Golperjogot

Golperjogot

lover naki villain bangla love story part 36

লাভার নাকি ভিলেন – পর্ব ৩৬ থ্রিলার গল্প | মোনা হোসাইন

Lover Naki Villain

Mona Hossain { Part 36 }


নাবিলঃ মিথ্যাবাদী, বেইমান,স্বার্থপর লোভি মেয়ে...

মেঘলাঃ একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া... আমি সত্যিই মিথ্যাবাদী,বেইমান...আমি কেড়ে নিতে জানি তাই তো দাদির কাছ থেকে সব সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়েছি।

কিন্তু সেদিন আমি রেস্টুরেন্ট এ গিয়েছিলাম প্রেম করতে নয়,আকাশের স্বপ্ন কিনতে ।সেদিন আমি দাদীর দেওয়া সমস্ত সমত্তি বিক্রি করে আকাশের স্বপ্ন কিনেছিলাম।আর টাকাগুলি দিয়ে ফিরে আসার সময় আকাশের মুখোমুখি হয়ে গিয়েছিলাম আকাশ ফোনে কথা বলছিল তাই আমায় দেখে নি কিন্তু আমি দেখেছিলাম আমি জানতাম আকাশ আমায় যখন দেখবে হাজারটা প্রশ্ন করবে আর সত্যিটা জেনে যাবে আমি চাই নি আকাশ সত্যিটা জানুক তাই সেখানে বসে থাকা একজনকে রিকুয়েষ্ট করেছিলামা আমার বিএফ হওয়ার অভিনয় করতে।
বেইমান না হলে কি এই কথাগুলি এতদিন লুকাতে পাড়তাম?মিথ্যাবাদী না হলে কি গুছিয়ে বলতে পাড়তাম যে বিক্রি করে দেওয়া সম্পত্তির মালিক আরো ৩ বছর পর হব।মিথ্যাবাদী না হলে কি এফএম স্টেশনে কল দিয়ে সারারাত গল্প শুনে বলতে পাড়তাম যে বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছি?
জানেন আমি না খুব লোভি,লোভি না হলে কি ২ টা রিং এর জন্য সাঁতার না জেনেও ডোবায় ঝাঁপ দিতে পাড়তাম? লোভি জন্যই পেড়েছিলাম। আমি বেইমান,মিথ্যাবাদী, লোভি কিন্তু জানে ভাইয়া এমন বেইমান সচারাচর পাওয়া যায় না।

নাবিলঃ কিন্তু এত কিছু করার পড়েও তুমি বলো নি কেন?

মেঘলাঃ স্বার্থপর তাই,আমি পাড়ি নি যাকে নিজের চেয়েও ভালবাসি তাকে কস্ট দিতে। যাকে ভালবাসি তাকে কস্ট দেওয়া মানেই তো নিজেকে কস্ট দেওয়া আমি পাড়ি নি এত উদার হতে.....
কিন্তু আজ সব বলে দিব অনেক হয়েছে আর না আমিও এবার একটু ভাল থাকতে চাই আর কিছু লুকাব না....

মেঘলাঃ আচ্ছা ভাইয়া যদি কখনো জানতে পাড়েন কিছুদিন পর আপনার ফাঁসি হবে। শত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আপনি সেটা ফিরাতে পাড়বেন না তাহলে সেই বেঁচে থাকার মুহুর্ত গুলি আপনি করে কাটাতে চাইবেন?
নিশ্চুই সবসময় হাসিখুশি আর আপনজনদের ভালবাসা পেতে চাইবেন তাই না?
কিন্তু আমি চেয়েছিলাম অন্য একজন কে ভাল রাখার একটা ব্যবস্থা করতে।কারন আমি জানতাম আমার অবর্তমানে সে হয় পাগল হয়ে যাবে নয়তো বা সোসাইড করবে,তাই মন কে পাথর করে ছোট থেকে তিল তিল করে গড়ে তুলা আত্মার বাঁধন টা আলগা করে দিয়েছিলাম। ইচ্ছা করে নিজের শরীর থেকে প্রান টা আলাদা করে দিয়ে তার উপড় সংসারের দায়িত্ব চাপাতে চেয়েছিলাম।
আমি জানতাম তার মন থেকে নিজের নাম টা মুছার ক্ষমতা আমার নেই। তারপড়েও চেয়েছিলাম বউ নামক একটা দায়িত্ব তার ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে। যাতে সে অন্যকাউকে ভালো না বাসলেও অন্তত তার দিকে তাকিয়ে হলেও যেন বেঁচে থাকে।

নাবিলঃ কিন্তু তোমাকে ফাঁসি কে দিবে...???

মেঘলা ইতিমধ্যে কেঁদে দিয়েছে।
চোখের জলে গাক ভিজিয়ে বলতে লাগল না ভাইয়া,আপনি যেমন ভাবছেন তেমন কিছু না।
ইরা আপু, দাদি বা আকাশের ভাইয়ের পরিবারের কেউ আমার বদলে যাওয়ার পিছনে কারন ছিল না,আর আমাকে কেউ ফাঁসিও দিবে না কিন্তু আমি কবে মারা যাব সেটা আমি জানি....

নাবিলঃ কিসব পাগলের মত কথা বলছো? কে কবে মরবে সেটা কেউ জানে নাকি?

মেঘলাঃ হ্যা আমি জানি কারন আমার মৃত্যুটা কোন স্বাভাবিক মৃত্যু হবে না।আমার ২ টা কিডনিই নস্ট হয়ে গেছে তাই ডাক্তার বলে দিয়েছে যদি কিডনী ডোনেট না করা আমি ৩ মাস এর মধ্যেই মারা যাব,
আমি যে বাঁচার চেস্টা করি নি তা নয় বিশ্বাস করুন খুব চেস্টা করেছিলাম,কিন্তু ডাক্তার বলেছিল আমাকে বাঁচাতে ২ টা কিডনীই লাগবে ১ টা দিয়ে হবে না আর সেই কিডনী সেইম ডোনারের কাছ থেকেই নিতে হবে।কিন্তু এমন কোন ডোনার পাওয়া যায় নি যে কিনা নিজের জীবনের বিনিময়ে আমাকে বাঁচাবে।
তাও খুঁজতাম কিন্তু কপাল টা এতটাই খারাপ যে সব আশায় বৃথা হয়ে গেল, আমার রক্তে হাই কলেস্টরল থাকায় এই অপারেশন করা সম্ভব না অপরেশন করলে অপারেশন চলাকালিন স্ট্রোক হওয়ার সম্ভবনা ৯০%। ডাক্তার খুব চেয়েছিলেন ১ টা কিডনী দিয়ে ট্রাই করতে কিন্তু আমিই চাই নি কারন আমার কাছে এই তিনটা মাসের মুল্য অনেক। কারন এই দিন গুলির মধ্যেই আকাশের জীবন থেকে মেঘলাকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম আমি।ভেবেছিলাম হয়ত আমি পেড়েছি।
কিছুক্ষন আগে পর্যন্তও ভেবেছিলাম এই পরীক্ষায় আমি জিতে গেছি। আমি পেরেছি আমার অসম্পুর্ন কাজ টা সম্পন্ন করতে। আকাশকে সামলে রাখার মত কাউকে তার পাশে রেখে যেতে পেরেছি।

আমি হয়ত সবার মত হতে পাড়ি নি তাই জীবনের শেষ কটা দিন নিজেকে ভাল না রেখে আকাশের জীবনটা সাজাতে ব্যাস্ত ছিলাম। ইচ্ছে করে নিজের ভালবাসাকে দূরে ঠেলে দিয়েছিলাম। প্রতিদিন একটু একটু করে নিজেকে আকাশ এর কাছ থেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম।

যানেন, নিজের ভালবাসাকে অন্যের করে দিতে আমারো খুব লেগেছিল
আকাশ যখন ইরা আপুকে আদর করত আমার খুব কস্ট হত। রাতে যখন শরীর খারাপ লাগত স্বপ্ন দেখতাম আকাশ যদি একবার এসে মাথায় হাত রাখত।একটু ঘুম পাড়িয়ে দিত।
সবার মত আমারো ইচ্ছে করত জীবনের শেষ কয়েকটা দিন আকাশের ভালবাসায় সুখে থাকতে কিন্তু নিজের ইচ্ছে গুলিকে মনের মধ্যেই কবর দিয়ে দিয়েছিলাম কারন আমি আমাকে নয় আকাশকে ভালবাসি।
তাই প্রতিটা দিন মৃত্যু যন্ত্রনা সহ্য করেও আকাশের মুখের হাসি ফুটাতে চেয়েছিলাম।
আমি ভেবেছিলাম আজকে বিয়ের পর আকাশ দায়িত্বের শিকলে আটকা পড়ে যাবে।সে ভুলে যাবে তার মেঘলাকে কিন্তু আমার জানা ছিল না আকাশের বুক থেকে মেঘলাকে সরানো অসম্ভব।

এখন বোঝতে পাড়ছি আমি ভুল ছিলাম আকাশও কখনো নিজেকে ভালবাসে নি। আকাশ শুধু মেঘলাকেই ভালবাসে। তাই সে আজ মেঘলার জন্য নিজের সব বিসর্জন দিতেও দ্বিধা করছে না।

আচ্ছা ভাইয়া আপনি কি বলতে পাড়েন জীবন এত অদ্ভুত কেন?মানুষের চাওয়া পাওয়া গুলি হটাৎ করেই বদলে যায় কেন?
এতদিন যখন খুব কস্ট হত আকাশের ব্যবহার সহ্য করতে পাড়তাম না তখন একা একা বসে প্রার্থনা করতাম আমার বেঁচে থাকার দিনগুলি যেন তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়।

মেঘলা নাবিলের কাছে গিয়ে ২ হাত ধরে বলতে লাগল জানেন ভাইয়া আমার না দম নিতে কস্ট হচ্ছে,মাথা ঝিমঝিম করছে চারদিক কেমন ঝাঁপসা হয়ে যাচ্ছে,চোখ বন্ধ হয়ে আসছে আমি বোঝতে পাড়ছি আমার সময় শেষ। কিন্তু এখন যে আমার বাঁচতে ইচ্ছে করছে....
আমি বাঁচতে চাই নাবিল ভাইয়া। আকাশের জন্য না আজ আমি আমার জন্য বাঁচতে চাই আকাশের এত ভালবাসা ছেড়ে আমি যেতে চাই না আমি সত্যিই বাঁচতে চাই.......
কথাগুলি বলতে বলতে নাবিলের কোলে ঢলে পড়ল।

মেঘলার বাঁচার আকুতি দেখে উপস্থিত সবার চোখেই পানি জমে গেছে।

আকাশের মা বাবা দৌড়ে এসে মেঘলাকে ধরল
নাবিল তো প্রায় পাগল হয়ে গেছে।
নাবিল মেঘলাকে ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে বলতে লাগল উঠো মেঘলা প্লিজ উঠো.... তোমাদের ভালবাসাকে এভাবে হেরে যেতে দিও না চোখ খোল মেঘলা...
তুমি বাচবে মেঘলা কিচ্ছু হবে না তোমার আমি তোমাদের ভালবাসাকে হেরে যেতে দিব না।

সবাই মেঘলাকে নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল একমাত্র আকাশ ছাড়া।আকাশ যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে এক চুলও নড়ে নি একটা কথাও বলে নি। এমন কি মেঘলার দিকে তাকায়ও নি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।

নাবিল এসে আকাশে ধরে বলতে লাগল আকাশ তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন মেঘলাকে হাসপাতালে নিতে হবে গাড়ি বের কর।

আকাশের কোন রেস্পন্স নেয়...

নাবিল আকাশ কে ঝাকি দিয়ে বলল আকাশ তুই কি শুনতে পাড়ছিস?তাকিয়ে দেখ মেঘলা অজ্ঞান গেছে আকাশ.... তুই কিছু বল আকাশ এভাবে পাথর হয়ে যাস না।

আকাশ থপাস করে মাটিতে বসে পড়ল। আর চিৎকার করে কেঁদে উঠল। আকাশের চিৎকারে বিয়ে বাড়িও যেন থমকে গেল আশে পাশের বাতাস ভারি হয়ে উঠল।
আকাশ পাগলের মত আবল তাবল বকছে,কথা জরিয়ে যাচ্ছে আকাশের সে বাচ্চাদের মত কাঁদতে কাঁদতে বলল নাবিল মেঘলা এগুলি কি বলল নাবিল? ও আমাদের সাথে মজা করছে তাই না? আমি ওকে এত দিন কস্ট দিয়েছি তাই আমাকে কস্ট দিচ্ছে তাই না?তুই বল ও সব মিথ্যা বলেছে অভিনয় করছে তাই না নাবিল ? তুই ওকে উঠতে বল নাবিল এই দেখ আমি কথা দিচ্ছি আর কখনো ওকে কস্ট দিব না। ভুল করলেও একটুও বকা দিব না সত্যি বলছি তুই ওকে উঠতে বল নাবিল.......

আকাশের অবস্থা দেখে নাবিলও কেঁদে ফেলেছে সে আকাশকে জড়িয়ে ধরে বলল শান্ত হ আকাশ কিচ্ছু হবে না মেঘলার। ও একদম সুস্থ হয়ে যাবে আমি ওকে কিডনী দিব তবুও তোদের ভালবাসাকে হারিয়ে যেতে দিব না।

নাবিল মেঘলাকে কোলে নিয়ে বাইরের দিকে যেতে লাগল.....

পড়ুন  বেপরোয়া ভালোবাসা – পর্ব ১১ রোমান্টিক গল্প | মোনা হোসাইন
পরবর্তী পর্বের জন্য ক্লিক করুন :>> চলবে

Writer :- মোনা হোসাইন

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Home
Stories
Status
Account
Search
Scroll to Top