Golperjogot

Golperjogot

beporoya valobasha romantic premer golpo part 41

বেপরোয়া ভালোবাসা – পর্ব ৪১ রোমান্টিক গল্প | মোনা হোসাইন

   বেপরোয়া ভালোবাসা

      Mona Hossain { Part 41 }


-"এসেছিস থেকে কি করছিস, কি বলছিস কিছুই তো বুঝতে পারছি না..হটাৎ করে এত বদলে গেলি কি করে ..?

আদির কথায় আদিবা চোখ পিটপিট করে তাকাল...তারপর গাঁছাড়া ভাব নিয়ে জবাব দিল,
-"ওহ তারমানে মা*রবেন না? আমি আরও ভাবলাম মা*রবেন হয়ত,তাই অনুগ্রহ করে কিছুক্ষন পর ট্রাই করতে বলেছিলাম...
-"আবার ফাযলামি করছিস?
-"কই নাতো...
-" এমন অস্বাভাবিক আচারনের কারন কী..?মনে হচ্ছে যেন এই আদিবাকে আমি চিনিই না।

কথাটা শুনে আদিবা,আদির চোখে চোখ রেখে দৃঢ় অথচ শান্ত গলায় বলল,
-"আপনি এই আদিবাকে চিনেন খুব ভাল করেই চিনেন..আপনি সারাজীবন এই আদিবাকে নিয়েই স্বপ্নই দেখে এসেছেন। এতদিন যে আদিবাকে দেখতেন সেই আদিবাকে আপনি কখনো চান নি...
-"মানে?
-" কিছু না...
-"যা বলার সোজাসুজি বল ঘুরানো প্যাঁচানো কথা আমার ভাল লাগেনা।
-"আপনি এত পকপক করেন কি করে?এত কথা বাদ দিয়ে ড্রাইভ করুন..শপিং এ কখন যাব আর কখন ফিরব?
-"আমি আমার প্রশ্নের জবাব এখনো পাইনি..
-"আমিও জবাব দেইনি,দিবও না।
-"তুই কিন্তু বাড়াবাড়ি করছিস।
-"একদমি না বাড়াবাড়িটা আপনি করছেন বউকে তুই করে বলেন কিভাবে? সামান্য ভদ্রতাটুকুও শিখেন নি দেখছি...
-"তোকে এখন আমার আপনি করে বলতে হবে..?
-"বিয়ে যখন করেছেন আর পাঁচজন বউদের যে সম্মোধন করে আপনারো তাই করা উচিত।
-"আমি তোকে ভালবেসে বিয়ে করিনি তাই আমার কাছ থেকে এত কিছু আশা করিস না..
-"ভালবেসে করেন আর নাই করেন, করে যখন ফেলেছেন এখন আমাকে ভালবাসা বাধ্যতামূলক।
-"যদি না বাসি..?
-"বাসবেন না কেন?

আদিবার কথায় হাসি পেল আদির সে বহু কষ্টে হাসি চেপে বলল,
-"এখন পর্যন্ত ভালবাসা পাওয়ার মত কোন কাজ করেছিস? তারচেয়ে বড় কথা তুই আমার কাছ থেকে ভালবাসা পেতে চাস? তুই তো আমায় ঘৃনা করিস।

আদির কথায় গাঁ জ্বলে গেল আদিবার,এতকিছুর পরেও আদি ভালবাসার কথা স্বীকার করবে না?বেশ কতক্ষন স্বীকার না করে থাকতে পারে আদিবাও দেখবে। যতক্ষন না আদি নত স্বীকার করছে আদিবা তাকে একদম কাছে আসতে দিব না। আদির অহেতুক জেদ সে এবার ভেঙেই ছাড়বে মনে মনে সিধান্ত নিল।
-"কিরে কী ভাবিস..?
-"ভাবছি আমি আপনাকে ভালবাসব না অথচ আপনাকে ভালবাসতে বাধ্য করব।
-"জোর করে ভালবাসানো যায়..?
-"যাবে না কেন..?আপনি যদি জোর করে সব আদায় করতে পারেন আমি কেন পারব না..?
তাছাড়া ভাল না বাসলেও বউয়ের দায়িত্ব পালনে আপনি বাধ্য..
-"দায়িত্ব নিব না কখনো বলেছি নাকি দায়িত্ব নিতে আমার অসুবিধে নেই...আমি আমার দায়িত্ব পালন করব ইনফেক্ট একটু বেশিই ভালভাবে পালন করব।
-"সেটাই তাহলে এখন দাঁড়িয়ে আছেন কোন দুঃখে শুনি? গাড়ি স্টার্ট দিন শপিং মলে যেতে হবে। বউকে কিনা কাটা করে দেয়া ভাল বরের লক্ষন।

আদি এক গাল হেসে গাড়ি স্টার্ট দিল। গাড়িতে চলতে শুরু করেছে সাথে আদিবার মুখও। সে একনাগাড়ে কথা বলছে যেন মুখে খই ফুটছে,
-"জানেন আমি কখনো ভাবিনি আমার বিদেশে বিয়ে হবে।
-"তাহলে কী ভেবেছিলি? গ্রামে চেয়ারম্যানের ছেলের সাথে হবে?
-"বাহ আপনার স্মৃতি শক্তি তো চমৎকার আজও ভুলেন নি..?
-"ভুলার মত বিষয় হলে ভুলে যেতাম।
-"সেবার আপনি বাসা ছেড়ে না আসলে আমি এতদিনে অন্য কারো বউ থাকতাম।
-"সেই জন্যে তোর আমাকে ধন্যবাদ জানানো উচিত।
-"আপনার অ*ত্যাচা*রে অতিষ্ট হয়ে মা আমার বিয়ে দিতে চেয়েছিল। আর এখন ধন্যবাদ চাইছেন?
-"আমি এতদিন বাড়িতে থাকলে এই অ*ত্যাচার অব্যাহত থাকত ইনফেক্ট তোর বিয়েও হয়ে যেত।
-"ভালই তো হত চেয়ারম্যানের ছেলের তিন নাম্বার বউ হয়ে যেতাম এতদিনে।
-"কী? অন্যজনের বউ হওয়ার এত শখ?
-"তবে কী? সেদিন কী ভয় পেয়েছিলাম জানেন? এভাবে কেউ কাউকে শাস্তি দিতে পারে?
-"আমি পছন্দ করি না জেনেও অন্যছেলের সাথে সময় কাটাবি আর আমি চুপচাপ সহ্য করব..?
-"তাই বলে এভাবে হাত পা বেঁ*ধে অন্ধকারে সারারাত ফেলে রাখবেন...?
-"তুই একা ছিলি নাকি আমিও তো ছিলাম কই আমি তো সেন্সলেস হইনি সারারাত তোর পাশেই বসে ছিলাম।
-"আপনি ছিলেন...?
-"নাহ আমার ভূত ছিল। তবে আমার সিওর তুই সেদিন সেন্সলেস হোস নি ঘুমিয়েছিলি। বাসার কেউ সেটা বুঝে নি কিন্তু আমি তো সকাল পর্যন্ত তোর সাথেই ছিলাম তাই আমি জানি। তোর কোন শরীর খারাপ হয়নি।

আদির কথায় হি হি করে হেসে উঠল আদিবা..
-"কত হারামি তুই ভেবে দেখ। সেদিন যদি অভিনয় না করতি এতকিছু ঘটত না।সবাই ভাবে আমি জেদি কিন্তু তুই ঠিক কতটা জেদি সেটা আমি ছাড়া কেউ জানে না। তুই প্রকাশ করিস না কিন্তু মনে মনে নিজে যেটা ঠিক করিস সেটা করেই ছাড়িস।শাসন কিংবা আদর কোন কিছুতেই তোর সিধান্ত বদলায় না। সেদিন বাবা আমাকে মারছে দেখেও তুই কিছু বলিস নি চুপচাপ আমার মা*র খাওয়া দেখছিলি। কতটা পাষান আর নির্দয় তুই।

-"আফসোস, আপনি এই নির্দয়টাকেই ভালবাসেন।
-"আবার বাজে কথা বলিস আমি তোকে ভালবাসি না...কোনদিন বাসিও নি তোর প্রতি আমার যেটা আছে সেটাকে মোহ বলে। কোন না কোনদিন এই মোহ কেটে যাবে।
-"ওহ তাহলে বোধহয় আমার মনের ভুল।
-" হ্যা ভুলেই, তোর মত ডায়নীবুড়িকে কে ভালবাসবে..?
-"আর আপনার মত রাক্ষসকে কে বাসবে..? এমন একটা ভাব যেন আমি তার ভালবাসা পাওয়ার জন্য মরে যাচ্ছি..ভালবাসা ধুয়ে পানি খাব নাকি? আমি তো আপনার ঘাড়ে বসে খাব।সারাজীবন জ্বালাব দেখব কি করে এই মোহ কাটিয়ে আমাকে ডিভোর্স দেন।
-"ডিভোর্স তো আমিও দিব না। তুই আমাকে কী জ্বালাবি উল্টে আমি তোকে জ্বালাব সেজন্যেই তো বিয়ে করেছি...
-"সেটা তো সময় বলে দিবে কে কাকে জ্বালায়...
এরা দুজন ঝগড়া করতে করতেই গাড়ি এসে থামল শপিংমলের সামনে। আদিবা প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় জিনিসেই কিনেছে বেশি যদিও আদি কয়েকবার বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করে ছিল কিন্তু কোন লাভ হয় নি।আদিবা তাকে হু*মকি দিয়ে সব কিনে নিয়েছে। বলেছে আদি যদি কিনতে না দেয় তাহলে সে সবার সামনে সিনক্রিয়েট করবে কান্নাকাটি করবে তাই আদি বাধ্য হয়ে সব কিনে দিয়েছে।
শপিং শেষ হতে হতে বেলা গড়িয়ে গেল। এত ঘুরাঘুরিতে আদি ক্লান্ত হয়ে পড়লেও আদিবার মুখে হাসি আদির পকেট ফাঁকা করতে পেরে নিজেকে বেশ বিজয়ী মনে হচ্ছে। আদিবা গাড়িতে বসে গুনগুন করে গান গাইছে আর আদি রাগে ফুঁসফুঁস করছে। হটাৎ আদিবা বলল,
-"আমার ক্ষুধা পেয়েছে। সন্ধ্যাও হয়ে এসেছে এখন গিয়ে রান্না করার এনার্জি নেই চলুন বাইরে থেকে খেয়ে যাই...
সাথে সাথে আদি সোজাসাপটা জবাব দিল
-"নাহ আমি বাইরের খাবার খাই না।
-"আজব খান না খাবেন...
-"নাহ খাব না,আমি বাইরে খাব না...
-"কেন খাবেন না?
-"আমার ইচ্ছা...
-'আমি রান্না করতে পারব না।
-"আমি তো আগেই বলেছি বাসার কোন কাজেই তোকে করতে হবে না।
-"তাহলে বিয়ে করেছেন কেন বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানোর জন্য?
-" নাহ, কেন করেছি যখন আদায় করব তখন বুঝতে পারবি।
-"কী আদায় করবেন?
আদি বাঁকা হাসল উত্তর দিল না।



বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়েই আদি রান্না করতে চেয়েছিল কিন্তু আদিবা করতে দেয় নি আদিবা নিজেই রান্নাবান্না করেছে।
খেয়ে দেয়ে আদিবা ঘরে গিয়ে শোয়ে পড়ল কিছুক্ষন পর সেখানে আদির আগমন ঘটল।ঘরে ঢুকে দেখল আদিবা আদির বিছানা দখল করে শুয়ে আছে। আদি এসে শান্তভাবে বিছানায় বসল সাথে সাথে আদিবা উঠে কর্কশ কন্ঠে বলল
-"খবরদার উল্টো পাল্টা কিছু করবেন না।
আদি ভ্রু কুচকে তাকাল,
-"উল্টো পাল্টা মানে..?
-"আপনি যা যা করেন সবি উল্টো পাল্টা।
-"তুই ভুলে যাচ্ছিস তুই আমার বউ আগে তাই যা যা উল্টো পাল্টা ছিল এখন সেগুলো ঠিক ঠাক হওয়ার কথা।
-"না হওয়ার কথা না।আপনি তো আমায় ভালবাসেন না তাহলে আমি কেন আপনাকে বাসতে যাব? যতদিন না দুজন দুজনকে ভালবাসতে পারছি কাছে আসবেন না।
-"তো তোকে ভালবাসতে কে বলেছে? তোর ভালবাসা তোর কাছে রেখে দে ভালবাসা দিয়ে আমার কাজ কী? আমার ভালবাসা টাসার দরকার নেই ভাই,আজ আমার বাসর রাত। কারোর কথায় আমি রাত টা নষ্ট করব না। একটুও বাঁধা দিবি তো ছাদে নিয়ে গিয়ে ধা*ক্কা দিয়ে সোজা নিচে ফেলে দিব।
-"ম ম মানে কী..?
-"কথায় আছে বাসর রাতে বিড়াল মারতে হয় তানাহলে বিড়ালকে বশে রাখা যায় না।
-"ক ক ক কি বুঝাতে চাইছেন?
আদিবার আমতা আমতা করছে দেখে আদির হাসি পেল সে। উঠে গিয়ে একটা বোয়াম এনে আদিবার দিকে এগিয়ে দিল...
আদিবা আদির দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে দেখে আদি বলল,
-'কি হল নে...
-"কি এটা..?
-"নিয়ে দেখ
আদিবা কাঁপা কাঁপা হাতে বোয়াম টা হাতে নিয়ে বলল,
-"কি এটা ..?
-"আচার...
-"আচার? আচার দিয়ে কি হবে? আমি কী কখনো বলেছিলাম নাকি যে আমার আচার পছন্দ?
-"নাহ তবে আমি বলেছিলাম তোর বিয়েতে আমি আচার গিফট করব...
-"আচার আমার পছন্দ না।পৃথিবীর সব মেয়ে টক খেতে পছন্দ করে এটা আপনাকে কে বলেছে..?এসব দিয়ে মন জয় করা যাবে না।
আদিবার কথায় হা হা করে হেসে উঠল আদি। হাসতে হাসতে বলল,
-"আমি তোর মন দিয়ে কী করব? মন ধুয়ে পানি খাব? তুই মন থেকে চাইলেও আমার বউ না চাইলেও আমারেই বউ তাই মন জয়ের পিছনে সময় নষ্ট করতে পারছি না। আর আচারটা পছন্দের জন্য দেই নি খুব তাড়াতাড়ি আমি তোর আচার খাওয়ার কারন হব তাই দিয়েছি।
-"আপনার কথার মানে বুঝতে পারছি না।
-"লাইট টা অফ করি তারপর বুঝাচ্ছি।
আদি লাইট অফের কথা বলতেই আদিবা চেঁচিয়ে উঠল,
-"নাহ...আমি অন্ধকার ভয় পাই..
আদি বাঁকা হেসে জবাব দিল,
-"লাইট অন থাকলে আমার কোন অসুবিধে নেই কিন্তু তুই সহ্য করতে পারবি তো..?
-"ভাইয়া...
-"ওই ভাইয়া বলিস কাকে? আমি তোর জামাই হই।
-"এটা কেমন সম্পর্ক? ভালবাসেন না অথচ নিজেকে জামাই দাবি করছেন?
-"তুই না প্রশ্ন করেছিলি বিয়ে করেছি কেন..? তাহলে শোন নিজেকে তোর জামাই দাবী করার জন্যই বিয়েটা করেছি বুঝেছিস? আর তুই এখন চুপচাপ বউয়ের দায়িত্ব পালন করবি। আজ যদি তুই কান্নাকাটি করে আমার মুড নষ্ট করিস আমি তোকে কি যে করব নিজেই জানি না।
-"ক ক কী করবেন..?
-"সেটা খোলে বলতে হবে..?
-"আ আ আমি বাসায় যাব.
-"কাঁদ,কাঁদ আর একটু চোখের পানি বের হোক শুধু,তারপর তোকে ছো*ট ছো*ট পি*স করে পার্সেল করে দেশে পাঠিয়ে দিব. চিন্তা করিস না এত ছোট ছোট পি*স করব যে বাসার কেউ তোকে চিনতেও পারবে না।
-"ভাইয়া...
-"আবার ভাইয়া বলিস? দাঁড়া মজা দেখাচ্ছি...

পড়ুন  বেপরোয়া ভালোবাসা – পর্ব ৪৫ রোমান্টিক গল্প | মোনা হোসাইন
পরবর্তী পর্বের জন্য ক্লিক করুন :>> চলবে

Writer :- মোনা হোসাইন

About The Author

Home
Stories
Status
Account
Search
Scroll to Top