Golperjogot

Golperjogot

বেপরোয়া ভালোবাসা – পর্ব ৩৮ রোমান্টিক গল্প | মোনা হোসাইন

Beporoya Valobasha

Mona Hossain { Part 38 }

আমি কখনো আপনার কথার অবাধ্য হই নি,হতে পারিনি আপনি সবসময় যা চেয়েছেন আমার সাথে তাই করেছেন তবুও আমি বিষাক্ত? আমি আপনাকে কষ্ট দিচ্ছি, আপনাকে নিয়ে খেলছি…? শুনেছি মাতাল অবস্থায় সবাই নাকি সত্যি বলে, আপনি সত্যিই আমাকে মন থেকে চান না জন্যেই এগুলো বলছেন ঠিক আছে আমি যেহেতু আপনার কষ্টের কারন তখন আমি এবার সত্যিই আপনাকে ছেড়ে চলে যাব। আমি আর আপনার কষ্টের কারন হতে চাই না…

আদিবা কি কি বলেছে আদির কানে পৌঁছায় নি সে নেশায় বুঁদ হয়ে আছে। আদিবা আদিকে কোন রকম ঘরে নিয়ে গিয়ে শুয়িয়ে দিয়ে নিজের ঘরে ফিরে আসল…।​কেটেছে দিন,আদিবার সাথে আদি কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। আজকাল তেমন জ্বালায় না আদিবাকে বেশির ভাগ সময় বাসার বাইরে থাকে। সকাল বেলা বেরিয়ে যায় আর রাতে ফিরে. বাসায় তেমন থাকে না। আদিবাকে সে মোটামুটি এড়িয়ে যাচ্ছে আদিবাও নিজেকে আদির কাছ থেকে গুটিয়ে নিয়েছে।

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে বাসার সবাই এই বিয়ে নিয়ে কিঞ্চিত চিন্তিত । আর দুদিন পরেই বিয়ে আদি নিজের হাতে সব জোগাড় করছে।এসবের মাঝে জুঁই আর সাদিয়া কিছুতেই সুখী হতে পারছে না। বাসায় গায়ে হলুদের আয়োজন হচ্ছে দেখে সাদিয়া আর চুপ থাকতে পারল না সে সুযোগ বুঝে মাতের ঘরে গেল।আর জুই গেল আদিবার ঘরে।

ঘরে ঢুকে সাদিয়াকে দরজা বন্ধ করতে দেখে শাহানা বেগম ভ্রু কুচকালেন

-“কিছু বলবি..?

-“মা তুমি কিছু বলছো না কেন? আদিবা আপু সত্যি এমন একজনকে বিয়ে করবে..?

-‘এখানে আমার কী বলার আছে আদি যা ভাল বুঝবে তাই করবে।

-“মা হিসেবে তোমার কোন দায় নেই..?

-“এমনভাবে কথা বলছিস যেন আদিবাকে হাত পা বেঁধে জলে ফেলে দেয়া হচ্ছে।

-“এটাকে জলে ফেলা বলে না?এত বয়স্ক একজনের সাথে বিয়ে,?

-“পুরুষ মানুষের আবার বয়স কিরে? মেয়েরা কুড়িতেই বুড়ি। দেখবি বিয়ের পর ঠিক মানিয়ে নিয়েছে তাছাড়া দেখেছিস পাত্রের বাড়ি থেকে কত কত গয়না পাঠিয়েছে? আদি নিজেও তো তোকে এত গয়না দিতে পারবে না।

-“মা চুপ করবে তুমি? তোমার কী মনে হয় ভাইয়া এমন জঘন্য একটা অন্যায় করার পর আমি উনাকে বিয়ে করব?

-“চুপ একদম চুপ বিয়ে করবি না এই কথা যদি আর একবার মুখে এনেছিস তো তোকে আমি…আদির মত ছেলে লাখে একটা মিলে।

-“মা তুমি কী মানুষ? সেই ছোটবেলা থেকে আপুর সাথে অন্যায় করে আসছো আজও নিজেকে বদলাতে পারলে না?

-“এত চ্যাটাংচ্যাটাং কথা যে বলছিস আদি যদি আমাদের উপড় থেকে হাত তুলে নেয় কি হবে বুঝতে পারছিস?তাছাড়া এর চেয়ে ভাল পাত্র তুই খুঁজে বের করতে পারবি? পারবি যৌতুক ছাড়া মেয়ে পার করতে…?

-“তোমার সাথে কথা বলে লাভ নেই। আপু ঠিকি বলত ও তোমার নিজের মেয়ে না সৎ মেয়ে। নিজের মা এমন স্বার্থলোভি হতে পারে এটা ক*ষমিন কালেও কেউ ভেবেছে কী? আমি ভাইয়াকেই এবার জিজ্ঞাসা করব তিনি কেন এমন করছেন।

-‘খবরদার সাদিয়া এই নিয়ে তুই বাড়াবাড়ি করবি না। ভালয় ভালয় সব মিটে গেলে আমি নিশ্চিন্ত হব

সাদিয়া আর কিছু না বলে বাইরে চলে গেল..

এদিকে জুই আদিবার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে বলল,

-“আসব আপু..

আদিবা ঘাড় ঘুড়িয়ে জবাব দিল

-“এসো..কিছু বলবে..?

জুই সাথে সাথে আদিবার হাত ধরে বলতে লাগল

-“আদিবা আপু তুমি সত্যিই এই বিয়েতে রাজি?

-“মিথ্যা হবে কেন?

-“জীবন টা ছেলে খেলা নয় তুমি ভাইয়ার জেদের কাছে নিজেকে ব*লি দিচ্ছ কেন?

-“ভাইয়া আমার ক্ষতি করতে চাইছে এটা তোমাকে কে বলল? আমার মনে হয় না কোন কারন ছাড়া উনি বিয়ে দিতে চাচ্ছেন।

-“মানে..?

-“ভাইয়া কিছুটা বেপরোয়া টাইপের তাই বলে পা*গল নন উনি শুধুমাত্র জেদের জন্যে এমন একটা সিধান্ত নিবেন না আমি জানি। হয়ত এতে আমার ভাল হবে তাই এমন করছেন।

-“এতে কী ভাল হবে? আমি তো কোন ভাল দিক দেখতে পাচ্ছি না। আমার তো মনে হচ্ছে ও তোমার জীবন টা নষ্ট করে দিতে চাইছে।

-“আমার জীবন নষ্ট করে উনার কি লাভ? এসব নিয়ে এত ভেবো না। যাও বাইরে গিয়ে আনন্দ করো মেহমান আসতে শুরু করেছে।

-আপু…

-“তুমি এখন যাও জুই আমি রেডি হব।

জুই কিছু না বলে চলে গেল আদিবা নিজেই নিজেকে বলে উঠল,-“আপনি যদি আমায় এই অবস্থায় দেখে খুশি হন আমি আপনার খুশিতে বাঁধা দিব না। আপনার জন্য 6 বছর বিসর্জন দিতে পেরেছি বাকি জীবনটাও পারব। আপনি যা চান তাই হবে।যার সাথে বিয়ে দিতে চান তার সাথেই হবে। বাবার বয়সী একজনের সাথে বিয়ে দিয়ে আপনি যদি খুশি হতে পারেন তাহলে আমিও পারব মেনে নিতে। আমার যত কষ্টই হোক আমি মেনে নিব।

বাসায় পেন্ডেলের সব কাজ শেষ আদি সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরে অরিনকে ডাকল,-“ভাইয়া ডাকছিলে..?

-“হুম গায়ে হলুদের তত্ত্ব এসেছে নিয়ে যা আদিবার ঘরে দিয়ে আয়।

অরিন বাধ্য হয়ে জিনিসপত্র গুলো আদিবার ঘরে রেখে আসল। বেশ কিছুক্ষন পরেও আদিবা নিচে আসছে না দেখে আদি নিজেই গেল আদিবার ঘরে। গিয়ে সরাসরি ঘরে ঢুকল না। দরজায় কড়া নেড়ে বলল,

-“আসতে পারি..?

আদির কন্ঠ শুনে ভিতরটা ধ্বক করে উঠল আজ ছয়দিন পর আদি,আদিবার ঘরে এসেছে। আদিবা নিজের অজান্তেই ব্যাস্ত গলায় বলল,

-“আসুন..

আদিবার দৃঢ় বিশ্বাস আদি বলবে তুই এই বিয়ে করিস না কিন্তু আদি ঘরে ঢুকতেই আদিবা অবাক নয়নে তাকাল,দুধসাদা শরীরে হলুদ পাঞ্জাবি,যেন আদির সৌন্দর্যকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

আদিকে এই সাজে দেখে ভিতরটা কেন যেন কেঁপে উঠল। আদিবার এই প্রথমবার মনে হল ভিতরটা যেন শুন্য হয়ে আসছে কিছুক্ষন আগে পর্যন্তও আদিকে ছেড়ে যাওয়ার শংকা কাজ করছিল না।মনে হচ্ছিল সে এসে বলবে এই বিয়ে হবে না কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আদি সত্যিই এই বিয়ের ব্যাপারে সিরিয়াস। আদিবার মানতে কষ্ট হচ্ছে আজ থেকে আদি নামক ব্যাক্তিটির উপড় থেকে তার অধিকার পুরোপুরি মুছে যাবে..আদিবা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে দেখে আদি বলল,-“রেডি হোস নি যে…

মনের মাঝে এক আকাশ বিষন্নতা চাপা দিয়ে আদিবা জবাব দিল,-“এই তো হব।

-“হুম তাড়াতাড়ি কর, ওই বাসা থেকে লোকজন চলে এসেছে সবাই অপেক্ষা করছে একটু তাড়াতাড়ি গেলে ভাল হয়।

আদিবা,আদির দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করল আদির মাঝে কী তাকে হারিয়ে ফেলার কোন ভয় কাজ করছে না?

-“নাহ আদির চোখে মুখে বিষন্নতার কোন ছাপ নেই। নেই কোন ভয় বা সংকোচ সে দিব্বি আছে।

-“আদিবা বিয়ের আয়োজন শেষ আশা করছি তুই আমাদের মানসম্মান নিয়ে খেলবি না।

আদির কথায় কষ্টে ভিতরটা ফেঁটে যাচ্ছে আদি কি করে এত নিষ্ঠুর আচারন করছে? আদিবার চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ল। মনের মাঝে দীর্ঘদিনের চেপে রাখা ভালবাসার মৃত্যু হল এবার শুধু কবর দেয়ার অপেক্ষা। আদি সেদিকে নজর দিল না আরো একবার তাড়া দিয়ে বেরিয়ে গেল।

আদিবা নিজের মনকে শক্ত করে তৈরি করে নিচে নামল।সাথে সাথে আদি জুই আর অরিনকে আদেশ দিল আদিবাকে প্যান্ডেলে নিয়ে যেতে। সাদিয়ার মেজাজ বেজায় খারাপ হয়ে আছে কিন্তু আদির ধমকা ধমকিতে সেও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করছে।

প্যান্ডেল গিয়ে স্টেজে বসে আদিবা অবাক হল। মন খারাপ থাকায় আজ সে নিজের ঘর থেকে বের হয়নি তাই এখন এখানে এসে অবাক হয়েছে।তার বিয়ে উপলক্ষের এত জমকালো আয়োজন করা হবে কে জানত…আদি তাহলে সত্যিই বেশ বড়লোকের সাথে তার বিয়ে ঠিক করেছে।কিন্তু সে কি কখনো জানতে পারবে আদিবা টাকা পয়সা সম্পত্তি কখনোই চায় নি চেয়েছিল আদিত্যকে…

আদিবা বসতে বসতেই আদি ফোনে কথা বলতে বলতে স্টেজে আসল। সে ফোন কানে রেখেই বলল

-“কাকিয়া কোথায়? এসো তুমি হলুদ দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করো। তার পর বাবা মা…

আদি আজ বিশাল ব্যাস্ত এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। আদির বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে আত্নীয় সবাইকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে সবাই একে একে আদিবাকে হলুদ দিচ্ছে। আদি ঘুরে ঘুরে সবার আপ্যায়ন করছে। আদিবা বার বার আদিকে দেখছে। কথায় আছে মন খারাপ থাকলে সব কিছুই খারাপ লাগে। আদিবারো ঠিক তাই হচ্ছে হটাৎ করেই শরীর খারাপ লাগছে। তারউপড় সবাই মিষ্টি খায়িয়ে দিচ্ছে। আদিবার একদমি ভাল লাগছে না কিন্তু এই অবস্থায় নিষেধ এই বা কি করে করবে..?তাই বাধ্য হয়ে খাচ্ছে…অনুষ্টানের এক পর্যায়ে আদির বন্ধুরা হলুদ দিবে তারা স্টেজে গিয়েই আদিকে ডাকতে লাগল।

-“আদি অনেক হয়েছে এবার স্টেজে আয় একসাথে ছবি তুলি।

আদি ব্যাস্ততাকে ছুটি দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে স্টেজে এসে আদিবার পিছনে দাঁড়াল..ছবি তুলা হল। ছবি তুলা শেষে আদির বন্ধু ফয়সাল বলে উঠল

-“আদিবাকে একটু হলুদ দিয়ে দে…

আদি হেসে উঠল-“ধুর সা**লা কি বলিস? আমি হলুদ দিব কি করে..?

-“এট লিস্ট একটু মিষ্টি মুখ করিয়ে দে…

-“তা দেয়া যায়,এই আদিবা হা কর তো…বলেই আদি আদিবার মুখে মিষ্টি দিয়ে দিল।

আদিবার গা গুলিয়ে উঠল। আদিবা তাড়াতাড়ি মুখ চেপে ধরল আদি নিশ্চুই রাগ করেছে। সে নিশ্চুই ভেবেছে আদিবা ইচ্ছে করে এমন করল। আদিবা ভিতু চোখে আদির দিকে তাকাল। আদি তাকে অবাক করে দিয়ে বলল,

-“বমি পাচ্ছে…?

আদিবা উত্তর দেয়ার ভাষা খুঁজে পেল না। নিজের উপড় নিজেরেই রাগ হল। এখনী গা গুলিয়ে উঠতে হল…?তার সাথে সবসময় এমন হয় কেন?

-“আশ্চর্য এভাবে মুখ চেপে রেখেছিস কেন?

আদিবা মুখ খুলে কিছু বলতে চাইল কিন্তু পারল না। মুখ খুলতেই-“ভ ভ ভাই….ইয়াক

আদি তাড়াতাড়ি আদিবাকে টেনে সাইডে নিয়ে গেল। আদিবা বসে বসে বমি করছে আদি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছে। আদিবা উঠে দাঁড়িয়ে ভীতু কন্ঠে বলল,-“আমি ইচ্ছে করে করিনি। আমি এমন করতে চাইনি ভাইয়া..প্লিজ মারবেন না।

-“আমাকে কী তোর মাথামোটা মনে হয়? ইচ্ছে করে কেউ কিভাবে বমি করতে পারে?

আদির কথায় আদিবা রীতিমতো অবাক হল।এমন একটা ঘটনার পরেও আদি রাগ না করে ঠান্ডা মাথায় কথা বলছে কী করে সম্ভব? আদি এত বুঝদার কবে হল আদিবার মাথায় ঢুকল না।

আদি এক বোতল পানি এগিয়ে দিয়ে বলল,-একা একা যেতে পারবি নাকি ঘরে দিয়ে আসতে হবে…?

আদিবা উত্তর দিল না আদি কিছু না বলে আদিবাকে কোলে তুলে নিল। আর সবার সামনে দিয়েই নিয়ে গেল। আদির আচারনে আদিবা অবাক হল। এই প্রথমবার আদিবা অসুস্থ হওয়ার পর আদি তাকে না মেরে কেয়ার করছে। আদিবা মনে মনে শান্তি পেল ইচ্ছে হল আদিকে বলতে সে সারাজীবন তার সাথেই থাকতে চায়। কিন্তু আদিবার সেই আশায় জল ঢেলে দিল আদি সে আদিবাকে নিয়ে গিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেল আর আদিবাকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে নিজের বের হয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিল। আদিবা আবারো এক দফায় অবাক হয়ে বলল,

-“ভ ভ ভাইয়া কী করছেন…

সাথে সাথে আদিত্য ওয়াশরুমের লাইট অফ করে দিয়ে বলে উঠল,”খারাপ লাগলে সেটা মুখ ফোটে বলতে হয়। কেউ তো মন বিশারদ নয় সে তোর মনের কথা বুঝে ফেলবে..মিষ্টি খেতে অসুবিধে হচ্ছিল বললি না কেন..? যাইহোক আপাতত এক ঘন্টা অন্ধকারে থাকলে আর এমন হবে না।

-” আপনি কী মানুষ..?

-“এক প্রশ্ন কতদিন করিস?

-“দরজাটা খুলুন…

-“এক ঘন্টার এক মিনিট আগেও খুলব না।

-“আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল আমি আপনার পরিবারে জন্মেছি।

-“এই ভুল শুধ্রানোর কোন উপায় যেহেতু আপাতত নেই তাই চুপচাপ থাক। আমি যাচ্ছি এক ঘন্টা পর আদব

-“যাবেন না প্লিজ দরজাটা খুলুন…

কে শুনে কার কথা আদি বাইরে চলে গেল। আর এক ঘন্টা পর ফিরে এসে দরজা খুলে দিল। আদিবার নাক মুখ লাল হয়ে গিয়েছে।রাগে ফুঁসফুঁস করছে।আদি দরজা খুলে দিয়ে বলল।

-“উঠুন উঠে নিজের ঘরে যান…

আদিবা উঠে বলল,-‘ভেবেছিলাম বিয়ে করে চলে যাব আপনাকে মুক্তি দিয়ে দিব কিন্তু না কার জন্য এত বড় সেক্রিফাইস করব? শোনোন আমি এই বিয়ে করব না। আপনার মত অমানুষের জন্য আমি আমার জীবন টা বিসর্জন দিব না।

আদিবা কথাটা শেষ করতেই আদি তার গাল চেপে ধরে বলে উঠল -“এই বিয়েতে যদি তুই কোন গন্ডগোল করিস তোর কপালে যে কি আছে..

-‘ কি করবেন আপনি..?আমি আপনাকে ভয় পাইনা বুঝেছেন? আমি বিয়ে করব না মানে করব না।

-“যদি তোকে মেরে লা*শ বানিয়ে বিয়ে দিতে হয় তাই দিব তবুও কাল তোর বিয়ে হবে।

বলে আদি আদিবাকে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিল।।। ।পরদিন যথারীতি বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে কিন্তু আদিবা বেঁকে বসেছে সে বিয়ে করবে না।কিছুতেই বিয়ে করবে না। সে বাসা ছেড়ে চলে যাবে এই নিয়ে আদিবার ঘরে সভা বসেছে।আদি তো রেগে আগুন।

-“কাকিয়া বরপক্ষ নিচে বসে আছে তুমি তোমার মেয়েকে বুঝাও আমি কিন্তু আর সহ্য করব না..

-“আপনাকে সহ্য করতে কে বলেছে? আমি বলেছি তো বিয়ে করব না আমার হাত পা খুলে দিন।কোন অধিকারে আমাকে বেঁধে রেখেছেন? আমি কী কয়েদি? খুলুন বলছি আমি এখান থেকে চলে যাব…

আদিবার কথা শুনে আদি তেড়ে আসল সাথে সাথে আদিবা ভয়ে পিছনে সরে গেল।

-“কি করবি তুই বাইরে যাবি তাই না? আচ্ছা দাঁড়া দেখছি তুই কোন পা দিয়ে বাইরে যাস.. বলেই আদি আশে পাশে কিছু খোঁজছে আদিবাকে মারার জন্য

ঠিক তখন আদির বাবা শক্ত কন্ঠে বললেন,-“থামো আদি তোমরা আর ছোট নেই যে এভাবে মা*রামা*রি কাটাকাটি করবে…আদিবা বিয়ে ঠিক করার আগে তোকে বার বার প্রশ্ন করেছিলাম তুই বিয়েতে রাজি কিনা তুই সবসময় উত্তর দিয়েছিস তুই রাজি তাহলে এখন এমন করার মানে কী..? তুই আমাদের মানসম্মান নিয়ে খেলতে পারিস না।

আহমেদ সাহেবের কথায় সুর মিলাল আদিবার মাও-‘ভাইজান ঠিকি বলছে। সব আত্মীয় স্বজন চলে এসেছে এখন কোন মুখে বিয়ে ভেঙে দিবে..?

-“তারমানে তোমরা সবাই চাও এই বিয়েটা হোক? আমার চেয়ে তোমাদের কাছে সম্মানের দাম বেশি?

আদিবা একরাশ অভিমান নিয়ে বলল-“বেশ সবাই যখন চাও তখন এই বিয়ে হবে…

আদিবা সেজেগুজে বিয়ের আসরে গিয়ে উপস্থিত হল।বিয়ে পড়ানো শুরু হল। কাজী সাহেব রেস্ট্রি পেপার এগিয়ে দিয়ে বললেন,

-“মা আপনি বিয়েতে রাজি থাকলে সাইন করে দিনআদিবা পেপারটা হাতে নিয়ে ছল ছল চোখে আদির দিকে তাকাল,-“কি করে পারলেন এতটা স্বার্থপর হতে? আমি আপনাদের সবার কাছে এতটাই বোঝা? বেশ দিলাম সবার ইচ্ছে পূরণ করে। আজ যে বের হয়ে যাব আর কোনদিন এই বাড়ির চৌকাট মাড়াব না।মনে মনে ভেবেই সাইন করে দিল আদিবা। সাথে সাথে সাথে আদি পেপার টা নিয়ে নিল আর নিজেও সাইন করে দিল।

আদিবা অবাক হয়ে তাকাল।সাথে সাথেই আদি বলে উঠল ফাইনালি তুই আমার লিগ্যাল ওয়াইফ হলি।আদির কথায় সবাই চরম মাপের অবাক হল আদিবা হতভম্ব হয়ে বলল,-“মানে..?

আদি হা হা করে হেসে উঠল,-“কি ভেবেছিলি এত সহজে আমি তোকে মুক্তি দিয়ে দিব? তিলে তিলে আমাকে যে কষ্ট দিয়েছিস তাত শোধ তুলব না? আজ থেকে দেখব তুই কি করে আমার হাত থেকে রেহাই পাস..একটা কথা কান খোলে শুনে রাখ দরকার হলে আমি তোকে রেখে আরও তিনটা বিয়ে করব তবুও তোকে ডিভোর্স দিব না।

আদির কথায় আহমেদ সাহেব রেগে গেলেন ধমক দিয়ে বললেন,-“এসব কী ধরনের তামাশা আদিত্য?

-“তামাশা হতে যাবে কেন? উনি মানে আংকেল আমার foster father মানে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আংকেল আন্টি আমাকে দত্তক নিয়েছিল। কেন নিয়েছিল সেটা লম্বা ইতিহাস এখন বলার সময় নেই।উনারাই আমাকে বিদেশে নিয়ে গিয়েছিল। যেদিন থেকে বিদেশে গিয়েছি সেদিন থেকেই আমার লক্ষ্য ছিল দেশে ফিরে আমি আমার প্রতিশোধ নিব।এই মেয়েটা আমাকে অনেক জ্বালিয়েছে এবার আমার পালা। আমি এবার ওকে দেখে নিব। হুজুর রেস্ট্রি তো হয়েই গেল এবার ধর্মীয় মতে বিয়ে পড়ান…

আদিবা রাগে কটমট করে বলে উঠল-“আপনার মনে হয় আমি আপনাকে বিয়ে করব?

-“নাতো মনে হয় না একেবারেই মনে হয় না। তুই সেচ্চায় আমাকে বিয়ে করবি না সেটা আমি জানতাম আর জানতাম বলেই এত নাটক করতে হল। হ্যা চাইলে জোর করে তোকে বিয়ে করতে পারতাম কিন্তু তোকে আমার সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য ক্লিয়ার, নির্ভেজাল বিয়ের ভিডিও আর ছবির দরকার ছিল। জোর জবরদস্তি করে বিয়ে করলে এজেন্সিতে বিয়েটা বৈধ হিসেবে বিবেচিত হত না।তাই তোকে নিয়ে গেলেও তুই সিটিজেনশীপ পেতি না। কিন্তু আমি তো তোকে আজীবন আমার সাথেই রাখব।আর তিলে তিলে কষ্ট দিব।নিজের লক্ষ্য পূরণ করার জন্য, ভিডিওটার জন্য এতক্ষন তোর ন্যাকামি সহ্য করেছি।এখন তুই আমার লিগ্যাল ওয়াইফ। আমি চাইলে যেকোন জায়গায় তোকে নিয়ে যেতে পারি কারোর সাধ্য নেই আমাকে আটকানোর।

-“আমি নিজের সম্মতিতে বিয়ে করিনি।

Related Story

-“তোর সম্মতির ধার ধারে কে? ইচ্ছেই হোক বা অনিচ্ছায় লক্ষী মেয়ের মত সাইন করেছিস এটাই যথেষ্ট ..তবে চিন্তা করিস না তুই এখন নিজের সম্মতিতে কবুল বলে বিয়ে করবি আর আজ রাতের ফ্লাইটে আমরা চলেও যাব। সেদিন তোকে রেস্ট্রি অফিসে যাইনি পাসপোর্টের ফাইনাল স্টেপের জন্য পাসপোর্ট অফিসে নিয়ে গিয়েছিলাম। আর আরও কিছুদিন আগে মানে যেদিন আইডি কার্ড নিয়েছিলাম সেদিনি তোর পাসপোর্টের এপ্লাই করেছিলাম পাসফোর্ট ভিসা সবি কমপ্লিট হতে একটু সময় লেগে গেল তানাহলে অনেক আগেই তোকে তুলে নিয়ে যেতাম যাইহোক এখন তোর সব কাগজপত্র রেডি এবার শুধু যাওয়ার পালা।আপাতত টুরিস্ট ভিসায় যাবি যাওয়ার পর বিয়ের ডকুমেন্ট জমা দিয়ে পার্মানেন্ট করে নিব।

-“সেগুড়ে বালি আমি আপনার সাথে কোথাও যাব না আর ধর্মমতে বিয়েও করব না বুঝেছেন..

-“করিস না কে বলেছে করতে?আমার কোন অসুবিধে নেই তুই তো আমায় চিনিস বিয়ের আগেই আমি যা যা করতে পারি আর লিগ্যাল একটা সার্টিফিকেট থাকার পরে কি করব আশা করি নতুন করে জানাতে হবে না।এখন তুই ভেবে দেখ কালিমা পড়ে বৈধ সম্পর্কে জড়াবি নাকি অবৈধ সম্পর্কে জড়াবি? আমি তো এক চুল পরিমাণও ছাড় দিব না বউয়ের কাছ থেকে যা যা আদায় করার সব আদায় করে নিব সে বিয়ে হোক আর নাই হোক। আশা করি তুই নিশ্চুই চাইবি না তোর বাচ্চা অবৈধ সম্পর্কের ফসল হিসেবে পৃথিবীতে আসুক তাই না? তুই সিধান্ত নিতে থাক কবুল বলবি কি বলবি না রাত ৯ টা পর্যন্ত টাইম আছে তোর হাতে। ৯ টার ফ্লাইটে চলে যাবি সারাজীবনের জন্য এই দেশে ছেড়ে পরিবার ছেড়ে শেষ সময়টুকু সবার সাথে আনন্দে কাটাবি নাকি আমার সাথে তর্ক করে সেটা তোর সিধান্ত।

পরবর্তী পর্বের জন্য ক্লিক করুন :>> চলবে

Writer :- মোনা হোসাইন