Golperjogot

Golperjogot

বেপরোয়া ভালোবাসা পর্ব 5 | Bangla Romance love story

Beporoya Valobasha

Mona Hossain { Part 05 }

আদিবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও আদিবাকে আদিত্যদের বাসাতেই থাকতে হল আর স্কুলও বদলাতে পারল না। আদিত্যের নজরদারি থেকে মুক্তি মিলল না তার। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল কিন্তু হটাৎ একদিন,

রাত ১০ টা,কিন্তু আদিবার বাসায় ফিরার নাম নেই। আদিবা কখনো রাতে বাইরে থাকা তো দূর স্কুলের ছাড়া সে বাসার বাইরে পর্যন্ত যায় না। স্কুলেও যায় আদির সাথে মোটকথা আদিবা একা একা কোথাও যায় না তাই বাসার সবাই দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল। সময় যত বাড়ছে ততই উদ্বেগ বাড়ছে কিন্তু কেউ পুলিশে কম্পিলিন করতে পারছে না কারন সবার ধারনা এর পিছনে আদির হাত আছে। জেনেশুনে নিজের ছেলের বিপদ কেই বা ডেকে আনতে চায়। আদিত্যের বাবা মা সহ আদিবার মা এবার আদিত্যের রুমে গেলেন। আদিত্যের বাবা কড়া গলায় বললেন,

-“৫ মিনিট সময় দিচ্ছি এর মধ্যে আদিবাকে ফিরিয়ে আনবি তানাহলে আজ আমার চেয়ে খারাপ আর কেউ হবে না।

বাবার কথা শুনে আদি গা ছাড়া ভাব নিয়ে জবাব দিল,

-“আমি কি করে ফিরিয়ে আনব? আমি জানি নাকি ও কোথায়?

-“আমাদেরকে কী তর এতটাই বোকা মনে হয়..? আদিবা হারিয়ে যাবে আর তুই শান্ত মনে বাসায় বসে থাকবি এটাও বিশ্বাস করতে হবে..?তুই যদি না জানতি আদিবা কোথায় তাহলে এতক্ষনে সারা শহর মাথায় করে ফেলতি। (আদিত্যের মা)

-“এমনভাবে বলছো যেন আদিবা আমার প্রেয়সী তার জন্য আমাকে দেওয়ানা হয়ে যেতে হবে।

-“নাহ আমি সে কথা বলি নি তুই যে পরিমাণ উশৃংখল তোকে না বলে বাইরে যাওয়ার অপরাধে তুই আদিবাকে আকাশ পাতাল খুঁজে নিয়ে আসতি আর তারপর শাস্তি দিতি সেটা আমরা সবাই জানি।

-“মা তুমি আজকাল একটু বেশি কথা বলো. আমি জানি না আদিবা কোথায়।আর এত চিন্তা করার কি আছে? সময় হলে নিজেই ফিরে আসবে। তোমরা এখন আমার রুম থেকে যাও কাল আমার এক্সাম আছে পড়তে হবে।

-“আমরা কিন্তু পুলিশে যাব..

-“যাও মানা করেছে কে..?

-“পুলিশের কাছে গেলে প্রথম তোর নামটাই বলবো.

-“এমনভাবে কথা বলছো যেন আমি একজন কিডন্যাপার ওকে কিডন্যাপ করেছি। মা ফালতু কথা বাদ দিয়ে যাও তো এখান থেকে আমার আর ভালো লাগছে না এসব।

আদিত্য সবাইকে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল। সবার নির্ঘুম একটা রাত কাটাল সারারাতেও আদিবা বাসায় ফিরেনি।ভোরবেলা বাসার কাজের মহিলা দৌড়াতে দোড়তে বাসার ছাদ থেকে নিচে নেমে আসল।

-“খালুজন জলদি ছাদে চলেন আদিবা আফামনি ওখানে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে।

Short Story

কথাটা শুনামাত্র সবাই ছুটল ছাদের দিকে। ছাদে গিয়ে সবার চোখ চরকগাছ সত্যিই আদিবা পড়ে আছে। হাত পা বাঁধা, মুখেও টেপ লাগানো। আদিবার মা নিচে বসে আদিবার মাথা কোলে নিয়ে চোখের জল ছেড়ে দিলেন। আদিত্যের বাবা তাড়াতাড়ি আদিবাকে ঘরে নিয়ে এসে চোখে মুখে পানি দিলেন। কিছুক্ষন পর আদিবার জ্ঞান ফিরল কিন্তু তার চোখ মুখে ভয়ের ছাপ। সে তার মাকে জড়িয়ে ধরে হাঁওমাও করে কাঁদতে শুরু করল।আদিবা শান্ত করার জন্য আদির বাবা বললেন

-“তোর এই অবস্থা কে করেছে আদিবা…? একবার শুধু বল তারপর আমি তার কি অবস্থা করি শুধু দেখবি (আদিত্যের বাবা কড়া গলায় বললেন)

আদিবা কাঁদতে কাঁদতে জবাব দিল-” ভ ভ ভ ভাইয়া…!!!

কথাটা শুনামাত্র ক্ষেপে গেলেন আদির বাবা।-“আদিত্যের এত সাহস আজ ওর একদিন কী আমার একদিন.

তিনি রাগে ছটফট করতে করতে ছুটে গেলেন আদিত্যের ঘরে। আদি ঘুমাচ্ছিল আহমেদ সাহেব তাকে ঘুম থেকে জাগার সুযোগ না দিয়ে নিজের বেল্ট দিয়ে মারতে শুরু করলেন আদি কিছু বুঝে উঠার আগেই কয়েকটা আঘাত পড়ল তার পিঠে।

আদি উঠে বুঝার চেষ্টা করতে লাগল কি হয়েছে।কিন্তু তাকে কোন সুযোগ দেয়া হল না আহমেদ সাহেব আদিকে টেনে নিচে নিয়ে আসলেন তারপর সর্বোচ্চ শক্তিতে মারতে শুরু করলেন। সেখানে সবাই উপস্থিত থাকলেও আজ কেউ বাঁধা দিল না। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় আদিত্য নিজেও বাঁধা দিচ্ছে না তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে যেন আগে থেকেই জানত তাকে এভাবে মারা হবে তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে মার খাচ্ছে।

আহমেদ সাহেব মারতে মারতে হাঁফিয়ে উঠলেন আদিকে ছেড়ে দিয়ে বলতে লাগলেন,

-“তোর মত ছেলে জন্ম দেওয়াটাই আমাদের অন্যায় হয়েছে। এমন ছেলে থাকার চেয়ে না থাকাই ভাল ছিল।

আদিত্যের বাবাকে শান্ত করার জন্য তার মা আর আদিবার মা এগিয়ে আসলেন।

-“ভাইজান আপনি শান্ত হোন এমন উত্তেজিত হলে আপনার শরীর খারাপ হবে।

-“শাহানা ঠিকি বলেছে তুমি শান্ত হও।(আদিত্যের মা)

-“কোন পাপে এমন ছেলে জন্ম দিয়েছিলাম বলতে পারো রুবিনা? ইচ্ছে করছে মেরে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেই।

-“ভাইজান আদিত্য ছেলে হিসেবে খারাপ নয় সমস্যাটা হচ্ছে ও আদিবাকে সহ্য করতে পারে না আর আদিবাও অনেক উল্টা পাল্টা কাজ করব তাই আমি বলি কী আদিবাকে নিয়ে গ্রামে ফিরে যাই। তাহলে আর কোন সমস্যা থাকবে না।দয়া করে আপনারা আমাকে আর বাঁধা দিবেন না।

-“প্রশ্নই উঠে না আদিবা কোথাও যাবে না। কারো যদি যেতে হয় আদি যাবে। এই বাসায় ওর আর কোন জায়গা নেই।এই কুলা**ঙ্গার বেরিয়ে যা…

আদিত্য এবারেও কোন জবাব দিল না শুধু রক্তবর্ণ চোখে আদিবার দিকে একবার তাকাল। আদিবা ভীত হরিণীর মত চুপসে গেল।

-“ভাইজান আমি রাগের মাথায় কিছু বলছি না।আপনার নিজের সংসার আছে তারউপড় আমাদের সংসারটাও আপনাকেই দেখতে হয় এতকিছুর পর চারজনকে ভাল স্কুলে পড়ানো অনেক টাকার ব্যাপার তাই আমি ভাবছি আদিবার বিয়ে দিয়ে দিব।

কথাটা শুনে উপস্থিত সবাই সম্ভিত হয়ে গেল।আদিত্যের মা অবাক কন্ঠে বললেন,-“তুমি কী পাগল হয়ে গেছ শাহানা..? কিসব বলছো..?

-“আমি যা বলছি ভেবেই বলছি ভাবী আদিবার বিয়ের বয়স না হলেও ও আর ছোট নেই। আগের দিনে মেয়েদের এই বয়সেই বিয়ে হত। তাছাড়া গ্রামে এখনো হয়। এখানে আসার আগে চেয়ারম্যানের ছেলে ওকে পছন্দ করে প্রস্তাব দিয়েছিল।ভাবছি গ্রামে গিয়ে কথাটা এগুবো।

-“কিন্তু…

-“কোন কিন্তু না মেয়েদের এত পড়াশোনার দরকার কী? এত পড়ে কী হবে?বিয়ের পর জামাই পড়ালে পড়বে না পড়ালে সংসার করবে।

আদি এতক্ষন কিছু না বললেও শরীরের আঘাতগুলো ক্রমেই যন্ত্রনাদায়ক হয়ে উঠছে। জায়গায় জায়গায় র*ক্ত নীলচে রং ধারন করছে।হটাৎ করেই সে সবাইকে অবাক করে দিয়ে নিচে বসে সশব্দে কেঁদে উঠল।উপস্থিত সবাই চরম অবাক হল কারন আদিকে কেউ কখনো কাঁদতে দেখেনি যত যাই হয়ে যাক সে কাঁদে না। এই বয়সী কোন ছেলেই সহজে কাঁদে না তারমানে কী আঘাতগুলো অসহনীয় হয়ে উঠেছে।

Related Story

আঘাতগুলো ক্রমেই যন্ত্রনাদায়ক হয়ে উঠছে। জায়গায় জায়গায় র*ক্ত নীলচে রং ধারন করছে।হটাৎ করেই সে সবাইকে অবাক করে দিয়ে নিচে বসে সশব্দে কেঁদে উঠল।উপস্থিত সবাই চরম অবাক হল কারন আদিকে কেউ কখনো কাঁদতে দেখেনি যত যাই হয়ে যাক সে কাঁদে না। এই বয়সী কোন ছেলেই সহজে কাঁদে না তারমানে কী আঘাতগুলো অসহনীয় হয়ে উঠেছে। আদির মা নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না ছুটে গেলেন ছেলের কাছে। হাজার হোক একমাত্র ছেলে বলে কথা।

-“বাবা বেশি ব্যাথা করছে…? হাসপাতালে যাবি.?

আদি কোন উত্তর দিল না চোখ মুছে নিজের মাকে একবার জড়িয়ে ধরল তারপর উঠে বাসার মেইন দরজার দিকে হাঁটা দিল। পিছন থেকে তার মা বলে উঠলেন,-“কোথায় যাচ্ছিস..??

আদি উত্তর দিল না। আদির বাবা বলে উঠলেন আদিখ্যেতা বন্ধ করো রুবিনা এইটুকু ওর পাওনা ভুলে যেও না ও কী করেছে। বেরিয়ে যা এখনী..

আদি আস্তে আস্তে দৃষ্টি সীমার বাইরে চলে গেল…

পরবর্তী পর্বের জন্য ক্লিক করুন :>> চলবে

Writer :- Mona Hossain

Leave a Comment