Golperjogot

Golperjogot

মুখোশ – রহস্যময় প্রেমের গল্প পর্ব ২০ | মোনা হোসাইন

রুহি রাজের বুকে শুয়ে চোখ বন্ধ করে শান্ত ভাবে বলল,
রাজ আমার পাশে সাগর পায়ে খালি পায়ে হাঁটতে যাবে?
রাজ নিজের অজান্তেই বলে ফেলল তুমি চাইলে নিশ্চুই যাব… রাজ নিজের উপড় কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছে তাই রুহির উপড় রাগ দেখাতে পাচ্ছে না।

রুহিঃ চলো তবে।

রাজঃ রুহি,তোমার শরীর ভাল না পড়ে গেলে হয় না?
রুহিঃ না পড়ে সবাই জেগে যাবে ভীর হয়ে যাবে। আর আজকের দিন টা আমরা আর কখনো নাও পেতে পাড়ি এখুনি চল।

রাজঃ আচ্ছা চল তবে.

২ জনেই বেরিয়ে গেল।
সাগর পাড় একদম ফাঁকা তেমন মানুষজন নেই।রাজের হাত ধরে রুহি হাঁটছে ভোরের নরম আলোয় বেশ ভাল লাগছে তাদের।

হঠাৎ রুহি বলল চলোন চা খাই,

রাজঃ আমি বাইরের খাবার খাই না রুহি হোটেলে গিয়ে খাব কেমন।

রুহিঃ ছাড়ন তো হেঁটে হেঁটে মাটির ভাড়ে করে চা খাওয়ার মজা কি আর হোটেলের চা তে পাওয়া যাবে নাকি বলেই চা ওয়ালা কে ডাক দিল রুহি।

রুহিঃখেঁজুর গুঁড়ের চা হবে?

চা ওয়ালাঃ হবে আপা।

রুহিঃ স্যারের জন্য বেশ মিষ্টি করে একটা চা দেও আর আমার জন্য হালকা মিষ্টি দিয়ে।

রাজ অবাক হয়ে রুহিকে দেখছে রুহির চোখে মুখে আনন্দের রেখা চিকচিক করছে ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসিটা রাজকে মাতাল করে দিচ্ছে।

রুহি ২ কাপ চা এনে রাজকে একটা দিল।
রাজ চা হাতে নিয়ে চায়ের কাপে কয়েক চুমুক দিতেই পাশ থেকে রুহি বলল,হুম বলো বলো কেমন হয়েছে?

রাজ মিষ্টি হেসে বলল দুনিয়ার সবচেয়ে ভাল চা হয়েছে।

রুহি তাই বোঝি কই দাও তো দেখি বলেই
রাজকে অবাক করে দিয়ে রুহি রাজের হাত থেকে কাপটা নিয়ে চুমুক দিতে লাগল।

রাজ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে দেখে রুহি বলল
তাকিয়ে আছেন কেন?এটা আপনার চা না। আপনি বেশি মিষ্টি খান না আমি জানি তাই আপনার জন্য হালকা মিষ্টির চা এনেছি। আসলে খাবার শেয়ার করে খেলে ভালবাসা বাড়ে তাই আপনাকে আমার টা একটু খেতে দিয়েছিলাম আর আপনার কাপেও আমি কয়েক চুমুক দিয়ে নিলাম।বলে রুহি হাসতে লাগল।

রুহিঃ নিন এবার খান।

রুহির এই ব্যবহার টা রাজের মন ভরে দিল।
২ জন আবার হাঁটছে এখন আশে পাশে কিছু মানুষজন দেখা যাচ্ছে ফেরিওয়ালারা হাঁক ছাড়ছে নিজেদের জিনিস বিক্রি করার জন্য।

রাজ সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে কিছুক্ষন পর তাকিয়ে দেখে পাশে রুহি নেই রাজ এদিক ওদিক দেখলো না রুহি কোথাও নেই।

রাজঃ বড়ই রহস্যময়ী এই মেয়ে এখন আবার কই গেল?
রাজ যখন এই ভাবনায় ব্যাস্ত তখনি রাজের কানের কাছে রিনিঝিনি শব্দ শুনতে পেল।
রাজ চমকে উঠল কারন এই আওয়াজটাই রাজ কিছুদিন থেকে খুব মিস করছিল।রাজ তাড়াতাড়ি সেদিকে তাকাল। তাকিয়ে দেখে রুহি হাত ভর্তি লাল কাচের চুড়ি পড়ে সেগুলি নাড়িয়ে নাড়িয়ে রিনিঝিনি শব্দ করছে।
রাজ বোঝল সে এগুলি কিনতেই হারিয়ে গেছিল।

রুহিকে আবার চুড়ি পড়তে দেখে রাজের কি যে আনন্দ হচ্ছে সেটা তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

রুহি অভিমানি কন্ঠে বলল,আপনজনের সাথে রাগ করতে নেই তাই আবার কিনেছি😔

রাজঃ তুমি জানো এই কয়দিন তুমার চুড়ির আওয়াজটা আমি কত মিস করছিলাম? কিন্তু যা যা করেছি তারপরে আর বলার আর সাহস হয় নি।

রুহিঃ আমি কি আপনার মত বাজে লোক নাকি যে বললে কথা রাখব না?

রাজ রুহিকে কাছে এনে রুহির হাত ২টি ধরে বলল তোমার হাতে চুড়ি খুব ভাল মানায় এটা বলে রাজ যখন একটু রোমান্টিক সিনে যেতে চাইল পিছন থেকে একটা মেয়ে এসে বলল আপা চুড়ির টাকা দিবেন না?

রাজ চমকে উ মঠে রুহির হাত ছেড়ে দিল।

রুহি মেয়েটাকে রাজকে দেখিয়ে দিয়ে বলল স্যার দিবেন।

রাজ সাথে সাথে বেশ কিছু টাকা নিয়ে মেয়েটার হাতে দিল মেয়েটা বলল স্যার চুড়ির দাম ত এত না।
রাজ মেয়েটাকে আদর করে বলল আজ তুমি আমায় যে খুশি উপহার দিয়েছো তার কাছে এই টাকা কিছুই না। নিজের একটা কার্ড দিয়ে বলল তোমার বাবা মাকে বলো আমার সাথে যোগাযোগ করতে আমি তোমাকে একটা ভাল দোকান কিনে দিব।
মেয়েটা খুশিতে চলে গেল।

রুহি অবাক হল,
রুহিঃআমার চুড়ি পড়া এত পছন্দ করেন কিন্তু আমাকেই বলেন না কি আজব লোক।মনে মনে।

রাজঃ রুহি চুড়িগুলি একটু নাড়াও না এই আওয়াজটা আমার খুব ভাল লাগে।

রুহিঃ হি হি করে হাসতে লাগল সাইকো কোথাকার।

রাজঃ কি আমি সাইকো..🤢

রুহিঃ হুম 😋

রাজঃ তবে রে….

রুহিকে আর পায় কে সেতো হুম বলেই দৌড়💃

রাজো রুহির পিছন পিছন ছোটছে।

কিছুটা যাওয়ার পর রুহি হাপিঁয়ে উঠল।
রাজ কাছে এসে বলল কি দম শেষ?

রুহিঃ ক্ষিদে পেয়েছে (হাঁপাতে হাপাঁতে)

রাজঃ আচ্ছা চলো ফিরে যাই।

রুহিঃ না এখানেই রাস্তার পাশে খাব।

রাজঃ কি…..??? এই অসাস্থ্যকর খাবার?

রুহিঃ বলছে অসাস্থ্যকর যতসব ফালতু কথা।যাইহোক হ্যা আমি এগুলিই খাব আপনার ইচ্ছা না থাকলে না খান।

রাজঃ হাহ পাগলি….আচ্ছা চলো এগুলিই খাও পড়ে অসুস্থ হলে আমাকে বলতে আসবা না।

রুহিঃ আচ্ছা মরে যাব ঠিক আছে।

রাজ এসে রুহির মুখ চেপে বলল আর কখনো এসব বলবা না ঠিক আছে? আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না রুহি।তুমি আমাকে ছেড়ে কখনো কোথাও যাবে না।
রুহি আচ্ছা যাব না চলেন এবার খেতে যাই।

রুহি এক প্লেট অর্ডার দিতে চাইলেও রাজ ২ প্লেট দিল।খাবার দেওয়ার পর,

রুহিঃ খাইয়ে দিন

রাজঃআমি…🙄

রুহিঃতো রাস্তা থেকে কাউকে ডেকে আনব?

রাজঃ বাহ মেয়ের সাহস তো বেশ….তোমাকে খায়িয়ে দেওয়া তো দূর চোখ তুলে তাকাতেও দিব না কাউকে বোঝেছো?

রুহিঃ খায়িয়ে দিন তবে ☺

রাজ রুহিকে খায়িয়ে দিল।

রাজঃভালবাসা কেমনে আদায় করতে হয় সব আপনার জানা তাই না বুড়ি?

রুহিঃ হি হি হি।

খাওয়া শেষ করে ২ জনেই ফিরে আসছে।

রুহিঃ তো বলুন স্যার সকাল টা কেমন কাটল?

রাজ খুশি মনে উত্তর দিল এই অনুভুতিটা হয়ত ভাষায় প্রকাশের মত না।

রাজ বেশ খুশিতে ফিরে আসছিল কিন্তু হঠাৎ করেই সব পাল্টে গেল।এবার যা ঘটল তা দেখে রাজ নিজের চোখকে বিশ্বাস বিশ্বাস করতে পাচ্ছে না।

রাজ,রুহির ডেস্টিনি তে হয়ত বেশিক্ষন ভাল থাকা লিখা নাই। তাই আবারো ঝামেলা লেগে গেল এবারের গন্ডগোল মিটানোর ক্ষমতা হয়ত রাজের নেই…..

Leave a Comment