Love Never Ended
ইলোরা জাহান ঊর্মি
আজ প্রথমবারের মতো আভা প্রেজেনটেশন করবে। একটু একটু নার্ভাস লাগছে তার। কিছুক্ষণের মধ্যেই মিটিং শুরু হবে। চৌধুরী গ্রুপের চেয়ারম্যান তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে চলে এসেছেন। তাদেরকে মিটিং রুমে বসানো হয়েছে।
রাইফও মিটিং রুমে আছে। আভা ফাইলগুলো নিয়ে দ্রুত মিটিং রুমে গেল। অনুমতি নিয়ে রুমে প্রবেশ করতেই তার চোখ পড়লো চৌধুরী গ্রুপের চেয়ারম্যান জোহান চৌধুরীর উপর।
ছেলেটা খুব হ্যান্ডসাম তবে রাইফের মতো না। আভা খেয়াল করলো তাকে দেখেই ছেলেটা তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আভা সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করে মিটিংয়ে মনোযোগ দিলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই মিটিং শুরু হয়ে গেল। ভয় কে জয় করে আভা প্রেজেন্টেশন শুরু করলো।
প্রথমে নার্ভাস হয়ে পড়লেও সে খুব সুন্দর ভাবেই প্রেজেন্টেশন কমপ্লিট করলো। রাইফ মনে মনে খুশি হলো আভার প্রেজেন্টেশন দেখে। তবে রাইফের সুতিক্ষ্ম নজর জোহান চৌধুরীর দিকে।
জোহান চৌধুরী যে আভা রুমে ঢোকার পর থেকে ওর দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেটা রাইফের দৃষ্টিগোচর হয়নি। মুহূর্তেই গতকাল আসিফের বলা কথাটা মনে পড়ে গেল রাইফের। সে এখন নিশ্চিত এই ছেলের ক্যারেক্টর ঢিলা।
{ Love Never Ended Heart Touching Love Story Bangla }
রাইফ ঠিক করলো যতো দ্রুত সম্ভব মিটিংটা শেষ করতে হবে। রাইফ আসিফকে ইশারায় বুঝিয়ে দিলো মিটিংটা তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে। আসিফ বুঝতে পেরে খুব তাড়াতাড়ি সংক্ষেপে আলোচনা শেষ করলো।
মিটিং শেষে সবাই মিটিং রুম থেকে বেরিয়ে এলো। রাইফ আসিফের সাথে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলছে। জোহান চৌধুরী তার পিএর সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ চোখ চলে গেল একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা আভার উপর।
আভা একা একা দাঁড়িয়ে আছে। জোহান চৌধুরী এক’পা দু’পা করে আভার দিকে এগিয়ে গেল। আভার সামনে গিয়ে দাড়াতেই আভা প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো।
জোহান বাঁকা হেসে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,“হাই কিউটি।”
{ Bangla Sad Love Story | কষ্টের ভালোবাসার গল্প বাংলা }
আভা একবার জোহানের হাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,“হ্যালো স্যার।”
আভার আচরণে জোহান কিছুটা অপমান বোধ করলো। তবু দুহাত পকেটে ঢুকিয়ে বাঁকা হেসে আবার বলল,
জোহান: তোমার নাম?
আভা: আভা আশফিকা।(সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে)
জোহান: নাইস নেম।
আভা: থ্যাঙ্ক ইউ।
জোহান: কতোদিন ধরে এই কোম্পানিতে জব করছো?
আভা: এই সপ্তাহেই জয়েন করেছি।
জোহান: আর ইউ মেরিড?
আভা জোহানের কথায় দ্বিধায় পড়ে গেল। কারণ রাইফ জানে সে বিবাহিত। এদিকে মিথ্যা কথা বলতেও ইচ্ছে করে না। আভাকে চুপ থাকতে দেখে জোহান বলে উঠলো,
জোহান: হেই। তুমি কী লজ্জা পাচ্ছো? থাক আর বলতে হবে না। তোমাকে দেখেই বুঝা যায় যে তুমি আনমেরিড।
এবারো আভা কোনো উত্তর দিলো না। ছেলেটার চাহনি আর কথা বলার ধরন আভার কাছে মোটেই সুবিধার মনে হচ্ছে না। আভা ভাবছে এর সামনে থেকে সরে যাওয়াই ভালো। কিন্তু যেভাবে প্রশ্ন করছে হুট করে সরেও তো যাওয়া যায় না। জোহানের কথায় আভার ভাবনায় ছেদ পড়লো।
জোহান: এতো রূপ নিয়ে বসের সাথে সারাক্ষণ থাকলে তো তোমার বস পাগল হয়ে যাবে।
আভা চোখ দুটো ছানাবড়া করে তাকালো। সে ভাবতে পারেনি তাকে এমন কথা শুনতে হবে। অবশ্য ছেলেটাকে দেখেই কেমন যেন লাগছে। নীচু মানসিকতার মানুষ একটা। জোহান আবার বলল,
জোহান: আমার কোম্পানিতে জয়েন হবে?
জোহানের কথায় আভা ভ্রূকুটি করে তাকালো। সাথে অবাক ও হলো। বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠলো,
আভা: মানে?
জোহান: মানে তুমি চাইলে এই কোম্পানি ছেড়ে আমার কোম্পানিতে জয়েন করতে পারো। এখানে তোমাকে যা সেলারী দেবে তার থেকে আমি ডাবল সেলারী দেবো। আর এতো কষ্টও করতে হবে না। তোমার মতো এতো সুন্দরী স্মার্ট একটা মেয়েকে আমি খাটাবো না। শুধু আমার আশেপাশে থাকলেই হবে।
Also Read Those Heart- Touching Come Back Sad Love Story
কথাগুলো বলতে বলতে জোহান আভার গালে হাত ছোঁয়ালো। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই জোহানের গালে কষে এক থাপ্পড় বসিয়ে দিলো আভা। জোহানের বলা কথায় ওর প্রতি ঘৃণা আর রাগ বেড়ে গেল আভার। সেজন্যই নিজেকে সামলাতে না পেরে থাপ্পড় দিয়ে বসেছে।
ঘটনার আকস্মিকতায় জোহান হকচকিয়ে গেল।
রাইফ প্রথম থেকেই সব খেয়াল করছে। হঠাৎ করে এমন ঘটনার জন্য সে নিজেও প্রস্তুত ছিল না। আভার গালে হাত ছোঁয়ানোর সাথে সাথেই রাইফের রাগও চরম মাত্রায় বেড়ে গেল। রাইফ দ্রুত পায়ে এগিয়ে এসে জোহানের কলার চেপে ধরলো।
………………………
রাগে ক্ষোভে জোহানের গালে রাইফও আরেকটা থাপ্পড় মারলো। রাইফ এতোটাই জোরে থাপ্পড় মারলো যে জোহান এবার তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে যেতে উঠে দাঁড়ালো। জোহানের পিএ তাড়াতাড়ি খপ করে তার হাত ধরে না সামলালে হয়তো পড়েই যেতো।
জোহানের চোখ দিয়ে আগুন ঠিকরে বের হচ্ছে।
Also, Visit Those Romantic Love Story Article
জীবনে এই প্রথম সে এতোটা অপমানিত হয়েছে। দাঁতে দাঁত পিষে সে রাইফের দিকে তাকালো। রাইফ আবার তেড়ে এসে জোহানের কলার চেপে ধরলো। জোহান রাইফের হাত সরানোর চেষ্টা করছে। রাগে দুজনেরই কপাল বেয়ে ঘাম ঝরে পড়ছে। রাইফ রাগে কটমট করে তাকিয়ে জোহানকে উদ্দেশ্য করে বলল,
রাইফ: তোর যে চরিত্রে সমস্যা আছে তা জানতাম। কিন্তু তা যে এতোটা খারাপ আগে জানলে তোর সাথে কোনোরকম ডিল করার কথা আমি ভাবতাম ও না। শুধুমাত্র আসিফের কথায় আমি তোর সাথে ডিলটা করার জন্য মিটিংয়ে বসেছি।
তোর এতো বড় সাহস হলো কীভাবে আভাকে ছোঁয়ার? তোর হাত তো আমি ভেঙে গলায় ঝুলিয়ে দেবো। এমন শাস্তি দেবো যাতে আর কখনো কোনো মেয়ের সাথে এই ধরনের আচরণ করার আগে তুই দু’বার ভাববি।
{ Emotional Heart Touching Love Story }
ততোক্ষণে আশেপাশের সবাই সেখানে জড়ো হয়েছে। সবার চোখে বিস্ময়। আসিফ তাড়াতাড়ি এসে রাইফকে টেনে সরিয়ে আনলো। জোহানকেও তার পিএ সরিয়ে নিলো। তবু রাইফ রাগে ফুঁসছে। জোহান ও রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে গর্জে উঠলো,
জোহান: সামান্য একজন পিএর জন্য আমার গালে থাপ্পড় দেয়ার মতো সাহস করেছিস। জোহান চৌধুরীকে আজ পর্যন্ত এতো বড় অপমান কেউ করতে পারেনি। এর শোধ তো আমি তুলবোই।
রাইফ রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আসিফের দিকে তাকিয়ে বলল,
রাইফ: আসিফ,ওকে এক্ষুনি এই মুহূর্তে এখান থেকে বেরিয়ে যেতে বল। ওর মতো চরিত্রহীন লম্পটের সাথে আমি কোনোরকম ডিল করবো না। ডিল ক্যান্সেল।
জোহান দাঁতে দাঁত পিষে একবার রাইফ আরেকবার আভার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
জোহান: তোর সাথে ডিল না করতে পারলেও এই অপমানের শোধ আমি তুলবোই। এই জোহান চৌধুরীকে তুই চিনিস না। আমি ঠিক কী কী করতে পারি এবার দেখবি। তোর এই পিএর অহংকার তো আমি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবো। আর সেই সাথে তোর অবস্থাও বেহাল করবো। প্রস্তুত থাকিস।
{ Love Never Ended Heart Touching Love Story Bangla }
জোহানের পিএ তাকে প্রায় টেনে সেখান থেকে নিয়ে গেল। রাইফ জোহানের চলে যাওয়া পথের দিকে কটমট করে তাকিয়ে রইল। ওদিকে আভা একপাশে দাঁড়িয়ে হা করে একদৃষ্টিতে রাইফের দিকে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টি যেন পড়ছেই না। রাইফের এমন রিয়েকশন দেখে সে রীতিমত অবাক হয়ে গেছে।
এক মুহূর্তের জন্য অতীতের কথা মনে পড়ে গেল আভার। আগে আভার ধারে কাছে কোনো ছেলে ঘেঁষতে চাইলে রাইফের রিয়েকশন ঠিক এমনই হতো।
তখন তো রাইফ আভার আশেপাশে কাউকে সহ্য করতে পারতো না। বলা যায় হিংসে হতো তার। আভার কেন জানি বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে যে রাইফ আজও সেই আগের মতো তার পাশে কাউকে সহ্য করতে পারেনি বলে এমন রেগে গেল।
Also, Visit Those Romantic Love Story Article
কিন্তু না,রাইফ তো এখন আর তাকে ভালোবাসে না। হয়তো তার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে থাকলে রাইফ এটাই করতো। কিন্তু তাই বলে এতো বড় একটা ডিল ক্যান্সেল করে দেবে সামান্য একজন পিএর জন্য! আভার ভাবনায় ছেদ পড়লো সামিদের হেঁচকা টানে।
সামিদ তার কাজে খুব ব্যস্ত ছিল। হঠাৎ এক কর্মচারী হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গিয়ে তাকে খবর দিয়েছে মিটিং রুমের সামনে গন্ডগোল বেঁধেছে। সামিদ কর্মচারীর মুখে পুরো ঘটনা শুনে হাতের কাজ ফেলে দৌড়ে মিটিং রুমের সামনে এলো।
এসেই দেখলো রাইফ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাগে ফুঁসছে। আর আভা রাইফের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সামিদ এসে আভার হাত ধরে হেঁচকা টান দিতেই আভা কিছুটা চমকে উঠলো।সামিদের উপস্থিতিতে রাইফও তার দিকে ফিরে তাকালো।
সামিদ আভার দুই গালে আলতো করে হাত রেখে বিচলিত কন্ঠে বলে উঠলো,
সামিদ: আভা,ঠিক আছো তো তুমি? ঐ লম্পটটা কী তোমার সাথে বেশি বাজে ব্যবহার করেছে? কী হলো? চুপ করে আছো কেন? বলো।
……………………
রাইফ তাকিয়ে তাকিয়ে সামিদের অস্থিরতা দেখছে। সে একবার সামিদের দিকে আরেকবার আভার দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। তার বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়েছে।
একটু আগেই সে এতোবড় একটা ডিল ক্যান্সেল করে দিয়েছে শুধুমাত্র জোহান আভাকে ছুঁয়েছে বলে। কিন্তু এখন তার চোখের সামনে সামিদ আভার গালে হাত রেখে কথা বলছে।
এক্ষেত্রে কিছু বলার অধিকার যে রাইফের নেই। সামিদের তো আভাকে ছোঁয়ার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। সে তো আভার হাসবেন্ড। আভা সামিদের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে আড়চোখে রাইফের দিকে তাকালো।
রাইফকে এভাবে অসহায় দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আভা অনেক অবাক হয়ে গেল। আভার সাথে চোখাচোখি হতেই রাইফ দ্রুত দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো।
রাগে ক্ষোভে দুঃখে পা দিয়ে পাশের সোফায় জোরে আঘাত করলো। তারপর এক মূহুর্তও সেখানে না দাঁড়িয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে কেবিনের দিকে চলে গেল। রাইফের পেছন পেছন আসিফও চলে গেল।
…………
আভা রাইফের গতিবিধি লক্ষ্য করে অবাকের ওপর অবাক হচ্ছে। রাইফের চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে আভার চোখের পাতাগুলো ভিজে উঠলো।
Click Here For Next Part চলবে
![]() |
Love Never Ended Part 10 |
nice
I love u broo