিবা ব্যাথা পেয়েছে তাই রাগী চোখে তাকাল আদির দিকে।

-"কী হয়েছে এখানে নিয়ে এসেছেন কেন?

-"তুই আজ সারা রাত এখানেই থাকবি এটা তোর শাস্তি...

-"কেন আমি কি করেছি..?

-"বসে বসে চিন্তা কর..

বলে আদি দরজা লাগিয়ে দিল সাথে সাথে আদিবা চেঁচিয়ে উঠল,

পড়ুন  মুখোশ – রহস্যময়, রোমান্টিক প্রেমের গল্প পর্ব ২ | মোনা হোসাইন

-"দরজাটা খুলুন এর ফল কিন্তু ভাল হবে না বলে দিচ্ছি। আমি আপনার সব কথা মানব এর কোন মানে নেই।

-"গলা নিচে আমি এখন ঘুমাম একটাও টু শব্দ যদি করিস এখানেই পুঁতে রেখে দিব।

-"নিজেকে ভাবেন টা কী হ্যা...?

-"ভাবাভাবির কিছু নেই আমি তোর জীবনের মালিক।এই জীবনে আমার হাত থেকে তোর রক্ষা নেই। তোর জীবনে সেটাই ঘটবে যেটা আমি বলব।

-"রাক্ষস একটা...

-"কি বললি তুই...?

-"বলেছি বেশ করেছি আজ যদি আমাকে শাস্তি দেন আগামীকাল আপনার সাথে যা ঘটবে তার জন্য আমাকে দায়ী করবেন না বলে দিলাম।

আদিবার কথা শেষে হওয়ার আগেই ওয়াশরুমের লাইট অফ হয়ে গেল। সাথে সাথে আদিবার মুখও বন্ধ হয়ে গেল।

-"কিরে চুপ হয়ে গেলি কেন চেঁচা এখন যত খুশি চেঁচা...

-"আ আ আমি.. অ অ অ অ...অন্ধকার ভয় পাই আ আ আ আপনি জানেন ত ত ত বুও...

-"আহা হা ময়না পাখিটা আমার। তোমার জন্য আমার তো অনেক দরদ উতলে পড়ে তাই? ভয় পাচ্ছো শুনে মজনু হয়ে সাত সাগর তেরো নদী পেরিয়ে দরজা খুলতে যাব তাই না? তুই মরলি কি বাঁচলি তাতে আমার কী?

-"আ আ আ আপনি একটা অ অ অমানুষ...

-"এখানো মুখে মুখে কথা বলে যাচ্ছিস...?সাহস তো কম না...

-"দরজাটা খুলুন প্লিজ...

-"লক্ষি মেয়ের মত ক্ষমা চা আর বল আর কখনো আমার অবাধ্য হবি না আমি যা বলব তাই করবি যদি বলার ধরন টা পছন্দ তাহলে দরজা খুলে দিব...

আদিবা উপায় না পেয়ে তাই করল,

-"ক্ষমা করে দিন ভাইয়া আর কখনো তর্ক করব না।

আদিবা ক্ষমা চাওয়ার পরেও আদি দরজা খুলছে না দেখে আদিবা আবার বলল

-"কি হল খুলছেন না কেন? ক্ষমা চাইলাম তো।

-"বলার ধরন পছন্দ হয় নি তাই খুলব না। মিষ্টি করে বলতে পারিস নি।

-"আমি আপনাকে অভিশাপ দিলাম আপনার কোনদিন বক্যে হবে না...

-" বিয়ে ছাড়া বাচ্চা নিতে আমার তো কোন অসুবিধে নেই যদি তোর না থাকে...

-"ক ক কী বলছেন এসব...?

-"যা শুনেছিস তাই বলেছি....

পরবর্তী পর্বের জন্য ক্লিক করুন :>> চলবে

Writer :- মোনা হোসাইন

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Home
Stories
Status
Account
Search
Scroll to Top