Golperjogot

Golperjogot

বেপরোয়া ভালোবাসা – পর্ব ৪৬ রোমান্টিক গল্প | মোনা হোসাইন

বেপরোয়া ভালবাসা
লেখনীঃ মনা হোসাইন
পর্বঃ৪৬
অনেক খোঁজার পরেও আদিবার কোন খুঁজ না পেয়ে আদির পাগ*লপ্রায় অবস্থা। বাসার আশপাশ থেকে শুরু করে যত জায়গায় খুঁজ নেয়া সম্ভব খুঁজেছে  কিন্তু আদিবার সন্ধান পাওয়া গেল না। কোন উপায় না পেয়ে আদি তার আংকেল কে নিয়ে পুলিশের কাছে গেল। কেস ফাইল করেও আদির মন শান্ত হচ্ছে না বারবার মনে হচ্ছে সে অন্যায় করেছে আদিবাকে বুঝিয়ে বললেই এমনটা ঘটত না। আদি অস্থির হয়ে উঠেছে দেখে জেসমিন বলল,
-“ভাইয়া শান্ত হও এত অস্থির হওয়ার কি আছে? সময় হলে নিজেই ফিরে আসবে।
-“ফিরবে না. আদিবা আমার চেয়েও বেশি জেদি আজ যদি আমার কথায় কষ্ট পেয়ে কিছু একটা করে ফেলে আমি কি নিয়ে বাঁচব..?
-“পৃথিবীতে কেউই চিরদিন বেঁচে থাকে না দুদিন আগে আর পরে সবাইকেই যেতে হবে। আদিবা যদি নিজেই এমন কিছু করতে চায় এ নিয়ে আমরা এত ভেবে কী করব?
-“চুপ একটাও উল্টা পাল্টা কথা বলবা না। আদিবার কিছু হবে না। আদিবাকে ছাড়া আমি এক মিনিট ও বাঁচতে পারব না বুঝেছো।
-“কিন্তু…
-“আদিবা আমার কাছে কী সেটা যদি এতদিনেও না বুঝে থাকো তাহলে আর কিছু বলার নেই। এই ব্যাপারে আর একটাও নেগিটিভ কথা আমি শুনতে চাই না তোমরা প্লিজ বাসায় যাও..
-“ওকে এত ভালবাসো কেন ..? ও তোমার সব কথা মেনে চলে বলে..?
-“নাহ কথা শোনার জন্য কেউ কাউকে ভালবাসে না বরং ভালবাসে বলেই কথা শুনতে বাধ্য করে। যাতে কখনো হারিয়ে না যায়।
রাত বাড়ছে যে যার বাসায় ফিরেছে। আদি আদিবাকে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরল।রাত প্রায় ৩ টার কাছাকাছি…আদি এসে বাসায় ঢুকতেই থানা থেকে ফোন আসল তারা আদির বর্ননা অনুযায়ী কাউকে খুঁজে পেয়েছে  আদি একটুও সময় নষ্ট না করে থানায় ছুটে গেল। কিন্তু সেখানে আদিবা নেই আদি যেতেই পুলিশের গাড়ি করে পুলিশের একজন উপদস্থ কর্মকর্তা  তাকে নিয়ে বের হল। কি হচ্ছে আদি কিছু বুঝতে পারছে না সে কয়েকবার অফিসারকে জিজ্ঞাসা করলেও তিনি তাকে কোন উত্তর দিল না। দেখতে দেখতে গাড়ি এসে থামল হাসপাতালের সামনে। গাড়ি থেকে নেমেই আদির মাথা চক্কর দিল সে এবার বুঝতে পারছে কিছু একটা গন্ডগোল ঘটেছে। আদি চেঁচিয়ে বলল,
-“what’s going on? Why we went here? Where is my wife?
-“clam down mr adidtto, you have to figure out whats going on so plz contribute with us…
আদি আর কিছু বলতে পারল না। সে পুলিশের সাথে এগিয়ে গিয়ে একটা কেবিনের সামনে দাঁড়াল। আদি প্রশ্ন করতে যাবে তার আগেই পুলিশটি বলল,
-“we are extremely sorry sir, may be madam is no more. so we are here now. Plz identify the dead body if she is your wife!
আদিবা বেঁচে নেই এই কথাটা শুনামাত্র আদির মাথা ঝিমঝিম করতে শুরু করল হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। পা চলছে না চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। অফিসার আদিকে লাশের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য তাড়া দিল কিন্তু আদি কেবিনের ভিতরে যাওয়ার আগেই জ্ঞান হারাল । সাথে থাকা অফিসার তাড়াতাড়ি করে আদিকে ধরল।
আদিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হল আদির পালিত বাবা মা সহ তার বোনরা ছুটে আসল। বেশ অনেক্ষন যাবৎ আদিকে স্যালাইন দেয়া হচ্ছে কিন্তু জ্ঞান ফিরছে না।
নীলচে আকাশ, ঝলমলে রৌদ্র দীপ্ত দিন। নিস্তব্ধ সবুজ অরন্যের বুক ছিড়ে বয়ে চলেছে ছোট নদী। নদীর স্রোতের হালকা কলকল শব্দ ভেসে আসছে। সময়টা হয়ত বসন্ত কাল চারদিকে নানান ধরনের বনফুল ফুটেছে তার মাঝেই আদিবা এদিক থেকে ওদিক ছুটাছুটি করছে উদ্দেশ্য প্রজাপতি ধরা। আদিবার মুখের মিষ্টি হাসি আদির মন কেড়ে নিচ্ছে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে সে আদিবার দিকে।
প্রশান্তিতে মন ভরে উঠছে কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হল না হটাৎ আদিবা প্রজাপতির পিছনে ছুটতে ছুটতে কোথায় যেন হারিয়ে গেল আদি গলা ছেড়ে আদিবাকে ডাকতে লাগল….
-“আদিবা…..!!!
আদিবার নাম ধরে ডেকে জেগে উঠল আদি সাথে সাথে সবাই এসে বেডের পাশে ভীড় জমাল। আদি তার পালিত মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
-“আদিবা কোথায় মা…??
আদির মা উত্তর দিচ্ছেন না দেখে আদি উঠে হাতের স্যালাইনটা খুলতে যাবে ঠিক তখনী মাথার পাশ থেকে কেউ আদিকে চেপে ধরল আদি অবাক হয়ে তাকাল, আর দেখল আদিবা তার হাতে স্যালাইন ঠিক করে দিচ্ছে…
-“আদিবা….!! তুই বেঁচে আছিস?
-“মরে গেলে খুশি হতেন?
আদি আর কিছু না বলে সবার সামনেই আদিবাকে হ্যাচকা টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল।
-“ভাইয়া কি করছেন এসব? সবাই দেখছে তো…
আদিবার কথায় আদির কোন পরিবর্তন ঘটল না। সে আদিবাকে ছড়িয়ে রেখেছে। আদিবা বিব্রত হচ্ছে দেখে আদির মা সবাইকে নিয়ে বাইরে চলে গেলেন।
-“হয়েছে তো এবার ছাড়ুন. আমি পালিয়ে যাচ্ছি না আমাকে পরেও জড়িয়ে ধরা যাবে…স্যালাইন টা আলগা হয়ে গিয়েছে…আগে সুস্থ হোন।
আদি আদিবা ছেড়ে রাগী চোখে তাকাল। আদিবা কিছুটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,
-“কী হয়েছে…?
আদি কোন উত্তর না দিয়ে টান দিয়ে স্যালাইন টা খুলে ফেলে দিয়ে আদিবার হাত ধরে টানতে টানতে বেরিয়ে আসল।
-“আরে কী করছেন? কোথায় যাচ্ছেন? আপনি সুস্থ না।
-“আমাকে নিয়ে তোর ভাবতে হবে না সিনক্রেয়েট করিস না…
বলতে বলতে আদি হাঁটতে লাগল। আদি রেগে গিয়েছে বুঝতে বাকি রইল না আদিবার। আদি কেবিন থেকে বেরিয়ে আসতেই সবাই তার দিকে তাকাল। আদিবা গোবেচারা মুখ করে বলল,
-“আংকেল..!
আদির বাবা এগিয়ে এসে বললেন,
-“আদি কি করছিস বাবা? বৌমা কে ছাড়।
-“আংকেল হাসপাতালের ফরমালিটিস গুলো মিটিয়ে দিও আমি বাসায় যাচ্ছি।
-“আদি তুই আগে সবটা শোন প্লিজ…
-“তোতা পাখিকে তো সাথে নিয়েই যাচ্ছি। আশা করছি তিনি নিজেই সব টা বলতে পারবেন।
বলেই আদি রক্ত চোখে তাকাল আদিবার দিকে।
-“ভাইয়া আসলে….
-‘আর একবার ভাইয়া বলে দেখ… যাইহোক আংকেল আসছি…মা সরি তোমাকে পৌঁছে দিতে যেতে পারছি না সাবধানে বাসায় যেও। পৌঁছে আমাকে জানিও।
-“আমার কথা বাদ দে বউ মার সাথে খারাপ কিছু করিস না বাবা।
-“এত চিন্তা করছো কেন বউ আমার,ওর কিছু হলে তো আমার বেশি সমস্যা হওয়ার কথা  যাইহোক তোতাপাখি চলুন…আপনাকে অনেক কিছু শিখানোর আছে।
আদিবা অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে কিন্তু আদি তাতে পাত্তা না দিয়ে আদিবাকে নিয়ে বাসায় ফিরল।
আদি আদিবাকে নিয়ে বেড রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিয়ে শান্তভাবে এগিয়ে  গিয়ে সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে আদিবার দিকে এগিয়ে দিল। আদির চোখ মুখে রাগ জ্বল জ্বল করছে ভয়ে আদিবার গলা শুকিয়ে উঠেছে সে কাঁপা কাঁপা হাতে গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে শেষ করল। আদি শান্ত হয়ে বিছানায় বসে বলল,
-“তারপর বলুন কি হয়েছিল..?
-“আ আ আসলে ভাইয়া….
আদিবা পুরো বাক্য শেষ হওয়ার আগেই আদি চেঁচিয়ে উঠল,
-“যা যা প্রশ্ন করব স্পষ্ট ভাষায় ঝটপট উত্তর দিবি..
কোথায় ছিলি এতক্ষন? আর হাসপাতালে কি ঘটেছিল?
-“ভাইয়া…!!
-“আবার ভাইয়া বলিস?
-“স স সরি…
-“ভয় পাচ্ছিস কোন দুঃখে? আমি তোকে বকা দিয়েছি বা গায়ে হাত তুলেছি?
-“ভয় লাগলে কি করব…?
-“ভয় পেতে হবে এমন কাজ করিস কেন তাহলে?
-“আমি শুধু আপনাকে বুঝাতে চেয়েছিলাম…
-“কি বুঝাতে চেয়েছিলি? আমি এতদিন তোর সাথে যা যা করেছি ভুল করেছি…?
আদিবা উত্তর দিল না চুপ করে আছে।
-“উত্তর দে…
-“আপনি করলে দোষ নেই আমি করলে দোষ?
আপনিও তো নীলয় ভাইয়ার সাথে আমাকে দেখে সন্দেহ করেছিলেন…আর আমি যখন সেইম কাজটাই করলাম আপনি আমাকে বাসা থেকে বের করে দিলেন…
-“আমি বের করে দিয়েছিলাম? বাহ! যাইহোক আমি যখন তোকে সন্দেহ করেছিলাম আমার বয়স কত ছিল?
-“মানে?
-” মানে পাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে খু**ন করলেও ক্ষমা করে দেয়া হয় কিন্তু প্রাপ্ত বয়স হওয়ার পর করলে তাকে ফাঁ**সি দেয়া হয়। আশা করছি তুই প্রাপ্ত বয়স্ক…
চলবে…!!