Golperjogot

Golperjogot

ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড পর্ব ৪ | মনা হোসাইন

সকালের সোনালী রোদ চোখে এসে পড়তেই ছিমছিমের ঘুম ভাংগল। সে পিটপিট করে চোখ মেলে তাকাতেই চোখ থেকে ঘুম এক ছুটে পালাল। ছিমছিম তাড়াতাড়ি উঠে বসল আর চারদিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করতে লাগল সে কোথায় আছে,

—“আমি আমার ঘরের দেয়ালে কাল রং করলাম কবে? আরে আরে আমার ঘরের সব কিছু হটাৎ বদলে গেল কি করে? ওয়েট ওয়েট এটা তো আমার ঘর না। আমার ঘর কোথায়? ধুর ছাই কিসব আবল তাবল বকছি আমার ঘর তো ঘরের জায়গাতেই আছে বরং আমি এখানে কেন? এটা কার ঘর আর আমি এখানে কি করছি..? আ….

ছিমছিমের মনে মনে বলা কথাগুলো চিৎকারে রুপ নিল যখন দেখল তারপাশে কেউ উল্টো পাশ ঘুরে ঘুমিয়ে আছে।

—-এ এ এটা কে? যেই হোক আমার পাশে কি করছে? এই যে শুনছেন? কে আপনি এখানে কি করছেন? না না মানে আপনি না আমি এখানে কি করছি? এই যে কথা বলুন, কিছু বলছেন না কেন?

অর্কিড বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। অর্কিডের সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস নেই তাই ছিমছিমের কথা কানে গেল না।

—“আমি কি তবে এই লোকটাকে খু*ন করে ফেলেছি? তাই হবে হয়ত তানাহলে কথা বলছে না কেন? এখন আমি কি করব? কি করব? বলেই বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল আর সাথে সাথেই আবার বিছানায় বসে বেডশিটে নিজেকে নিজেকে ঢেকে নিল।

—“আমার সাথে এসব কি হচ্ছে? আমার জামা কাপড় কোথায়? আমি খালি গায়ে কেন ওয়েট এখানে আসলে হচ্ছে টা কী? রাতে আমি স্যারের সাথে পার্টিতে গিয়েছিলাম সেখান থেকে নাইট ক্লাবে তারপর…? তারপর কি হয়েছিল?আমি খালি গায়ে মানে কি? মানে আমি লোকটার সাথে? না না এসব কিছুতেই হতে পারে না।

ভেবেই ছিমছিম পাশের ছেলেটার গা থেকে চাঁদর টা সরিয়ে দেখল। দুধ সাদা খালি গা দেখে তাড়াতাড়ি চাদর টেনে দিল।

—“তারমানে সত্যি সত্যি ও ওয়া ওয়ান নাইট স্ট্যান্ড? ও মাই গড আমি এই লোকটার সাথে? ছি ছি ছি আমি এসব কি করে করলাম? আমি সমাজে মুখ দেখাব কি করেনা এখন এসব ভাবার সময় নেই আমাকে এখন এখান থেকে পালাতে হবে এই ছেলেটা জেগে উঠার আগেই পালাতে হবে যেন এই ছেলে আমাকে আর কোনদিন খুঁজে না পায়।

যেমন ভাবনা তেমন কাজ ছিমছিম তাড়াতাড়ি তাড়াতাড়ি জামা কাপড় পরে নিল তারপর তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বের হয়ে আসল। কিন্তু রুম থেকে বের হয়ে তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে তার চলার গতি কমে আসল। আর চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখল,

Short Story

—-“এ এ এটা কার বাসা..? বাসাটা এত চিনা চিনা লাগছে কেন?ওয়েট এটা তো স্যারের….না এ এ এটা কিছুতেই হতে পারে না আমার কোথাও ভুল হচ্ছে আমি হয়ত স্বপ্ন দেখছি।

বলে নিজেই নিজের হাতে জোরে চিমটি কাটল আর ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠল তারমানে এসব সত্যি আর আমি…. কার সাথে রাত কাটিয়েছি..? স্যারের সাথে ও মাই গড…না না এটা কিছুতেই হতে পারে না আমি ভুলভাব ভাবছি।

ছিমছিম ফিরে আসবে আসবে করেও আসতে পারল না মনের সন্দেহ দূর করার জন্য আবার রুমে ফিরে গেল আর বিছানার পাশ ঘেঁষে নিচে বসে চাঁদর সারাল আর সাথে সাথেই তার চোখ কপালে উঠে গেল কারন পাশে শুয়ে থাকা ছেলেটা তার বসে অর্কিডেই। ছিমছিম আবারো দেখে নিল অর্কিড ও খালি গায়ে শুয়ে আসছে ছিমছিম আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে গলার দাগ দেখে নিশ্চিত হল সে রাতে কি কি ঘটিয়েছে। ধীরে ধীরে রাতের সব কথা মনে পড়তে লাগল।

—“আমি স্যারের সামনে মুখ দেখাব কি করে? আমি এতটা নিচে কি করে নামলাম? আমি এত ভুলভাল কিছু কি করে করতে পারলাম আমার সব শেষ হয়ে গেল। স্যার আমাকে কি ভাবলেন? যাক এখন আর এসব ভেবে কি হব্ব তারচেয়ে স্যার জেগে উঠার আগে এখান থেকে যাই পরে একসময় স্যারের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিব।

ছিমছিম অর্কিডের বাসা ছেড়ে বেরিয়ে আসল,—“হাহ ছিমছিম তুই নিজের হাতে নিজের পায়ে কি করে কুড়াল মারলি? মান সম্মান তো গেলই সাথে চাকরিটাও। বাড়ি ফিরে সবাইকে কি জবাব দিব আমি? স্যারের সামনেই বা কোন মুখে দাঁড়াব।

ভাবতে ভাবতে হাঁটছিল ছিমছিম ঠিক তখনী তার ফোন বেজে উঠল। ছিমছিম আনমনে ফোন রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে অফিসের ম্যানেজার বলে উঠল,

—“ছিম ছিম কোথায় তুমি? এখনো অফিসে আসো নি কেন? আজ আমাদের দুইটা ডিল হওয়ার কথা ভুলে গেছো? স্যার আসতে লেইট হবে তাই বলে তুমিও লেইট করবে? অন্তত আজকের দিনে লেইট করাটা মানায় তাড়াতাড়ি অফিসে এসে ফাইল সাবমিট করো তানাহলে অনেক লস হয়ে যাবে।

—“কিন্তু ম্যানেজার সাহেব…

—“আমি তোমার কোন বাহানা শুনতে চাইনি ৫ মিনিটের মধ্যে সব ফাইল রেডি চাই।

ম্যানেজার ফোন কেটে দিল। ছিম ছিম এই ডিলের সর্বাত্নক দায়িত্বে আছে তাই সে চাইলেও বিষয়টা এড়িয়ে যেতে পারবে না তাই মনে মনে ঠিক করল অর্কিড অফিসে যাওয়ার আগেই সে অফিসে গিয়ে সব কাগজ পত্র ঠিকঠাক করে দিয়ে চলে আসবে।

Related Story

যেমন ভাবনা তেমন কাজ ছিমছিম অফিসে গিয়ে সব কাগজ গুছাচ্ছিল ঠিক তখনী অর্কিডের আগমন ঘটল। সাদা ধবধবে শার্ট সাথে কালো কোর্ট ফরমাল প্যান্ট সাথে কালো শো। কি অপুরুপ সুন্দর লাগছে অর্কিডকে কিন্তু এখন এসব দেখার সময় নেই ছিমছিমের। এই মুহুর্তে তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল অর্কিডের চোখকে ফাঁকি দেওয়া তাই সে তাড়াতাড়ি নিজেত ডেস্কের নিচে বসে পড়ল।অর্কিড শার্টের হাতা ফোল্ট করতে করতে এসে ছিমছিমের ড্রেস্কের কাছে এসে দাঁড়িয়ে ডেস্কের দিকে মুখ বাঁড়িয়ে বলল,

—“গুড মর্নিং মিস ছিমছিম।

ছিমছিম মুখ তুলে তাকাতেই অর্কিড আবার বলে উঠল—“ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন অফিসে লুকুচুরি খেলার জন্য আপনাকে চাকরি দেয়া হয় নি। ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে আমার কাবিনে আসবেন আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে..

পরবর্তী পর্বের জন্য ক্লিক করুন :>> চলবে

Writer :- মোনা হোসাইন

Leave a Comment