Golperjogot

Golperjogot

mukhosh season 2 romance love story part 10

মুখোশ সিজন ২ – রহস্যময় প্রেমের গল্প পর্ব ১০ | মোনা হোসাইন

    মুখোশ সিজন ২

        Mona Hossain { Part 10 }


রুহিঃ দেখো আজ আমার বাড়ি আছে গাড়ি আছে,স্বামি আছে সন্তান আছে কিন্তু সব থেকেও আমি নিঃস্ব।
কাঁদতে কাঁদতে রুহি চলে গেল......
রাজের চোখে অঝর দাঁড়ায় পানি পড়ছে।
,
,
,
,
রুহি চলে যাওয়ার পর রাজ ভাবনার জগতে হারিয়ে গেল.....
তোমার তো সব আছে রুহি। স্বামি আছে, যে কিনা তোমাকে এত ভালবাসে।ফুটফুটে একটা মেয়ে আছে যার মুখের দিকে তাকিয়ে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়।

কিন্তু আমার কি আছে....??? একটা বিশাল অট্টালিকা যেখানে না আছে ভালবাসার মানুষ না আছে সুখ।তুমি আমার সেদিনের বলা কথা গুলিকে এতই গুরুত্ব দিলে যে আমার এখনকার পরিস্থিতি তোমার চোখেই পড়ছে না।

আমার বাবা মা বন্ধু বান্ধব,আমার সেই চেনা শহর যেখানে কিনা রাজের রাজত্ব চলত সব ছেড়ে আজ আমি এখানে কেন? জানতে ইচ্ছা করল না তোমার? এই ৫ বছর তুমি তো স্বামির ভালবাসায় ভালই ছিলে কিন্তু আমি কেমন ছিলাম একটাবার ভেবেছো কি?

হ্যা ভুল তো আমি করেছি কিন্তু অন্যায় করি নি। আমি কিভাবে জানব ২ জন একি রকম দেখতে হতে পাড়ে।তুমিও তো কখনো খোলে বল নি আমাকে।দিয়ার জন্য আমার যেটা ছিল সেটা শুধুই জেদ,ভালবাসা কি সেটা যখন বোঝলাম তখন আমি আমার ভালবাসাকে হারিয়ে ফেলেছি।
ভুলের শাস্তি পেয়েছি আরও যদি পেতে হয় মাথা পেতে নিব কিন্তু তোমাকে আমি সুখি করব।
নীলয় হয়ত তোমায় অনেক ভালবাসে কিন্তু তুমি তো রাজকে ভালবাসো,আর তুমি তো রাজের ভালবাসা দেখই নি।

আমার জেদ আর খারাপ ব্যবহার দেখেই তুমি আমার প্রেমে পড়েছিলে।
তোমার দেখা উচিত রাজ তোমায় কত ভালবাসে।
তোমাকে ফিরিয়ে আনাটা সহজ হবে না জানি কিন্তু আমি তোমাকে ফিরিয়ে আনবই। তার জন্য আমাকে যত নিচে নামতে হয় আমি নামব যতই খারাপ হতে হয় আমি হব।
আমি তোমার সাথে কেন খারাপ ব্যবহার করতাম সেটা তোমার জানতে হবে।
তোমাকে আমার সাথে থাকতে হবে রুহি।তোমাকে নিজের করে নিতে এখন আমাকে যে একটু খারাপ হতেই হবে।তারপর না হয় নিজের করা সব অপরাধের শাস্তি মাথা পেতে নিব।
তোমাকে ভালভাবে বল্লে তুমি আসবে না। দায়বদ্ধতা দিয়ে সংসার হয় না রুহি সংসার করতে ভালবাসা লাগে।তুমার নীলয়ের প্রতি যেটা আছে সেটা শুধুই দায়বদ্ধতা ভালবাসা না।

রাজ চোখ মুছে ফোন হাতে নিয়ে রুহিকে ফোন দিল,
অপর পাশ থেকে হ্যা কে বলছেন?
রাজঃ পৌছে গেছো....???
রুহিঃ ফোন দিছেন কেন? বলেছি না আপনার ছায়াও আমাদের জীবনে দেখতে চাই না।
রাজঃ পাড়ব না ছাড়তে,প্লিজ ফিড়ে এসো।
রুহিঃ যা মন চায় করতে থাকুন যতসব ভাল লাগে না।বলেই রুহি ফোন কাটল।
রাজঃ ভাল কথার মানুষ যে তুমি নও সেটা তো আমার জানা।
রাজ আবার ফোন দিল,
রুহি আমার কাছে কবে আসছো বল?এবার কড়া করে বলল রাজ।
রুহিঃ কখনো না আমি যে কথাগুলি বলে আসলাম কানে যায় নি?আর ফোন দিবেন না আমায়।আর একটা কথা আমি আপনার অফিসে চাকরি করব না আপনি যেকোনো স্টেপ নিতে পাড়েন বলেই রুহি আবারো ফোন কেটে দিল।
রাজঃ চাকরি কর বা না করো তাতে কি তোমাকে তো আমি বাধ্য করব আমার কাছে আসতে।
,
,
,
,
পরদিন সকালে রুহি ঘুম থেকে উঠে রহিম কে ডাকছে রোজের দুধ বানিয়ে দেওয়ার জন্য কিন্তু রহিম এর সাড়া নেই।
কি আজব ব্যাপার এত বেলা হয়ে গেছে রহিম কি এখুনো আসে নি?
রুহিঃ খালা এই খালা.... এতক্ষন ধরে ডাকছি শুনতে পাচ্ছো না? মেয়েটা কাঁদেছে তো রহিম যদি না থাকে তুমি দুধ টা দিয়ে যাও।
কিন্তু কারোর এই কোনো সাড়া নেই।

রুহি এবার রোজকে বিছানায় বসিয়ে নিচে আসল। এসে তো সে অবাক ২ জন কাজের লোকের মধ্যে একজনো আজ আসে নি ব্যাপারটা অবাক করার মত তাও রুহি এত টা গায়ে মাখল না।সে রান্না ঘরে গিয়ে রোজের দুধ বানাবে তখন দেখে দুধ প্রায় শেষের দিকে আর এক বেলা খেতে পাড়বে। রুহি দুধ বানিয়ে নিয়ে রোজকে খায়িয়ে ওকে নিয়ে নিচে আসল,
উফফ আমি রোজকে সামলাব নাকি নিজের জন্য রান্না করব? ২ জন একি দিনে ছুটিতে গেল ভাল লাগেনা যতসব।
না রান্না করব না ওদের একজন কে গিয়ে নিয়ে আসি আগে।

রুহি রোজকে নিয়ে প্রথমে রহিম তারপড়ে খালার বাসায় গেল কিন্তু ২ বাড়িতেই তালা ঝুলানো এবার রুহির ব্যাপার টা ঠিক লাগল না।কিন্তু ততটাও গুরুত্ব দিল না সে বাড়ি ফিরে আসল আসতে আসতে দুপুর হয়ে গেছে সে রোজকে খায়িয়ে ঘুম পাড়িয়ে নিজের জন্য রান্না করে খেয়ে নিজেও একটু ঘুমিয়ে নিল।
সন্ধ্যা বেলা রুহির ঘুম ভাংগল।সে উঠে রোজ এর ঘুম ভাংগাল।তখনি ফোন আসল অপাশ থেকে রুহি কখন আসবে...???

রুহিঃ উফফ মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি কখনো আসব না আমি।
রুহি ফোন রাখার সাথে সাথেই পুরু বাড়ি অন্ধকার হয়ে গেল।লোডশেডিং রুহি নিজেও অন্ধকার ভয় পায় তার উপড় রোজ আছে বাড়িতে কোন কাজের লোক নেই। রুহির ঘা ছমছম করে উঠল মুহূর্তের মধ্যে রোজ ও কান্না শুরু করে দিয়েছে।
তখনি রুহির মনে পড়ল রোজের দুধ শেষ তাই সে রোজ কে কোলে নিয়ে কোনমতে বাইরে আসল দুধ আর মোমবাতি কিনতে।
বাইরে এসে রুহি অবাক কারন সব বাড়িতেই বিদ্যুৎ আছে শুধু তার বাড়িতেই নেউ রুহি বেশ অবাক হয়েই রাস্তার পাশের মোড়ের দোকানে গেল।
রুহিঃ চাচা রোজের জন্য দুধ দিন আর মোমাবাতি দিন।
দোকানদারঃ এসব নেই দোকানে।
রুহিঃ মানে কি রোজের দুধ তো সব সময় আপনার দোকান থেকেই নেই।
দোকান্দারঃ এবার নেই।
রুহি আর কথা না বাড়িয়ে পাশের দোকানে গেল কিন্তু সেখানেও একি কথা।
রুহিঃ কি আজব আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি এই যে দুধ আর মোমবাতি ২ টাই আছে আমার কাছে বিক্রি করতে চাচ্ছন না কেন?আমি কি টাকা দিবনা নাকি?
দোকাদারঃ সরি ম্যাডাম আপনার কাছে কিছু বিক্রি করা যাবে না।এই এলাকার সুপার শপ থেকে ফুটপাতের দোকান কোথাও আপনার কাছে কেউ কিছু বিক্রি করবে না শুধু শুধু কষ্ট না করে বাসায় চলে যান।
রুহিঃ এসবের মানে কি?
দোকানদারঃকিছুক্ষন আগে বেশ কিছু গার্ডস টাইপের লোক এসে সবাই কে টাকা দিয়ে বলেছে আপনার কাছে কিছু যেন বিক্রি করা না হয়। এমন কি আপনাকে যেন কোন রকম সাহায্য না করা হয়।কেউ যদি করে তাকে তার জন্য শাস্তি পেতে হবে।
রুহি এবার বোঝল কাজের লোক না আসা থেকে শুরু করে এসবি রাজ এর কাজ।
তাই সে রাজকে ফোন দিল
রুহিঃ কি সব হচ্ছে এসব?
রাজঃ এগুলো তো হওয়ার এই ছিল তোমার বাসায় আলো থাকবে না,পানি থাকবে না,ফ্রিজ খাবার থাকবে না।কাজের লোক ও থাকবে না।কিন্তু আমার বাসায় সব আছে তাই বলছি চলে এসো।
রুহীঃ ছি আপনি এত নীচে নেমে গেছেন এইটুকু একটা বাচ্চার দুধ টুকুও কেড়ে নিচ্ছেন?
রাজঃ ভালভাবে বল্লাম তুমি তো শুনলে না। তাই একটু নিচে নামতেই হল রোজকে আর কষ্ট দিও না রুহি চলে এসো।
রুহিঃ আমি আসব না বোঝেছেন আপনি?
রাজঃ অন্ধকারে কিভাবে থাকবে?
রুহিঃ সেটা আপনার ভাবতে হবে না।
রুহি রোজ কে নিয়ে বাসায় ফিরল ফোনের ফ্লেশ অন করে কোনমতে নিজের রুমে গেল।রোজ ভীষন কাঁদছে রুহি নিলয় কে অনেক বার ফোন দিল কিন্তু নীলয় ফোন তুলল না।
রোজ কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ল। রুহি এভাবেই বসে রাত রাত টা কাটালো।

সকালে রোজ কে ঘুমে রেখে নিচে গেল খাবার বানাতে।কিন্তু ফ্রিজে কোন খাবার নেই রাজ সব সরিয়ে দিয়েছে শুধু একটা ডিম পেল সেটাই অমলেট করতে শুরু করল রুহি কারন রোজ সারারাত কিছু খায় নি উঠেই কাঁদবে তাই।

এদিকে রুহি রুম থেকে বাইরে যেতেই রাজ রুমে ঢুকল রাজ সারারাত ওদের বাসায় এই ছিল আলো না থাকায় রুহি তাকে দেখতে পায় নি।

রাজ এসে রোজ কে ঘুম থেকে তুলে খায়িয়ে দিল রোজের পেটে ক্ষুদা থাকায় কোন রকম ভেজাল না করেই খেয়ে নিল তারপর রাজ রোজকে বলল মাম্মাম আসলে খুব কাঁদবে আর পাপার বাসায় যাওয়ার কথা বলবে ঠিক আছে?বলেই রাজ দরজার পিছনে লুকিয়ে পড়ল।

রোজ ছোট মানুষ তাই কান্না করার কথা ভুলে গেল, সে রাজের দিকে তাকিয়ে আছে।
রুহি খাবার নিয়ে এসে রোজকে খাওয়াতে চাইল কিন্তু রোজ এর ক্ষুদা না থাকায় খেতে চাইল না রুহি বারবার জোর করছে দেখে রোজ খাবারটাই ফেলে দিল।রুহি উঠে রোজকে একটা জোরে ধমক দিয়ে বলল কি করলে এটা?সারাদিন এখন কি খাবে?ধমক শুনে রোজ কাঁদতে শুরু করল কাঁদার সময় তার মনে পড়ল রাজের কথা তাই হুট করে কান্না বন্ধ করে দিল আর রাজের দিকে তাকাল রাজ তাকে ইশারা করতেই রোজ বলতে শুরু করল পাপার বাসায় যাব পাপার বাসায় যাব....

রুহি রোজ এর ব্যবহারে অবাক হল। সে এদিক ওদিক দেখতে থাকল রাজের কাজ হয়ে গেছে তাই রাজ সেখান থেকে কেটে পড়ল।
রুহি আবার নীলয় কে ফোন দিল কিন্তু এবারো নিলয় ফোন ধরল না।

কিছুক্ষন পর ফোন বেজে উঠল রুহি ভাবল নীলয় ফোন দিছে তাড়াতাড়ি ফোন তুলল কিন্তু ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠল কখন আসবে?
রুহিঃ আপনার লজ্জা করে না এভাবে অসহায়তার সুযোগ নিতে?
রাজঃ অসহায় এখুনো হও নি হবে।
রুহিঃ মানে কি?
রাজঃ ধরো রাতের অন্ধকারে যদি তোমার ঘরে কোন হিংস্র কুকুর ডুকে পড়ে তুমি কি করবে? বা ধরো ওয়াশরুম থেকে ফিড়ে যদি দেখো রোজ সিড়ি থেকে পড়ে গেছে কতটা অসহায় হবে তুমি?মেয়েটা এখুনো খায় নি রুহি... এখন তুমি ভেবে নাও তোমার কাছে জেদ বড় নাকি রোজের ভাল থাকা বড়?আর নীলয় এখন আমার কবজায় তাই ওকে ফোন করে লাভ নেই।আর একটা কথা আমিই যে এসব করেছি তার কোন প্রমান তোমার কাছে নেই তাই পুলিশের কাছেও কোন সাহায্য তুমি পাবে না তাই চলে এসো প্লিজ।আমি জোর করছিনা শুধু বলছি।

রুহির মুখে কথা নেই..... রুহি রোজের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে চোখের পানি মুছে নিল তারপর রোজকে নিয়ে রাজের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
রুহিঃ আমি আসছি রাজ তবে তোমার সাথে থাকতে নয় আমার সাথে এসব করার মজা বোঝাতে...

পড়ুন  লাভার নাকি ভিলেন – পর্ব ১২ থ্রিলার গল্প | মোনা হোসাইন
পরবর্তী পর্বের জন্য ক্লিক করুন :>> চলবে

Writer :- মোনা হোসাইন

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Home
Stories
Status
Account
Search
Scroll to Top