অপূর্ণ ভালোবাসা
Bitas Pramanik { Part 6 / Last Part }
শুভর আম্মুঃ তোকে কিছু কথা বলার জন্য বাড়িতে ডাকলাম।
শুভঃ কি এমন কথা মা যার জন্য এখানে এসে শোনা লাগবে? ফোনে বলা জেতো না?
শুভর আম্মুঃ (রেগে বলে) না, ফোনে বলা যাবে না।
শুভঃ আচ্ছা কি কথা বলো?
শুভ আম্মুঃ তুই নাদিয়ার সাথে আর কোনো সম্পর্ক রাখবে না।
শুভর মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ে। তার মায়ের কথা শোনার পর সে অবাক হয়ে যায়। যে মা নাদিয়াকে এতো ভালবাসে সে কিভাবে এই কথা বলে?
শুভঃ মা কি বলছো এসব? নাদিয়াকে তো তুমিও পছন্দ করেছো। তাইলে এসব বলছো কেনো?
শুভর আম্মুঃ হ্যাঁ, পছন্দ করতাম। কিন্তু ওই মেয়েকে বিশ্বাস করে ভুল করেছি। একটা চরিত্রহীন মেয়ে৷
শুভঃ মা কি বলছো এসব? নাদিয়া এমন মেয়ে না, ও খুব ভালো মেয়ে মা।
শুভর আম্মুঃ দেখ শুভ, আমি ওই মেয়ের সব কথা শুনেছি। একটা চরিত্রহীন মেয়ে।
শুভঃ তুমি যা শুনছো তা সত্য না। মা, নাদিয়াকে ফাঁসানো হয়েছে। সব মিথ্যা মা।
শুভর আম্মুঃ গ্রামের প্রত্যেক মানুষ কেনো ওর নামে খারাপ কথা বলবে? ওই মেয়ে আসলেই চরিত্রহীন।
শুভঃ গ্রামের মানুষকে ভুল বোঝানো হয়েছে।
শুভর আম্মুঃ (রেগে বলে) ওই চরিত্রহীন মেয়ে আমার বাড়ির বউ কোনো দিনও হবে না।
শুভঃ মা, এমন বলো না। ওর কোনো দোষ নেই।
শুভর আম্মুঃ আমার কথা এখনও শেষ হয়নি। তুইও নাদিয়ার সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখবি না।
শুভঃ (কান্না করে বলে) মা প্লিজ এমন বলো না। তুমি তো জানো আমি নাদিয়াকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। ও যাই করুক না কেনো তাতে আমার কোনো প্রব্লেম নাই। আমি ওকে মেনে নিয়েছি মা, আর কিছু চাই না শুধু নাদিয়াকে চাই।
শুভর আম্মুঃ তোর প্রব্লেম না থাকলেও আমাদের আছে। আমাদের বাড়ির মান সম্মান নিয়ে আমি খেলা করতে দিবো না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি নাদিয়া এই বাড়ির বউ হবে না। আর এটাই শেষ কথা।
শুভঃ মা প্লিজ এমন বলো না।
শুভর আম্মুঃ আর তুমি যদি নাদিয়ার সাথে সম্পর্ক রাখো তাহলে আমার মরা মুখ দেখবে। এখন তুমি ঠিক করো তুমি কি চাও?
শুভঃ মা প্লিজ এমন করো না। নাদিয়া যেমন আমার কাছে ইম্পর্ট্যান্ট তোমরাও তেমনই ইম্পর্ট্যান্ট। আমি দুজন এর মাঝে একজনকে বেচে নিতে পারবো না।
শুভর আম্মুঃ আমার কথাই শেষ কথা। আমি আর কিছু শুনতে চাই না। আর তুমি যদি বেশি বারাবারি কর তাহলে তোমাকে অন্য কলেজে বদলি করাবো।
এই বলে শুভর আম্মু রুম থেকে চলে যায়। শুভ কাদছে। সে ভাবছে কিভাবে নাদিয়াকে বলবে যে তাদের আর সারাজীবন একসাথে এই পথ চলা হবে না। আর শুভই বা কি করে নাদিয়াকে ছাড়া থাকবে। সে যে নাদিয়াকে ছাড়া এক মুহূর্ত ভাবতে পারে না। আর সবচেয়ে বড় কথা নাদিয়া যে ওর বিয়ে করা বউ। কি করে তার এই দায়িত্ব থেকে পিছুটান নিবে। আর শুভর আম্মুও কোনো ভাবে মানছে না।
সারারাত শুভ ঘুমায় নি। এমনকি বাড়িতে এসে নাদিয়াকে একটা কলও করে নি। শুভ ফোন অফ করে রেখেছে। তাই নাদিয়া অনেক বার কল দিয়েও পায় নি। শুভ ফোন বন্ধ থাকায় নাদিয়ার খুব টেনশন হয়। এরকম কোনো দিন শুভ করে নি। সে যতো ব্যস্তই থাকুক না কেন নাদিয়ার ফোন সাথে সাথে রিছিভ করতো।
নাদিয়া শুভ দুজনেই সারারাত জেগে। দুজনেই সকাল হওয়ার অপেক্ষা করছে। খুব ভোরে শুভ কাউকে কিছু না বলেই চলে যায়। মেসে পৌঁছে সে ফোন অন করেই দেখে নাদিয়ার অনেক মেসেজ। সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। সে নাদিয়াকে একটা মেসেজ দেয়...
**নাদিয়া তোমার সাথে আর্জেন্ট কথা আছে৷ আমাদের সেই ফেভারিট জায়গায় আসো।**
মেসেজটা সেন্ড করেই সে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ে। নাদিয়া শুভর মেসেজ দেখে অনেক খুশি হয়। আর দেখা করতে চাওয়াতে সে আরও অনেক বেশি খুশি। কিন্তু নাদিয়ার মনে এক অজানা ভয় কাজ করছে। সে সব ভয় সরে ফেলে রেডি হয়ে সেই জায়গায় যায়। গিয়ে দেখে শুভ সেখানে আগে এসেই দাঁড়িয়ে আছে। নাদিয়া শুভর কাছে যায়।
নাদিয়াঃ আমি তোমার উপর রেগে আছি। কাল হুট করে ওভাবে বাড়ি চলে গেলে তার উপর গিয়ে একবার আমার খোঁজ নেও নি। আমার কথা কি মনে পরে না?
শুভঃ.............. (চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে)।
নাদিয়াঃ এমনকি ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছো। কেনো বাড়িতে কি এমন হইছে যে আমার সাথে কথা বলার সময় পাও নি।
শুভঃ (আবারও চুপ করে আছে)
নাদিয়াঃ কি হলো, কোনো কথা বলছো না কেনো? আমি এতো বকবক করে যাচ্ছি আর তুমি মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছো?
শুভঃ এবারও চুপচাপ.....
নাদিয়া এবার শুভর হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরে নেয়। শুভকে দেখে নাদিয়া থমকে যায়। শুভর চোখে পানি। নাদিয়া শুভকে কোনো দিন কাদতে দেখে নি। আজ তার চোখে পানি কেন? কি এমন হইছে বাড়িতে? নাদিয়ার মনে হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
নাদিয়াঃ কি হইছে? তোমার চোখে পানি কেন?
এই বলার সাথে সাথেই শুভ নাদিয়াকে জড়িয়ে ধরেই জোরে কান্না করে। এই প্রথম শুভ নাদিয়াকে জড়িয়ে ধরেছে। নাদিয়া কিছু বুঝতে পারছে না। সে শুভকে সামলানোর অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু শুভ কোনো কথার উত্তর না দিয়ে কেদেই যাচ্ছে।
নাদিয়াঃ কি হইছে? প্লিজ বলো। কান্না থামাও আগে আমার কসম।
শুভ কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে যায়। সে নাদিয়ার হাতটা ধরে।
নাদিয়াঃ কি হইছে? আজ এমন করছো কেন?
শুভঃ নাদিয়া, বাড়িতে সবাই তোমার কথা জেনে গেছে। আর সে জন্যই মা আমাকে ডেকেছিল।
নাদিয়া যে ভয়টা পাচ্ছিলো সেটাই হলো।
নাদিয়াঃ কি বললেন আন্টি?
শুভঃ..........................
নাদিয়াঃ চুপ করে আছো কেনো? বলো
শুভঃ আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। মা এমন একটা শর্ত দিয়েছে যেটা আমি কোনো দিন মানতে পারবো না।
নাদিয়াঃ কি শর্ত?
শুভঃ মা তোমাকে আমাদের বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নেবে না। শুধু তাই নয় আমি যদি তোমার সাথে সম্পর্ক রাখি তাহলে মায়ের মরা মুখ দেখতে হবে।
এই কথা শোনার পর নাদিয়ার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। এতো দিনের ভালোবাসা একটা ঘটনার জন্য শেষ হয়ে গেলো। কেউ তাকে বিশ্বাস করলো না। নাদিয়ার চোখ বেয়ে পানি পরে যাচ্ছে। সে কিছু বলতে পারছে না। কথা বলার শক্তি মনে হয় হারিয়ে ফেলেছে৷
দুজনেই নিরবে কেদেই যাচ্ছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। কিছুক্ষণ পর নাদিয়া চোখের পানি মুছে শুভর দিকে তাকায়।
নাদিয়াঃ কি করবে এবার? আন্টি তো এমন শর্ত দিয়েছে সেই শর্তের কাছে আমাদের বিয়েও কেউ মেনে নিবে না।
শুভঃ জানি না আমি কি করবো? মায়ের এমন দিব্বি দেওয়া আর আমি তোমাকে ছাড়াও একমুহূর্ত থাকতে পারবো না। এখন মনে হচ্ছে আমি এই দুনিয়ায় না থাকলেই সব সমস্যা সমাধান হবে।
নাদিয়াঃ (রেগে বলে) চুপ একদম চুপ। এই কথা মুখে
আনবে না। সব ভালোবাসা পূর্নতা পায় না। আমাদের ভাগ্যে এক সাথে পথ চলা নেই। শুধু একটাই আফসোস আমাদের বিয়ে প্রকাশ করতে পারবো না।
শুভঃ কেন? আমাদের বিয়ের কথা সবাইকে বলে দেই তাহলে তো আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে না।
নাদিয়াঃ কেউ বিশ্বাস করবে না। কারণ বিয়ের কোনো প্রমাণ নেই আমাদের। সবাই বলবে আমরা মিথ্যা বলছি।
শুভঃ আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমি এতো কিছু বুঝি না। আমার পাশে সবসময় তোমাকে চাই।
নাদিয়াঃ কথা দিলাম। সব সময় তোমার পাশে থাকবো। শুধু আমায় জানিও।
শুভঃ জানিও মানে? তুমি আমার কাছে থাকবে। কোথাও যাবে না।
নাদিয়াঃ পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করো। তোমাকে ছাড়া থাকতে আমিও পারবো না। কিন্তু এখন যে আমাদের আলাদা হতেই হবে। ভাগ্যে থাকলে আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে না। হয়তো আমাদের ভাগ্যে নেই। আমার কিছু ভালো লাগছে না বাসায় যাবো।
নাদিয়া এই বলে চলে যেতে ধরে। কিছুদূর গিয়ে আবার পিছন ফিরে বলে....
নাদিয়াঃ আমার সব স্মৃতি মুছে ফেলো। তাইলে কষ্ট কম হবে। ভালো থেকো. সারাজীবন তোমাকেই ভালোবাসবো। আসি....
নাদিয়ার কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। সে সোজা বাসায় ফিরে গিয়ে কান্না শুরু করে। আর শুভও ওখানে বসেই অঝোরে কান্না করে। পরিস্তিতির জন্য তাদের ভালোবাসা ত্যাগ করতে হয়। এভাবে তাদের ভালোবাসা অপূর্ণ থেকে যায়।
এসব ভাবতে ভাবতে তারা বিয়ে বাড়ি চলে আসে। বর মানে রনিকে বরের আসনে বসিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ে আল্লাহর রহমতে ভালো ভাবেই শেষ হয়।
শুভকে দেখার পর থেকেই নাদিয়ার ভিতরের কষ্ট বেড়ে যায়। সে এই কষ্ট সহ্য করতে পারে না তাই নাদিয়া ঠিক করে আজ রাতেই সে ঢাকা ফিরবে। সে অনুযায়ী নাদিয়া অনলাইন এ ট্রেনের টিকিট কাটে। তার আম্মুকে জানায় যে খুব জরুরি কাজের জন্য তাকে আজ রাতেই জেতে হবে। সে কথা শুনে তার আম্মু মানা করে না।
বাড়ি ফিরে নাদিয়া ব্যাগ গুছালে সবাই তাকে যেতে মানা করে কিন্তু সে কারো কথা শুনে না। এমনকি রনির কথাও না, সে জন্য রনি তার উপর খুব অভিমান করেছে।
সে রাতে স্টেশনে যায়। শুভ কিভাবে যেনো নাদিয়ার যাওয়ার খবর পেয়ে স্টেশনে যায়।
শুভঃ আর দেখা হবে না?
নাদিয়াঃ আমি চাই না আর দেখা হক। দেখা হলে কষ্টটা বেড়ে যায়। আমি আর নতুন করে কষ্ট পেতে চাই না।
শুভঃ বিয়ে করো নি কেন?
নাদিয়াঃ নিজেকে নিয়ে এতো ব্যাস্ত যে সময় হয়ে উঠে নি।
শুভঃ ব্যাস্ত? নাকি আজও ভালোবাসো?
নাদিয়াঃ জানি না।
এর মাঝেই ট্রেন চলে আসে। নাদিয়া ট্রেনে উঠার সময় বলে।।
নাদিয়াঃ নতুন জীবন ভালো ভাবে কাটাবে। ভালো থেকো।
এই বলে কাদতে কাদতে সে চলে যায়। আর শুভও কাদতে থাকে।
সমাপ্ত......
শুভর আম্মুঃ তোকে কিছু কথা বলার জন্য বাড়িতে ডাকলাম।
শুভঃ কি এমন কথা মা যার জন্য এখানে এসে শোনা লাগবে? ফোনে বলা জেতো না?
শুভর আম্মুঃ (রেগে বলে) না, ফোনে বলা যাবে না।
শুভঃ আচ্ছা কি কথা বলো?
শুভ আম্মুঃ তুই নাদিয়ার সাথে আর কোনো সম্পর্ক রাখবে না।
শুভর মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ে। তার মায়ের কথা শোনার পর সে অবাক হয়ে যায়। যে মা নাদিয়াকে এতো ভালবাসে সে কিভাবে এই কথা বলে?
শুভঃ মা কি বলছো এসব? নাদিয়াকে তো তুমিও পছন্দ করেছো। তাইলে এসব বলছো কেনো?
শুভর আম্মুঃ হ্যাঁ, পছন্দ করতাম। কিন্তু ওই মেয়েকে বিশ্বাস করে ভুল করেছি। একটা চরিত্রহীন মেয়ে৷
শুভঃ মা কি বলছো এসব? নাদিয়া এমন মেয়ে না, ও খুব ভালো মেয়ে মা।
শুভর আম্মুঃ দেখ শুভ, আমি ওই মেয়ের সব কথা শুনেছি। একটা চরিত্রহীন মেয়ে।
শুভঃ তুমি যা শুনছো তা সত্য না। মা, নাদিয়াকে ফাঁসানো হয়েছে। সব মিথ্যা মা।
শুভর আম্মুঃ গ্রামের প্রত্যেক মানুষ কেনো ওর নামে খারাপ কথা বলবে? ওই মেয়ে আসলেই চরিত্রহীন।
শুভঃ গ্রামের মানুষকে ভুল বোঝানো হয়েছে।
শুভর আম্মুঃ (রেগে বলে) ওই চরিত্রহীন মেয়ে আমার বাড়ির বউ কোনো দিনও হবে না।
শুভঃ মা, এমন বলো না। ওর কোনো দোষ নেই।
শুভর আম্মুঃ আমার কথা এখনও শেষ হয়নি। তুইও নাদিয়ার সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখবি না।
শুভঃ (কান্না করে বলে) মা প্লিজ এমন বলো না। তুমি তো জানো আমি নাদিয়াকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। ও যাই করুক না কেনো তাতে আমার কোনো প্রব্লেম নাই। আমি ওকে মেনে নিয়েছি মা, আর কিছু চাই না শুধু নাদিয়াকে চাই।
শুভর আম্মুঃ তোর প্রব্লেম না থাকলেও আমাদের আছে। আমাদের বাড়ির মান সম্মান নিয়ে আমি খেলা করতে দিবো না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি নাদিয়া এই বাড়ির বউ হবে না। আর এটাই শেষ কথা।
শুভঃ মা প্লিজ এমন বলো না।
শুভর আম্মুঃ আর তুমি যদি নাদিয়ার সাথে সম্পর্ক রাখো তাহলে আমার মরা মুখ দেখবে। এখন তুমি ঠিক করো তুমি কি চাও?
শুভঃ মা প্লিজ এমন করো না। নাদিয়া যেমন আমার কাছে ইম্পর্ট্যান্ট তোমরাও তেমনই ইম্পর্ট্যান্ট। আমি দুজন এর মাঝে একজনকে বেচে নিতে পারবো না।
শুভর আম্মুঃ আমার কথাই শেষ কথা। আমি আর কিছু শুনতে চাই না। আর তুমি যদি বেশি বারাবারি কর তাহলে তোমাকে অন্য কলেজে বদলি করাবো।
এই বলে শুভর আম্মু রুম থেকে চলে যায়। শুভ কাদছে। সে ভাবছে কিভাবে নাদিয়াকে বলবে যে তাদের আর সারাজীবন একসাথে এই পথ চলা হবে না। আর শুভই বা কি করে নাদিয়াকে ছাড়া থাকবে। সে যে নাদিয়াকে ছাড়া এক মুহূর্ত ভাবতে পারে না। আর সবচেয়ে বড় কথা নাদিয়া যে ওর বিয়ে করা বউ। কি করে তার এই দায়িত্ব থেকে পিছুটান নিবে। আর শুভর আম্মুও কোনো ভাবে মানছে না।
সারারাত শুভ ঘুমায় নি। এমনকি বাড়িতে এসে নাদিয়াকে একটা কলও করে নি। শুভ ফোন অফ করে রেখেছে। তাই নাদিয়া অনেক বার কল দিয়েও পায় নি। শুভ ফোন বন্ধ থাকায় নাদিয়ার খুব টেনশন হয়। এরকম কোনো দিন শুভ করে নি। সে যতো ব্যস্তই থাকুক না কেন নাদিয়ার ফোন সাথে সাথে রিছিভ করতো।
নাদিয়া শুভ দুজনেই সারারাত জেগে। দুজনেই সকাল হওয়ার অপেক্ষা করছে। খুব ভোরে শুভ কাউকে কিছু না বলেই চলে যায়। মেসে পৌঁছে সে ফোন অন করেই দেখে নাদিয়ার অনেক মেসেজ। সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। সে নাদিয়াকে একটা মেসেজ দেয়...
**নাদিয়া তোমার সাথে আর্জেন্ট কথা আছে৷ আমাদের সেই ফেভারিট জায়গায় আসো।**
মেসেজটা সেন্ড করেই সে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ে। নাদিয়া শুভর মেসেজ দেখে অনেক খুশি হয়। আর দেখা করতে চাওয়াতে সে আরও অনেক বেশি খুশি। কিন্তু নাদিয়ার মনে এক অজানা ভয় কাজ করছে। সে সব ভয় সরে ফেলে রেডি হয়ে সেই জায়গায় যায়। গিয়ে দেখে শুভ সেখানে আগে এসেই দাঁড়িয়ে আছে। নাদিয়া শুভর কাছে যায়।
নাদিয়াঃ আমি তোমার উপর রেগে আছি। কাল হুট করে ওভাবে বাড়ি চলে গেলে তার উপর গিয়ে একবার আমার খোঁজ নেও নি। আমার কথা কি মনে পরে না?
শুভঃ.............. (চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে)।
নাদিয়াঃ এমনকি ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছো। কেনো বাড়িতে কি এমন হইছে যে আমার সাথে কথা বলার সময় পাও নি।
শুভঃ (আবারও চুপ করে আছে)
নাদিয়াঃ কি হলো, কোনো কথা বলছো না কেনো? আমি এতো বকবক করে যাচ্ছি আর তুমি মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছো?
শুভঃ এবারও চুপচাপ.....
নাদিয়া এবার শুভর হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরে নেয়। শুভকে দেখে নাদিয়া থমকে যায়। শুভর চোখে পানি। নাদিয়া শুভকে কোনো দিন কাদতে দেখে নি। আজ তার চোখে পানি কেন? কি এমন হইছে বাড়িতে? নাদিয়ার মনে হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
নাদিয়াঃ কি হইছে? তোমার চোখে পানি কেন?
এই বলার সাথে সাথেই শুভ নাদিয়াকে জড়িয়ে ধরেই জোরে কান্না করে। এই প্রথম শুভ নাদিয়াকে জড়িয়ে ধরেছে। নাদিয়া কিছু বুঝতে পারছে না। সে শুভকে সামলানোর অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু শুভ কোনো কথার উত্তর না দিয়ে কেদেই যাচ্ছে।
নাদিয়াঃ কি হইছে? প্লিজ বলো। কান্না থামাও আগে আমার কসম।
শুভ কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে যায়। সে নাদিয়ার হাতটা ধরে।
নাদিয়াঃ কি হইছে? আজ এমন করছো কেন?
শুভঃ নাদিয়া, বাড়িতে সবাই তোমার কথা জেনে গেছে। আর সে জন্যই মা আমাকে ডেকেছিল।
নাদিয়া যে ভয়টা পাচ্ছিলো সেটাই হলো।
নাদিয়াঃ কি বললেন আন্টি?
শুভঃ..........................
নাদিয়াঃ চুপ করে আছো কেনো? বলো
শুভঃ আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। মা এমন একটা শর্ত দিয়েছে যেটা আমি কোনো দিন মানতে পারবো না।
নাদিয়াঃ কি শর্ত?
শুভঃ মা তোমাকে আমাদের বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নেবে না। শুধু তাই নয় আমি যদি তোমার সাথে সম্পর্ক রাখি তাহলে মায়ের মরা মুখ দেখতে হবে।
এই কথা শোনার পর নাদিয়ার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। এতো দিনের ভালোবাসা একটা ঘটনার জন্য শেষ হয়ে গেলো। কেউ তাকে বিশ্বাস করলো না। নাদিয়ার চোখ বেয়ে পানি পরে যাচ্ছে। সে কিছু বলতে পারছে না। কথা বলার শক্তি মনে হয় হারিয়ে ফেলেছে৷
দুজনেই নিরবে কেদেই যাচ্ছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। কিছুক্ষণ পর নাদিয়া চোখের পানি মুছে শুভর দিকে তাকায়।
নাদিয়াঃ কি করবে এবার? আন্টি তো এমন শর্ত দিয়েছে সেই শর্তের কাছে আমাদের বিয়েও কেউ মেনে নিবে না।
শুভঃ জানি না আমি কি করবো? মায়ের এমন দিব্বি দেওয়া আর আমি তোমাকে ছাড়াও একমুহূর্ত থাকতে পারবো না। এখন মনে হচ্ছে আমি এই দুনিয়ায় না থাকলেই সব সমস্যা সমাধান হবে।
নাদিয়াঃ (রেগে বলে) চুপ একদম চুপ। এই কথা মুখে
আনবে না। সব ভালোবাসা পূর্নতা পায় না। আমাদের ভাগ্যে এক সাথে পথ চলা নেই। শুধু একটাই আফসোস আমাদের বিয়ে প্রকাশ করতে পারবো না।
শুভঃ কেন? আমাদের বিয়ের কথা সবাইকে বলে দেই তাহলে তো আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে না।
নাদিয়াঃ কেউ বিশ্বাস করবে না। কারণ বিয়ের কোনো প্রমাণ নেই আমাদের। সবাই বলবে আমরা মিথ্যা বলছি।
শুভঃ আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমি এতো কিছু বুঝি না। আমার পাশে সবসময় তোমাকে চাই।
নাদিয়াঃ কথা দিলাম। সব সময় তোমার পাশে থাকবো। শুধু আমায় জানিও।
শুভঃ জানিও মানে? তুমি আমার কাছে থাকবে। কোথাও যাবে না।
নাদিয়াঃ পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করো। তোমাকে ছাড়া থাকতে আমিও পারবো না। কিন্তু এখন যে আমাদের আলাদা হতেই হবে। ভাগ্যে থাকলে আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে না। হয়তো আমাদের ভাগ্যে নেই। আমার কিছু ভালো লাগছে না বাসায় যাবো।
নাদিয়া এই বলে চলে যেতে ধরে। কিছুদূর গিয়ে আবার পিছন ফিরে বলে....
নাদিয়াঃ আমার সব স্মৃতি মুছে ফেলো। তাইলে কষ্ট কম হবে। ভালো থেকো. সারাজীবন তোমাকেই ভালোবাসবো। আসি....
নাদিয়ার কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। সে সোজা বাসায় ফিরে গিয়ে কান্না শুরু করে। আর শুভও ওখানে বসেই অঝোরে কান্না করে। পরিস্তিতির জন্য তাদের ভালোবাসা ত্যাগ করতে হয়। এভাবে তাদের ভালোবাসা অপূর্ণ থেকে যায়।
এসব ভাবতে ভাবতে তারা বিয়ে বাড়ি চলে আসে। বর মানে রনিকে বরের আসনে বসিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ে আল্লাহর রহমতে ভালো ভাবেই শেষ হয়।
শুভকে দেখার পর থেকেই নাদিয়ার ভিতরের কষ্ট বেড়ে যায়। সে এই কষ্ট সহ্য করতে পারে না তাই নাদিয়া ঠিক করে আজ রাতেই সে ঢাকা ফিরবে। সে অনুযায়ী নাদিয়া অনলাইন এ ট্রেনের টিকিট কাটে। তার আম্মুকে জানায় যে খুব জরুরি কাজের জন্য তাকে আজ রাতেই জেতে হবে। সে কথা শুনে তার আম্মু মানা করে না।
বাড়ি ফিরে নাদিয়া ব্যাগ গুছালে সবাই তাকে যেতে মানা করে কিন্তু সে কারো কথা শুনে না। এমনকি রনির কথাও না, সে জন্য রনি তার উপর খুব অভিমান করেছে।
সে রাতে স্টেশনে যায়। শুভ কিভাবে যেনো নাদিয়ার যাওয়ার খবর পেয়ে স্টেশনে যায়।
শুভঃ আর দেখা হবে না?
নাদিয়াঃ আমি চাই না আর দেখা হক। দেখা হলে কষ্টটা বেড়ে যায়। আমি আর নতুন করে কষ্ট পেতে চাই না।
শুভঃ বিয়ে করো নি কেন?
নাদিয়াঃ নিজেকে নিয়ে এতো ব্যাস্ত যে সময় হয়ে উঠে নি।
শুভঃ ব্যাস্ত? নাকি আজও ভালোবাসো?
নাদিয়াঃ জানি না।
এর মাঝেই ট্রেন চলে আসে। নাদিয়া ট্রেনে উঠার সময় বলে।।
নাদিয়াঃ নতুন জীবন ভালো ভাবে কাটাবে। ভালো থেকো।
এই বলে কাদতে কাদতে সে চলে যায়। আর শুভও কাদতে থাকে।
সমাপ্ত......
শুভর আম্মুঃ তোকে কিছু কথা বলার জন্য বাড়িতে ডাকলাম।
শুভঃ কি এমন কথা মা যার জন্য এখানে এসে শোনা লাগবে? ফোনে বলা জেতো না?
শুভর আম্মুঃ (রেগে বলে) না, ফোনে বলা যাবে না।
শুভঃ আচ্ছা কি কথা বলো?
শুভ আম্মুঃ তুই নাদিয়ার সাথে আর কোনো সম্পর্ক রাখবে না।
শুভর মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ে। তার মায়ের কথা শোনার পর সে অবাক হয়ে যায়। যে মা নাদিয়াকে এতো ভালবাসে সে কিভাবে এই কথা বলে?
শুভঃ মা কি বলছো এসব? নাদিয়াকে তো তুমিও পছন্দ করেছো। তাইলে এসব বলছো কেনো?
শুভর আম্মুঃ হ্যাঁ, পছন্দ করতাম। কিন্তু ওই মেয়েকে বিশ্বাস করে ভুল করেছি। একটা চরিত্রহীন মেয়ে৷
শুভঃ মা কি বলছো এসব? নাদিয়া এমন মেয়ে না, ও খুব ভালো মেয়ে মা।
শুভর আম্মুঃ দেখ শুভ, আমি ওই মেয়ের সব কথা শুনেছি। একটা চরিত্রহীন মেয়ে।
শুভঃ তুমি যা শুনছো তা সত্য না। মা, নাদিয়াকে ফাঁসানো হয়েছে। সব মিথ্যা মা।
শুভর আম্মুঃ গ্রামের প্রত্যেক মানুষ কেনো ওর নামে খারাপ কথা বলবে? ওই মেয়ে আসলেই চরিত্রহীন।
শুভঃ গ্রামের মানুষকে ভুল বোঝানো হয়েছে।
শুভর আম্মুঃ (রেগে বলে) ওই চরিত্রহীন মেয়ে আমার বাড়ির বউ কোনো দিনও হবে না।
শুভঃ মা, এমন বলো না। ওর কোনো দোষ নেই।
শুভর আম্মুঃ আমার কথা এখনও শেষ হয়নি। তুইও নাদিয়ার সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখবি না।
শুভঃ (কান্না করে বলে) মা প্লিজ এমন বলো না। তুমি তো জানো আমি নাদিয়াকে ছাড়া বাঁচতে পারব না। ও যাই করুক না কেনো তাতে আমার কোনো প্রব্লেম নাই। আমি ওকে মেনে নিয়েছি মা, আর কিছু চাই না শুধু নাদিয়াকে চাই।
শুভর আম্মুঃ তোর প্রব্লেম না থাকলেও আমাদের আছে। আমাদের বাড়ির মান সম্মান নিয়ে আমি খেলা করতে দিবো না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি নাদিয়া এই বাড়ির বউ হবে না। আর এটাই শেষ কথা।
শুভঃ মা প্লিজ এমন বলো না।
শুভর আম্মুঃ আর তুমি যদি নাদিয়ার সাথে সম্পর্ক রাখো তাহলে আমার মরা মুখ দেখবে। এখন তুমি ঠিক করো তুমি কি চাও?
শুভঃ মা প্লিজ এমন করো না। নাদিয়া যেমন আমার কাছে ইম্পর্ট্যান্ট তোমরাও তেমনই ইম্পর্ট্যান্ট। আমি দুজন এর মাঝে একজনকে বেচে নিতে পারবো না।
শুভর আম্মুঃ আমার কথাই শেষ কথা। আমি আর কিছু শুনতে চাই না। আর তুমি যদি বেশি বারাবারি কর তাহলে তোমাকে অন্য কলেজে বদলি করাবো।
এই বলে শুভর আম্মু রুম থেকে চলে যায়। শুভ কাদছে। সে ভাবছে কিভাবে নাদিয়াকে বলবে যে তাদের আর সারাজীবন একসাথে এই পথ চলা হবে না। আর শুভই বা কি করে নাদিয়াকে ছাড়া থাকবে। সে যে নাদিয়াকে ছাড়া এক মুহূর্ত ভাবতে পারে না। আর সবচেয়ে বড় কথা নাদিয়া যে ওর বিয়ে করা বউ। কি করে তার এই দায়িত্ব থেকে পিছুটান নিবে। আর শুভর আম্মুও কোনো ভাবে মানছে না।
সারারাত শুভ ঘুমায় নি। এমনকি বাড়িতে এসে নাদিয়াকে একটা কলও করে নি। শুভ ফোন অফ করে রেখেছে। তাই নাদিয়া অনেক বার কল দিয়েও পায় নি। শুভ ফোন বন্ধ থাকায় নাদিয়ার খুব টেনশন হয়। এরকম কোনো দিন শুভ করে নি। সে যতো ব্যস্তই থাকুক না কেন নাদিয়ার ফোন সাথে সাথে রিছিভ করতো।
নাদিয়া শুভ দুজনেই সারারাত জেগে। দুজনেই সকাল হওয়ার অপেক্ষা করছে। খুব ভোরে শুভ কাউকে কিছু না বলেই চলে যায়। মেসে পৌঁছে সে ফোন অন করেই দেখে নাদিয়ার অনেক মেসেজ। সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। সে নাদিয়াকে একটা মেসেজ দেয়...
**নাদিয়া তোমার সাথে আর্জেন্ট কথা আছে৷ আমাদের সেই ফেভারিট জায়গায় আসো।**
মেসেজটা সেন্ড করেই সে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ে। নাদিয়া শুভর মেসেজ দেখে অনেক খুশি হয়। আর দেখা করতে চাওয়াতে সে আরও অনেক বেশি খুশি। কিন্তু নাদিয়ার মনে এক অজানা ভয় কাজ করছে। সে সব ভয় সরে ফেলে রেডি হয়ে সেই জায়গায় যায়। গিয়ে দেখে শুভ সেখানে আগে এসেই দাঁড়িয়ে আছে। নাদিয়া শুভর কাছে যায়।
নাদিয়াঃ আমি তোমার উপর রেগে আছি। কাল হুট করে ওভাবে বাড়ি চলে গেলে তার উপর গিয়ে একবার আমার খোঁজ নেও নি। আমার কথা কি মনে পরে না?
শুভঃ.............. (চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে)।
নাদিয়াঃ এমনকি ফোনটাও বন্ধ করে রেখেছো। কেনো বাড়িতে কি এমন হইছে যে আমার সাথে কথা বলার সময় পাও নি।
শুভঃ (আবারও চুপ করে আছে)
নাদিয়াঃ কি হলো, কোনো কথা বলছো না কেনো? আমি এতো বকবক করে যাচ্ছি আর তুমি মুর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছো?
শুভঃ এবারও চুপচাপ.....
নাদিয়া এবার শুভর হাত ধরে নিজের দিকে ঘুরে নেয়। শুভকে দেখে নাদিয়া থমকে যায়। শুভর চোখে পানি। নাদিয়া শুভকে কোনো দিন কাদতে দেখে নি। আজ তার চোখে পানি কেন? কি এমন হইছে বাড়িতে? নাদিয়ার মনে হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
নাদিয়াঃ কি হইছে? তোমার চোখে পানি কেন?
এই বলার সাথে সাথেই শুভ নাদিয়াকে জড়িয়ে ধরেই জোরে কান্না করে। এই প্রথম শুভ নাদিয়াকে জড়িয়ে ধরেছে। নাদিয়া কিছু বুঝতে পারছে না। সে শুভকে সামলানোর অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু শুভ কোনো কথার উত্তর না দিয়ে কেদেই যাচ্ছে।
নাদিয়াঃ কি হইছে? প্লিজ বলো। কান্না থামাও আগে আমার কসম।
শুভ কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে যায়। সে নাদিয়ার হাতটা ধরে।
নাদিয়াঃ কি হইছে? আজ এমন করছো কেন?
শুভঃ নাদিয়া, বাড়িতে সবাই তোমার কথা জেনে গেছে। আর সে জন্যই মা আমাকে ডেকেছিল।
নাদিয়া যে ভয়টা পাচ্ছিলো সেটাই হলো।
নাদিয়াঃ কি বললেন আন্টি?
শুভঃ..........................
নাদিয়াঃ চুপ করে আছো কেনো? বলো
শুভঃ আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। মা এমন একটা শর্ত দিয়েছে যেটা আমি কোনো দিন মানতে পারবো না।
নাদিয়াঃ কি শর্ত?
শুভঃ মা তোমাকে আমাদের বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নেবে না। শুধু তাই নয় আমি যদি তোমার সাথে সম্পর্ক রাখি তাহলে মায়ের মরা মুখ দেখতে হবে।
এই কথা শোনার পর নাদিয়ার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। এতো দিনের ভালোবাসা একটা ঘটনার জন্য শেষ হয়ে গেলো। কেউ তাকে বিশ্বাস করলো না। নাদিয়ার চোখ বেয়ে পানি পরে যাচ্ছে। সে কিছু বলতে পারছে না। কথা বলার শক্তি মনে হয় হারিয়ে ফেলেছে৷
দুজনেই নিরবে কেদেই যাচ্ছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। কিছুক্ষণ পর নাদিয়া চোখের পানি মুছে শুভর দিকে তাকায়।
নাদিয়াঃ কি করবে এবার? আন্টি তো এমন শর্ত দিয়েছে সেই শর্তের কাছে আমাদের বিয়েও কেউ মেনে নিবে না।
শুভঃ জানি না আমি কি করবো? মায়ের এমন দিব্বি দেওয়া আর আমি তোমাকে ছাড়াও একমুহূর্ত থাকতে পারবো না। এখন মনে হচ্ছে আমি এই দুনিয়ায় না থাকলেই সব সমস্যা সমাধান হবে।
নাদিয়াঃ (রেগে বলে) চুপ একদম চুপ। এই কথা মুখে
আনবে না। সব ভালোবাসা পূর্নতা পায় না। আমাদের ভাগ্যে এক সাথে পথ চলা নেই। শুধু একটাই আফসোস আমাদের বিয়ে প্রকাশ করতে পারবো না।
শুভঃ কেন? আমাদের বিয়ের কথা সবাইকে বলে দেই তাহলে তো আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে না।
নাদিয়াঃ কেউ বিশ্বাস করবে না। কারণ বিয়ের কোনো প্রমাণ নেই আমাদের। সবাই বলবে আমরা মিথ্যা বলছি।
শুভঃ আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। আমি এতো কিছু বুঝি না। আমার পাশে সবসময় তোমাকে চাই।
নাদিয়াঃ কথা দিলাম। সব সময় তোমার পাশে থাকবো। শুধু আমায় জানিও।
শুভঃ জানিও মানে? তুমি আমার কাছে থাকবে। কোথাও যাবে না।
নাদিয়াঃ পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করো। তোমাকে ছাড়া থাকতে আমিও পারবো না। কিন্তু এখন যে আমাদের আলাদা হতেই হবে। ভাগ্যে থাকলে আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে না। হয়তো আমাদের ভাগ্যে নেই। আমার কিছু ভালো লাগছে না বাসায় যাবো।
নাদিয়া এই বলে চলে যেতে ধরে। কিছুদূর গিয়ে আবার পিছন ফিরে বলে....
নাদিয়াঃ আমার সব স্মৃতি মুছে ফেলো। তাইলে কষ্ট কম হবে। ভালো থেকো. সারাজীবন তোমাকেই ভালোবাসবো। আসি....
নাদিয়ার কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে। সে সোজা বাসায় ফিরে গিয়ে কান্না শুরু করে। আর শুভও ওখানে বসেই অঝোরে কান্না করে। পরিস্তিতির জন্য তাদের ভালোবাসা ত্যাগ করতে হয়। এভাবে তাদের ভালোবাসা অপূর্ণ থেকে যায়।
এসব ভাবতে ভাবতে তারা বিয়ে বাড়ি চলে আসে। বর মানে রনিকে বরের আসনে বসিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ে আল্লাহর রহমতে ভালো ভাবেই শেষ হয়।
শুভকে দেখার পর থেকেই নাদিয়ার ভিতরের কষ্ট বেড়ে যায়। সে এই কষ্ট সহ্য করতে পারে না তাই নাদিয়া ঠিক করে আজ রাতেই সে ঢাকা ফিরবে। সে অনুযায়ী নাদিয়া অনলাইন এ ট্রেনের টিকিট কাটে। তার আম্মুকে জানায় যে খুব জরুরি কাজের জন্য তাকে আজ রাতেই জেতে হবে। সে কথা শুনে তার আম্মু মানা করে না।
বাড়ি ফিরে নাদিয়া ব্যাগ গুছালে সবাই তাকে যেতে মানা করে কিন্তু সে কারো কথা শুনে না। এমনকি রনির কথাও না, সে জন্য রনি তার উপর খুব অভিমান করেছে।
সে রাতে স্টেশনে যায়। শুভ কিভাবে যেনো নাদিয়ার যাওয়ার খবর পেয়ে স্টেশনে যায়।
শুভঃ আর দেখা হবে না?
নাদিয়াঃ আমি চাই না আর দেখা হক। দেখা হলে কষ্টটা বেড়ে যায়। আমি আর নতুন করে কষ্ট পেতে চাই না।
শুভঃ বিয়ে করো নি কেন?
নাদিয়াঃ নিজেকে নিয়ে এতো ব্যাস্ত যে সময় হয়ে উঠে নি।
শুভঃ ব্যাস্ত? নাকি আজও ভালোবাসো?
নাদিয়াঃ জানি না।
এর মাঝেই ট্রেন চলে আসে। নাদিয়া ট্রেনে উঠার সময় বলে।।
নাদিয়াঃ নতুন জীবন ভালো ভাবে কাটাবে। ভালো থেকো।
এই বলে কাদতে কাদতে সে চলে যায়। আর শুভও কাদতে থাকে।
এভাবেই হয়তো হারিয়ে যায় শত শত ভালোবাসা।তারা সবার সামনে হয়তো হাসি খুশি থাকার নাটক করবে।কিন্তু রাতে হয়তো তারা একা নিরবে তাদের চোখের পানি ফেলবে।হয়তো বা কোন এক ব্যাস্ত দিনে তার কথা হঠাৎ মনে পড়বে,চোখের কোনে পানি আসবে,তবে তখন তাদের করার কিছুই থাকবে না।