Love Never Ended
ইলোরা জাহান ঊর্মি
রুহি রাইফের কেবিনে ঢুকে দেখলো রাইফ মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে আর ইয়ানা পাশে বসে গেম খেলছে। মাকে দেখেই ইয়ানা ছুটে এসে পা জড়িয়ে ধরলো। রুহি ইয়ানাকে কোলে তুলে নিলো। রাইফ বোনের মুখের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রুহির মুখটা থমথমে হয়ে আছে। মনে হচ্ছে কারো সাথে রাগারাগী করেছে। রাইফ প্রশ্ন করে বসলো,
রাইফ: বুবু,কিছু কী হয়েছে?
রাইফের প্রশ্নে রুহি কিছুক্ষণ চুপ থেকে উত্তর দিল,
রুহি: কৈ? কী হবে আবার?
রাইফ: তোর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে। কারো সাথে বকাঝকা করেছিস?
রুহি আবার চুপ হয়ে গেল। মনে মনে ভাবলো আভার সাথে যে ও রাগারাগী করেছে সেটা কী রাইফকে বলা উচিত? রুহির নীরবতা দেখে রাইফ আবার প্রশ্ন করলো,
রাইফ: কী হলো বুবু বলছিস না কেন? কী হয়েছে তোর?
রুহি এবার স্থির দৃষ্টিতে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
রুহি: অফিসে ঢুকেই আভার সাথে দেখা হয়েছে।
রাইফ এবার চুপ হয়ে গেল। রুহির কথাটা শুনেই রাইফ কিছু একটা আঁচ করতে পারছে। সে এখন ভালোভাবেই বুঝতে পারছে রুহি আভার সাথে হয়তো চিৎকার চেঁচামেচি করেছে। বরাবরই আভার প্রতি রুহির খুব ক্ষোভ জমানো ছিল। আজ চোখের সামনে পেয়ে হয়তো এতো দিনের ক্ষোভ ঝেড়েছে। রাইফ আর এটা নিয়ে কথা বাড়ালো না। রুহি রাইফের থেকে বিদায় নিয়ে ইয়ানাকে নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো।
{ Love Never Ended Heart Touching Love Story Bangla }
আভা নিজেকে সামলে নিয়ে আবার অফিস ঘুরতে শুরু করলো। পুরো অফিস চক্কর দিয়ে আভা হাঁপিয়ে পড়লো। ক্লান্ত হয়ে রাইফের কেবিনের দিকে চলে গেল। আভা কেবিনে প্রবেশ করতেই রাইফ স্থির দৃষ্টিতে আভার দিকে তাকালো। আভার মুখটা মলিন হয়ে আছে। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। নিশ্চয়ই অনেকক্ষণ কেঁদেছে। রাইফ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর হঠাৎ বলে উঠলো,
রাইফ: বুবুর সাথে দেখা হওয়ার পর কী আপনার সাথে কথা হয়েছে?
আভা এবার মুখ তুলে রাইফের দিকে তাকালো। রাইফ প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আভা মাথা নিচু করে থমথমে গলায় উত্তর দিলো,
আভা: উনি আমাকে কিছু বলার সুযোগ দেননি।
রাইফ: রাগারাগী করেছে আপনার সাথে?
আভা: হুম। বুবু ডাকতে নিষেধ করে দিয়েছেন। এমনকি কখনো ভুল করেও ওনার সামনে যেতে না বলেছেন।
রাইফ আভার কথার কোনো প্রতিউত্তর করলো না। আভা আবার আহত চোখে তাকিয়ে মিনতি করে বলল,
আভা: আমি আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই। প্লিজ আমাকে কিছু বলার সুযোগ দিন।
রাইফ: বিশ্বাসঘাতকদের কোনো কথা শোনার ইচ্ছে নেই আমার।(রাইফের মুখোভাব কঠিন হয়ে গেল)
আভা: প্লিজ।(ধরা গলায় বলল আভা)
রাইফ এবার চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। টেবিল থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে চোখ মুখ কঠিন করে বলল,
রাইফ: আগামীকাল মিটিং আছে মনে আছে নিশ্চয়ই? সবকিছু যেন ঠিকঠাক মতো হয়। কাল প্রেজেন্টেশন করবেন আপনি।
{ Bangla Sad Love Story | কষ্টের ভালোবাসার গল্প বাংলা }
রাইফ আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না। হনহন করে হেঁটে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেল। আভা ছলছল চোখে রাইফের চলে যাওয়া দেখলো। রাইফ চলে যেতেই আভা ধপ করে পাশের চেয়ারটাতে বসে পড়লো। তার ধারণা রাইফ তাকে ভুলে অন্য কারো সাথে সুখে আছে। সেজন্যই সে তার কোনো কথা শুনতে আগ্রহী না।
জয়েন করার পর থেকে এখনো পর্যন্ত রাইফ তার সাথে ভালো ভাবে কথা বলেনি। সম্পূর্ণ অপরিচিতদের মতোই কথা বলছে।
আভা ভেবেছিল রাইফ অন্তত তার থেকে দূরে থাকার কারণটা জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু রাইফ আগের কোনো কথাই বলছে না। আভার মনে হচ্ছে ও শেষ হয়ে যাবে। চোখের সামনে রাইফকে এমন ভাবে ও দেখতে পারবে না। কতোদিন আর সহ্য করতে পারবে?
………………………………………………………………….
আসিফের কেবিনের সামনে দাঁড়িয়ে নক করলো রাইফ। আসিফ কাজে ব্যস্ত ছিল। রাইফকে দেখে একগাল হেসে বলে উঠলো,
আসিফ: আরে এমডি সাহেব যে। ভেতরে আয়,তোর আবার নক করা লাগে?
রাইফ: নক না করে কারো কেবিনে ঢোকা উচিত না। তাছাড়া তুই কখনো কখনো ভাবির সাথে কথা বলতে ব্যস্ত থকিস। সরাসরি ঢুকে পড়লে তো আবার আমাকেই কথা শুনাবি।(মুচকি হেসে ভেতরে ঢুকে বলল রাইফ)
আসিফ: আর কথা শুনাবো কীভাবে? আফটার অল এখন তুই আমাদের এমডি বলে কথা।(হেসে বলল আসিফ)
রাইফ: ওভার এক্টিং বন্ধ কর। বিয়ে করছিস কবে তা বল? ভাবিকে যখন অন্য কেউ বিয়ে করে তোর সামনে দিয়ে নিয়ে চলে যাবে সেদিন বুঝবি।
রাইফের কথায় আসিফ হাহা করে হেসে উঠলো। হাসতে হাসতেই বলল,
{ Emotional Heart Touching Love Story }
আসিফ: সামিরা আমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবে না। এসব বলে লাভ নেই। তবে খুব তাড়াতাড়িই বিয়ে করবো দেখিস।
রাইফ: ওকে ব্রো। দেখা যাক। বাই দ্যা ওয়ে,কাজের কথায় আসি।(সামনের চেয়ার টেনে বসতে বসতে সিরিয়াস হয়ে বলল রাইফ)
আসিফ: কালকের মিটিংয়ের ব্যাপারে?
রাইফ: হ্যাঁ। চৌধুরী গ্রুপের সাথে তো ভাইয়া এর আগে মাত্র একবার ডিল করেছিল তাইনা?
আসিফ: হুম। আগে তাদের পজিশন খুব বেশি ভালো ছিল না। কিন্তু ইদানিং হুট করেই খুব উন্নতি করে ফেলেছে।
রাইফ: ও।
আসিফ: এখন চৌধুরী সাহেবের ছেলের হাতে পুরো বিজনেস। ছেলেটার বুদ্ধি আছে বৈকি। তবে একটু ক্যারেক্টর ঢিলা।(হালকা হেসে বলল আসিফ)
রাইফ: মানে?(ভ্রূকুটি করে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো রাইফ)
আসিফ: মেয়েদের প্রতি দূর্বলতা বেশি। সুন্দরী মেয়েদের পেছনে লাগে।(আসিফের মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট)
রাইফ: ছিঃ। এমন মানুষের সাথে ডিল করবো?
আসিফ: আরে ধুর। আমাদের সাথে ওর সম্পর্ক শুধু বিজনেসের ক্ষেত্রে। ওর পার্সোনাল লাইফে ও কী করলো না করলো ওসব দেখা আমাদের কর্ম না।(সিরিয়াস হয়ে উত্তর দিলো আসিফ)
রাইফ: হুঁ বুঝলাম।(রাইফ মাথা নাড়িয়ে ছোট করে জবাব দিলো)
আসিফ: কাল প্রেজেন্টেশন কে করবে?(ভাবনায় পড়ে প্রশ্ন করলো আসিফ)
রাইফ: আভা।
আসিফ কিছুক্ষণ চুপ থেকে ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে আবার বলে উঠলো,
আসিফ: আভার সাথে কী তোর এখনো পর্যন্ত ঠিকমতো কথা হয়নি?
রাইফ: একজন পিএর সাথে কাজের বাইরে আর কোনো কথা বলা প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।(রাইফ গম্ভীর মুখ করে বলল)
আসিফ: তুই তো সবসময় বলতি আভাকে যেদিন সামনে পাবি সেদিন সবার আগে জিজ্ঞেস করবি যে ও কেন তোকে ছেড়ে গিয়ে এতো গুলো বছর কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু এখন তো দেখছি তার উল্টো হচ্ছে। ও জয়েন করার পর থেকে তুই ওর সাথে কাজের বাইরে কোনো কথাই বলছিস না।
রাইফ: ওর সাথে কথা বলার জন্য আমি প্রথম দিনই ব্যাকুল ছিলাম। সেদিন আমি অফিসের বাইরে গাড়ির মধ্যে ওয়েট করছিলাম আভার জন্য। ভেবেছিলাম ও ইন্টারভিউ শেষ করে বের হলেই আমি ওর সামনে দাঁড়িয়ে ওর সাথে কথা বলবো। কিন্তু ভাগ্যের কী পরিহাস! ও অফিস থেকে বের হতেই সেখানে ওর হাসবেন্ড উপস্থিত হয়েছিল। যে কারণে আর ওর সাথে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করিনি।
আসিফ: হাসবেন্ড! আভা বিয়ে করেছে?(আসিফ যেন এক মুহূর্তরে জন্য থমকে গেল)
রাইফ: হ্যাঁ করেছে। ইভেন অনেক সুখেও আছে।(তাচ্ছিল্যের হাসি মুখে টেনে বলল রাইফ)
আসিফ: যে একসময় তোকে এতো ভালোবাসতো সে এমনটা করলো। হাউ ইজ ইট পসিবল!
রাইফ: বিশ্বাসঘাতকদের কাছে কোনোকিছুই ইম্পসিবল না।
আসিফ: তার মানে ওর লাইফে তোর আর কোনো অস্তিত্বই নেই?
রাইফ: তা তো বুঝতেই পারছিস। ভেবেছিলাম আমি ওর বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি দেবো। কারণ আমি কখনো এই অন্যায় মানতে পারবো না। কিন্তু ও আমার সামনে এলে আমি ওকে কীভাবে শাস্তি দেবো সেটাই বুঝতে পারি না। আমি সবসময় চাই ও ভালো থাকুক। কিন্তু আমাকে ঠকিয়ে ও কীভাবে ভালো আছে? বিয়ে করার আগে কী ওর একবারো আমার কথা মনে পড়লো না? আমাকে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভেঙে ফেলেছে।
Also, Read Those Heart- Touching Come Back Sad Love Story
……………………………………..
আমি বুঝতে পারছি আসিফ,আমি ওকে শাস্তি দিতে পারবো না। ওপরের রাগটাই শুধু দেখাতে পারবো কিন্তু ওকে শাস্তি দিলে তো আমি নিজেই কষ্ট পাবো। ও আমার সামনে অন্য একজনের সাথে ঘুরে বেড়াবে,আমি এটা মানতেও পারছি না। বুঝতে পারছি না আমি কী করবো। ইচ্ছে করছে আমি নিজেই কোথাও হারিয়ে যাই। এসবকিছু সহ্য করা আর আমার পক্ষে সম্ভব না।(মলিন মুখে ধরা গলায় কথাগুলো বলল রাইফ)
আসিফের খুব খারাপ লাগছে রাইফের কথা ভেবে। রাইফ ওর সাথে সবসময় সবকথা শেয়ার করে। আসিফ জানে রাইফ আভার জন্য কতো কষ্ট পেয়েছে। এতো গুলো বছর অপেক্ষা করেছে। রাইফকে সান্ত্বনা দেয়ার মতো ভাষা জানা নেই আসিফের। মলিন হেসে আসিফ শান্ত স্বরে বলল,
আসিফ: ভালোবাসার মানুষটাকে কখনো শাস্তি দেয়া যায় না রে ভাই। তাদের ভুলের কারণে যদি আমরা তাদের উপর রাগ করে শাস্তি দিতে চাই তাহলে উল্টো নিজেকেই নিজে শান্তি দিচ্ছি বলে মনে হয়। আভাকে তুই অনেক বেশি ভালোবাসিস। তাই যতোই ভাবিস তুই ওকে শাস্তি দিবি,কখনোই পারবি না।
যাকে এতো ভালোবাসিস তাকে শাস্তি দেয়ার সাধ্য তোর নেই। আমি তোকে খুব ভালো ভাবেই চিনি ভাই। যতোই তুই রাগী মানুষ হস না কেন। আভার ক্ষেত্রে তুই সম্পূর্ণ বিপরীত।
Also Visit Those Romantic Love Story Article
রাইফের চোখ জ্বলছে। মনে হচ্ছে বাদলের ধারা নামবে। সে আর বসে থাকতে পারলো না। চুপচাপ আসিফের কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো। তার ইচ্ছে করছে না নিজের কেবিনে ঢুকতে। সেখানে আভা আছে। হয়তো মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে।
একটু পরেই লাঞ্চের সময় হবে। আর আভা ওর হাসবেন্ডের সাথে বাসায় যাবে। আচ্ছা আজ যদি সামিদের জায়গায় সে থাকতো তাহলে কী খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেতো? রাইফ তো শুধু চেয়েছিল আভার হাতে হাত রেখে এই ক্ষুদ্র জীবনটা পাড়ি দিতে। তার চাওয়াটা কী খুব বেশি হয়ে গেছে? নাকি সে অবাস্তব কিছু চেয়েছে?
আজ দশ বছর ধরে সে নিরলসভাবে শুধুমাত্র একটা মেয়েকেই ভালোবেসে গেছে। এটা কী তার অপরাধ? আভা তো অন্যের হয়ে গেছে। কিন্তু সে তো পারবে না আভাকে ভুলে অন্য কাউকে আপন করতে। তাহলে কী সে সারাজীবন কষ্ট পেতে পেতে একসময় চিরতরে শেষ হয়ে যাবে? তবে কী এটাই হবে তার নিরলস ভালোবাসার পরিণতি?
Click Here For Next Part চলবে
![]() |
Love Never Ended Part 9 |