Golperjogot

Golperjogot

Opurno Valobasha Sad Love Story Bangla Part 1 | Sad Story

অপূর্ণ ভালোবাসা

Bitas Pramanik { Part 1 }


নাদিয়া সন্ধ্যায় হোস্টেল এর ছাদে বসে তার কয়েকজন বান্ধবীর সাথে আড্ডা দিচ্ছে, হঠাৎ নাদিয়ার ফোনটা বেজে উঠলো। নাদিয়া ফোনটা রিসিভ করল।ফোনটা রিসিভ করার সাথে সাথেই ফোনের অপর পাশ থেকে কেউ একজন সালাম দিল।

রনিঃ আসসালামু আলাইকুম নাদিয়া।
নাদিয়াঃ অলাইকুম আসসালাম। কেমন আছো রনি?
রনিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুমি?
নাদিয়াঃ আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি।
রনিঃ তুমি আমাদের বাসায় কবে আসছো?
নাদিয়াঃ যাব, কিছুদিনের মধ্যেই যাব।
রনিঃ(একটু রাগী কন্ঠে বলল) তুমি কিছুদিন বলতে বলতে চার বছর কাটিয়ে দিলে তাও আসলে না।
নাদিয়াঃ আচ্ছা বাবা যাবো এবার, পরীক্ষা তো শেষ হলো এবার আমি নিশ্চয়ই যাবো।
রনিঃ (আবারও রাগে কন্ঠে বলল).... আমি তোমার এত কথা শুনতে চাই না, আমার বিয়েতে তোমাকে আসতেই হবে, তোমাকে নিয়ে বিয়ের প্লানিং করা লাগবে আর শপিং ও তো করতে হবে। তাছাড়া তুমি না আসলে তোমার সাথে আর কোনো দিন কথা বলব না।
নাদিয়াঃ (একটু মুচকি হেসে বলল) আচ্ছা ঠিক আছে এতো রাগ করতে হবে না। বিয়েতে আমি যাবো, কথা দিলাম।
রনিঃ গুড গার্ল। ১৫ তারিখের অনলাইন এ টিকেট কেটে দিছি , তুমি সময় মতো স্টেশনে যাবে।
নাদিয়াঃ এতো তাড়াতাড়ি কেন? বিয়ে তো অনেক দেরি আছে। বিয়ের দু-এক দিন আগে যাবো।
রনিঃ হবে না। তোমাকে আগেই আসতে হবে।
নাদিয়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে, যাবো।এখন খুশি?
রনিঃ হুম, খুব খুশি।এই না হলে আমার সোনা বোন। ১৫ তারিখে দেখা হচ্ছে, আল্লাহ হাফেজ।
নাদিয়াঃ আল্লাহ হাফেজ।

রনি নাদিয়ার খালাতো ভাই। নাদিয়ার থেকে কয়েক মাসের বড়, কিন্তু ওদের মধ্যে সম্পর্কটা খুব গভীর। ওরা বেস্ট ফ্রেন্ড। দুজন দুজনের সাথে সব কিছু শেয়ার করে। রনির ভালোবাসার মানুষের সাথেই বিয়ে হচ্ছে, তাই রনি খুব খুশি।
এইদিকে নাদিয়া খুব খুশি তার ভাই এর বিয়ে নিয়ে, অনেক দিন পর নাদিয়ার মুখে হাসি দেখে তার বান্ধবীরা একটু অবাক। সবাই নাদিয়াকে জিজ্ঞেস করল কি হইছে যে আজ তোকে এতো খুশি লাগছে?

নাদিয়াঃ (জোরে হেসে বলল) খুশি হব না, পাগলটা এবার বান্ধনে পরবে কি মজা। ওর বিয়ে তাও ওর প্রেমিকার সাথে তাই আর কি।

সবাই রনির কথা জানে, তাই সবাই খুশি হইছে।

নাদিয়া সবাইকে কে উদ্দেশ্য করে বলল,
নাদিয়াঃ চল এখন রুমে যাই।
মিমঃ হুম চল।

নাদিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী। এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ার পরীক্ষা দিলো। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। সবার খুব আদরের মেয়ে। দেখতে খুব বেশি একটা সুন্দরী না শ্যামলা গায়ের রং কিন্তু মুখখানা পুরো মায়ায় ভরা। চার বছর ধরে সে খালামণির বাড়ি যায় না। শুধু মাঝে মাঝে তার নিজ বাড়িতে যায়। খুব একটা কারো সাথে বেশি কথা বলে না শুধু ভার্সিটিতে কয়েকজন বান্ধবী ছাড়া।

পড়ুন  মুখোশ – রহস্যময়, রোমান্টিক প্রেমের গল্প পর্ব ১৫ | মোনা হোসাইন

১৫ তারিখ, আজ নাদিয়া তার খালামনির বাসাই যাবে। ট্রেন ছাড়ার সময় সকাল ৯ টায়। তাই নাদিয়া সাড়ে আটটায় স্টেশনে পৌঁছালো। সে স্টেশনে বসে আছে এমন সময় তার আম্মু ফোন করে।
নাদিয়াঃ আসসালামু আলাইকুম আম্মু।
আম্মুঃ অলাইকুম আসসালাম। মা বের হইছিস?
নাদিয়াঃ হুম আম্মু। এখন স্টেশনে একটু পর ট্রেন ছারবে।
আম্মুঃ আচ্ছা মা, সাবধানে যাস। রাখলাম।
নাদিয়াঃ আচ্ছা আম্মু।

৯ টায় ট্রেন ছারলো। প্রায় ১০ ঘন্টা পর ৭ টায় ট্রেন রংপুর স্টেশনে এসে পৌছালো। ট্রেন থেকে নেমে দেখি রনি প্লাটফর্মে দাড়িয়ে আছে, আমাকে দেখতে পেয়েই সে আমার কাছে দৌড়ে চলে এলো।
রনিঃ (হাসি মুখে বলল) অবশেষে তুমি আসলে। তো মহারানি তোমার আসতে কোনো প্রব্লেম হয়নি তো?
নাদিয়াঃ (হাসতে হাসতে বলল) না, নতুন বর। আমার আসতে কোনো প্রব্লেম হয়নি।
রনিঃ চলো এবার বাসাই যাওয়া হোক।
নাদিয়াঃ হুম চলো।

তারপর দুজনে বাসাই চলে আসে। বাসাই আসতেই রুমানা বেগম (রনির আম্মু) দরজা খুলে দেয়। রুমানা বেগমকে দেখেই নাদিয়া দৌড়ে গিয়ে ওনাকে জড়িয়ে ধরে।
নাদিয়াঃ মনি কেমন আছো? (নাদিয়া খালামনি কে মনি বলে ডাকে)
রুমানা বেগমঃ (অভিমানী সুরে বলল) তুই কি আমাই ভালো রেখেছিস? সেই চার বছর আগে এসে চলে গেলি তারপর থেকে কত আসতে বললাম। এই চার বছর পর তোর আসার সময় হলো?
নাদিয়াঃ মনি এতো অভিমান করতে হবে না। এই দেখ আমি তো তোমার সামনে। আর চার বছরে তো ভিডিও কল এ কথা বলছি।
রুমানা বেগমঃ (মন খারাপ করে বলল) ভিডিও কল এ কথা বলা আর সামনে থেকে দেখা এক না। এটা যদি তুই বুঝতিস তাইলে আমার সাথে দেখা করতে ঠিক এ আসতিস।
নাদিয়াঃ (একটু কাদো কাদো হয়ে বলল) মনি এখন একদম ইমোশনাল কথা বলে আমায় কাদাবে না। আর আমার খুব ক্ষুধা পাইছে, খেতে দেও।
রনিঃ (হাসতে হাসতে বলল) আম্মু ওই রাক্ষসীটাকে খেতে দেও, বেচারী কত দিন থেকে যে খায় নি। দেখো মুখ খানা শুকাই গেছে।
নাদিয়াঃ আমাই একদম রাক্ষসী বলবে না। রাক্ষসী তোমার বউ।
রনিঃ আমার বউ তো অনেক কিউট। তোর মতো পেত্নি না।
নাদিয়াঃ (রাগী কন্ঠ নিয়ে বলছে) মনি তোমার ছেলে আমাই পেত্নী, রাক্ষসী বলছে।
রুমানা বেগমঃ আহহ.... রনি কি শুরু করলি? থাম এবার। নাদিয়া তুই ফ্রেশ হয়ে আয় আমি খাবার রেডি করি।
নাদিয়াঃ আচ্ছা মনি।( রনির দিকে তাকিয়ে মুখটা বাকা করে রুমে যায়)।

পড়ুন  রাগী স্যার যখন ডেভিল হাসবেন্ড শেষ পর্ব 21 | ছাএী শিক্ষকের খুনশুটি প্রেমের গল্প

রনিও নাদিয়া কথা শুনে হাসতে হাসতে নিজের রুমে যায়। একটু পর নাদিয়া খেতে আসে। রনিও চলে আসে। রুমানা বেগম দুজন কে খাবার বেরে দেয়। এদিকে নাদিয়া মামুন ইসলাম (রনির বাবা) কে দেখতে না পেয়ে রুমানা বেগম কে জিজ্ঞেস করে...
নাদিয়াঃ মনি, আসার পর থেকে ভালো বাবা কে দেখছি না। ভালো বাবা কোথায় গেছে? (নাদিয়া তার খালুকে ভালো বাবা বলে ডাকে)
রুমানা বেগমঃ তোর ভালো বাবা ব্যবস্যার কাজের জন্য চট্টগ্রাম গেছে দু- এক দিনের মধ্যে চলে আসবে।
নাদিয়াঃ ও....আচ্ছা।

তারপর তিনজন খাইতে বসে অনেক গল্প করে। খাইয়া শেষ করে নাদিয়া রুমে যায়। নাদিয়া খুব ক্লান্ত তাই বিছানায় শুতেই ঘুমিয়ে পরে। রনি বিয়ের প্লানিং করার জন্য নাদিয়ার রুমে এসে দেখে সে ঘুমাচ্ছে। রনি নাদিয়া কে না জাগিয়ে লাইট অফ করে নিজের রুমে যায়। পরের দিন নাদিয়া সকালে উঠে রুমানা বেগম এর কাছে যায়।
নাদিয়াঃ মনি কি করছো?
রুমানা বেগমঃ রান্না করছি। তুই এতো তারাতাড়ি উঠলি কেন?
নাদিয়াঃ জাগা পাইছি তাই। তোমায় হেল্প করি?
রুমানা বেগমঃ থাক তাকে হেল্প করতে হবে না। আমি একাই পারব। তুই গিয়ে বস।

রনি ঘুম থেকে উঠে নি দেখে নাদিয়া রনির রুমে যায় ওকে জাগানোর জন্য। নাদিয়া একটু দুষ্টুমি করে রনির গায়ে পানি ঢেলে দেয়।পানি দেয়ার সাথে সাথে রনি লাফ দিয়ে উঠে। রনি তাকে মারার আগেই নাদিয়া হাসতে হাসতে রুম থেকে বাহিরে দৌড়ে যায়। রনি ফ্রেশ হয়ে খেতে আসে।খাওয়া শেষ করে সবাই বিয়ের প্ল্যান করতে বসে। এসময় রুমানা বেগম নাদিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে....
রুমানা বেগমঃ নাদিয়া তুই আর রনি দুজন গিয়ে বিয়ের শপিং কর।
নাদিয়াঃ কেন মনি, তুমি যাবে না আমাদের সঙ্গে?
রুমানা বেগমঃ নারে, তোরাই যা আর আমার শরীরটা ভাল নেই আমি ওসব ঘুরতে পারবো না।

নাদিয়া আর রনি আর কথা বাড়ালো না।তারা দুজনে শপিং করতে গেল। প্রচুর কেনাকাটা করলো। এদিকে রনি তার প্রিয় বোনের মানে নাদিয়ার জন্য নাদিয়ার অজান্তেই একটা শাড়ি কেনে। তারপর তারা একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে হালকা কিছু খেয়ে বাসায় যায়।
সবার সাথে নাদিয়ার এই কয়টা দিন ভালোই কাটছে। দেখতে দেখতে রনির গায়ে হলুদের দিন চলে আসলো। সব আত্বীয়- স্বজনরা এসেছে। নাদিয়ার আম্মুও এসেছে।
গায়ে হলুদে নাদিয়া হলুদ লাল আর সাদা মিশ্রণ কালারের একটা জামা পরছে, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক চোখে কাজল। দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে। গায়ে হলুদে নাদিয়া সহ সবাই অনেক মজা করল। খুব শান্তিপূর্নভভাবে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান সম্পুর্ন হলো। মধ্যরাত পর্যন্ত সবাই আড্ডা দিল।

পড়ুন  বেপরোয়া ভালোবাসা – পর্ব ৪৯ রোমান্টিক গল্প | মোনা হোসাইন

আজ রনির বিয়ে। সবাই সাজগোছ নিয়ে ব্যস্ত। নাদিয়া একটা সুন্দর জামা পরে বাহিরে আসছে। রনি নাদিয়ার কাছে এসে বলছে...
রনিঃ এটা কি পরছো?
নাদিয়াঃ কেন? সুন্দর লাগছে না?
রনিঃ একদম ভালো লাগছে না।

নাদিয়ার মুখটা নিমিষেই মলিন হয়ে গেলো। কারন সে দেখতে বেশি সুন্দরী না।
রনি তার রুম থেকে একটা বক্স এনে নাদিয়ার হাতে দেয়।
নাদিয়াঃ (একটু অবাক হয়ে বলে) এটা কি?
রনিঃ (একটু মুচকি হেসে বলে) সারি। যাও এখনি এই সারি পরে আসো।
নাদিয়াঃ আমি সারি পরব না। সারি পরতে ভালো লাগে না।
রনিঃ (একটু রাগ করে বলল) কোনো কথা শুনবো না। আমার বিয়েতে তুমি এই সারি পরেই যাবে। যাও চেঞ্জ করে আসো।

ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও নাদিয়া সারি পরে নেয়। কারণ সে তার ভাই এর বিয়ের দিন ভাইকে মন খারাপ দেখতে চায় না।
লাল সারি, হাতে চুরি চোখে কাজল ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর চুলগুলো খোলা রাখছে। দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। সবাই তাড়া দিচ্ছে বের হওয়ার জন্য। নাদিয়া তাড়াতাড়ি করে বের হতে গিয়ে কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যেতে ধরলেই কেউ একজন পেছন থেকে তাকে ধরে ফেলে। নাদিয়া নিজেকে সামলে পিছনে তাকাতেই তার চোখ পানিতে ভরে যায়।.........

পরবর্তী পর্বের জন্য ক্লিক করুন :>> চলবে

Writer :- বিতাস প্রামানিক

Leave a Comment

Home
Stories
Status
Account
Search