অপূর্ণ ভালোবাসা
Bitas Pramanik{ Part 2 }
এর মাঝে নাদিয়ার আম্মু এসে বলে
আম্মুঃ মা তুই ঠিক আছিস তো?
নাদিয়াঃ হুম, ঠিক আছি।
এদিকে নাদিয়ার চোখে ছলছল করছে পানি, কখন যে ঝরে পড়ে। তাই নাদিয়া কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে রুমে চলে যায়। রনি এসব দেখে সব বুঝতে পারে। রুমে গিয়ে নাদিয়া অঝরে কান্না শুরু করে। এতো দিন পর সেই মানুষকে আবার দেখতে পাবে সে কখনো ভাবেও নি। নাদিয়া সব কিছু ভুলে ভালো থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু আবার দেখা হয়ে ওর সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো।
আর এদিকে নাদিয়ার আম্মু ছেলেটিকে ধন্যবাদ জানায়।
রিনি বেগম (নাদিয়ার আম্মু) ঃ ধন্যবাদ বাবা। তুমি সময় মতো নাদিয়াকে না ধরলে কোনো বিপদ হয়ে যেত। শুভঃ ধন্যবাদ দিচ্ছেন কেনো আন্টি? আমি তো আপনার ছেলের মতো।
এর মাঝেই একটা মেয়ে এসে শুভ কে ডাক দেয়
মিথিলাঃ এইখানে কি করছো? আমি ওইদিকে একা একা দাঁড়িয়ে আছি কাউ কে তেমন চিনিও না।
শুভঃ সরি। আসলে আন্টির সাথে কথা বলছিলাম।
মিথিলাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।
শুভ নাদিয়ার আম্মু কে মিথিলার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।
শুভঃ আন্টি এই হচ্ছে আমার ওয়াইফ, মিথিলা। আর মিথিলা উনি হচ্ছেন রনির খালামনি।( রিনি বেগম কে দেখিয়ে বলেন)।
তারপর মিথিলা শুভ আর রিনি বেগম গল্প করতে থাকেন।
নাদিয়ার চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরে যাচ্ছে। সে কাউ কে কিছু বলতে পারছে না আর না পারছে নিজেকে সামলাতে। ওর কষ্টটা কাউকে বলতে পারছে না। এর মাঝে সে নিজে নিজে ঠিক করল বিয়েতে যাবে না। রনি নাদিয়ার রুমে যায়। নাদিয়া রনিকে দেখেই চোখের পানি মুছে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে।
রনিঃ তুমি কাদছো কেন?
নাদিয়াঃ (ভেজা ভেজা কন্ঠে)কই না তো, কাদছি না।
রনিঃ আমি দেখতে পারছি তোমার চোখে পানি। চোখের পানি মুছে মুচকি হাসলেই কষ্ট আড়াল করা যায় না। আমি বুঝতে পারছি তুমি কেন কাদছো.....
নাদিয়াঃ (অন্যদিকে তাকিয়ে বলল) কি বলছো এসব? আসলে চোখে মনে হয় কিছু একটা পরেছে তাই পানি বের হইছে।
রনি আর কথা বাড়ালো না। সে নাদিয়াকে বলল
রনিঃ চলো, সবাই অপেক্ষা করছে। এখনি বেরোতে হবে নইলে দেরি হয়ে যাবে।
নাদিয়াঃ রনি আমার শরীরটা ভালো লাগছে না, আমি যেতে চাইছি না।
রনিঃ (রেগে গিয়ে বলল) যেতে চাইছি না মানে কি? তুমি আমার বোন তোমাকে যেতেই হবে। আমি কোনো কথা শুনবো না তুমি ফ্রেশ হয়ে চলো এখনি।
নাদিয়াঃ............ (কোনো কথা না বলে চুপচাপ বসে আছে)
রনিঃ (ধমকের সুরে) কি হলো এখনো বসে আছো? তোমাই ফ্রেশ হতে বললাম তো।
নাদিয়াঃ............. (এবারও চুপচাপ বসে আছে)
রনিঃ (এবার শান্ত গলায় বললো) দেখো নাদিয়া, শুভ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আর তুমি তো আমাকে বলেছো ওর সাথে যেনো বন্ধুত্ব নষ্ট না করি। যা হইছে ভুলে যাও প্লিজ। প্লিজ চলো।
নাদিয়া কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। তাই সে রনির কথাই রাজি হয়ে যায়।
নাদিয়াঃ তুমি যাও, আমি আসছি।
রনিঃ (খুশি হয়ে বলল) এইতো আমার লক্ষী বোন। ১০ মিনিট সময় দিলাম তাড়াতাড়ি আসো।
নাদিয়াঃ হুম।
এর পর নাদিয়া অনিইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যেতে রাজি হয়। কারন সে রনিকে মন খারাপ দেখতে চায় না। কিছুক্ষণ পর সবাই কনের বাড়ির দিকে রওনা হবে। একটা গাড়িতে রনি সহ তার বন্ধু- বান্ধবীরা বসে। নাদিয়া অন্য গাড়িতে উঠতে চাইলে রুমানা বেগম বলে....
রুমানা বেগমঃ তুই রনির সাথে যা। ওর প্রিয় বোন যদি ওর সাথে থাকলে ওর ভালো লাগবে। তাছাড়া আর এই বুড়া-বুড়ি দের মাঝে তুই কি করবি?
নাদিয়াঃ মনি তোমাদের সঙ্গে যাই। তাছাড়া রনির সাথে ওর বন্ধুরা আছেই।
রুমানা বেগমঃ না। রনির সাথে যাবি।
নাদিয়া আর কথা বারালো না। চুপচাপ রনির পাশে গিয়ে বসল। কেউ নাদিয়ার ক্লষ্টটা বুঝতে চাইছে না। ওর কতটা কষ্ট হচ্ছে ও নিজেই বুঝতিছে।
গাড়ি আপন মনে চলছে। আর এদিকে নাদিয়ার চোখ ছলছল করছে। সে পুরানো দিনের কথা ভাবছে। সেই সময়ের কথা যে সময়টা তার জীবন এলোমেলো করে দিছে।
কয়েক বছর আগে নাদিয়া ক্লাস নাইনে বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে খালামনির বাড়ি যায়। কয়েকদিন পর তার খালামনি আর ভালো বাবা একটা ছোট ঘরোয়া অনুষ্ঠান করে। সেখানে তাদের কিছু আত্বীয়- স্বজন আর রনির কয়েকজন বন্ধুদের দাওয়াত দেওয়া হয়। রনির সব বন্ধু সময় মতো আসলেও একটা বন্ধু আসতে দেরি করে। এইদিকে রনি তো রেগে আগুন হয়ে যাচ্ছে। রনি তার বন্ধুকে ফো্ন করতে যাবে ঠিক তখনি তার বন্ধু এসে হাজির।
শুভঃ রনি।
রনিঃ (রেগে গিয়ে বলল) তোর এখন আসার সময় হলো? কখন থেকে অপেক্ষা করছি।
শুভঃ সরি রে দোস্ত। আসলে আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম। এখন তো এসেছি আর রাগ করিস না।
রনিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। যা তোকে মাফ করে দিলাম বৎস। ( বলেই সবাই হাসা শুরু করে দিল)
নাদিয়া একটা সুন্দর সাদা কালার এর জামা পরে রুমানা বেগম এর পাশে দাড়িয়ে আছে আর রুমানা বেগম সবার সাথে কথা বলছে। নাদিয়া কি করবে বুঝতে পারছে না। রনি তার ববন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছে তাই বাধ্য মেয়ের মতো খালামনির সাথে আছে।
শুভ, রনি আর তার বন্ধুরা হাসাহাসি করছে। এর মাঝেই শুভর চোখ একটা মেয়ের উপর পরে। মেয়েটাকে দেখে সে আর চোখ ফেরাতেই পারছে না। মেয়েটার কি সুন্দর মায়াবী চোখ, ঠোঁটের মিষ্টি হাসি যেনো শুভর মনে জায়গা করে নেয়। মেয়েটার হাসি দেখে শুভর মুখেও বাকা হাসি চলে আসে। শুভর বন্ধুরা খেয়াল করে শুভ কাউকে দেখছে আর তার মনটা সেই দিকে পরে আছে। শুভর এক বন্ধু তামিম শুভকে অনুসরণ করে সেই দিকে তাকাই দেখে হ্যা শুভ একটা মেয়ের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তামিম শুভকে কয়েকবার ডাকদেয় কিন্তু সে শুনতে পায় না। তারপর তামিম শুভকে জোরে ধাক্কা দেয় তখন সে বাস্তবে ফিরে আসে।
শুভঃ (হকচকিয়ে বলে) এতো জোরে ধাক্কা দিলি কেন?
তামিমঃ তাকে কখন থেকে ডাকছি সারা দিস না।
শুভঃ ওহহ.... খেয়াল করি নি।
রনিঃ খেয়াল করিস নি মানে? এই তুই তো আমাদের সাথেই আছিস তাইলে তোর মন কথাই যে কাছে থেকেও কথা শুনতে পারিস না।
তামিমঃ মন কথাই মানে। আমরা এখানে কথা বলছি ছেলে ওই দিকে একটা মেয়ের দিয়ে তাকিয়ে আছে। এই প্রথম কোনো মেয়ের দিকে এতক্ষণ ধরে তাকাই ছিল।
শুভঃ (একটু লাজুক ভাব নিয়ে) আরে তামিমের কথাই পাত্তা দিস না তো। ও এমনি বলছে, আমি কারো দিকে তাকাই নি।
তামিমঃ এই একদম মিথ্যা বলবি না। (রুমানা বেগম কে দেখিয়ে বলে) তুই আন্টির পাশে দাড়িয়ে থাকা মেয়েটাকে দেখছিলি না আমি খেয়াল করছি।
রনিঃ এই দাড়া। কোন আন্টির পাশে রে?
তামিমঃ তোর মায়ের পাশে দাড়িয়ে আছে যে মেয়ে। সেই মেয়ের প্রেমে পোরেছে মনে হয়। নইলে শুভ কারো দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকবে যে মেয়েদের দিকে তাকায় না।
রনিঃ (একটু রেগে বলল) ওর দিকে একদম তাকাবি না। ও আমার বোন।
শুভঃ (অবাক হয়ে বলে) তোর বোন। তোর বোন হতেই পারে না। তোর মতো ফাজিল এর এতো মায়াবী মেয়ে বোন হতেই পারে না।
রনিঃ দেখ ও আমার খালাতো বোন। ওর দিকে নজর দিবি না।
তামিমঃ (রনির ঘাড়ে হাত রেখে বলল) তাইলে তো ভালোই হলো। রনি এখন সব ব্যাবস্থা করে দেবে। তাইনা রনি??
রনিঃ একদম না। আর এসব ভুলেও ভাবিস না। নাদিয়া এসব একদম পছন্দ করে না।
শুভঃ ( মুগ্ধ হয়ে বলে) নাদিয়া। অনেক সুন্দর নাম।
রনিঃ এই দাড়া। মাথার ভিতর থেকে এই ভূত সরা। আর নাদিয়া জানতে পারলে তোর সাথে আমাকেও জানে মারবে।
তামিমঃ বন্ধুর জন্য এটুকু করতে পারবি না। শুধু ওকে রাজি করাবি।
রনিঃ আমি এসব পারবো না।
শুভকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে সে নাদিয়াকে খুব পছন্দ করেছে। তারপর সব বন্ধুরা মিলে এসব নিয়ে হাসাহাসি করে। খাওয়া দাওয়া করে সবাই বিদায় নিয়ে বাসাই চলে যায়। নাদিয়া চুপ করে বসে আছে। এ সময় রনি আসে।
রনিঃ কি করছো পেত্নী?
নাদিয়াঃ আমাই একদম পেত্নী বলবে না। বন্ধুরা আসছে দেখে আমাই আর সময়ই দিলে না। এখানে তো কাউ কে চিনি না।
রনিঃ সরি বোন।
নাদিয়াঃ ঠিক আছে। এর পর থেকে এমন করলে তোমাদের বাসাই আর আসবই না।
তারপর দুজন বসে গল্প করে। রাতের খাবার খেয়ে যে যার রুমে ঘুমাতে যায়।
এদিকে রনির বেহাল অবস্থা। সব সময় নাদিয়ার সেই মায়াবী চোখ আর হাসি তার চোখে ভাসছে। ঘুমাতে গিয়েই একই অবস্থা। ঘুম আসছে না তার। তাই সে নিজের ফিলিংস আর আড়াল করতে পারলো না। সে তখনি রনিকে ফোন দেয়।
রনিঃ কিরে কি খবর?
শুভঃ আর খবর.... তোর বোনকে দেখার পর থেকে আমার সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। প্লিজ দোস্ত কিছু একটা কর।
রনিঃ আচ্ছা আমি দেখতিছি। এখন রাখলাম।
শুভঃ আচ্ছা।
পরেরদিন সকালে রনি নাদিয়াকে বলতে গিয়েও বলতে পারলো না। এদিকে শুভ রনিকে জ্বালিয়ে মারছে।
দুদিন পর নাদিয়া বাড়ি চলে যায়। এ কথা শুনে শুভর অনেক মন খারাপ হয়৷ সব বন্ধুরা রনির দোষ দেয় কেন রনি নাদিয়াকে শুভর কথা বলল না।
তামিমঃ (রনি কে উদ্দেশ্য করে বলে) তুই চাইলেই বলতে পারতিস। তাছাড়া শুভকে তো চিনিস। ও আমাদের থেকে আলাদা। আমাদের থেকে ভালো। তুই এটা ঠিক করলি না।
রনিঃ আমি বলতে পারি নি ঠিক এ কিন্তু শুভ তো বলতে পারবে। শুভ তুই নিজে ওকে তোর মনের কথা বলবি।
তামিমঃ হ্যা, এটাই সবচেয়ে ভালো হবে।
শুভঃ ভয় হয়। যদি রিজেক্ট করে।
রনিঃ এতো ভাবলে তোর এ জন্মে প্রেম করা হবে না। প্রথমে ফ্রেন্ডলি কথা বলিস।
তারপর রনির থেকে শুভ নাদিয়ার নাম্বার নেয়...........