Golperjogot

Golperjogot

মুখোশ – রহস্যময় প্রেমের গল্প অন্তিম পর্ব ২১ | মোনা হোসাইন

Mukhosh

Mona Hossain { Part 21 end }

আজকের সকালটা রাজের জীবনের অন্যতম সুন্দর সকাল ছিল।রাজ এর আগেও ডেট এ গেছে কিন্তু এমন করে উপভোগ করে নি কখনো।রুহিরো বেশ ভাল লেগেছে।

২ জনেই খুশি মনে ফিরে আসছিল কিন্তু হঠাৎ করে একটা মেয়ে কোথা থেকে দৌড়ে এসে রাজকে জড়িয়ে ধরে বলল বেবি কতদিন থেকে তোমায় খুঁজছি আমায় ছেড়ে কোথায় চলে গেছিলে তুমি?

রাজ আর রুহি ২ জনেই অবাকের শেষ সীমায় অবস্থান করছে।আচমকা জড়িয়ে ধরায় রাজ মেয়েটার মুখ দেখতে পায় নি কিন্তু কন্ঠটা রাজের খুব পরিচিত।

মেয়েটা রাজকে ছেড়ে মুখ তুলতেই রুহি আর রাজ দুজনেই অবাক হয়ে গেল।শুধু অবাকেই হল না বেশ বড়সর একটা ধাক্কা খেল ২ জনেই।কারন মেয়েটা দেখতে সেইম রুহির মতl

রুহির মাথায় কিছুই ঢুকছে না তার শুধু কান্না পাচ্ছে।সে ভাবছে কে এই মেয়ে রাজকে এসব বলছে কেন?

রাজ একবার রুহির দিকে আবার ওই মেয়েটার দিকে তাকাচ্ছে সে বোঝতে পাড়ছে না কে এই মেয়ে আর এতক্ষন যার সাথে ছিল সেই বা কে?

চলুন দেখে নেই রুহির মত দেখতে এই মেয়েটা কে?এই মেয়েটার নামও রুহি তবে তার আরও একটা নাম আছে আর সেটা হলো দিয়া।সে ২ টা নামেই ব্যবহার করে।এক মেয়ের ২ টা নামের পিছনে অবশ্য একটা কারনও আছে।

কারনটা হল দিয়ার একটা টুইন বোন ছিল। তাদের দেখে চিনার উপায় ছিল না কোনটা রুহি আর কোনটা দিয়া তাই তাদের বাবা ২ জনের গলায় ২ টা চেইন পড়িয়ে দিয়েছিল একটায় লিখা ছিল রুহি আর একটায় দিয়া।

একদিন রুহি আর দিয়াকে নিয়ে তার বাবা মা পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিল কিন্তু রাস্তায় ট্রেন এক্সিডেন্ট হয়।সেই এক্সিডেন্ট এ তাদের এক মেয়ে মানে রুহি হারিয়ে যায়।কিন্তু দিয়ার গলার চেইন টা হারিয়ে যাওয়ায় তারা বোঝতে পাড়ে নি কে হারিয়েছে রুহি নাকি দিয়া। তাই তারা দিয়াকেই রুহি ভাবে তাই তারা দিয়াকে কখনো রুহি আবার কখনো দিয়া বলে ডাকে।মা যদি রুহি বলে বাবা বলে দিয়া তাইদিয়াও অনেক সময় কনফিউজড হয়ে যায় কি নাম বলবে যার ফলে সেও নিজের নাম কখনো বলে রুহি কখনো বলে দিয়া।সেই এক্সিডেন্ট রুহি মারাত্মক আঘাত পেয়েছিল ওকে বাচঁনোর জন্যই এক মহিলা তাকে হসপিটালে নিয়ে গেছিল। মহিলা রুহিকে বাঁচাতে পারলেও তার বাবা মাকে আর খোঁজে পায়নি তাই সেই মহিলা রুহিকে নিজের বাড়ি নিয়ে যায় আর নিজের মেয়ের মত বড় করে কারন তাদের কোন বাচ্চা ছিল না।রুহির গলায় চেইন এ রুহি লিখা থাকায় তারা রুহির নাম চেঞ্জ করে নি।

Short Story

সেই থেকে রুহি শহরের বড় লোকের মেয়ে থেকে হয়ে উঠে গ্রামের সাধারন গাইয়া ভিতু মেয়ে।অভাব অনটনে বড় হয় রুহি কিন্তু তার আদরের কোন কমতি ছিল না তার বাবা মা তাকে খুব ভালবাসত।আর এদিকে দিয়া নিজের বাবা মার কাছে বিলাশবহুল ভাবে বড় হয় তাকে বিদেশে পাঠানো হয় পড়াশুনা করতে।সেখানেই রাজ এর সাথে তার পরিচয় হয় ১ বছরের রিলেশানশীপ ছিল তাদের কিন্ত হঠাৎ করে দিয়া রাজ কে কিছু না বলে দেশে চলে আসে। তারপর রাজ দেশে ফিরে রুহিকে খোঁজতে থাকে তাকে ধোঁকা দেয়ায় শাস্তি দেওয়ার জন্য।দেশে ফিরার প্রায় ৮ মাস পর সে রুহি কে পায় আর সে রুহিকে দিয়া ভাবতে থাকে এবং দিয়ার করা অপরাধের শাস্তি রুহিকে দেওয়া শুরু করে।কিন্তু কিসের জন্য এমন করছে সেটা না বলায় রুহি সেটা না বোঝেই রাজের প্রেমে পড়ে যায় কারন রাজ তাকে রুহি বলেই ডাকত তাই রুহি মনে করত রাজ তাকেই বলছে কিন্তু এর পিছনে যে এত কাহিনি ছিল সে জানতনা।সে ভাবত এমন রাগ দেখানো,রাগের পড়ে আবার আদর করাটাই রাজের স্বভাব….পরিচয় শেষ এবার চলুন বর্তমানে ফিরে যাই।

রাজ ২ জনের দিকে ভাল করে দেখে তারপর বলল তুমি কে আর এই বা কে?

দিয়া রুহিকে ভাল করে দেখে বলল আরে এই মেয়েটা তো একদম আমার মত দেখতে কিন্তু কে ও রাজ?

রাজ এবার বিষয়টা বোঝল তাই বলল তারমানে তুমি…..

দিয়াঃ আমি দিয়া।বেবি তুমি আমায় চিনতে পাচ্ছ না?দেশে ফিরা তোমাকে কত খোঁজেছি কোথাও পাইনি।

রাজের সব কেমন এলোমেলো হয়ে গেল দিয়াকে খুঁজে পেয়ে সে যেন বাকি সব ভুলে গেছেসে রুহির সাথে ঠিক কি কি করেছে সেসব ভুলে গেছে।তার মনে হচ্ছে ভুল টা যেন সে করে নি রুহি করেছে।

তাই সে রুহির কাছে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললরাজঃহেই ইডিয়েট তুমি যে আমার হারিয়ে যাওয়া দিয়া নও এতদিন সেটা কেন বল নি? বড় লোকের ছেলে দেখলেই ঘাড়ে চাপতে ইচ্ছা করে তাই না?একদম নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছো শুধুমাত্র টাকার জন্য ছি লজ্জা করে না?

দিয়াঃ কি বলছিস এসব রাজ?

রাজঃ আরে হ্যা এই মেয়েটা এতদিন তুই সেজে আমার সাথে প্রেম করেছে। যত সব লোভি মেয়ে নিশ্চুই টাকার জন্য এমন করেছে।আসলেই আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল আমার দিয়া কি করে এমন গাইয়া মুর্খ হতে পাড়ে।শুধু আমাকেই না অন্য ছেলের সাথে বেড শেয়ার করে এই মেয়েটা কত জঘন্য চিন্তা কর।রাজ রুহির দিকে তাকিয়ে বলল কাল রাতে কার সাথে ছিলি আমি জানি না ভেবেছিস?আবার সেটা চাপা দেওয়ার জন্য সারা সকাল আমার সাথে ঢং করছিস।ছি ইচ্ছা করতেছে তোকে এখানেই পুতে ফেলি আমার দিয়া আর যাই হোক দুশ্চরিত্র হতে পাড়ে না আমি জানতাম সেটা।কিন্তু তুই দিয়া নস তুই সব পাড়িস।নস্টা মেয়ে একটা কতজনের সাথে কি করিস খোদা জানে….আরে দেহ বিক্রিই যখন করবি সেঁজেগুজে হোটেলে গেলেই তো পাড়িস।

নিজের সব থেকে কাছের মানুষ চোখের সামনে অন্যজনের হয়ে যাচ্ছে রুহির এমনেতেই বুক ফেটে যাচ্ছে তার মধ্যে রাজ তাকে এভাবে অপমান করছে।রুহি বরাবরেই সহ্যশীল মেয়ে তবুও এগুলি আর মানতে পাচ্ছে না।তাই সে ভয়ে ভয়ে বলেই ফেলল।আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে……

কথাটা বলতে দেড়ি হল কিন্তু রাজের থাপ্পড় দিতে দেড়ি হল না।রুহির গাল মুহূর্তেই লাল হয়ে গেল।রাজের ৫ আংগুলের চাপ স্পষ্ট তার গালে।সাগর পাড়ে এখন অনেক ভীর আর সবাই রুহির দিকেই তাকিয়ে আছে অনেকেই আবার বলতাছে আসলেই এসব লোভি মেয়েদের জন্যই হাজার হাজার সুখের সংসার ভেংগে যায়।

রুহি কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।সে গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে নিশব্দে চোখের জল ফেলছে।

রাজঃ এই ন্যাকামি করবি না। যা করেছিস করেছিস যা ছেড়ে দিলাম আর কখনো যেন আমাদের মাঝে তোকে আসতে না দেখি।আর আসলে আমি তোর কি অবস্থা করব বোঝতেই পারছিস বলে রুহিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েদিয়াকে নিয়ে রাজ চলে গেল।

রাজ চলে যাওয়ার পর রুহিকে অনেকে অনেক কথা শুনাল অপমান করল।রুহি কখনোই কারো সাথে খারাপ ব্যাবহার করতে পারে না গলা উঁচু করে কথা বলতে পাড়ে না তাই আজও পারল না সবার সব কথা চুপচাপ শুনল।

সবাই চলে যাওয়ার পর রুহি একা একা হাঁটতে হাঁটতে এসে নির্জন একটা গাছের নিচে এসে বসল।আর নিজেই নিজেকে বলতে শুরু করল,তুই কত বোকা রে রুহি একজন অন্য একটা মেয়েকে ভালবাসে আর তুই সেটা এতদিনে বোঝতেই পাড়লি না? তুই কিনা ভাবলি সে তোকে ভালবাসে. একবারো ভাবলি না এত বড় লোকের ছেলে তোকে কেন ভালবাসবে?রাজ তো ভুল কিছু বলে নি এমন গাইয়া একটা মেয়ে কি রাজের সাথে মানায়?

কিন্তু রাজ এসব কিছুর মাঝে আমার কি অপরাধ ছিল বলতে পাড়ো?অন্য একজনের মত দেখতে হওয়াটা কি আমার অপরাধ? যদি অপরাধ হয়েই থাকে সেটা আমার নয় আমার মুখোশের ।আমি কি করে বোঝব তুমি আমায় ভালবাসো না তুমি ত সবসময় রুহি রুহি বলতে। এটাও কি সম্ভব একই রকম দেখতে, আবার নামও সেইম।আজ তুমি ভুলে গেছো তুমি আমার সাথে জোর করে প্রেম করেছিলে আমি তোমার কাছে আসি নি,তুমিই এসেছিলে। আমি তো তোমাকে চিন্তাম না।আমি তোমাকে ফুসলাতে এই শহরে আসি নি রাজ আমি আমার বাবা মার স্বপ্ন পুরন করতে এসেছিলাম।আজ এত সব কিছুর মধ্যে যদি কারোর কোন ক্ষতি হয়ে থাকে সেটা কেবল আমারেই হয়েছে তোমাদের কারোর হয় নি।যে পড়াশুনাকে আমি এত ভালবাসতাম যার জন্য আমার বাবা মা বাড়ি ছাড়া হয়েছে আজ তোমাদের জন্য সেই পড়াশুনাটাও ছাড়তে হবে।কারন আমি যে কিছুতেই তোমাকে অন্যজনের পাশে দেখতে পাড়ব না রাজ।

দিয়া যেমন তোমার প্রথম ভালবসা তেমনি তুমিও যে আমার প্রথম ভালবাসা তাহলে আমি কি করে তোমাকে অন্যজনের পাশে মেনে নিব?আর কোন যোগ্যতাই বা আমি তোমার উপড় অধিকার দেখাব? কোথায় দিয়া আর কোথায় আমি?সামনে পোলাও রেখে কি কেউ পান্থা খায়? আমি তোমার যোগ্য না জানি কিন্তু সেটা তো আমাকে বুঝিয়ে বল্লেও হত আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সবার সামনে নস্টা মেয়ে বলার কি দরকার ছিল?

আচ্ছা বড়লোক রা কি এমনেই হয়? আমাকে দিয়া ভেবে কত অপমান করছো গায়ে হাত তুলেছো কোনদিন প্রতিবাদ করিনি সব মেনে নিয়েছি শুধু এটা ভেবে যে তুমি আমায় ভালবাসো তাই হয়ত আমার করা ভুল সহ্য করতে পারনি তাই এমন করেছো।বিনা অপরাধে শাস্তি পেয়েও বার বার আশায় বুক বেধঁছি তুমি একদিন বোঝবে তখন আমায় খুব ভালবাসবে আজ সব আশা আমার তিল তিল করে তুলা সব স্বপ্ন ভেংগে দিয়ে তুমি চলে গেলে। আমার এত সেক্রিফাইস এর কোন দাম আজ তোমার কাছে নেই কারন আমি গরিব তুমাদের মত এত স্মার্ট নই এটাই আমার অপরাধ।এই প্রেম প্রেম খেলায় অপমান,কষ্ট আর অবহেলা ছাড়া আমি আর কি পেয়েছি বলতে পারো?

যে মুখটাকে আমি এত ভালবাসতাম সেই মুখটাকে আয়নায় দেখার সাহস হয়ত আমার আর কোনদিন হবে না।তখন তার গলায় নাম লিখা লকেটার দিকে রুহির চোখ পড়ল সাথে সাথে সে একটানে চেইন্টা খুলে ফেলে দিল কারন এটাও তার এই অবস্থার জন্য দায়ী।রুহি বসে বসে একা একা কাঁদছে।

এদিকে রাজ খুশিতে আত্নহারা সে দিয়াকে তার হোটেলে দিয়ে এসেছে বলেছে রেডি হয়ে নিতে তারা ফিরে যাবে। দিয়াকে নামিয়ে সেও নিজের হোটেলে ফিরে এসেছে কাপড় চোপড় নিতে।

সে ফিরতেই মিনি আর স্নেহা দৌড়ে তার কাছে আসল।স্নেহাঃ কই গেছিলি কখন থেকে খুঁজছি তোকে।কাল কি ডোজ টা তুই খেলি বলে মিনি আর সে হাসতে লাগল।

রাজঃ হাসছিস কেন?

মিনিঃ কাল রাতের প্রেংক এর কথা ভুলে গেলি?

রাজঃ কিসের প্রেংক?

স্নেহাঃ আরে তোই রুহিকে কতটা ভালবাসিস সেটা রুহিকে দেখানোর জন্যই তো আমি আর মিনি রাতে এতকিছু করলাম।

রাজঃ মানে কি?

স্নেহাঃ তোকে আর মিনি কে রুমে একসাথে দেখে আসার পর রুহি খুব কাঁদছিল।তখন আমি মিনিকে বল্লাম মিনিই সব প্লেন করল।

মিনিঃ হুম আমিই রুহিকে সাজিয়ে বাইরে পাটিয়ে ছিলাম কিন্তু সেটা ডিস্কে যাওয়ার জন্য না আমাদের সবার জন্য খাবার আনার জন্য আর ম্যানেজারের চোখ ফাঁকি দিয়ে রুহিকে রুমে নিয়ে এসেছিলাম আর তোকে বলেছিলাম রুহি বাইরে চলে গেছে।

আর রুমে ক্যামেরাও রেখে এসেছিলাম তুই সারারাত কি করিস সেটা দেখার জন্য।

স্নেহাঃ ইসস মেয়েটা তোকে কি ভালবাসে রে রাজ….তুই অস্থির হয়ে গেছিস দেখে কি যে খুশি হয়েছিল… বলছিল এত ভালবাসে তাহলে মুখে বল্লে কি এমন হয়?

কিন্তু তুই যখন কাঁদছিল তখন বার বার তোর কাছে যেতে চাইছিল বলছিল অনেক হয়েছে ওর কষ্ট হচ্ছে আমাকে যেতে দাও ওকে আমি সবটা বলেই চলে আসব।কিন্তু আমরা যেতে দেই নি বলেছি সকাল হলে যেতে দিব। তাই সুর্য্য উঠতে না উঠতেই তোর কাছে ছুটে গেছে। যাওয়ার সময় বলে গেছে তোকে নিয়ে ঘুরতে যাবে তোকে নাকি আজ খুব ভালবাসবে।

মিনিঃ তুই জানিস তুই ঘুমাস নি জন্যে ও সারারাত ঘুমায় নি একমনে ল্যাপটপে তোর দিকে তাকিয়ে ছিল।কপাল করে এমন একটা মেয়ে পেয়েছিস রে রাজ।কত অপমান করিস তাও তোকে কত ভালবাসে।সত্যিকারের ভালবাসা এমনেই হয় পিওর ভালবাসা জীবনে বার বার আসে না। এই ভালবাসাটাকে আগলে রাখিস সারাজীবন।

রাজঃ তারমানে আমাকে খুশি করতে রুহি নিজের শরীর খারাপ নিয়েও আমাকে নিয়ে ঘুরতে গেছিল? আমি পানিতে ফেলে দিয়েছি তবু রাগ করেনি সেটার পিছনে কোন উদ্দেশ্য ছিল না শুধুই ভালবাসা ছিল?(মনে মনে)

কি বলছিস তরা রুহি তো কাল অন্যজনের সাথে ছিল।দাঁড়া প্রুভ দেখাচ্ছি বলে রাজ সেই ছবিটা দেখাল।

স্নেহাঃ কি বলিস রুহি আমাদের সাথে ছিল তুই চাইলে সিসি টিভির ফুটেজ দেখতে পাড়িস কিন্তু এটাও তো রুহি কিভাবে সম্ভব।

তখন মিনি পিছন থেকে বলল ওয়েট এই মেয়েটা রুহি নয় অন্য কেউ….

স্নেহাঃ কিভাবে বোঝলি?

মিনিঃ রুহির তো এমন কোন ড্রেস নেই যেটা এই মেয়েটা পড়ে আছে আর রুহির কাছে তো কোন জামায় নাই সব রাজের কাছে ছিল তাহলে সে এটা কি করে পড়বে তার চেয়ে বড় কথা রুহির গলায় চেইনটা কোথায় ও তো সেটা কখনো খুলে না এটাই নাকি ওর পরিচয় খুঁজে পাওয়ার একমাত্র উপায় তাই খুলে না তাহলে এই ছবিতে চেইন নাই কেন?রাজের কাছে এবার সব টা ক্লিয়ার।

ছবির এটা রুহি নয় দিয়া ছিল।ক্লাবেও রুহি নয় দিয়াই ছিল।রাজ তাড়াতাড়ি সাগর পাড়ে ফিরে যেতে চাইল।

স্নেহাঃ কই যাচ্ছিস আর রুহি কোথায়?

রাজঃ অনেক বড় ভুল হয়ে গেছেরে….

মিনিঃ কি হয়েছে..

রাজঃ সবটা খুলে বলল

স্নহেঃ ছি রাজ তুই এটা কি করলি? চল রুহিকে সব খুলে বলি….

বলে তিনজন মিলে রুহিকে খোঁজতে গেল।সব জায়গায় খুঁযে দেখল কিন্তু রুহি কোথাও নেই তাই ওরা অনেক্ষন খুজার পর ভাবল রুহি হয়ত হোটেলে গেছে। তাই তারা হুটেলে ফিরে আসল।কিন্তু রুহি এখানেও ফিরে নি।

রাজঃ আমার মনে হচ্ছে রুহি রাগে ফিরে গেছে আমি আজকেই ফিরে যাব অর সাথে যে অন্যায় করেছি তার জন্য নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না তাই আজি আমি যাব।

যেমন কথা তেমন কাজ রাজ সেদিনেই ফিরে আসল কিন্তু হোস্টেলে রুহি রুমটা আগের মতই আছে রুহি সেখানে ফিরে নি।

এবার জয়ের ভয় শুরু হল সে চারদিকে লোক লাগালো রুহিকে খোঁজার জন্য। ৫ দিন কেটে গেছে রুহির কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি।,,ভার্সিটি তে এখনো ক্লাস হয় কিন্তু পড়াশুনা পাগল সেই মেয়েটাকে পিছনের সিরিয়ালে বসে থাকতে আর দেখা যায় না।এখন আর কেউ হুট করে এসে রাজের কানের কাছে চুড়ির রিনিঝিনি আওয়াজ তুলে না।রাজের হাজারটা ধমক সহ্য করে মিষ্টি হেসে কেউ আর বলে না আমি কি কিছু ভুল করেছি ……কেউ আর কাঁপা কাঁপা গলায় বলে না আমার সাথে খালি পায়ে হাঁটবে রাজ…..

রাজ যতক্ষনে রুহিকে মিস করতে শিখেছে ততক্ষনে অনেক দেড়ি হয়ে গেছে এই ৫ দিনে রুহির সকল অস্থিত্ব এই শহর থেকে হারিয়ে গেছে।

তবুও রাজের বিশ্বাস সে রুহিকে খোঁজে পাবে আর সেই আশাতেই বাবা মা কে সাথে নিয়ে রাজ রুহির গ্রামের বাড়িতে ছুটে গেল।

রুহির গ্রামে গিয়ে রাজ ফোন থেকে রুহির একটা ছবি দেখিয়ে একটা ছোট মেয়েকে জিজ্ঞাস করল এই মেয়েটাকে কোথাও দেখেছো মেয়েটা হাতের ইশারায় রাজের পিছন দিকে ইংগিত করল।রাজ মন খুশিতে ভরে গেল।রাজঃ আমি জানতাম তোমায় খোঁজে পাব।তুমি আমায় ছেড়ে কোথাও যেতে পাড়ো না।আজ এক্ষুনি আমি তোমায় আমার রানি করে নিয়ে যাব মনে মনে ভাবতে ভাবতে রাজ পিছনে তাকাল।

 

কিন্তু সেখানে রুহি ছিল না সেখানে একটা নতুন কবর ছিল। রাজ কিছু বোঝল না অবাক হয়ে মেয়েটাকে বলল কোথায় রুহি?

মেয়েটা বলল আজ ৪ দিন হয়েছে রুহি দিদি মারা গেছে এটাই রুহি দিদির কবর ….

কথাটা শুনা মাত্র রাজ চিৎকার করে মাটিতে বসে পড়ল।পরক্ষনেই রুহির কবরের কাছে গিয়ে কবর ঘিড়ে রাখা বাঁশের বেড়াতে হাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে বলতে লাগল না এটা হতে পাড়ে না কিছুতেই হতে পাড়েনা রুহি তুমি আমায় কথা দিয়েছিলে আমায় রেখে কোথাও যাবে না তুমি তোমার কথা ভাংতে পারো না। আমাকে যত খুশি শাস্তি দাও আমি মেনে নিব শুধু আমায় ছেড়ে যেও না প্লিজ।

বাশের বেড়ায় হাত দিয়ে আঘাত করায় রাজের হাত কেটে রক্ত পড়ছে চোখ দিয়ে অঝর ধারায় পানি পড়ছে।

রাজের মা রাজ কে বাধাঁ দেওয়ার জন্য যেতে চেয়েছিল কিন্তু রাজের বাবা তাকে আটকে দিল

রাজের বাবাঃ ওকে কাঁদতে দাও সাজেদা ওকে বাঁচাতে এই কান্নাটার খুব প্রয়োজন।ও পাড়বে না রুহিকে হারানোর কষ্ট টা সহ্য করতে রাজ যতই রাগি হোক ও কতটা ইমোশনাল তা তো তুমি জানো।

তখন পিছন থেকে একজন মহিলা এসে বলল আপনারা…..!!! ঠিক চিনলাম না তো।

রাজের বাবাঃ আপনি….???

মহিলাঃ এটা আমার মেয়ে রুহির কবর আপনার এখানে তাই জিজ্ঞাস করতে আসলাম।রাজ কে দেখিয়ে বলল ও এভাবে কাঁদছে কেন ও কি রুহির বন্ধু?

রাজের বাবাঃ হ্যা খুব কাছের বন্ধু…. এসব কি করে হল?

মহিলাটা এবার কেঁদে দিল রাজের মা তাকে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দিল,

তখন মহিলাটা কেঁদে কেঁদে বলল কিভাবে কি হয়েছিল জানি না। আসলে রুহি তার আশে পাশের মানুষগুলোকে ভাল রাখতে সারাটা জীবন কষ্ট করে গিয়েছে কখনো নিজে এত টুকু সুখ পায় নি। ছোট থেকে অভাব অনটনে বড় হয়েছে। দিনের পর দিন না খেয়ে কাটিয়েছে ওর খুব ইচ্ছা ছিল পড়া শুনা করে বাবার দুঃখ দূর করবে পড়াশুনার জন্য লোকের বাড়িতে কাজ ও করেছে কিন্তু এমন অনেক দিন হয়েছে ওকে সারাদিন কাজ করেও টাকা পায় নি। মালিক টাকা দেয় নি তবুও সে কোনদিন কাউকে একটা খারাপ কথা পর্যন্ত বলে নি।এবার বাড়ি থেকে যাওয়ার বলেছিল বাবা আমি ভাল ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছি এবার দেখো আমাদের সব স্বপ্ন পুরন হবে কিন্তু ওখানে গেলে ও এভাবে ফিড়বে জানলে কখনো যেতে দিতাম না।৪ দিন আগে পুলিশ এসে লাশ দিয়ে গেছে এক্সিডেন্ট হয়েছিল নাকি সেখানেই মারা গেছে….

তখনি রাজ চেচিয়ে বলল রুহি মরে নি ওকে আমি মেরে ফেলেছি হ্যা আমিই মেরে ফেলেছি।ওর মিত্যুর জন্য শুধুমাত্র আমি দায়ী বলে রাজ পাশে দাড়িয়ে থাকা একজন গার্ডস এর হাত থেকে একটা গান নিয়ে নিজের দিকে তাক করে ফিগার টেনে দিল।কিন্তু পিছন থেকে অন্য গার্ড এসে রাজের হাত ঘুরিয়ে দিল তাই গুলিটা রাজের গায়ে লাগে নি গার্ডস রা রাজকে ধরে ফেলল।

Related Story

রাজঃ ছাড়ো আমাকে ছাড়ো বলছি আমার বাঁচার কোন অধিকার নেই বলে রাজ ছটফট করতে শুরু করল এটা দেখে তার বাবা গার্ডসদের বলল রাজ কে জোর করে নিয়ে যেতে।ইমার্জেন্সি তে তারা বাসায় ফিরে আসল রাজ এখনো শান্ত হয় নি।

তাই তার মা ডাক্তারকে খবর দিল।ডাক্তার এসে রাজকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে দিল রাজ একটু গুমিয়ে নিল।

রাত হয়ে গেছে চারদিক নিরব হয়ে গেছে।গভীর রাতে,হঠাৎ রাজ আদো ঘুমে শুনতে পেল রুহির চুড়ির সেই রিনিঝিনি শব্দ।

রাজ ঘুম থেকেই রুহির নাম ধরে চিৎকার করে উটল।রাজের মা দৌড়ে এসে বলল কি হয়েছে বাবা?

রাজঃ মা রুহি এসেছিল….

রাজের মাঃশান্ত হও এটা তুমার মনের ভুল বাবা।

রাজঃ না মা আমি রুহির চুড়ির শব্দ স্পষ্ট শুনেছি।তখনি রাজের চোখ পড়ল দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা রুহির সেই ভাংগা চুড়ি গুলির দিকে এগুলুই বাতাসে নড়ে রিনিঝিনি আওয়াজ তুলছিল।রাজ এক দৃষ্টিতে চুড়ি গুলির দিকে তাকিয়ে আছে।তার এই হতাশার চাওনি তেই হারিয়ে গেল তার হাজারো না বলা কথা……..

(যানি অনকের মন খারাপ হবে কিন্তু এই গল্পে না তো রাজের কোন দোষ ছিল নাতো রুহির দোষ ছিল।যা দোষ ছিল মুখোশের। ভুল ত্রুটি নিজ দায়িত্বে ঠিক করে নিন এতদিন সাথে থাকার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ)

সমাপ্ত

Writer :- মোনা হোসাইন

গল্প শেষ না এখনো বাকি আছে। খুব তারাতাড়ি আসবে ” মুখোশ সিজন ২ ” গল্পটি ভালো লাগলে সবাই শেয়ার করবেন​​​​​​। আর সিজন ২ চান কিনা নিচে কমেন্ট করে জানাবেন, ধন্যবাদ গল্পের জগতের পাশে থাকার জন্য

Leave a Comment