Golperjogot

Golperjogot

বেপরোয়া ভালোবাসা পর্ব 6 | Bangla Romance love story

Beporoya Valobasha

Mona Hossain { Part 06 }

দিন পেরিয়ে রাত আদির বাসায় ফিরার নাম নেই কিন্তু তাতে আদির মা ছাড়া কারোর তেমন কোন মাথা ব্যাথা নেই সবার ধারনা আদি রাগ করে কোন বন্ধুর বাসায় গিয়েছে। কিন্তু দেখতে দেখতে কেটে গেল একদিন এবার সবার মনে ভয় দানা বাঁধতে শুরু করল। আদির বাবা আদির সব বন্ধুদের বাসায় খুঁজ করলেন কিন্তু আদি কারো কাছেই যায় নি এমন কি কারো সাথে যোগাযোগও করেনি।

আদি খালি হাতে বাসা ছেড়েছিল। সাথে ফোনও নেয় নি তাই তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব না।বাধ্য হয়ে আজাদ সাহেব পুলিশ কম্পলিন করলেন কিন্তু পুলিশো আদিকে খুঁজতে ব্যার্থ হল। হাসপাতাল থেকে শুরু করে অলিগলি সব জায়গায় খুঁজ করা শেষ কেটে গেছে ২ দিন। আদির মার পাগলপ্রায় অবস্থা তিনি কিছুতেই একমাত্র ছেলেকে হারানোর শোক সহ্য করতে পারছেন না।

-“রুবিনা তুমি শান্ত হও। আদি আমাদের ছেড়ে কোথাও যেতে পারে না দেখবে নিজেই ফিরে আসবে।হয়ত আমাদের উপড় রেগে আছে তাই লুকিয়ে আছে।(আদিত্যের বাবা)

-“চুপ করো। তুমি একজন খু**নি তুমি এক মায়ের কোল খালি করে ছেলেকে কেড়ে নিয়েছো। নাজানি ছেলেটা রাগের মাথায় কী অঘটন ঘটিয়েছে। বাবুরে তুই কোথায়? এভাবে মাকে ছেড়ে যাস না ফিরে আয় প্লিজ। একবার শুধু ফিরে আয়, মা তোর গায়ে হাত তুলা তো দূর তোর দিকে কাউকে তাকাতেও দিব না….

Short Story

বলতে বলতে আহজারি করতে লাগলেন রুবিনা বেগম। কিন্তু তার আহাজারি আদির কানে পৌঁছাল না।

দেখতে দেখতে কেটে গেল, দিন থেকে মাস।শুরু হল আদিত্যের মাধ্যমিক পরিক্ষা কিন্তু আদি ফিরল না।আদি যতই রেগে থাকুক পরিক্ষা মিস দেয়ার ছেলে সে না। অন্তত পরীক্ষার জন্যে হলেও সে ফিরে আসবে এই আশা নিয়েই এতদিন ধর্য্য ধরেছিল সবাই কিন্তু পরীক্ষার দিনেও আদি ফিরল না আদিত্যের মার মন কুডাকতে শুরু করল তিনি আর সহ্য করতে পারলেন না। প্রতিদিনের মত ছুটে গেলেন পুলিশ স্টেশনে।

-” ম্যাডাম আপনাকে প্রতিদিনি বলি আপনাদের এভাবে পুলিশ স্টেশনে আসার দরকার নেই আমরা আদির খুঁজ পেলে আমরা নিজেরাই আপনাদের জানিয়ে দিব। (অফিসার)

-“কিন্তু এতদিন হয়ে গেল আপনারা খুঁজ পেলেন না কেন..

-“দেখুন ম্যাডাম বলতে খারাপ লাগছে কিন্তু এটাই সত্যি এই বয়সী ছেলেরা খুব জেদি হয়ে থাকে। জেদের জন্য ঠিক ভুল বুঝতে পারে না ফলে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। বলছি না আপনার ছেলের সাথেও এমন কিছু হয়েছে তবে ৭০% সম্ভবনা এটাই। হয়ত এমন কিছু ঘটেছে তাই আমরা তার কোন ট্রেস পাইনি।

-“কী বলতে চাইছেন…?

-“স্যার ম্যাডামকে বাসায় নিয়ে যান

-“না না আপনি কি বলতে চাইছেন বলুন.. ওগো উনি এসব কি বলল? আদি…আমার আদি আর নেই…?না এ হতে পারে না কিছুতেই না…

বলতে বলতে সেন্সলেস হয়ে গেলেন রুবিনা বেগম। হাসপাতালে নেওয়ার পর জানা গেল তিনি হার্ট অ্যাটাক করেছেন।বেশকিছুদিন চিকিৎসার পর তিনি বাসায় ফিরলেন সাথে করে আদিবার দুর্ভাগ্য নিয়ে ফিরলেন বাসায় ফিরে তিনি আদিবার পড়াশোনা বন্ধ করে দিলেন। আদির নিখোঁজ হওয়ার সমস্ত দায় চাপল আদিবার ঘাড়ে। আস্তে আস্তে সবার দুশমন হয়ে উঠল সে। আদির বাবা মা কেউই যেন আদিবাকে দুচোখে সহ্য করতে পারে না।এমনকি আদিবার মাও না। সবাই সবসময় বলে আদিবা যদি আদির কথা শুনে চলত তাহলে নাকি এমন কিছু ঘটত না।

দেখতে দেখতে কেটেছে ছয় বছর আদি এখন সবার কাছে মৃত। আদিবার জীবনেও এসেছে আমুল পরিবর্তন যেখানে তারেই ছোট বোন সাদিয়া বলার সাথে সাথে সব পেয়ে যায় সেখানে আদিবার প্রয়োজনীয় কিছু চাওয়াও সুসাধ্য। অরিন সাদিয়া এখন ভাল ভার্সিটিতে পড়ে আর আদিবা কোনমতে মাধ্যমিক পাশ করেছিল তার পক্ষে কলেজে পা রাখা সম্ভব হয়ে উঠেনি । কারন রুবিনা বেগম চাননি আদিবা পড়াশোনা করুক।আদিবা যাই করে তাই অন্যায় বলে পরিগনিত হয়। বাসার সমস্ত কাজ তাকেই করতে হয় তারপরেও কেউ তার সাথে ভালভাবে কথা বলে না। আদিবা শেষ কবে বাসার বাইরে গিয়েছিল তার মনে পড়ে না। অন্যদিকে আহমেদ সাহেবের বয়স বেড়েছে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন।কিছুদিন আগে হটাৎ করে আহমেদ সাহেব অসুস্থ হইয়ে পড়েন তাই তিনি অরিনের বিয়ে দেওয়ার সিধান্ত নিয়েছেন আজ অরিনকে দেখতে আসার কথা…সবাই কাজে ব্যাস্ত হটাৎ বাসার লেন লাইন বেজে উঠল,

রুবিনা বেগম রান্না ঘর থেকে ব্যাস্ত গলায় বললেন কানে কী তালা লাগানো..?আদিবা শুনতে পাচ্ছিস না ফোন বাজছে..নাবাবজাদিকে না বললে কিছুই করতে পারেন না যতসব। যা গিয়ে ফোনটা তুল দেখ কে আসল।

এখানে অরিন সাদিয়া আরো অনেকেই থাকা সত্ত্বেও হুকুম টা আদিবাকে করা হল অথচ আদিবা বসে ছিল না অন্য কাজে ব্যাস্ত ছিল তবুও এ বাসার সমস্ত কাজ তাকে করতে হবে এটা অলিখিত নীতি হয়ে উঠেছে। আদিবা হাতের বাটি টা নামিয়ে রেখে হাত মুছতে মুছতে এগিয়ে গিয়ে ফোন তুলল,

-আসলামুয়ালাইকুম, কে বলছেন?

অপর পাশ থেকে কর্কশ কন্ঠ ভেসে আসল,-কইফত দেয়ার জন্য ফোন করিনি মিসেস রুবিনা বেগম আছেন..?

অপর পাশের থেকে উত্তর শুনে বুঝার উপায় নেই কে ফোন করেছে তাই আদিবা আবার প্রশ্ন করল

-“আপনি কে বলছেন?

-“বললাম না কইফত দিতে ফোন করিনি।

-“আপনি না বললে কাকিমনি কে আমি কিভাবে বলব কে ফোন করেছে..?

-“বলতে হবে না এয়ারপোর্টে একটা গাড়ি পাঠান তাহলেই হবে।

-“বরের বাড়ির কেউ বলছেন?নামটা যদি বলতেন, আসলে আমি যদি গাড়ি পাঠানোর কথা বলি আমাকে সবাই প্রশ্ন করবে কার জন্য গাড়ি পাঠাচ্ছি..

-“আদিত্য আহমেদ…কোন এক কালে আমার নাম ছিল আদিত্য আহমেদ কিন্তু এখন আর সেই নাম নেই। নামটা বদলেছে আমি আদর চোধুরী বলছি। রুবিনা বেগম কে নাম টা বলুন হয়ত চিনতে পারবে…

নাম টা শুনে আদিবার হাত থেকে ফোন টা পড়ে গেল। আদিবার সারা শরীর কেঁপে উঠল। সে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। যারা মৃত্যুর জন্য সে এতদিন ধরে অসহনীয় যন্ত্রনা সহ্য করছে সেই আদি বেঁচে আছে এটা তার জন্য নতুন জীবন পাওয়ার মত ঘটনা। নিজের অজান্তেই চোখ থেকে ২ ফোঁটা অশ্রুজল গড়িয়ে পড়ল। তবে এই অশ্রু মন খারাপের নয় আনন্দের।

রুবিনা বেগম রান্না ঘর থেকে চেঁচিয়ে উঠলেন,-“কী হল ফোনটা ওমন ভাবে ফেলনি কেন?আর এমন সং এর মত দাঁড়িয়েই বা আছিস কেন? কে ফোন করেছিল…?

আদিবা বলতে চেয়েও বলতে পারছে না সবকিছু যেন গুলিয়ে যাচ্ছে তার হাত পা কাঁপছে।

-“এমন আদিখ্যেতা করছিস কেন?

আদিবা আমতা আমতা করে জবাব দিল

-“ক ক ক কাকিমনি ভ ভা ভাইয়া বেঁচে আছে…

-“কী…?–“আদি ভাইয়া বেঁচে আছে কাকিমনি,ভাইয়া বাসায় আসছে বলেই কেঁদে উঠল আদিবা…

আদিবার কথা শুনে ঘরে উপস্থিত সবাই চমকে উঠল রুবিনা বেগম দাঁড়িনো থেকে ধপাস করে মাটিতে বসে পড়লেন। আহমেদ সাহেব ছুটে আসলেন।

-“তুই সত্যি বলছিস আদিবা…?

-“সত্যি বলছি ভাইয়া এয়ারপোর্টে গাড়ি পাঠাতে বলেছে।

শুনামাত্র আহমেদ সাহেব গলা ছাড়লেন,-“এই কে কোথায় আছিস এয়ারপোর্টে এখনী গাড়ি পাঠা। নাহ নাহ গাড়ি পাঠালে হবে না আমি নিজেই যাব আমার ছেলেকে আনতে….

বলতে বলতে তিনি যে অবস্থায় ছিলেন সেই অবস্থাতেই ছুটলেন এয়ারপোর্টে। রুবিনা বেগম নিজের ঘরে গিয়ে নামাজে বসে গেলেন।

মুহুর্তেই বাসার পরিবেশ বদলে গেল।বাসায় যে বিয়ে ছিল সবাই যেন তা ভুলে গিয়েছে। সবার এখন একটাই লক্ষ্য আর সেটা হল আদি। সারা বাড়িতে আদিকে বরণ করার তোরজোর চলছে রুবিনা বেগম ছেলের জন্য রান্না শুরু করেছেন।অরিন সাদিয়া আদির রুম গোছগাছ করছে।

Related Story

আজ প্রায় ৬ বছর পর বাসায় ফিরছে আদিত্য।বাসার সবাই তাতে ভীষন রকমের খুশি। প্রথম দিকে আদিবা খুশি থাকলেও সময় যত বাড়ছে আদিবার ভয়টা তত বাড়ছে। ভয়ে তার প্রায় নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধের উপক্রম হয়েছে। হবেই বা না কেন আজ থেকে ৬ বছর আগে যে তার জন্যেই বাসা ছেড়েছিল আদিত্য । সবাই জানে আদিকে তার বাবা মেরেছিল জন্য বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছিল কিন্তু একমাত্র আদিবা জানে আদি কেন সেদিন তাকে এমন শাস্তি দিয়েছিল আর কেনই বা বাসা ছেড়েছিল।

-“আচ্ছা এতবছর পরেও কী ভাইয়া সেদিনের ঘটনা মনে রেখেছে..? ভাইয়ার হয়ত কিছুই মনে নেই,আমি শুধু শুধু ভয় পাচ্ছি। কিন্তু ভাইয়া যে রকম ছেলে কোন কিছু ভুলার পাত্র সে না আর যদি ভুলেই যেত তাহলে এতদিন পর বাসায় আসত না আরও আগে ফিরে আসত…আচ্ছা ভাইয়া কী আগের মতই আছে? সেই একরুখা জেদি নাকি বদলেছে..? কথার ধরন শুনে ত মনে হল একটুও বদলায় নি।

আদিবার ধ্যান ভেঙে অরিন চেঁচিয়ে উঠল,-“মা দেখে যাও কে এসেছে…??

আদিবা চোখ তুলে তাকাতে রীতিমত চোখ ধাঁধিয়ে উঠল তার।কী অসম্ভব রকমের সুন্দর চেহারাকালো সিল্কি চুল, তির্যক দ্বি-ধারী তলোয়ারের মত ভ্রু, সুতীক্ষ্ণ কালো চোখ সাথে আর পাতলা লালচে ঠোঁট সবকিছু যেন একদম মেপে মেপে বসানো মানুষও এত সুন্দর হতে পারে…

ছেলেটি ঘরে ঢুকেই চেঁচিয়ে উঠল,-“আমি যখন ফোন করেছিলাম ফোনটা কে ধরেছিল…😡

এতবছর পর বাসায় ফিরে কোথায় সবাইকে ভাল মন্দ জিজ্ঞাস করবে তা না এত রাগ নিয়ে ফোন রিসিভকারীকে খুঁজছে? কিন্তু কেন?কী এমন অন্যায় করেছে সে…?? নিজের অজান্তেই ভয়ে কুঁকড়ে গেল আদিবা।

পরবর্তী পর্বের জন্য ক্লিক করুন :>> চলবে

Writer :- Mona Hossain

Leave a Comment