Golperjogot

Golperjogot

Heart Touching Emotional Love Story Love Never Ended Part 2

Love Never Ended

ইলোরা জাহান ঊর্মি { Part 02 }

বেশ কিছুদিনের মধ্যেই রাইফ আভা সম্পর্কে সব তথ্য জোগাড় করে ফেললো। স্কুলে রোজ দূর থেকে আভাকে মনভরে দেখে সে। ইতিমধ্যে অনেকেই সন্দেহ করছে যে রাইফ আভার প্রেমে পড়েছে। আর সবার কানাঘুষোয় একদিন এই কথাটা আভার কান অব্দিও পৌঁছে যায়। তখন আর রাইফ চুপ থাকতে পারলো না।

কিছু না ভেবেই রাইফ হুট করে একদিন সরাসরি আভাকে প্রোপোজ করে বসলো। আর আভাও কী ভেবে একসেপ্ট করে নিলো। রাইফ এতে অনেক অবাক হয়ে গেল। কারণ ও ভেবেই নিয়েছিল আভা ওকে রিজেক্ট করবে।

খুব সুন্দর দিন কাটাচ্ছে রাইফ আর আভা। স্কুলে ওদের তেমন কথা হয়না। তবে বাড়িতে বসেই ফোনে কথা বলে। আভাই রাইফকে বলেছে বাইরে কারো সামনে যেন ওর সাথে কথা না বলে। কারণ এতে লোক জানাজানি হবে। আর লোক জানাজানি হলে দুজনকেই হয়তো সমস্যায় পড়তে হবে।

Emotional Love Story

কয়েকদিনের মধ্যেই রাইফ বুঝতে পারলো আভা আসলে তাকে আগে থেকেই পছন্দ করতো। রাইফের প্রোপোজের অপেক্ষাতেই ছিল সে।

মাধ্যমিক শেষ করে যখন রাইফ কলেজে অ্যাডমিশন নিলো তখন থেকে রোজ আভাকে দেখাটা অসম্ভব হয়ে পড়লো। তবু মাঝে মাঝে সুযোগ খুঁজে স্কুলে গিয়ে আভাকে দেখে আসে রাইফ। এছাড়া ফোনালাপ তো চলমান আছেই।

দুইবছর পর আভাও মাধ্যমিক শেষ করে কলেজে পদার্পণ করে আর রাইফ ভার্সিটিতে। তারা তাদের মতো জীবন অতিবাহিত করছে। পড়াশোনার প্রতি দুজনেরই খুব মনোযোগ। এইচএসসি পাস করে আভা যখন ভার্সিটিতে ভর্তি হলো রাইফ তো আকাশের চাঁদ হাতে পেল। ক্লাস করা বাদে বাকি সময়টা তারা একসাথেই কাটায়। রাইফের আর গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে আভাকে দেখা লাগে না। সে এখন ওর চোখের সামনেই আছে।

ওদের সম্পর্কের মাঝে আজ পর্যন্ত কোনো বাধা আসেনি। দিন মাস বছর একইভাবে কাটাতে কাটাতে ছয় বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেল। রাইফ এখন অনার্স ফাইনাল ইয়ার শেষ করেছে আর আভা থার্ড ইয়ারে পা রেখেছে। এতো বছরে ওদের সম্পর্কের ভিত আরো বেশি শক্ত হয়ে উঠেছে।

আভা এখন আরো বেশি সুন্দরী হয়ে গেছে। রাইফও আগের চেয়ে এখন আরো হ্যান্ডসাম হয়ে গেছে। ভার্সিটির অনেকের নজর কেড়েছে ওরা দুজন।

ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই ওদের জুটির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। রাইফের একমাত্র বড় বোন রুহিকে সে তাদের সম্পর্কের কথা বলেছে। কারণ রাইফের জীবনের এমন কোনো কথা নেই যা সে তার বুবুর সাথে শেয়ার না করে। রুহি আর রাইফ যেন একে অপরের প্রাণ। ভাইয়ের কথা শুনে আর আভার সাথে দেখা করে,কথা বলে আভাকে রুহির খুব পছন্দ হয়েছে।

কিন্তু আভার পরিবারের কেউ এই সম্পর্কের ছিটেফোঁটাও জানেনা। আভা বলেছে যখন রাইফ লেখাপড়া শেষ করে কোনো জব শুরু করবে তখন সে রাইফকে নিয়ে বাবার সামনে দাঁড়িয়ে তাদের এতো বছরের সম্পর্কের কথা বলবে। রাইফ এতে অনেক চিন্তায় পড়ে জিজ্ঞেস করলো,

রাইফ: আভা তুমি যেটা বলছো সেটা ঠিক আছে। কিন্তু ততোদিনে যদি অনেক দেরি হয়ে যায়?(চিন্তিত কন্ঠে)আভা: কী বলতে চাইছো? ততোদিনে বাবা আমার বিয়ে নিয়ে উঠেপড়ে লাগে নাকি,তাইতো?রাইফ: হুম।(মাথা মৃদু নাড়িয়ে)আভা: তুমি অযথাই এতো টেনশন করছো। বাবা কোনোদিনও আমাকে বিয়ে নিয়ে জোর করবে না। আর আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তো একদমই যাবে না। বাবা সবসময় আমার ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেয়।(হেসে বলল আভা)রাইফ: সে তো আমি জানি। কিন্তু তবু ভয় লাগে।(মন খারাপ করে)

আভা: আমি জানতাম সম্পর্ক নিয়ে সবথেকে বেশি চিন্তায় থাকে মেয়েরা। কারণ নিজের ফ্যামিলিকে বুঝাতে তাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। আর এখানে দেখো,আমি নিশ্চিন্তে আছি আর তোমার নাকি ভয় লাগছে। শেষে কিনা এমন একটা ভীতুর ডিমকে আমি ভালোবাসলাম। হায়রে কপাল!(কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলল আভা)

রাইফ: তুমি মজা করছো?(কিঞ্চিত রেগে)আভা: একদমই না। আমার এতো দম আছে নাকি যে রাইফ ইয়াসারের সাথে মজা করবো। তার রাগ সম্পর্কে আমার ধারণা আছে।(মুখ টিপে হেসে বলল আভা)রাইফ: আমি কী তোমার সাথে কখনো রাগ দেখিয়েছি?(ভ্রূকুটি করে তাকিয়ে প্রশ্ন করল রাইফ)আভা: তা দেখাওনি।রাইফ: তো এটা কেন বললে?আভা: এমনি বললাম। আমি শুধু এটাই বুঝাতে চাইছি যে আমাদের সম্পর্ক একদিন ঠিক পরিণতি পাবে দেখে নিও। আমাদের সম্পর্ক তো পবিত্র। আল্লাহ আমাদের ফেরাবেন না ইনশাআল্লাহ। তুমি অযথা এতো ভেবো না তো।রাইফ: ইনশাআল্লাহ।

আভা: এই আমি তোমাকে ছুঁয়ে বলছি,তুমি ছাড়া আমার লাইফে কোনোদিনো দ্বিতীয় কারো জায়গা হবেনা। আমার শুরুও তুমি শেষও তুমিই হবে। ভবিষ্যতে যতো যা-ই হোক আমি তোমার পাশে আজীবন থাকবো। কোনোদিন তোমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা দুঃস্বপ্নেও ভাববো না। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই হাতটাকেই শক্ত করে ধরে রাখবো। কথা দিলাম তোমাকে। তুমিও কথা দাও।(রাইফের হাতটা শক্ত করে ধরে চোখে চোখ রেখে বলল আভা)

রাইফ: দিলাম কথা।(মুচকি হেসে)

আভা আর রাইফ দুজন দুজনকে প্রতিশ্রুতি দিল। অতঃপর প্রতিশ্রুতি নামক চারদেয়ালে তারা আটকে গেল। তাদের ধারণা এই দেয়াল অনেক মজবুত। কেউ কোনোদিন এটা ভাঙতে সক্ষম হবে না।

Bangla Sad Love Story

রাইফের ফাইনাল এক্সাম শেষ হয়েছে। সে এখন শান্তিতে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার এই শান্তি যে সামান্য একটা ফোন কল কেড়ে নেবে সেটা সে কল্পনাও করেনি।

সকাল দশটায় রাইফ শান্তিতে ঘুমুচ্ছিলো। ঘড়ির দিকে নজর নেই তার। গতকাল রাতে আভার সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমাতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। রুহি এসে কয়েকবার ডেকে গেছে। রাইফের একটাই কথা, এখন যেহেতু এক্সাম শেষ সেহেতু সে এখন যতোক্ষণ ইচ্ছা মনভরে ঘুমাবে।

Related Story

রাইফের শান্তির ঘুমের চৌদ্দ টা বাজিয়ে শিয়রের পাশে পড়ে থাকা ফোনটা বেপরোয়ার মতো সশব্দে বেজে উঠলো। প্রথম কয়েকবার রাইফ কোনো পাত্তা না দিয়ে নড়েচড়ে পাশ ফিরে শুয়েই রইলো। পর পর পাঁচবার বাজার পরে বিরক্ত হয়ে রাইফ ফোন রিসিভ করে কানে ধরে হাই তুলে কিছুটা ধমকের সুরে বললো,

রাইফ: সকাল সকাল ঘুমটা নষ্ট করে কী লাভ হলো?(বিরক্ত হয়ে)রিনি: সরি ভাইয়া। দরকার না পড়লে আপনাকে ডিস্টার্ব করতাম না। আর এখন তো দশটা দশ বাজে সকাল সকাল কোথায়?(মিনমিনে গলায়)

রাইফ: ওহ রিনি? ঠিক আছে বলো,কী দরকারে ফোন করলে?(স্বাভাবিক হয়ে)রিনি: ভাইয়া,আভা কোথায় গেছে?রাইফ: কোথায় গেছে মানে? বাসাতেই আছে।রিনি: কৈ না তো।রাইফ: না মানে?রিনি: আমি এইমাত্র ওদের বাসায় এসেছি একটা নোট নেয়ার জন্য। কিন্তু এসে দেখি বাসা তালা মারা। আপনাকে কী কোথাও যাওয়ার কথা বলেছে?রাইফ: কৈ না তো। গতকাল রাতেই তো অনেকক্ষণ পর্যন্ত কথা হলো। কিছুই তো বললো না। হয়তো ওর আব্বু আম্মুর সাথে কোথাও বেড়াতে গেছে। হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাই বলতে পারেনি।

Bangla Premer Golpo

রিনি: বেড়াতে গেলে কী ফোন সুইচঅফ করা লাগে?রাইফ: ফোন সুইচঅফ? হয়তো চার্জ শেষ। ওর আম্মুর ফোনে কল করে দেখো।রিনি: ওদের সবার ফোন সুইচঅফ বলছে। আমি কল করেছিলাম।(চিন্তিত কন্ঠে)রাইফ: কী? কাউকে ফোনে পাওনি?(লাফ দিয়ে উঠে বসে)রিনি: না ভাইয়া। এখানে তো ওদের কোনো আত্মীয় স্বজন ও নেই যে কাউকে জিজ্ঞেস করবো।রাইফ: আচ্ছা রিনি শোনো, তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে না থেকে বাড়ি চলে যাও। এতো চিন্তা করার কিছু নেই। গেছে হয়তো কোথাও। আজীবনের জন্য তো আর যায়নি। চলে আসবে আবার।রিনি: সেসব নিয়ে আমি ভাবছি না ভাইয়া। আমি ভাবছি কোনো বিপদ হলো নাকি।রাইফ: সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে না উঠতেই কী চিন্তায় ফেললো মেয়েটা। আমাকেতো কিছু বললোই না।রিনি: আচ্ছা ভাইয়া আমি বাড়ি চলে যাচ্ছি। আভার সাথে যদি আপনার কথা হয় তাহলে আমাকে জানাবেন প্লিজ।রাইফ: ঠিক আছে জানাবো। আল্লাহ হাফেজ।রিনি: আল্লাহ হাফেজ।

Also Read

ওপাশ থেকে ফোন কেটে দেয়ার শব্দ হলো। রাইফ কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে নিলো। নাস্তা করতে করতে রুহিকেও বিষয়টা বললো। রুহি হালকা হেসে বললো,

রুহি: এই সামান্য ব্যাপার নিয়ে তোরা এতো নার্ভাস হয়ে পড়েছিস কেন বলতো? সকালেই হয়তো কোথাও গেছে। আর এখন ১০:৪৫ বাজে। এইটুকু সময় ধরে ওদের খোঁজ পাচ্ছিসনা অথচ নার্ভাসনেস দেখে মনে হচ্ছে কতো বছর ধরে যেন নিখোঁজ ওরা।

রাইফ: তাইতো। মাত্র তো কয়েক ঘণ্টা ধরে খোঁজ পাচ্ছিনা। শুধু শুধু এতো টেনশন করছিলাম। এইজন্যই তো তুই আমার বেস্ট বুবু। সবকিছু কীভাবে স্বাভাবিক করে দিস। লাভ ইউ বুবু।(খুশি হয়ে)রুহি: হয়েছে আর প্রশংসা করতে হবেনা। তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ কর।(হেসে বলল রুহি)

খাওয়া শেষ করে রাইফ বাইরে চলে গেল। আভাকে কয়েকবার ফোন করলো। কিন্তু প্রতিবারই সে বিমুখ হয়েছে। আভার সাথে যাদের পরিচয় আছে তাদের সবাইকে রাইফ ফোন করে করে খোঁজ নিয়েছে। কেউ কিচ্ছু জানে না। অথচ এখানে ওদের আত্মীয় স্বজন কেউই নেই। এভাবে সারাটা দিন কেটে গেল অথচ আভাদের কারো কোনো খবর নেই। এখনো সবার ফোন সুইচঅফ বলছে।

Bangla Valobasar Golpo

রাইফ এইবার সত্যি সত্যিই খুব টেনশনে পড়ে গেল। আর সময় নষ্ট না করে সে তাড়াতাড়ি আভার বাসায় গেল। যদিও রিনি সকালে বলেছিল যে দরজায় তালাবন্ধ করা। তবু রাইফ গেল। আভারা যে ভাড়াবাসায় থাকে সেই বাসার মালিকের সাথে দেখা করে জিজ্ঞেস করলো তারা কোথায়। কিন্তু মালিক এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারলো না। ঐ বাড়ির সব ভাড়াটিয়াদের কাছে কয়েকবার জিজ্ঞেস করার পরও তারা কেউ কিছু জানেনা বলে দিল।

কারণ ছাড়া তো আর সবাই ফোন সুইচঅফ করে রাখেনি। যেহেতু একসঙ্গে সবার ফোন সুইচঅফ বলছে সেহেতু ইচ্ছে করেই করেছে তারা। অজানা কোনো বিপদের আশঙ্কায় রাইফের হাত পা কাঁপতে শুরু করলো। তার মাথাটাও ঘুরছে এখন। মনে মনে সে আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।

Click Here For Next :– চলবে

Writer :- Elora Jahan Urmi

Golperjogot Status

Leave a Comment