Golperjogot

Golperjogot

beporoya valobasha romantic premer golpo part 37

বেপরোয়া ভালোবাসা – পর্ব ৩৭ রোমান্টিক গল্প | মোনা হোসাইন

   বেপরোয়া ভালোবাসা

     Mona Hossain { Part 37 }


-"এখান থেকে পড়লে মরার সম্ভবনা নেই বড়জোর হাত পা ভাঙতে পারে।

আদির কন্ঠে ধ্যান ভাঙল আদিবার। হকচকিয়ে তাকাল তার দিকে। এই আদির বোধহয় আদিবার শান্তি সহ্য হয় না তাই আদিবা কিছু না করলেও জ্বালাতে চলে আসে বারবার। এতসব কাহিনী আদিবার আর ভাল লাগছে না তাই একটু দম নিতে ছাদে এসেছিল আদির সেটাও সহ্য হয় নি। আদিবা গিয়ে দাঁড়ানোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেও গিয়ে হাজির হল আদিবা রেলিং এর পাশে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে আর নিজের অবস্থার কথা ভাবছিল হটাৎ আদি পিছন থেকে এমন কথাউ বলে উঠল।আদিবা ভ্রকুচকে বলল,

-'কি বললেন..?

-"বল্লাম সু*সাইড এর চেষ্টা টা বরং বাদ দে...কারন চেষ্টা করে লাভ নেই আমি তোকে এত শান্তিতে মরতে দিব না।

-"আপনার ঠিক কী কারনে মনে হল আমি মরতে চাই..?

-"এই বিয়েতে তোর মত নেইবআমি জানি, জেদ দেখিয়ে রাজি হয়েছিস। এখন বুঝতে পেরেছিস ভুল করে ফেলেছিস কিন্তু তোর ঘাড়ের রগ দুটো তো ত্যাড়া তাই নিজের ভুল স্বীকার করতে পারবি না সেই জন্যে এখন আত্মহত্যা কর ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করবি তাই তো..?

-"এত অদ্ভুত কথা আপনার মাথায় আসে কী করে কে জানে..?শুনুন নাতো আমি জেদ দেখিয়ে রাজি হয়েছি আর নাত এখানে সু*সাইড করতে এসেছি।
আর আমি জীবনে যত ভুলেই করিনা কেন কখনো আত্মহ*ত্যার মত জঘন্য কাজ কখনো করব না।

-"আলহামদুলিল্লাহ শুনে ভাল লাগল কিন্তু তুই বরাবরই ন্যাকা টাইপের মেয়ে তাই তোর কথার কোন ভরসা নেই।

-"আচ্ছা আপনি কবে আমার পিছু ছাড়বেন বলুন তো..?

-"আমি ইচ্ছে করে এসেছি নাকি?তুই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ম*রে গেলে আমি ফেঁসে যাব না? তাই তো আসতে বাধ্য হয়েছি।

ভাল করেছেন এখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আকাশের তারা গুনুন আর আমাকে যেতে দেন।

বলেই আদিবা পা বাড়াল। আদি পিছন থেকে গম্ভির গলায় বলে উঠল,

-"আদিবা সামনের শুক্রবার তোর বিয়ের দিন ঠিক করা হয়েছে।

আদির কথায় পা দুটো আটকে গেল আদিবার। পিছন ঘুরে তাকাল। আদি অন্য দিকে তাকিয়ে কথাটা বলেছে। তবে আদির মধ্যে ফাযলামি আচারনটা আর নেই। সে যেন এক মুহূর্তেই বদলে গিয়েছে চঞ্চলতা বিলিন হয়ে মুখ কালো হয়ে এসেছে।আদির কি মন খারাপ লাগছে জানতে ইচ্ছে করল আদিবার। কিন্তু আদি তার দিকে তাকায় নি তাকিয়ে আছে ছাদের ওপাশ টায়। আদিবা কি বলবে,কিভাবে বলবে ভাবতে ভাবতেই

আদি আবারো নীরব গলায় প্রশ্ন করল,
-"তোর কী আমাকে কিছু বলার আছে আদিবা..?

আদিবা উত্তর দিতে পারল না। অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করলেও কথাগুলো যেন কোথাও এসে আটকে যাচ্ছে মুখ ফুটে বের হচ্ছে না কথাগুলো। আদিবা ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে।

-"কিছু বলার নেই তাই না..? কী বা বলবি তোর তো আমার সাথে কথা বলতেই ইচ্ছে করে না। আমিই বেহায়ার মত তোর পিছন পিছন ঘুরি। তোকে ডিস্টার্ব করি। যাইহোক তুই এখন যেতে পারিস..

আদিবা ফিরল না দাঁড়িয়ে রইল। আদি বেশকিছুক্ষন নীরব মূর্তির মত দাঁড়িয়ে রইল। হটাৎ পিছন ঘুরে আদিবাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চেঁচিয়ে উঠল

-"তোকে যেতে বললাম না গেলি না কেন? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী দেখিস..?

আদির ধমকে ভিতরটা কেঁপে উঠল আদিবার..
-"আ আ আমি মানে...

-"নাটক করতে খুব ভাল লাগে তাই না? তোর এই সহজ সরল চেহারার পিছনে লুকানো বিষাক্ত চেহারাটা দিন দিন আমার জীবন টা অতিষ্ঠ করে তুলছে..

-"আমি বিষাক্ত..?

-"তোর কী তা মনে হয় না? জানিস আমি সবচেয়ে বেশি ঘৃনা করি কাদের? যারা মুখে মধু অন্তরে বিষ রেখে চলে..

-"মানে..?

-"তুই কতটা জেদি সেটা আমার চেয়ে ভাল বোধহয় কেউ জানে না। তুই তোর জেদ রাখতে খুন করতেও দুবার ভাব্বি না। তোর সাথে সারাজীবন পার করা যাস্ট অসম্ভব। তোর সাথে থাকলে হয় তোকে খুন করতে হবে অথবা নিজেকে

-"আমি এতটাই...

-"হ্যা তুই এতটাই বিষাক্ত..

-"আর আপনি..? কখনো আমাকে এতটুকু শান্তি দিয়েছেন..?

আদি আবাবো চেঁচিয়ে উঠল

-"নাহ দেই নি৷ আমি খারাপ এই দুনিয়ার সবচেয়ে খারাপ ছেলে আমি...আমার সাথে থাকা যায় না জন্যেই তো আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলি..

-"আমি বের করে দিয়েছিলাম?

-"বাধ্য করেছিলি। আমাকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করিছিলি আমি তোর দুমুখো আচারন মেনে নিতে পারিনি জন্যেই চলে গিয়েছিলাম।যাইহোক তুই এখন এখান থেকে যা প্লিজ...

-"আমি তো যেতেই চাই। আপনি যেতে দিচ্ছেন কোথায়? আমাকে প্লিজ আপনার ছায়া থেকে মুক্তি দিন।

আদি আর কিছু না বলে এসে ঘাড় থাক্কা দিয়ে আদিবাকে বের করে দিয়ে ছাদের দরজা লাগিয়ে দিল।

আদিবা কথা বাড়ল না ছল ছল চোখে নেমে আসল। আদির ব্যবহারে কষ্ট পেল আদিবা আর যাইহোক এটাকে ভালবাসা বলে না এক মুহুর্তে ভাল পরমুহূর্তে ঘাড় ধাক্কা এটা কিছুতেই ভালবাসা হতে পারে না।আদিবা সারারাত চোখের জলের সাথেই কাটিয়ে দিল।



পরদিন সকালে খাবার টেবিলে সবাই আসলেও আদি কিছুতেই আসতে চাচ্ছিল না জুই এক প্রকার জোর করে নিয়ে এসেছে। আদিবা সবাইকে নাশতা দেয় প্রতিদিনের মত আদির পাতে খাবার দিল কিন্তু সাথে সাথে আদি উঠে গেল। আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বেরিয়ে গেল। আদিবার খারাপ লাগলেও আদির এমন ব্যবহারের কারন খুঁজে পেল না। কী হচ্ছে এসব আদি কেন এমন করছে আর বোধগম্য হচ্ছে না।

দেখতে দেখতে সকাল গড়িয়ে বিকেল৷ বিকেলে আদি বাসায় ফিরল।আদি বাসায় ফিরলেও বাসার কারো সাথে কোন কথা বলেনি নিজের চলে গিয়েছে। আদি সারাদিন খায়নি ব্যাপারটা আদিবা মানতে পারেনি তাই আদি ঘরে যাওয়ার কিছুক্ষন লর আদিবা প্লেটে খাবার নিয়ে আদির ঘরে গেল।আদিবাকে দেখেই আদি রাগে তেঁতে উঠল,

-"কী চাই..?

-"আপনার খাবারটা...

-"আমি তো খাবার চাইনি। আমাকে প্লিজ রাগাসনা আদিবা...

আদিবা কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনী অরিনের গলা ভেসে আসল,
-"আদিবা দেখে যা তোর জন্য কত কিছু এসেছে...

আদিবা অরিনের কথায় কান দিতে চাইবে তার আগেই আদিত্য আদিবাকে নিয়ে বের হয়ে আসল।

নিচে নেমে আদিবা অবাক হল। তার বিয়ের তথ্য এসেছে শাড়ি থেকে শুরু করে দামি দামি
অলংকার, মেকাপ সামগ্রী সব আছে। জুই সাদিয়া অরিন সবাই সবকিছু খোলে খোলে দেখছে আদিবা নিজেও এগিয়ে গিয়ে জিনিসগুলোতে চোখ বুলিয়ে আদির দিকে তাকাল।

আদি মুখে হতাশার হাসি টেনে বলল,
-"বলেছিলাম না ওই পরিবারে বিয়ে হলে আদিবা রাজরানী হয়ে থাকবি। আদিবা তোর সবকিছু পছন্দ হয়েছে তো বলে আদি আবারো বের হয়ে গেল।

কিন্তু এবার আর ফিরার নাম নিচ্ছে না সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। রাত থেকে মধ্যরাত আদির খোঁজ নেই বাসার সবাই তাতে মাথা না ঘামালেও আদিবার মনে শান্তি নেই। সবাই ঘুমিয়ে গিয়েছে তবে আদিবার চোখে ঘুম নেই সে বসে বসে আদির জন্য অপেক্ষা করছে। ঘড়ির কাঁটায় রাত ১ টা বেজেছে কিন্তু আদির ফিরার নাম নেই দেখে আদিবার মন খচ খচ করতে লাগল তখন হটাৎ হেলতে দুলতে বাসায় ঢুকল আদিত্য। আদি ঠিকমত দাঁড়াতে পারছে না এখানে ওখানে ধাক্কা খেতে খেতে এগিয়ে আসছে। আদি পড়ে যাচ্ছিল দেখে আদিবা দৌড়ে গিয়ে আদিকে ধরল। আদি পিট পিট করে তাকিয়ে বলল,
-"আ আ আ আদিবা ঘুমাস নি এখনো...?

আদিকে এই অবস্থায় দেখে আদিবার রাগ হচ্ছে নাকি খারাপ লাগছে নিজেই বুঝতে পারল না কিন্তু ঘৃনাভর্তি অনুভুতি নিয়ে বলে উঠল,

-"আপনি মদ খেয়েছেন..? লজ্জা করল না এমন একটা কান্ড ঘটাতে..?

আদি টলতে টলতে আদিবাকে নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে চেঁচিয়ে উঠল,

-"না লজ্জা করছে না আমার লজ্জা করছে না আমি আর এসব নিতে পারছি না। আমি তোকে ভুলতে চাই। আমি বাঁচতে চাই আদিবা আমাকে তুই তোর মায়াজাল থেকে মুক্তি দে প্লিজ...আ আ আমাকে নিয়ে আর খেলিস না...

পড়ুন  লাভার নাকি ভিলেন সিজন ২ – পর্ব ২৪ থ্রিলার গল্প | মনা হোসাইন
পরবর্তী পর্বের জন্য ক্লিক করুন :>> চলবে

Writer :- মোনা হোসাইন

About The Author

Home
Stories
Status
Account
Search
Scroll to Top