Golperjogot

Golperjogot

Sad Love Story Love Never Ended Part 4

Come Back Sad Love Story Love Never Ended Part 4 | Sad Story

Love Never Ended

ইলোরা জাহান ঊর্মি { Part 04 }

খাঁন ইন্ডাস্ট্রির নতুন এমডি রাইফ ইয়াসার। খাঁন ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান রওশন খাঁনের একমাত্র শ্যালক হিসেবে ইন্ডাস্ট্রির সবাই তাকে আগে থেকেই চেনে। কারণ রাইফ প্রায়ই এখানে আসে। রাইফের রাগ সম্পর্কে সবার ধারণা আছে। রাইফ যে শুধুমাত্র রওশন আর রুহি ছাড়া আর কারো কথার পরোয়া করে না তা সবাই জানে। রাইফকে নিয়ে প্রায় সবাই সংকোচে আছে।

তবু অফিসের সবাই রাইফকে নতুন এমডি হিসেবে অভ্যর্থনা জানালো। রাইফকে নিজের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে অফিসের সবার থেকে বিদায় নিয়ে রওশন এয়ারপোর্টের দিকে রওনা দিল। রওশন যাওয়ার পর কোম্পানির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আসিফ আরিয়ান এসে রাইফকে জানালো যে আজ কিছু ইন্টারভিউ নিতে হবে। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো নতুন পিএ নিয়োগ দেয়া হবে।

Sad Love Story

কথাটা শুনে রাইফের মুখে একরাশ বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠলো। তবু সব বিরক্তি ঝামাচাপা দিয়ে বলল ইন্টারভিউর সময় যেন আসিফ আরিয়ান তার সাথে থাকে। আসিফ আরিয়ান খাঁন ইন্ডাস্ট্রির এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হলেও রাইফের সাথে তার আগে থেকেই খুব ভালো বন্ধুত্ব। তারা দুজন প্রায় সমবয়সী।

কিছুক্ষণ পরেই ম্যানেজার এসে জানালো ইন্টারভিউ-আররা সবাই চলে এসেছে। শুরু হলো ইন্টারভিউ। একজন একজন করে নাম ডাকা হচ্ছে। রাইফ খুব সুন্দরভাবে একে একে সবার ইন্টারভিউ নিচ্ছে। আসিফ আরিয়ান তাকে সাহায্য করছে। রাইফের মুখে স্পষ্ট বিরক্তি।

শেষ আর একটা ইন্টারভিউ আছে। এটা শেষ হলেই রাইফ হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে। শেষের ইন্টারভিউআর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ভেতরে আসার জন্য অনুমতি চাইলো। কিন্তু সেটা রাইফের কান অব্দি পৌঁছলো না। রাইফ মনোযোগ দিয়ে একটা ফাইল দেখছে। আসিফ আরিয়ান ইন্টারভিউআরকে ভেতরে আসতে বললেন।

ইন্টারভিউআর ভেতরে আসতেই আসিফ তাকে বসতে বললেন। ইন্টারভিউআর হাসিমুখে চেয়ার টেনে বসতে নিলেই সামনের চেয়ারে বসা মানুষটাকে দেখে সেখানেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো সে। তার হাত,পা,গলা কাঁপছে। মাথাটাও সামান্য ঘুরছে। অগত্যা মুখ থেকে অস্ফুট স্বরে বেরিয়ে এলো,

—রাইফ!

খুব পরিচিত একটা মেয়েলি কন্ঠে নিজের নাম শুনে রাইফ ফাইল থেকে দ্রুত মুখ তুলে সামনের দিকে তাকালো। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই যেন রাইফ ৪২০ ভোল্টের একটা বৈদ্যুতিক শক খেলো। সামনে দন্ডায়মান মেয়েটির দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। রাইফের মুখ দিয়ে টু শব্দটি পর্যন্ত বের হচ্ছে না।

তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে যে সে এই মেয়েটিকে তার সামনে একদমই প্রত্যাশা করেনি। মেয়েটারো রাইফের মতো একই অবস্থা। দুজনেরই চোখের কোণে পানি টলমল করছে। এক্ষুনি হয়তো বাঁধ ভেঙে গড়িয়ে পড়বে। দুজন দুজননের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। যেন তারা অনেক সাধনার পর একটা স্বপ্ন দেখছে। একটু নড়াচড়া করলেই স্বপ্নটা হারিয়ে যাবে। পাশে দাঁড়িয়ে আসিফ ওদের দুজনের কার্যকলাপ দেখে কিছুটা অবাক হলো। সে একবার রাইফের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার আভার দিকে।

পড়ুন  Heart Touching Emotional Love Story Mr. Fuska Wala Part 1

আসিফ: রাইফ,এই রাইফ।(আসিফ রাইফের হাত ধরে মৃদু ঝাকুনি দিয়ে ডাকলো)

আসিফের ডাকে দুজনেরই হুঁশ ফিরলো। সামনে দন্ডায়মান মেয়েটি অন্যদিকে তাকিয়ে দ্রুত হস্তে চোখের কোণে জমে থাকা পানিটুকু মুছে নিলো।

আসিফ: আপনারা কী দুজন দুজনকে চেনেন নাকি? কী হলো হঠাৎ করে দু'জনের?(মেয়েটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল আসিফ)

আসিফের কথায় মেয়েটি এখন চুপচাপ নিচ দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে দ্বিতীয়বার আর সে সামনে তাকানোর সাহস জুগিয়ে উঠতে পারছে না। রাইফের দৃষ্টি এখনো মেয়েটির ওপর। তার দৃষ্টিতে স্পষ্ট অভিযোগ। আসিফ মেয়েটির কাছে বিমুখ হয়ে আবার রাইফকে একই প্রশ্ন করল। রাইফও কোনো উত্তর দিল না। আসিফের দিকে তাকিয়ে শুধু বলল,

Sad Love Story In Bangla

রাইফ: আসিফ,এই ইন্টারভিউটা একটু তুই নে প্লিজ। আমার প্রচন্ড মাথা ধরেছে।
আসিফ: মাথা ধরলে বিশ্রাম নে। কোথায় যাচ্ছিস?
রাইফ: বাসায় যাচ্ছি।
আসিফ: কিন্তু তুই তো আজই জয়েন করলি। প্রথম দিনই এতো তাড়াতাড়ি.............।(আসিফ পুরো কথাটা শেষও করতে পারলো না)

রাইফ আর এক মুহূর্তও সেখানে দাঁড়ালো না। আসিফ আর কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই দ্রুতপায়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল। আসিফ বেচারা কিছুই বুঝে উঠলো না। মেয়েটা করুণ চোখে রাইফের চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার মুখোভাব লক্ষ্য করে আসিফ মেয়েটাকে বসতে বলল। মেয়েটা পাশের একটা চেয়ারে বসতেই আসিফ নিজের চেয়ারে বসতে বসতে মেয়েটাকে প্রশ্ন করল,

আসিফ: আপনার নামটা যেন কী?
মেয়েটা: আভা আশফিকা।(মেয়েটা শীতল গলায় জবাব দিলো)

নামটা শুনে কিছুটা অবাক হয়ে আসিফ মেয়েটার দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ মেয়েটার দিকে রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকলো কিন্তু কিছুই বললো না। আসিফ আর কথা না বাড়িয়ে ইন্টারভিউ নিতে শুরু করলো।

অফিসের বাইরে রাইফ তার গাড়ির মধ্যে সিটে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে আছে। তার নিঃশ্বাস দ্রুতগতিতে বইছে। হঠাৎ কানে ভেসে এলো একটা পুরুষ কন্ঠে কেউ আভা আভা বলে ডাকছে। দ্রুত চোখ মেলে সামনের দিকে তাকাতেই দেখলো অফিসের গেইট দিয়ে ধীর পায়ে আভা বেরিয়ে আসছে। আভাকে দেখতেই আবার রাইফের চোখের কোণে পানি এসে জমলো।

হঠাৎ খেয়াল করলো রাস্তার ওপার থেকে একটা ছেলে যে এতোক্ষণ আভা আভা বলে ডাকছিল,সে দ্রুতপায়ে রাস্তা পেরিয়ে আভার কাছে গেল। ভালোভাবে খেয়াল করতেই রাইফ ছেলেটাকে চিনতে পারলো। ছেলেটা তাদের কোম্পানিতেই কাজ করে। কম্পিউটার অপারেটর আহম্মেদ সামিদ। কিন্তু উনি আভার নাম ধরে ডাকছে কেন?

পড়ুন  লাভার নাকি ভিলেন - পর্ব ৩ থ্রিলার গল্প | মোনা হোসাইন

সামিদ আভার সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ হাসিমুখে কথা বলে হঠাৎ আভার হাত ধরে রাস্তা পার হলো। আভার মুখটা এখনো ফ্যাকাশে হয়ে আছে। সামিদ ছেলেটা আভার হাত ধরে হাঁটছে অথচ আভা কিছুই বলছে না। সেও চুপচাপ হেঁটে চলেছে। ওরা দুজন যে পূর্ব পরিচিত,সেটা রাইফের কাছে স্পষ্ট। রাইফ খেয়াল করলো সামিদ একটা রিকশা ডেকে আভাকে নিয়ে চলে গেল। যতোক্ষণ পর্যন্ত ওদের রিকশা দেখা গেল ততোক্ষণ পর্যন্ত রাইফ একদৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে রইল। তার মুখে রাগ,ক্ষোভ,দুঃখ,অভিযোগ সবকিছু একসাথে প্রকাশ পেল। নিজের অজান্তেই রাইফের চোখের কোণ থেকে দুফোঁটা পানি বাঁধ ভেঙে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লো।

Bangla Valobashar Golpo

এতো তাড়াতাড়ি ভাইয়ের বাড়িতে ঢুকে সোজা ওপরে যাওয়ার গতিবিধি লক্ষ্য করে রুহি চিন্তায় পড়ে গেল। আজ নতুন জয়েন হয়েছে,এতো তাড়াতাড়ি তো বাড়ি ফেরার কথা না। এসেই বেপরোয়ার মতো কলিং বেল চাপলো। কাজের মেয়েটা দরজা খুলে দিতেই যেভাবে ওপরে চলে গেল দেখেই বুঝা যাচ্ছে প্রচন্ড রেগে আছে। প্রথম দিন অফিসে গিয়েই কারো সাথে রাগারাগী করলো কিনা সেটা ভেবেই রুহি চিন্তিত হলো।

ওয়াশরুমে শাওয়ারের নিচে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে রাইফ। তার হাতের মুঠি শক্ত হয়ে আছে এখনো। রাগে তার সারা শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো সামিদ আভার হাত ধরে রাস্তা পার করে নিয়ে যাচ্ছে। চার বছর আগে রাইফও এভাবে আভার হাত ধরে , রাস্তা পার করতো। আভা একা রাস্তা পার হতে ভয় পায়। সে ছাড়া আভার হাত ধরার অধিকার আর কারোর নেই। কে এই সামিদ? আভার সাথে ওর কী সম্পর্ক?

রাইফ ভাবছে,“আমার সন্দেহ যদি সত্যি হয় তাহলে আমি কাউকে ছাড়বো না,কাউকে না। আমার আভা এভাবে আমাকে দেয়া কথা ভাঙতে পারে না। যদি এমন কিছু হয়েও থাকে তাহলে এই চার বছরে আমি যতোটা কষ্ট পেয়েছি তার চার গুণ তুমি ফেরত পাবে আভা। রাইফ ইয়াসার যতোটা ভালোবাসতে পারে ততোটা কঠোরও হতে পারে। বিশ্বাসঘাতকের কোনো ক্ষমা নেই আমার কাছে।”

রাইফ টানা আধঘণ্টা শাওয়ার নেয়ার পর বাইরে থেকে রুহির ডাকে শাওয়ার ছেড়ে বাইরে বেড়িয়ে এলো। ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়েই রুহি চমকে উঠলো। চেহারার এই অবস্থা হলো কীভাবে? চোখ দেখে তো মনে হচ্ছে কেঁদেছে। চার বছর আগে আভার হারিয়ে যাওয়ায় সে তার ভাইকে শেষবার কাঁদতে দেখেছে। কিন্তু এই চার বছর পর আবার হঠাৎ চোখে পানি এলো কেন? অফিসে প্রথম দিনেই কী এমন হয়েছে? সামান্য কোনো ব্যাপারে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়বে এমন ছেলে তো রাইফ নয়।

পড়ুন  তোমার আমার প্রেম – লাভস্টোরি পর্ব 11 | Bangla Premer Golpo

Emotional Love Story Bangla

রুহি: ভাই। তোর চেহারার এই অবস্থা কেন? কী হয়েছে?(রুহি দৌড়ে রাইফের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলো)
রাইফ: ..................।(চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল)

রুহি: কিছু বলছিস না কেন? এতো তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরলি,আবার দেখলাম তাড়াহুড়ো করে ওপরে চলে এলি,এখন আবার চেহারার এই অবস্থা করেছিস। বল না ভাই। কী হয়েছে?(রাইফের হাত ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে আবার প্রশ্ন করলো রুহি)

রাইফ কোনো উত্তর না দিয়ে চুপচাপ বিছানায় এসে বসে পড়লো। রুহি গিয়ে ভাইয়ের পাশে বসলো।

রুহি: অফিসে কী কারো সাথে ঝামেলা হয়েছে?
রাইফ: না।(ছোট করে জবাব দিলো)
রুহি: তাহলে?(ভ্রূকুটি করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো)
রাইফ: আমাকে একটু একা থাকতে দে প্লিজ।
রুহি: সব না শুনে আমি কোথাও যাচ্ছি না। বল কী হয়েছে? তুই কী কোনো কারণে আপসেট?

রাইফ: অফিসে যে নতুন পিএ নিয়োগ দেয়া হবে জানিস?
রুহি: হ্যাঁ। আজ তো ইন্টারভিউ‌ হওয়ার কথা ছিল।
রাইফ: হুম। আমিই নিয়েছি ইন্টারভিউ। সবার শেষে এমন একজন ইন্টারভিউ দিতে এসেছিল,সত্যিই আনএক্সপেক্টেড ছিল।(নিচ দিকে দৃষ্টি রেখে বলল)
রুহি: আনএক্সপেক্টেড! কে?(রুহি কিছু বুঝতে পারলো না)
রাইফ: আভা আশফিকা। চার বছর আগে যে আমার জীবন থেকে হারিয়ে গিয়েছিল।(রুহির দিকে দৃষ্টি স্থির রেখে বলল রাইফ)
রুহি: কী!

রুহি যেন অবাকের উচ্চস্তরে পৌঁছে গেল। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না সে। এটা কীভাবে সম্ভব? এই মেয়েটার প্রতি তারও কিছুটা ক্ষোভ আছে। শুধুমাত্র এই একটা মেয়ের জন্য তার ভাই আজ চার বছর ধরে মন‌ খুলে কথা বলতে ভুলে গেছে,হাসতে ভুলে গেছে।

রুহি সবসময় ভাবে এই মেয়েটাকে যদি কোনোদিন হঠাৎ তার সামনে পায় তাহলে সে শুধুমাত্র একটা প্রশ্ন করবে।

“কেন তার ভাইয়ের জীবন এলোমেলো করে দিল সে?” রুহির মাথায় হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এতো বছর কোথায় ছিল আভা? চার বছর পর আবার এই মেয়ে কোথা থেকে উদয় হলো? তারপর আবার তাদেরই কোম্পানির পিএ হওয়ার জন্য ইন্টারভিউ দিতে এসেছে। আশ্চর্য!

Click Here For Next :চলবে

Writer :- Elora Jahan Urmi

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Home
Stories
Status
Account
Search
Scroll to Top