Golperjogot

Golperjogot

ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড পর্ব ১ | মনা হোসাইন

অফিসের বসকে ভয় পাওয়া দোষের কিছু না কিন্তু ভয় লাগাম ছাড়া হওয়াটা দোষের। আর এই দোষে দোষী হতে ছিমছিম কে বাধ্য করেছে তার বস মি.অর্কিড।

ছিমছিমের নাম টা যেমন অদ্ভুত আর মিষ্টি তেমনি সে দেখতেও তেমনি। বাচ্চা বাচ্চা চেহারা,বোকা বোকা কথা, সাথে চঞ্চল আর দুষ্ট প্রকৃতির কিন্তু মিস্টার অর্কিডের হয়ত সেটা পছন্দের না তাই তিনি সবসময় ছিমছিমকে বকার উপরে রাখে। শহরের প্রথম সারির একজন বিজনেসম্যান অর্কিড। মুডি,গম্ভীর সিরিয়াস টাইপের ছেলে কথা বলে কম,নিজের যা ভাল লাগে তার উল্টো কিছু মেনে নিতে পারে না সহজে। ছিমছিম অর্কিডের পার্সনাল এসিস্ট্যান্ট তাই তাকে অফিস শুরু হওয়ার আগেই অফিসে আসতে হয় যেন অর্কিডের আগে এসে সব কাজ এগিয়ে রাখতে পারে। আজকেও তার ব্যাতিক্রম কিছু হল না। সকাল হতে না হতেই অফিসে এসে সব ফাইল ঠিক ঠাক করে রেখে এসে নিজের ডেস্কে বসল।

—“সব করে ফেলেছি এবার নি:চিন্ত আজ আর বকা খেতে হবেনা। বলতে বলতে ছিমছিম তার ব্যাগে কিছু একটা কিছু খুঁজতে লাগল। উফফ এত সকালে অফিসে আসতে হয় একটু সাজতেও পারি না। লা লা লা উম উম দেখি তো এই লিপস্টিকে আমাকে কেমন লাগে? যদিও জানি আমাকে সুন্দর লাগবে আমাকে সব কিছুতেই সুন্দর ল ল ল ল….

এইটুকু বলেই থেমে গেল ছিমছিম কারন কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। ছিমছিমের সামনেই চোখ বড় বড় করে দাঁড়িয়ে আছে তার বস। অর্কিডকে দেখেই লিপস্টিক টা হাত থেকে পড়ে গেল।

—“স স স্যার আপনি এখানে…?

—” তাহলে আমার কি এখন অফিসে আসা ছেড়ে দেওয়া উচিত…?

—“না না আমি তা বলিনি আপনি তো সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারেন না তাই বলছিলাম।এত সকালে কি করে আসলেন

—“আপনি আমার ব্যাপারে একটু বেশিই জানেন তাই আপনার এই অবস্থা। যাইহোক মিস ছিমছিম আপনার কি মনে হয় আমি কোন ফিল্ম প্রোডিউসার ?

—” মানে স্যার…?

—“আপনাকে দেখলে নিজেকে মনে হয় প্রোডিউসার আর আপনি একজন সুপার মডেল আপনাকে কতবার বলেছি এত মেকাপ করে অফিসে আসবেন না আমার কথা আপনার কানে যায় না?

—“এত মেকাপ কোথায় করেছি স্যার একটু তো শুধু লিপস্টিক লাগিয়েছি শুধু।

—” একটু লাগিয়েছেন? ওকে ফাইন এই একটুর জন্য আপনার বেতন থেকে একটু করে টাকা কেটে নেয়া হল।

—-“ম ম ম মানে কি স্যার?

—“মানে এই মাসে আপনার বেতন থেকে ১০ হাজার টাকা কেটে নেয়া হবে।

—“কি বলছেন স্যার আপনি আমার সাথে এমন করতে পারেন না।

—“আমি আরও অনেক কিছু করতে পারি দেখবেন নাকি? বাই দ্যা ওয়ে আপনি পারলে আমি পারব না কেন? আমি আপনার বস আপনাকে নিষেধ করেছি এত সেজেগুজে থাকবেন না আপনি আমার কথা একদমেই মানেন না। এখন আমার কি করা উচিত জানেন?

—“কি স্যার?

—” আপনাকে চাকরি থেকে বের করে দেয়া কিন্তু আমি তা না করে সামান্য বেতন কেটেছি। আপনার আর কিছু বলার আছে?

—“স্যার আমি আমার দায়িত্ব তো ভাল করে পালন করি তাহলে বেতন কাটবেন কেন তাছাড়া একটু সাজলে কি হয় …?

—“আমার কাছে কয়ফত চাইছেন? রেজিগনেশন লেটার টা কি আমি দিব নাকি আপনি?

—‘না না আমি তো মজা করছিলাম স্যার আপনি করেন কেন?

—” আচ্ছা একটা কথা বলুন তো আপনি কি মেকাপ করাতে কখনো ক্লান্ত হন না? যখনী দেখি তখনী মেকাপ করতেই থাকেন এত মেকাপ করার পিছনে রহস্য টা কি?

—-“সেটা আপনার মত বদমেজাজি স্যার কিভাবে বুঝবে?( মনে মনে)

—-“কিছু বলছেন? যা বলার মনে মনে না বলে সরাসরি বলুন।

—“কই আমি কিছু বলছি না তো স্যার

—“গুড… যাইহোক বকবক করা বাদ দিয়ে আমার রুমে এসে আমার সারাদিনের সিডিউল টা বলুন।

—“জি জি আপনি যান আমি এখনী আসছি স্যার।ধুর ঘোড়ার ডিম ভাল লাগে না সকাল সকাল আমার দশটা হাজার টাকা জলে চলে গেল। উম আসছে মেকাপ করেন কেন? কেন করি বুঝেন না? নাহার্টলেস লোক কোথাকার। আমি যে আপনাকে দেখানোর জন্যই সাজি কবে বুঝবেন?

—-“মিস ছিমছিম আমি আপনাকে কিছু একটা করতে বলেছি…দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মেকাপের কথা ভাবতে বলি নি। মেকাপের চিন্তা বাদ দিয়ে এখনী আমার সাথে আসুন।

—“জ্বি জ্বি স্যার আমি এখনী আসছি…

Short Story

ছিমছিম কথা না বাড়িয়ে তাড়াতাড়ি অর্কিডের পিছু পিছু গেল৷ ছিমছিম প্রায় ৩ বছর থেকে এই অফিসে চাকরি করছে আর দীর্ঘদিন থেকেই অর্কিডের উপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে। যদিও অর্কিড সব সময়েই শাসনের উপর রাখে কিন্তু সে ছিমছিম ব্যাতিত অফিসের কারো সাথে এতক্ষন কথা বলে না। ছিম ছিমের সাথে যতক্ষন কথা বলল ছিমছিমের জায়গায় অন্য কেউ থাকলে তাকে এতক্ষনে চাকরি থেকে বের করে দিত।ছিমছিম ভাবে অর্কিডও হয়ত তাকে পছন্দ করে তাই সবসময় নানানভাবে অর্কিডকে বুঝাতে চায় যে সে তাকে পছন্দ করে।কিন্তু অর্কিডকে পছন্দের বলতে পারেনি। কারন অর্কিড সেই সুযোগ দেয় নি। ছিমছিম অর্কিডের পিছু পিছু তার রুমে গেল। ছিমছিম কে রুমে দেখে অর্কিড বলল,

—কি ব্যাপার খালি হাতে আসছেন কেন? কফি নিয়ে আসুন।

—“স্যার এত সকালে কফি? ক্যান্টিনের স্টাফরা তো এখনো আসেনি।

—” আমাকে কি আপনার বোকা মনে হয় ক্যান্টিনের লোক যে আসে নি সেটা আমি নিশ্চয় জানি আর জেনেই আপনাকে বলেছি। তবে ক্যান্টিনে যেতে বলিনি আপনাকে বানিয়ে আমতে বলেছি যান গিয়ে বানিয়ে আনুন।

—“আ আ আমি বানাব?

—“তো কি আমি বানাব? কি হল দাঁড়িয়ে আছেন কেন যান নাকি শুধু মেকাপ করতেই জানেন কফি বানাতে পারেন না?

—“না না আমি কফি বানাতে পারি স্যার। আমি এখনী আসছি বলে ছিমছিম বাইরে যেতে চাইল সাথে সাথে অর্কিড পিছন থেকে বলল,

—“উফফ মিস ছিম ওইদিকে কোথায় যাচ্ছেন?

ছিমছিম মুখ ভোঁতা করে জবাব দিল,—“কফি আনতে স্যার…

—“মাঝে মাঝে ভাবি আপনাকে চাকরি থেকে বের করা দেওয়া উচিত নাকি যে আপনাকে চাকরিটা দিয়েছে তাকে বের করা উচিত?

—“মানে কি স্যার…?

—“যদি আমি ব্যাতিত অন্য কেউ আপনাকে সিলেক্ট করতো এতদিনে তাকে আমি অফিস থেক্ব বের করে দিতাম। আপনার মত মাথা মোটা মেয়েকে আমি কেন যে চাকরিতে রেখেছি কে জানে। যাইহোক ওদিকে কোথায় যাচ্ছেন?

—“কফি আনতে…

—“ক্যান্টিন বন্ধ সেটা কি আমার মনে করিয়ে দিতে হবে…

—“ওমা তাই তো ক্যান্টিন তো বন্ধ আমি কোথায় যাচ্ছি…?

—“স্টুপিড গার্ল,আমার রেস্ট রুমে কফি মেকার আছে সাথে কফিও গিয়ে বানিয়ে আনুন।

—“আপনার রুমে কিন্তু আপনার রুমে তো কাউকে এলাউ করেন না।

—” আমার পার্সনাল স্টাফে যেকেউ হাত দিক আমি সেটা চাই না তারমানে এই না সেই অধিকার কারোর কখনো হবে না।

—“মানে বুঝলাম না স্যার

—“আপনাকে বুঝতে বলিনি কফি বানাতে বলেছি। আপনাকে আমি এবার সত্যি সত্যি অফিস থেকে বের করে দিব।

—“আমি এখনী যাচ্ছি স্যার…

বলেই ছিমছিম রেস্টরুমের দিকে দৌড়াল আর কিছুক্ষন পর কফি নিয়ে এসে বলল,

—“স্যার আপনার কফি..

—“গুড এবার আজকের সিডিউল টা বলুন

ছিমছিম তাড়াতাড়ি ডায়েরি উল্টে বলল,

—“আজকে দুপুরে আপনার দুইটা মিটিং আছে আর রাতে বাসায় পার্টি আছে আংকেল বারবার বলেছেন আপনি যেন পার্টিতে উপস্থিত থাকেন।

—“হুম বুঝছি আচ্ছা আপনি এখন যেতে পারেন তবে মেকাপ করতে বসবেন না।

—“উম আসছে মেকাপ করবেন না। কেন মেকাপ করলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায়?

—“ছিমছিম আমি কিন্তু শুনতে পাচ্ছি।

—“আ…আমি কিছু বলিনি স্যার।

বলেই ছিমছিম দৌড়ে নিজের ডেস্কে চলে গেল। কিছুক্ষন পর কেউ একজন বলল,

–excuse me

ছিম ছিম মুখ তুলে তাকিয়ে দেখল একটা মেয়ে তার ডেস্কের সামনে দাঁড়িয়ে তাকেই প্রশ্ন করছে. ছিমছিম সুন্দর করে বলল,

—” how can i help you mem?

—“জান কি রুমে আছে?

—“জ জ জান ?

—“উফফ আমিও না কাকে যে কি বলি। তুমি তো সামান্য সস্তা কর্মচারী তুমি কি করে অর্কিডের নিক নেইম নাম জানবে? বাই দ্যা ওয়ে আমি অর্কিডের কথা বলছিলাম। ও কি রুমে আছে? আমি রুমে যাচ্ছি।

বলে মেয়েটি অর্কিডের ঘরের যেতে লাগল।ছিমছিম ও তার পিছু ছুটল,

—“ম্যাম ম্যাম কোথায় যাচ্ছেন এপয়নমেন্ট ছাড়া আপনি স্যারের সাথে দেখা করতে পারবেন না।

ছিমছিম মেয়েটাকে আটকাতে চাইলেও সে কোন কথা না শোনে সোজা অর্কিডের রুমে চলে গেল ছিমছিম পিছু ছুটল অর্কিড তখন মিটিং এ ব্যস্ত ছিল এই মুহুর্তে দুজন তার ঘরে ঢুকায় সে বিরক্ত আর রাগী চোখে তাকাল তবে মেয়েটার দিকে না ছিমছিমের দিকে। ছিমছিম অর্কিডের না বলা কথা বুঝে নিয়ে মাথা নিচু করে বলল,

—I am sorry sir, its my folt.

—“সরি বলতে হবে না যাইহোক আজকের মিটিং এই পর্যন্তই আপনারা সবাই যেতে পারেন।

অর্কিড বলতেই সবাইকে যে যার যার মত চলে গেল। শুধু ছিমছিম দাঁড়িয়ে আছে,

—“মিস ছিমছিম..?

—“জ্বি স্যার…

—“আমি সবাইকে যেতে বলেছি

Related Story

ছিমছিম বুঝতে পারে নি যে অর্কিড তাকেও যেতে বলেছিল।

—“আই এম সরি স্যার এখনি যাচ্ছি বলে ছিমছিম তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে আসল কিন্তু হুট করেই মনে খটকা লেগে গেল।

—“স্যার তো আমাকে কখনো এভাবে বেরিয়ে যেতে বলেনা তাহলে…? এই মেয়েটা কে যে পারমিশন ছাড়া রুমে গেল তবুও স্যার কিছু বলল না উল্টো তার জন্য মিটিং ক্যান্সেল করে দিল? বাই এনি চান্স উনি স্যারের কোন আপন জন নয় তো…?

ভেবে অর্কিডের ঘরের লাগানো দরজার দিকে তাকাল। বেশ অনেক্ষন হয়ে গিয়েছে কেউ বের হচ্ছে না সময় যত যাচ্ছে ছিমছিমের অস্থিরতাও তত বাড়ছে।

পরবর্তী পর্বের জন্য ক্লিক করুন :>> চলবে

Writer :- মোনা হোসাইন

Leave a Comment