Love Never Ended
ইলোরা জাহান ঊর্মি ( P. 14 )
রাইফকে চোখের পানি ফেলতে দেখে সামিদ করুণ চোখে তাকিয়ে বলল,
সামিদ: এখন আর কেঁদে কী হবে স্যার? যা হবার তা তো হয়েই গেছে। জানেন? আভাও এমন অনেক চোখের পানি ফেলেছে আপনার জন্য। শুধুমাত্র আপনার জন্য ও আজ পর্যন্ত কোনো সম্পর্কে জড়ানোর কথা মাথায়ও আনেনি।
বিয়ের কথা বললেই সবসময় বলতো ওর বিশ্বাস ও একদিন না একদিন ঠিকই আপনাকে ফিরে পাবে। ওর জীবনটাই এলোমেলো হয়ে গেছে। কিন্তু আপনি নিজের মতো করে জীবনটা সাজিয়ে নিয়েছেন। আসলে আভার ভাগ্যটাই বোধ হয় খারাপ।(আফসোস করলো সামিদ)
রাইফ এবার দৃষ্টি মাটির দিকে রেখেই শান্ত স্বরে বলল,
রাইফ: ভুল ধারণা সামিদ।
সামিদ: মানে?(অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো)
রাইফ আহত চোখে সামিদের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরেই বলল,
রাইফ: চার বছর ধরে আভা যতোটা কষ্ট পাচ্ছে ঠিক ততোটা কষ্ট আমিও পাচ্ছি। ওর মতো আমার জীবনটাও এলোমেলো হয়ে গেছে। জীবনটা সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে আমার। ও যেমন আমার জন্য কোনো সম্পর্কে জড়ায়নি আমিও তেমনি আজ পর্যন্ত কোনো সম্পর্কে জড়াইনি। আমিও এটাই বিশ্বাস করতাম যে একদিন আমি আবার ওকে ফিরে পাবো।
চার বছর আগে ওকে হারিয়ে ফেলার পর আমি পাগলের মতো ওকে সব জায়গায় খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি। ওকে দেয়া প্রতিজ্ঞা আমি আজও ভুলিনি। হারিয়ে ফেললেও আমি ওকে এক মুহূর্তর জন্যেও ভুলতে পারিনি। ইনফেক্ট আমি ভুলতে চাইনি। চার বছর আগে আমি ওকে যতোটা ভালোবাসতাম আজও ততোটাই ভালোবাসি।
{ Love Never Ended Heart Touching Love Story Bangla }
সামিদ আর হিয়া অবাক হয়ে রাইফের কথা শুনছে। হিয়া বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠলো,
হিয়া: তার মানে আপনি আর আভা দু’জনই দুজনকে আজও একই রকম ভালোবাসেন। কিন্তু দু’জনই এতো দিন একই ভুল ধারণা নিয়ে বসে ছিলেন।
রাইফ: সামিদের সাথে ওকে দেখে আমার মাঝে ভুল ধারণাটা এসেছিল। তখন ওর প্রতি আমার প্রচন্ড রাগ উঠেছিল যার কারণে আমি সবসময় ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি। কিন্তু আমি জানি না ও কেন এটা ভাবলো যে আমি ওকে ভুলে অন্য কারো সাথে সুখে আছি। আর ও নিজের চোখে কী-ই বা দেখেছে যে ওর মাথায় এমন ধারণা এলো?(চিন্তিত কন্ঠে বলল রাইফ)
রাইফের কথাগুলো শুনে সামিদের মুখটায় আগের থেকে অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে তৃপ্তি পূর্ণ ভাব এলো। আভার ধারণা ভুল আর রাইফ এখনো আভাকে প্রচন্ড ভালোবাসে এটা শুনেই মনে মনে সে অনেক বেশি খুশি হয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে সেটা মুখে প্রকাশ করতে পারছে না। কারণ রাইফ আর আভার এতো দিনের ভুল ধারণার জন্য তার একটু খারাপও লাগছে।
এই ভুল ধারণাটা না এলে দুজনকে এতো কষ্ট পেতে হতো না। তাহলে হয়তো প্রথম দিনেই সব মিটে যেতো। আভা বেচারির জন্য সামিদের বেশি আফসোস হচ্ছে। রাইফ তো তবু আভাকে তার সাথে দেখে ভুল ভেবেছিল। কিন্তু আভা? সে কেন এমন ভুল ভাবলো? সামিদ চিন্তিত মুখে বলল,
{ Bangla Sad Love Story | কষ্টের ভালোবাসার গল্প বাংলা }
সামিদ: স্যার আমি নিজেও জানি না আভা কেন এমন ভুল ভেবেছিল। সেদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরে ও হঠাৎ-ই আমাকে বলেছিল যে ও নিজে প্রমাণ পেয়েছে আপনি বিয়ে করে ফেলেছেন। কিন্তু তখন ওর কান্নাকাটির কারণে ও কেন এমনটা বলেছিল বা কী প্রমাণ পেয়েছিল সেটা জিজ্ঞেস করতে একদমই মনে ছিল না আমার। সত্যিই খুব বড় ভুল হয়ে গেছে আমার।( মন খারাপ হয়ে গেল সামিদের )
রাইফ: ভুল আমাদের সবার হয়েছে সামিদ। আমরা সবাই একই ভুল করেছি। আর এই ভুলের শুরুটা আমিই করেছি। আভা বারবার আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে কিন্তু আমিই রাগ দেখিয়ে ওকে কোনো কথা বলার সুযোগ দেইনি। ভেবেছিলাম ও ইচ্ছে করে আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ রেখেছে আর প্রতিজ্ঞা ভুলে বিয়ে করে ফেলেছে। সেদিন যদি আমি ওর সাথে একটাবার এই নিয়ে কথা বলতাম তাহলে এতো ভুল হতো না। সব দোষ আমার।
বলতে বলতে রাইফ হুট করে উঠে দাঁড়ালো। নিজের উপর প্রচন্ড রাগ লাগছে তার। হাতের মুঠি শক্ত করে নিলো সে। হিয়া পরিস্থিতি সামলানোর জন্য রাইফকে উদ্দেশ্য করে তাড়া দেখিয়ে বলে উঠলো,
হিয়া: ভাইয়া আমরা এখানে অলরেডি অনেকটা সময় কাটিয়েছি। ওদিকে আভার জ্ঞান ফিরেছে কিনা সেটা জানা দরকার। তাছাড়া আভাকে সব সত্যি কথা বলে ওর ভুল ধারণাটা ভাঙার সময় এসেছে। মেয়েটা এতো দিন অনেক কষ্ট পেয়েছে। সব জানার পর ও হয়তো একটু শান্তি পাবে। আমার মনে হয় এখন আমাদের হসপিটালে যাওয়া উচিত।
রাইফ,সামিদ আর হিয়া মিলে রাইফের গাড়ি করেই হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা দিলো।
{ Emotional Heart Touching Love Story }
আভার জ্ঞান ফেরার পর থেকে আসিফ আর রুহি তার পাশে বসে আছে। রুহি শুধু আভাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে রাইফের জীবন বাঁচানোর জন্য আর জিজ্ঞেস করেছে এখন সে কেমন বোধ করছে। আভাও শুধু তার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। এছাড়া রুহি আর কোনো কথা বলেনি। আভাও নিজে থেকে কোনো কথা বলার সাহস জুগিয়ে উঠতে পারে নি। আসিফ মাঝে মাঝে দু একটা কথা বলছে।
রাইফ,সামিদ আর হিয়া হসপিটালে পৌঁছে সবাই আভার কেবিনে চলে গেল। ওদের উপস্থিতিতে আসিফ,রুহি আর আভা ওদের দিকে ফিরে তাকালো। আভা রাইফকে দেখেই থমথমে মুখে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। রাইফ এটা দেখে আহত চোখে তাকালো আভার দিকে। রুহি এগিয়ে এসে রাইফের সামনে দাঁড়িয়ে ওকে পর্যবেক্ষণ করে বলল,
রুহি: ভাই,তোকে না বাড়িতে পাঠিয়েছিলাম ফ্রেশ হয়ে আসার জন্য? কিন্তু তুই তো সেই আগের অবস্থাতেই আছিস এখনো। তুই কী বাড়িতে যাস নি?
রাইফ: না বুবু।
রুহি: কেন? তাহলে এতোক্ষণ কোথায় ছিলি?(অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো রুহি)
রাইফ: রাস্তায় ওদের সাথে দেখা হয়ে গেল। তাই ওদের নিয়ে আবার হসপিটালে চলে এলাম।(সামিদ আর হিয়াকে দেখিয়ে বলল রাইফ)
আভা এতোক্ষণে হিয়াকে খেয়াল করলো। কিছুটা অবাক হয়ে মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো,
আভা: হিয়া,তুমি এখানে? বিয়ের কথাবার্তার জন্য তোমাকে নাকি আঙ্কেল বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছে না? তাহলে হসপিটালে এলে কীভাবে?
হিয়া এগিয়ে গিয়ে আভার পাশে বসলো। তারপর স্বাভাবিকভাবেই বলল,
হিয়া: অনেক কিছু ঘটে গেছে আভা। সেসব কথা পরে বলবো তোমাকে। আগে তুমি সুস্থ হয়ে ওঠো।
আভা সামিদের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
আভা: সামিদ,মা কী এসব জানে?
সামিদ: না আভা। এমনিতেই আন্টি হার্টের রোগী। এখন এসব কথা না জানানোই ভালো। বাসায় গিয়ে আমি বুঝিয়ে বলবো তাকে। তুমি চিন্তা করো না।
সামিদের কথায় আভা মাথাটা হালকা নাড়লো। আসিফ এবার সামিদকে উদ্দেশ্য করে বলল,
আসিফ: তোমাকে কতোক্ষণ ধরে আমি কল করে যাচ্ছি অথচ তোমার কোনো খবরই পেলাম না। আভা হসপিটালে ভর্তি এটা শুনেও তুমি এতো দেরি করে এসেছো।
সামিদ: একটা জরুরী কাজে আটকে পড়েছিলাম স্যার।(মাথাটা হালকা নীচু করে বলল সামিদ)
রুহি: আশ্চর্য! হাসবেন্ড হিসেবে ওয়াইফের অসুস্থতার থেকে কী কাজ বড় তোমার কাছে? তাছাড়া তুমি তো অফিসে ছিলে। আসিফ যখন ফোন করেছে তখন কাজ রেখে চলে এলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো না। কারণ আসিফ আমাদের কোম্পানির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর। সেটা তোমার ভাবা উচিত ছিল।
সামিদ কোনো কথা না বলে চুপচাপ মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে রইল। রাইফ রুহিকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
রাইফ: বুবু বাইরে চল। তোর সাথে আমার খুব জরুরী কিছু কথা আছে। আসিফ,তুইও আয়।
Also, Read Those Heart- Touching Come Back Sad Love Story
রাইফ সামিদের দিকে তাকিয়ে ওকে চোখ দিয়ে কিছু ইশারা করে কেবিনের বাইরে চলে গেল। ওর পেছন পেছন রুহি আর আসিফও গেল। রাইফ যে সামিদকে ইশারায় কিছু বলে গেছে তা আভার দৃষ্টিগোচর হয় নি। আভা ভ্রু কুঁচকে সামিদের দিকে তাকালো। সামিদ আভাকে ওভাবে তাকাতে দেখে মৃদু হাসলো। আভা প্রশ্ন করে বসলো,
আভা: রাইফ ইশারায় কী বলে গেল তোমাকে?
সামিদকে বলতে না দিয়ে হিয়া বলে উঠলো,
হিয়া: শোনো আভা,তোমার সাথে আমাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে। কিছু সত্যি কথা জানার আছে তোমার।
আভা হিয়ার কথার কোনো মানে বুঝতে পারলো না। সে একটু অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,
আভা: মানে?
সামিদ: সব শুনলেই তুমি মানেটা বুঝতে পারবে। এতো দিন অনেক ভুল ধারণা নিয়ে ছিলে তুমি। আজ সব ধোঁয়াশা কাটিয়ে সত্যিটা জানতে হবে তোমায়।
আভা: আমি তোমাদের কোনো কথা বুঝতে পারছি না সামিদ। কিসের ভুল ধারণা? কিসের ধোঁয়াশা? কোন সত্যি? প্লিজ তাড়াতাড়ি একটু বুঝিয়ে বলবে আমায়?
হিয়া: বলবো আভা। আমরা সব বলবো তোমায়। কিন্তু তুমি চুপচাপ লক্ষ্মী মেয়ের মতো শুয়ে কথাগুলো শুনবে। উত্তেজিত হতে পারবে না। কারণ কথাগুলো রাইফ ভাইয়াকে নিয়ে।
আভা এবার আরো অবাক হয়ে গেল। মনোভাব প্রকাশ না করে স্বাভাবিকভাবেই বলল,
আভা: ঠিক আছে বলো।
সামিদ: শোনা তাহলে।
Also Visit Those Romantic Love Story Article
কেবিনের বাইরে,
রুহি: বল। কী জরুরী কথা আছে?
রাইফ: বলবো। কিন্তু তুই সব না শুনে আগেই রাগ করতে পারবি না। যা বলবো চুপচাপ শুনবি।
আসিফ: রাগ করবে কেন?(আসিফ আর রুহি ভ্রু কুঁচকে প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে রাইফের দিকে তাকালো)
রাইফ: কারণ কথাগুলো আভাকে নিয়ে।(আমতা আমতা করে বলল রাইফ)
কথাটা শুনেই রুহি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। থমথমে গলায় বলল,
রুহি: ও তোর জীবন বাঁচিয়েছে সেজন্য আমি ওর কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু ওকে নিয়ে আমি কোনো কথা শুনতে চাই না এখন।
রাইফের ধারণা ছিল রুহি এমনটাই বলবে। সে অনুরোধের সুরে বলল,
রাইফ: প্লিজ বুবু এমন করিস না। কথাগুলো সত্যিই খুব গুরুত্বপূর্ণ। এতো গুলো দিন পর আজ সব সত্যি কথা জানতে পেরেছি আমি। এতো দিন আমরা অনেক ভুল ধারণা নিয়ে ছিলাম।
রুহি: মানে?(কিছু বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করলো রুহি)
আসিফ: আপু এখানে বসুন। উত্তেজিত হবেন না। আমার মনে হয় রাইফ সত্যিই কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা জানতে পেরেছে। একটু শান্ত হয়ে শুনুন প্লিজ।(চেয়ারে বসতে ইশারা করে বলল আসিফ)
রুহি ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে পুনরায় চেয়ারে বসে পড়লো। তারপর আসিফ আর রুহি প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে রাইফের দিকে তাকালো। রাইফ গলা ঝেড়ে সামিদের বলা কথাগুলো ধীরে ধীরে বলতে শুরু করলো।
Click Here For Next Part চলবে…..
![]() |
Love Never Ended Part 14 Love Story |
The story is very greatful,,i am really impreased
Thank you so much for your valuable opinion