অপূর্ণ ভালোবাসা
Bitas Pramanik { Part 4 }
শুভ নাদিয়াকে এতোটাই মুগ্ধ হয়ে দেখছে যে নাদিয়া ওর কাছে চলে আসে সেটা ও বুঝতেই পারে নি।
নাদিয়াঃ কি হলো? এভাবে কি দেখছো?
শুভঃ আমার হবু বউকে দেখছি। ডিস্টার্ব করো না তো। কি মায়াবী লাগছে দেখতে। মনে হচ্ছে আজকের দিনটা আমার ভালোই কাটবে।
নাদিয়াঃ হইছে আর পাম দেওয়া লাগবে না। আমি জানি আমাই দেখতে ভুতের মতো লাগে।
শুভঃ চুপ। জ্বী না, আমার হবু বউ দেখতে খুবই মায়াবী। এই মায়াবী মুখ খানা দেখেই তো প্রেমে পরেছি।
নাদিয়াঃ হইছে। আচ্ছা বলো এবার কোথায় নিয়ে যাবে?
শুভঃ হুম। বসো।
নাদিয়া বাইকের পেছনে বসে। প্রায় ১ ঘন্টা যাওয়ার পর শুভ একটা মসজিদের সামনে দাঁড়ায়।
শুভঃ নামো এখন। আমরা পৌঁছে গেছি।
নাদিয়াঃ (অবাক হয়ে চারপাশে তাকিয়ে দেখছে) এটা তো মসজিদ। এখানে কেন নিয়ে আসলে?
শুভঃ এটা শুধু মসজিদ না। ভিতরে একটা ছোট মাজার আছে। জায়গাটা খুব নিরিবিলি আর সুন্দর জায়গা।
নাদিয়াঃ তা ঠিক বলছো। অনেক সুন্দর লাগছে।
তারা কথা বলতে বলতে ভেতরে যায়। ভিতরে একপাশে মসজিদ আর অন্য পাশে ছোট একটা মাজার। একটা বিশাল বট গাছ। ওরা একটু এগিয়ে যেতেই একটা ছেলে শুভকে বলে....
অনিকঃ কিরে তুই এখন আসলি? আমি কতক্ষণ থেকে দাড়িয়ে আছি।
শুভঃ সরি ভাইয়া। একটু দেরি হয়ে গেলো।
নাদিয়া কিছু বুঝতে পারছে না। অ শুধু এসব কান্ড চুপচাপ দেখছে।
অনিকঃ এই বুঝি নাদিয়া?
শুভঃ হুম। (নাদিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে) আমার খালাতো ভাই অনিক ভাইয়া। যার কথা তোমাই বলেছিলাম।
নাদিয়াঃ (অনিককে উদ্দেশ্য করে বলে) আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
অনিকঃ ওওয়ালাইকুম আসসালাম। আচ্ছা আমরা পরে কথা বলি (তাড়া দেখিয়ে বলে)। (এবার রনিকে উদ্দেশ্য করে বলে) তুই ওকে সব বলেছিস?
নাদিয়াঃ কি বলবে ভাইয়া? আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না।
অনিকঃ (একটু মুচকি হেসে বলে) তোরা কথা বল আমি ওই দিকে আছি।
এই বলেই অনিক একটু দূরে চলে যায়। নাদিয়া এবার রেগে গিয়ে বলে....
নাদিয়াঃ কি করতে চাইছো? আর এখানে কেন নিয়ে আসলে? আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না।
শুভঃ আমার কথা শোনো। এতো রাগ করো না।
নাদিয়াঃ হুম শুনছি বলো।
শুভঃ আজ আমরা বিয়ে করছি?
নাদিয়াঃ (অবাক হয়ে বলে) কি বলছো এসব? বিয়ে কি ছেলেখেলা কি যে চাইলেই বিয়ে করবে। তাছাড়া আমরা তো চাইছিলাম পারিবারিক ভাবে বিয়ে করতে তাইলে হঠাৎ এসবের মানে কি?
শুভঃ আমার পুরো কথা শোনো।
নাদিয়াঃ (রেগে গিয়ে বলে) কি শুনবো? তুমি বলেছো তোমার পরিবার রাজি তুমি যা বলবে তাই হবে। তাইলে এখন বিয়ের কথা আসছে কই থেকে?
শুভঃ হুম। আমার পরিবার রাজি আছে। আর তোমার পরিবার এখনো কিছু জানে না। আমার বিশ্বাস আমরা তাদের মানিয়ে নিতে পারবো। কিন্তু আমি এখন শুধু বিয়ে করতে চাই। এই বিয়ের কথা আমি তুমি আর অনিক ভাইয়া ছাড়া কেউ জানবে না। তারপর পারিবারিক ভাবে আবার ধুমধামে বিয়ে করব।
নাদিয়াঃ না। আমি এভাবে বিয়ে করতে পারবো না। আমি আব্বু আম্মুর একমাত্র মেয়ে তারা জানলে খুব কষ্ট পাবে।
শুভঃ কেউ জানতে পারবে না। কারণ আমরা সঠিক সময় না আসা পর্যন্ত কাউকেই জানাবো না। আর অনিক ভাইয়া কাউকেই বলবে না।
নাদিয়াঃ আচ্ছা তাইলে আমরা বিয়ে করব কেন? আমরা তো পপরিবারকে মানিয়ে বিয়ে করতে পারবো।
শুভঃ আসলে আমি চাই আমাদের সম্পর্কটার একটা নাম দিতে চাই। আমি চাই আমি তোমার হাতটা ধরলেও সেই ছোয়াও যেনো পবিত্র হয়। আমি চাই না বিয়ের আগে তোমার হাত ধরে তোমাই অপবিত্র করতে চাই না। আমি পবিত্রতার সাথে তোমায় ছুতে চাই। প্লিজ এই বিয়ে করো।
নাদিয়াঃ (শুধু কান্না করছে আর বলছে) কিন্তু আব্বু আম্মু জানলে খুব কষ্ট পাবে।
শুভঃ কেউ জানতে পারবে না। এতো ভেবো না। আমার জন্য প্লিজ।
নাদিয়াঃ ঠিক আছে।
নাদিয়া আর কিছু বলে না। সে বুঝতে পারে শুভ যা বলছে ঠিকই বলছে। তাদের ভালোর জন্যই তো সে বিয়ে করতে চাইছে।
এরপর তাদের বিয়েটা ইসলামের শরিয়ত মেনে বিয়ে করে। তাদের বিয়েটা সামাজিক নিয়ম মেনে হয় না। তাদের রেজিস্ট্রারি হয় না শুধু ইসলামের নিয়ম মেনে বিয়ে হয়। সমাজের চোখে তারা এখনো অবিবাহিত।
বিয়ে ভালো ভাবে সপন্ন হয়। তারপর শুভ অনিক আর নাদিয়া মিলে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে খেয়ে নেয়। তারপর সারাদিন তারা ঘুরে বেড়ায়। সন্ধায় শুভ নাদিয়াকে হোস্টলে নামিয়ে দেয়। নাদিয়ার চোখে পানি। সে দেখে শুভ বলে।
শুভঃ এই পাগলী, কাদছো কেন?
নাদিয়াঃ জানি না।
শুভঃ তুমি জানো না তোমার চোখের পানি আমি দেখতে পারি না। তাও কেনো কাদছো?
নাদিয়াঃ আর কাদবো না।
শুভঃ গুড গার্ল। তোমার চোখে পানি দেখার জন্য আমি তোমায় বিয়ে করি নি।
নাদিয়াঃ আচ্ছা হোস্টেলে যাও এখন।
শুভঃ হুম। নিজের খেয়াল রেখো।
নাদিয়াঃ হুম, তুমিও। আর সাবধানে বাইক চালাবে।
শুভঃ আচ্ছা মহারানী।
এই বলে শুভ চলে যায়। হোস্টেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। একটু পর নাদিয়া ফোন দেয়। কথা বলতে বলতে অনেক রাত হয়ে যায়। তারপর তারা ঘুমিয়ে পরে।
ভালোই কাটছে তাদের দিন। কিছুদিন যাওয়ার পর এইচএসসি পরীক্ষার জন্য নাদিয়া আর শুভর কলেজ বন্ধ দিয়েছে। নাদিয়া এই ছুটি কাটাতে বাড়িতে যাবে। আর শুভও বাড়িতে যাবে। দুজনে অনেক খুশি যে তারা অনেকদিন পরে বাড়ি যাবে। আর অন্য দিকে তাদের মন খারাপ। ছুটি কাটাতে বাড়িতে গেলে তাদের আর দেখা হবে না। এভাবে সুন্দর মুহূর্ত উপভোগ করতে পারবে না। তবুও মন খারাপ নিয়েই দুজনেই বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাল সকালে নাদিয়া আর শুভ বাড়ি চলে যাবে। পরের দিন সকালে নাদিয়া বাসস্ট্যান্ড এ বাসের জন্য অপেক্ষা করছে এমন সময় শুভ আসে। নাদিয়া দেখে একটু অবাক হয়। কারণ শুভর আগে যাওয়ার কথা ছিলো।
নাদিয়াঃ শুভ তুমি এখানে? তোমার তো আমার আগে যাওয়ার কথা ছিলো।
শুভঃ হুম, ছিল। ভাবলাম বউকে বাসে উঠে দিয়ে আমি চলে যাবো।
নাদিয়াঃ কিন্তু আমি তো একা যেতে পারবো।
শুভঃ জানি।কিন্তু আমার বউ আমার তো কিছু দায়িত্ব আছে।
নাদিয়াঃ (হাসতে হাসতে বলে) বর হওয়ার শখ হইছে।
শুভঃ হুম। শোনো গিয়ে ফোন দিবা।
নাদিয়াঃ আচ্ছা দিবো।
শুভঃ আর প্রতিদিন ভিডিও কল এ কথা বলা লাগবে।
নাদিয়াঃ প্রতিদিন কিভাবে? আম্মু যদি বুঝতে পারে?
শুভঃ আমি ওতো কিছু জানি না। প্রতিদিন কথা বলতে হবে। খুব মিস করবো এই কদিন।
নাদিয়াঃ আমিও।
শুভঃ I love you...
নাদিয়াঃ (শুনে মুচকি হেসে শুভর কানের কাছে গিয়ে বলে) I love you too...
শুভ উত্তর পেয়ে তো মহাখুশি। তারা দুজন কথা বলতে থাকে এর মাঝেই নাদিয়ার বাস চলে আসে। বাস আসা দেখে শুভর মুখের হাসি বিলীন হয়ে যায়। নাদিয়া শুভর থেকে বিদায় নিয়ে বাসে উঠে। বাস ছেড়ে দেয়। তারপর শুভও তার বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা হয়।
প্রায় ৩ ঘন্টা পর নাদিয়া বাড়ি যায়। তাদের বাড়ি গ্রামের মধ্যে। শুভ অনেক আগেই বাড়ি পৌঁছাছে। কারণ শুভর যেতে প্রায় ২ ঘন্টা লাগে। বাড়ি গিয়ে শুভ নাদিয়ার ফোনের অপেক্ষা করে। আর এইদিকে নাদিয়া বাড়ি পৌঁছে আগে শুভকে কল করে।
নাদিয়াঃ হ্যালো।
শুভঃ পৌঁছাছো?
নাদিয়াঃ হুম এখনই আসলাম।
শুভঃ আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে নেও।
নাদিয়াঃ আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে কথা বলছি।
শুভঃ হুম।
এই বলে শুভ ফোন কেটে দেয়। নাদিয়া ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নেয়। তারপর শুভর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে। নাদিয়ার চাচাতো বোন আছে নাম অনিকা। অনিকা আর নাদিয়া সমবয়সী। অনিকা গ্রামের বাড়িতেই থাকে। নাদিয়ার আসার কথা শুনে অনিকা দেখা করতে আসে। তারপর দুজন অনেক্ক্ষণ আড্ডা দেয়।
অনিকাঃ চল ঘুরে আসি। তুই যে কদিন আছিস সব জায়গায় ঘুরতে যাবো।
নাদিয়াঃ আসছি বাড়িতে থাকবো। কোথাও যাবো না।
অনিকাঃ দেখ তোকে যেতেই হবে। নইলে আমি বড়আব্বু আর বড় আম্মুকে বলে দিব।তখন তো যেতেই হবে।
নাদিয়াঃ ঠিক আছে, তবে আজ না কাল থেকে ঘুরবো।
অনিকাঃ (খুশিতে নাদিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে) এই না হলে আমার বোন।
তারপর তারা আরও অনেক কথা বলে। অনিকা রাতে নাদিয়ার কাছেই থাকলো। পরের দিন বিকালে নাদিয়া আর অনিকা ঘুরতে বের হয়। বাড়িতে নাদিয়ার দিন ভালোই কাটছে। শুভর সাথেও কথা বলে। এভাবে প্রতিদিন তারা কোথাও না কোথাও যায়। কয়েকদিন যাওয়ার পর নাদিয়া খেয়াল করে তাদের গ্রামের দুইটা ছেলে তাদের পিছু নেয়। নাদিয়া আর অনিকা যেখানে যায় সেই দুটা ছেলেও সেখানে যায়। নাদিয়া অনিকাকে এই বিষয়ে বলে।
নাদিয়াঃ অনিকা খেয়াল করেছিস আমরা যেখানে যেখানে যাই পলাশ আর জনি (ওই দুটো ছেলের নাম) সেখানে যায়। ব্যাপার কি?
অনিকাঃ বুঝতে পারছি না তো।
নাদিয়াঃ বুঝতে পারছেন না নাকি বলতে চাইছেন না? ব্যাপার কি হুম?
অনিকাঃ আরে বাবা তুই যা ভাবছিস তেমন কিছু না। তোর কথা শুনে আমিও ভাবছি এরা আমাদের পিছু নেয় কেন?
নাদিয়াঃ তেমন কিছু না হলে তো বিষয়টা তো খুব সিরিয়াস।
অনিকাঃ এতো ভাবিস না তো। ওরা এই এলাকার ছেলে এই এলাকাতেই তো ঘুরবে।
নাদিয়াঃ নারে আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা গোলমাল আছে।
অনিকাঃ এসব বাদ দে। এনজয় কর।
নাদিয়াঃ (চিন্তিত হয়ে বলে) আচ্ছা।
কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে তারা বাড়ি আসে। বাড়ি এসে নাদিয়া ওর আম্মুকে সব বলে। ওর আম্মু বলে
আম্মুঃ টেনশন করিস না। ওরা গ্রামের ছেলে এই এলাকাতেই তো থাকবে ঘুরবে।
নাদিয়াঃ না আম্মু, আমার বিষয়টা ভালো লাগছে না।
আমি খেয়াল করেছি আমরা যেখানে যাই ওরাও সেখানে যায়।
আম্মুঃ এতো ভাবিস না তো।
নাদিয়া ওর আম্মুর কথা শুনে একটু চিন্তামুক্ত হলো।
আরও কয়েকদিন খেয়াল করলো ছেলে দূটো তাদের পিছু নেয়। এরপর কয়েকদিন যাওয়ার পর পলাশ এসে নাদিয়াকে বলে।
পলাশঃ নাদিয়া তোমাকে জনি কিছু বলতে চাই।
নাদিয়াঃ (রেগে বলে) আপনারা আমাদের পিছু নেন কেন? আমরা যেখানে যাই সেখানে যান কেন?
পলাশঃ বুঝতে পারো না। আচ্ছা না বুঝলে জনি বুঝাই দেবে কেনো পিছু নেওয়া হয়।
এর মাঝেই জনি আসে। হাতে কিছু গোলাপ আর একটা গিফট বক্স নিয়ে। জনির আসা দেখেই নাদিয়া রাগে যায়। সে বুঝতে পারে এখানে কোনো সমস্যা হতে পারে তাই সে অনিকার হাত ধরে সরে আসতেই জনি নাদিয়া আর অনিকার পথ আটকায়। জনি তাদের যাওয়ার পথে নাদিয়ার সামনে গিয়ে বলে
জনিঃ নাদিয়া আমি তোমাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসেছি। তাই তোমার পেছনে ঘুরঘুর করি যাতে তোমায় কেউ বিরক্ত করতে না পারে। আমি সরাসরি বলতে চাই। Will you marry me?
এই কথা শোনার পর নাদিয়ার মাথা গরম হয়ে যায়। সে জনিকে জোরে চর মারে........