Love Never Ended
ইলোরা জাহান ঊর্মি
ব্রেকফাস্ট টেবিলে ইয়ানা গোমড়া মুখ করে বসে আছে। রুহি বারবার মুখের কাছে খাবার ধরে খেতে বলছে। কিন্তু সে খাবেই না। রুহি এটা সেটা বলে বুঝানোর চেষ্টা করছে তবু সে বুঝতে চাইছে না। রাইফ এসে মুচকি হেসে একটা চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল,
রাইফ: সকাল সকাল কী হয়েছে আমার প্রিন্সেস এর? খাচ্ছে না কেন?
রুহি: দেখ না ভাই কখন থেকে খাবার নিয়ে বসে আছি খাচ্ছেই না। তখন থেকে বলছে রাইফের সাথে অফিসে যাবো। আমি বললাম রাইফ নতুন জয়েন করেছে এখন ওকে ডিস্টার্ব করা ঠিক হবে না। যেতে না বলেছি বলে মুখ গোমড়া করে বসে আছে।(অভিযোগের সুরে বলল রুহি)
রাইফ: হঠাৎ আমার সাথে অফিসে যেতে ইচ্ছে হলো কেন?(ইয়ানার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো রাইফ)
ইয়ানা এতোক্ষণ মুখ গোমড়া করেই মাথা নীচু করে বসে ছিল। রাইফের কথায় মুখ তুলে তাকালো।
ইয়ানা: তুমি তো এখন সালাদিন অফিসে থাকো। বাসায় ভালো লাগে না আমাল একা একা।(মন খারাপ করে বলল ইয়ানা)
রাইফ: একা কোথায়? আম্মী আছে তো।
ইয়ানা: আম্মী কাজ কলে সবসময়। তোমাকে ছালা ভালো লাগে না আমাল। আমি তোমাল সাথে যাবো।(ঠোঁট উল্টে বলল ইয়ানা)
রুহি: তুমি গেলে রাইফের কাজে ডিস্টার্ব হবে ইয়া। কেন বুঝতে চাইছো না?(কিছুটা রেগে গিয়ে বলল রুহি)
ইয়ানা এবার ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। রুহি এবার আরো ক্ষেপে গেল। একেতো খাবার নিয়ে এতোক্ষণ বসিয়ে রেখেছে এখন আবার কাঁদছে। এদিকে খুব ক্ষুধাও পেয়েছে রুহির। রাইফ খাওয়া বন্ধ করে রুহিকে বলল বকাঝকা না করতে। তারপর ইয়ানাকে বলল সে তাকে অফিসে নিয়ে যাবে তবে এক শর্তে।
শর্ত হচ্ছে ইয়ানাকে পুরো খাবার খেয়ে শেষ করতে হবে আগে। শর্তটা ইয়ানার পছন্দ হয়নি তবু রাজি হয়ে গেল। যাইহোক রাইফের সাথে তো যেতে পারবে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইয়ানা নাক মুখ খিঁচে বাধ্য মেয়ের মতো পুরো খাবার খেয়ে নিলো। রাইফেরও খাওয়া শেষ হয়েছে। খাওয়া শেষে রাইফ রুহিকে বলল ইয়ানাকে তৈরি করে দিতে। রুহি অনেকবার না করলেও রাইফ শুনলো না।
শেষে একপ্রকার বাধ্য হয়েই রুহি ইয়ানাকে তৈরি করে দিলো। ইয়ানা খুব খুশি মনে রাইফের সাথে চলে গেল।
{ Love Never Ended Heart Touching Love Story Bangla }
আভা অফিসের মধ্যে পায়চারি করেই চলেছে। সে রাইফের জন্য অপেক্ষা করছে। আজ সে রাইফের সাথে কথা বলবে। কিন্তু রাইফ এখনো আসছে না। এরইমধ্যে রাইফ চলে এলো। আভার মনটা খুশিতে নেচে উঠলো। দু’পা এগিয়ে আসতেই চোখ পড়লো রাইফের হাত ধরে হাঁটতে থাকা ইয়ানার ওপর। এতো মিষ্টি একটা মেয়েকে দেখে আভার একদিকে ভালোও লাগলো আরেকদিকে মনে প্রশ্ন উঠলো মেয়েটা কে।
আভা আর এক পা-ও না এগিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়লো। রাইফ আরো এগিয়ে আসতেই আভার সাথে দৃষ্টি বিনিময় হলো। রাইফের দৃষ্টি দেখে আভার গতকালকের কথাগুলো মনে পড়ে গেল। আভা দৃষ্টি নামিয়ে মিনমিনে গলায় শুধু বলল,“গুড মর্নিং।” রাইফ কোনো উত্তর না দিয়ে ইয়ানাকে নিয়ে নিজের কেবিনের দিকে চলে গেল।
রাইফের এমন আচরণে আভার মন খারাপ হয়ে গেল। সে ভাবলো কিছুক্ষণ পরে রাইফের সাথে কথা বলবে। তাই তাড়াতাড়ি কেবিনের দিকে ছুটলো। কেবিনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নক করে বলল,“আসবো?” রাইফ না তাকিয়েই বলল,“আসুন।” আভা কেবিনে ঢুকে দেখলো ইয়ানাকে পাশের চেয়ারে বসিয়ে রাইফ ল্যাপটপ খুলে বসেছে। আভাকে দেখেই ইয়ানা ওর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিলো।
{ Bangla Sad Love Story | কষ্টের ভালোবাসার গল্প বাংলা
আভা একবার গোমড়া মুখে রাইফের দিকে তাকিয়ে আবার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। ইয়ানার দিকে তাকাতেই তার মনে আবার প্রশ্ন জাগলো কে এই মেয়ে। আভার মুখোভাব লক্ষ্য করে ইয়ানা হাত নাড়িয়ে মিষ্টি কন্ঠে বলে উঠলো,
ইয়ানা: হাই আন্টি। কেমন আছো তুমি?
আভা: ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?(মৃদু হেসে বলল আভা)
ইয়ানা: আমিও ভালো আছি। তুমি কী এখানে কাজ কলো?
আভা: হ্যাঁ।
ইয়ানা: তুমি দেখতে খুব সুন্দল।
আভা: তুমিও খুব কিউট। নাম কী তোমার?
ইয়ানা: আমাল নাম ইয়ানা। তোমাল নাম কী?
আভা: বাহ্ তোমার মতো তোমার নামটাও খুব সুন্দর। আমি আভা আশফিকা।
রাইফ হঠাৎ বলে উঠলো,
রাইফ: মিসেস আভা।
রাইফের ডাক শুনে আভা যেন আকাশ থেকে পড়লো। সে মিসেস হলো কীভাবে? এখনো তো বিয়েই করেনি। আভার বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠলো,
আভা: মিসেস!
রাইফ: অবাক হলেন কেন? বিয়ে করেছেন আর মিসেস শুনতে খারাপ লাগে? সামিদ সাহেব শুনলে কষ্ট পাবে।(ল্যাপটপের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলল রাইফ)
আভা: সামিদ কেন কষ্ট পাবে?(অবাক কন্ঠে প্রশ্ন করলো আভা)
রাইফ: নিজের বউ যদি বিয়ের পরও অবিবাহিত সাজতে চায় তাহলে তো বেচারা কষ্ট পাবেই।
আভা: কিন্তু আমি তো বিয়ে করি………………….।
{ Bangla Premer Golpo }
আভার কথা শেষ না হতেই টেবিলে থাকা রাইফের ফোনটা স্বশব্দে বেজে উঠলো। আভা ঠোঁট উল্টে ফোনের দিকে তাকালো। শেষের কথাটুকু আর বলা হলো না। রাইফ ফোন রিসিভ করে কানে ধরলো,
রুহি: ভাই তোরা পৌঁছেছিস?
রাইফ: হ্যাঁ। একটু আগেই অফিসে ঢুকলাম।
রুহি: ইয়া কী করছে?
রাইফ: এইতো আমার পাশেই বসে আছে।
রুহি: এক কাজ করিস আজ লাঞ্চের সময় বাইরে থেকে খাবার না আনিয়ে বাসায় চলে আসিস। ইয়িকে রেখে লাঞ্চ করে তুই আবার চলে যাস।
রাইফ: আচ্ছা ইয়াকে জিজ্ঞেস করি ওয়েট।
রাইফ ফোনটা কান থেকে নামিয়ে ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলল,
রাইফ: প্রিন্সেস,আম্মী বলছে লাঞ্চের সময় তোমাকে বাসায় রেখে আসতে।
ইয়ানা রাইফের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কানে ধরলো।
ইয়ানা: আম্মী,আমি লাঞ্চেল সময় বাসায় যাবো না। অফিস যখন ছুতি হবে তখন যাবো।(অনুরোধের সুরে)
রুহি: ইয়া,অফিস ছুটি হবে সন্ধ্যায়। এতোক্ষণ পর্যন্ত থাকলে রাইফের কাজে ডিস্টার্ব হবে মামনি।
ইয়ানা: আমি একটুও ডিস্টালব কলবো না,প্লমিস। সন্ধ্যায় ছুতিল পল আমলা ঘুলতে বেলোবো তালপল বাসায় ফিলবো।(জেদ ধরে বসলো ইয়ানা)
রুহি: ইয়া সোনা। এমন জেদ করে না মামনি। রাইফ কাজে ব্যস্ত থাকবে। তুমি যদি এদিক ওদিক কোথাও চলে যাও তাহলে কিন্তু হারিয়ে যাবে।(ইয়ানাকে বুঝানোর চেষ্টা করলো রুহি)
ইয়ানা: আমি তো এল আগেও বাপিল সাথে কতোবাল অফিসে এসেছি। তুমি চিন্তা কলো না,আমি হালাবো না।(মুচকি হেসে)
রুহি: ঠিক আছে। কোনো দুষ্টুমি করবে না,ওকে?
ইয়ানা: ওকে।
ইয়ানা খুশি হয়ে ফোনটা রাইফের দিকে এগিয়ে ধরলো। রাইফ মুচকি হেসে ফোনটা নিয়ে বলতে শুরু করলো,
রাইফ: ইয়ার কথাই রইল। আমরা সন্ধ্যায় ঘুরেফিরে তারপর বাসায় ফিরবো।(ইয়ানার দিকে তাকিয়ে বলল রাইফ)
রুহি: যা ইচ্ছা তাই কর তোরা। দেখিস তোর চোখে ফাঁকি দিয়ে যেন আবার কেবিনের বাইরে না যায়।
রাইফ: কোথাও যাবে না। আমার সাথেই থাকবে। নো টেনশন।
রুহি: আচ্ছা রাখছি তাহলে।
{ Emotional Heart Touching Love Story }
ওপাশ থেকে রুহি ফোন কেটে দিলো। রাইফ হাসিমুখে ইয়ানার দিকে তাকালো। ইয়ানা রাজ্য জয়ের হাসি দিয়ে বলল,
ইয়ানা: আজ তাহলে আমলা অনেক ঘুলবো।
রাইফ: অনেক ঘুরা যাবে না। তাহলে তোমার আম্মী তোমাকেও বকবে সাথে আমাকেও বকবে।
ইয়ানা: তাহলে অল্প ঘুলবো।
রাইফ আর ইয়ানা হাসছে। ওদিকে আরেকজন মানষ তাদের দিকে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। চার বছর পর আজ প্রথম রাইফের মুখে আভা হাসি দেখছে। তাও একটা মেয়ের ফোন আসায়। কী সুন্দর হাসিমুখে কথা বলল মেয়েটার সাথে। ওপাশে থাকা মেয়েটার কোনো কথা না শুনতে পেলেও আভা বুঝতে পারলো উনিই ইয়ানার মা।
Also Read Those Heart- Touching Come Back Sad Love Story
আভা আন্দাজ করলো ওই মেয়েটা লাঞ্চের সময় বাসায় যাওয়ার কথা বলেছে। রাইফ সন্ধ্যায় ঘুরেফিরে বাসায় ফেরার কথা বলছিল। তার মানে এরা সবাই এক বসায় থাকে। রাইফ ইয়ানাকে প্রিন্সেস বলে ডাকছে। এর মানে কী দাঁড়ায়? ইয়ানা আর ওর মায়ের সাথে রাইফের কী সম্পর্ক? এজন্যই কী রাইফ তাকে ভুলে গেছে?
আভার মাথা ঘুরছে,চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে,পা কাঁপছে। হঠাৎ করেই যেন তার পৃথিবী থমকে গেছে। এই মুহূর্তে আভার এখান থেকে ছুটে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পা দুটো অবশ হয়ে গেছে। এক পা-ও সামনে এগোতে পারছে না। রাইফ হঠাৎ বলে উঠলো,
রাইফ: মিসেস আভা। কী যেন বলছিলেন আপনি?(একটু ভাবুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
আভা: ক…কিছু না স্যার।(কাঁপা গলায় আমতা আমতা করে উত্তর দিলো আভা)
এই প্রথম আভা রাইফকে স্যার বলে উঠলো। রাইফ একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
………
রাইফ: চৌধুরী গ্রুপের সাথে আমরা একটা ডিল করবো শুনেছেন নিশ্চয়ই?
আভা: জি স্যার।(নিচ দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলল আভা)
রাইফ: দুদিন পর তাদের সাথে আমাদের মিটিং আছে একটা। আপনি নতুন জয়েন করেছেন। এখনো তেমন এক্সপার্ট না। আশা করছি মিটিংয়ের সব ব্যবস্থা ঠিকঠাক ভাবে করতে পারবেন। পারবেন তো?
আভা: পারবো।(ছোট করে জবাব দিলো আভা)
রাইফ: ওয়েল।
আভা মাথা নিচু করেই দাঁড়িয়ে আছে। রাইফ একবার ভ্রূ কুঁচকে আভার মুখোভাব বুঝার চেষ্টা করলো। কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলে উঠলো,
Also Visit Those Romantic Love Story Article
আভা: আপনার হাসবেন্ডের সাথে কী আপনার ঝগড়া হয়েছে?
আভা মুখ তুলে রাইফের দিকে তাকালো। রাইফ হঠাৎ এমন প্রশ্ন করলো কেন সেটাই বুঝার চেষ্টা করলো। আভাকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাইফ বলল,
রাইফ: না, আপনি হঠাৎ মুখ গোমড়া করে ফেললেন তাই জিজ্ঞেস করলাম। যাইহোক হাসবেন্ড ওয়াইফের মাঝে একটু আধটু ঝগড়া হয়ই। আপনাদের পার্সোনাল ম্যাটার,বলতে হবে না। ফাইলগুলো রেডি করুন।
আভা কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে রাইফের দিকে তাকিয়ে রইল। বিয়ে করে রাইফ হঠাৎ এতোটা চেন্জ হয়ে গেল কীভাবে? রাইফ নিজের প্রতিশ্রুতি কীভাবে ভুলে গেল। ভেবেই আভার বুকটা দুমড়ে মুচড়ে উঠছে। সে না পারছে কিছু বলতে আর না পারছে সহ্য করতে।
Click Here For Next Part চলবে
![]() |
Love Never Ended Part 7 |
Nice story. I love the all story