Golperjogot

Golperjogot

ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড পর্ব ২ | মনা হোসাইন

নিজের ক্রাশের সাথে অন্য কোন মেয়ে সময় কাটালে সেটা মেনে নেওয়া যায় কি? অবশ্যই না! কিন্তু ছিমছিম মেনে নিতে বাধ্য কারন নিজের বসের উপর খবরদারি করার অধিকার তার নেই। কিন্তু পরিস্থিতি যাইহোক না কেন মন কি আর এসব মানে? ছিমছিমের মন মেজাজ আজ বড্ড খারাপ হয়ে আছে। ঘড়িতে ৬ টা বাজতেই যেন স্বস্তি পেল ছিমছিম এক মিনিট হেরফের না করে অফিস ছুটি হওয়ার সাথে সাথেই বেরিয়ে গেল। যদিও প্রতিদিন অর্কিডকে জিজ্ঞাসা করে বাসায় যায় কিন্তু আজ অর্কিডকে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন মনে করে নি।

অফিস থেকে বের হয়েই বিড়বিড় করতে লাগল,

—“উম…মেয়ে দেখেই একদম গলে গেল?প্রতিদিন তো আমাকে জ্বালিয়ে মারে এক মিনিটের জন্য চোখের আড়াল হতে দেয় না। ছিম এটা আনো ওটা আনো। ছিম এটা করো ওটা করো আর আজ? একটাবারের জন্য আমাকে ডাকার প্রয়োজন মনে করল না? কেন রে কেন ওই মেয়ে কি আমার চেয়ে বেশি সুন্দরী?যে তাকে পেয়ে আমার কথা মনেই পড়ল না? সারাদিন ধরে দরজা লাগিয়ে কিসের এত গল্প করতে হল?

ছিমছিম রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করছিল ঠিক তখনী গাড়ির হর্ন বেজে উঠল । ছিমছিম চোখ তুলে তাকাতেই দেখল অর্কিডের গাড়ি.. অর্কিড গাড়ির দরজা দিয়ে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে দেখে ছিমছিমের এতক্ষনের সব বকবক মাথা থেকে বেরিয়ে গেল. এগিয়ে বলল

—“স্যার আপনি এখানে?

ছিমছিমের কথা শেষ হতেই অর্কিড গাড়ি থেকে নেমে আসল।আর কর্কশ কন্ঠে বলল

—“আপনি নিজেকে কি ভাবেন মিস ছিমছিম?

—“ম মানে?

—“আপনি কার অনুমতিতে অফিস থেকে বেরিয়েছেন?

—“স্যার অফিস ছুটি হয়ে গিয়েছে তাই চলে এসেছি এতে অসুবিধা কোথায়?

—“পিএ এর কাজ এবং দায়িত্ব কি আপনাকে নতুন করে শিখাতে হবে?

—“মানে কি? অফিস আওয়ার তো শেষ..

—‘আপনার কাজের সাথে অফিস আওয়ারের কোন যোগাযোগ নেই। আমি যখন বলব তখন আপনার অফিস শুরু হবে আর আমি যখন বলব তখনী শেষ হবে বুঝেছেন?

—“আমি সব কাজ শেষ করেই এসেছি স্যার…

—“আবার মুখে মুখে কথা বলছেন? যাস্ট দশ সেকেন্ড সময় দিচ্ছি এর মধ্যে গাড়িতে উঠবেন তানাহলে আপনাকে আর কাজে আসার দরকার নেই।

Short Story

ছিমছিম কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে গিয়ে বসল।কারন সে জানে অর্কিডের কথার নড়চড় হয় না।এখন কিছু বলবে তাকে সত্যিই কাজ থেকে বের করে দিবে। গাড়ি চলছে কোথায় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে জানে না ছিমছিম। প্রশ্ন করার ইচ্ছা হলেও করার উপায় নেই কারন অর্কিড বেজায় ক্ষেপে আছে। কিছুক্ষন পর গাড়ি গিয়ে থামল বিরাট বাংলোর সামনে। ছিমছিম গাড়ি থেকে নেমে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। বিরাট বাংলো সেজেছে নিয়ন আলোয় চারদিকে গেস্টদের সমাগম। ছিমছিম এবার প্রশ্ন করেই বসল,

—“স্যার আমরা এখানে এসেছি কেন..?

অর্কিডের ঝটপট উত্তর—“অবশ্যই পার্টিতে এসেছি আর আপনি আজ আমার পার্টনার। আই মিন পার্টিতে আমাকে সংগ দিবেন।

—‘ ম ম মানে কি স্যার…?

—“আমি বেশি কথা পছন্দ করি না জেনেও বারবার অহেতুক প্রশ্ন করেন কেন? ভিতরে চলুন।

ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড

ছিমছিম কিছু বুঝে উঠতে না পারলেও অর্কিডের সাথে গেল। অর্কিড গেস্টদের সাথে ছিমছিম কে পরিচয় করে দিচ্ছিল সব ঠিকি ছিল ছিমছিম ও খুশি ছিল কিন্তু হটাৎ সব বদলে গেল। হটাৎ সকালের মেয়েটা পার্টিতে এসে হাজির হল আর এসেই অর্কিডকে জড়িয়ে ধরল। অর্কিডও হাসিমুখে জড়িয়ে নিল মেয়েটাকে। তারপর কিছুক্ষন পর মেয়েটাকে ছেড়ে দিয়ে বলল তুমি স্টেজে যাও আমি আসছি। মেয়েটা চলে যেতেই অর্কিড ছিমছিমের দিকে তাকাল। ছিমছিমের ভিতর কি হচ্ছে সেসবের তোয়াক্কা না করে অর্কিড বলল,

—“ছিম আপনার হাতের আংটিটা কি গোল্ডের..?

ছিমছিম নিজের হাতের দিকে একবার তাকিয়ে জবাব দিল

—“জ্বি মানে কেন স্যার…?

অর্কিড উত্তর না দিয়ে এগিয়ে ছিলছিমের হাত ধরল তারপর আংটিটা খুলে নিল

—-“স্যার কি করছেন এসব?

—” আসলে জেনির জন্য একটা রিং কিনেছিলাম ভুলে অফিসে ফেলে এসেছি। ও যদি জানতে পারে আমি গিফট আনি নি কষ্ট পাবে তাই আপনার টা নিয়ে নিলাম। এটা ওকে দিয়ে দিই নতুনটা আপনি নিয়ে নিয়েন।

—“মানে কি..? আমি আপনার আংটি নিব কেন?

—“চিন্তা করবেন না নতুনটা ডায়মন্ডের আর যদি নিতে না চান এটার যত মূল্য দিয়ে দিব।তাছাড়া বসকে বিপদমুক্ত করা আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

বলে অর্কিড স্টেজের দিকে চলে গেল। আর জেনিকে আংটি পরিয়ে দিল। সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। এত অবাক নয়নের মাঝে দুটো অশ্রু সিক্ত চোখও ছিল যা কারোর নজরে পড়ে নি।ছিমছিম নিজের কান্না আটকাতে কোন রকম পার্টি ছেড়ে বেরিয়ে আসল।

রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটছে আত চোখে বারবার অর্কিডের আংটি পরানোর দৃশ্যটা ভাসছে। ছিমছিম আর সহ্য করতে পারল না। হাঁটতে হাঁটতে এসে একটা নাইট ক্লাবের সামনে থামল আর নিজেই নিজেকে বলল,

Related Story

—“শুধু বড়লোকরাই কেন মজা করতে পারে? আমরা কেন নয়?স্যার আপনি তো জানতেন আমি আপনাকে পছন্দ করি তবুও কি করে পারলেন অন্য একটা মেয়েকে আংটি পরাতে? তাও আমার আংটি কি করে পারলে এত বড় আমাকে নিয়ে খেলতে?আমরা গরীব বলে আমাদের মন থাকতে নেই তাই না?আমাদের নিয়ে খেলা করা যায় তাই তো? না স্যার আমাকে নিয়ে খেলতে আপনাকে দিব না।আপনাকে আমি জিততে দিব না। একরাতে বিয়ে করা সম্ভব না কিন্তু আমি আজ কারোর না কারোর সাথে one night stand করব তারপর আপনাকে বুঝিয়ে দিব শুধু আপনারা নয় আমরাও পারি মানুষকে নিয়ে খেলতে…আপনার জন্য আমার কোন ফিলিংস নেই প্রমাণ করে দিব।

কথাগুলো বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলল ছিমছিম তারপর নাইট ক্লাবের ভিতরে পা বাড়াল…

পরবর্তী পর্বের জন্য ক্লিক করুন :>> চলবে

Writer :- মোনা হোসাইন

Leave a Comment