Golperjogot

Golperjogot

অর্কিড – পর্ব ২ রোমান্টিক প্রেমের গল্প | মনা হোসাইন

Orkid

Mona Hossain পর্ব 2 }

অর্কিডের মেজাজ আজ বেজায় খারাপ হয়ে আছে। এমনিতেই ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে হয়েছে তারপর এখন রাস্তায় এসে উটকো এক ঝামেলা এসে জুটেছে। এক মেয়ে উড়ে এসে জুড়ে বসার মত অকির্ডের গাড়ির সামনে এসে পড়েছে।অর্কিড পরপর দুবার গাড়ির হর্ন বাজিয়ে চেঁচিয়ে উঠল,

-“সামনে থেকে সরবেন নাকি উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতে হবে?

অর্কিডের কথা শুনে মাথায় আগুন জ্বলে গেল নিঝুমের। একটা মানুষ এত রুড কি করে হতে পারে তার মাথায় ঢুকল না। সে পা টানতে টানতে এগিয়ে এসে গাড়ির দরজায় নক করল। অর্কিড বিরক্তের নিঃশ্বাস ফেলে গাড়ির গ্লাস নামাল,

-“কি সমস্যা?

নিঝুম চেঁচাল,-“সমস্যা আমার নাকি আপনার? চোখে দেখতে পান না? হাতে গাড়ি আছে মানে রাস্তাটাকে নিজের বাবার রাস্তা ধরে নিয়েছেন? কোন সেন্সে আমাকে ধাক্কা মারলেন? সময় মত ব্রেক না চাপলে কী হত?

অর্কিড চোখের সান ক্লাস নামিয়ে ভ্রু উঁচু করে তাকাল,

-“এমনভাবে বলছেন যেন ব্রেক টা আপনি চেপেছেন?যাইহো আমি নাহয় চোখে দেখতে পাইনা ভাল কথা তা আপনার ব্রেইন টা কি বাজারে বিক্রি করে এসেছেন? নাকি সেটা হাঁটুর নিচে? কোন বুদ্ধিতে ক্রসলাইন ছাড়া রাস্তা পার হচ্ছেন? বড়লোক দেখলেই ফাঁসাতে ইচ্ছে হয় তাই না?

-“ভদ্রভাবে কথা বলুন।

-“এখনো অভদ্রতা শুরু করিনি। শুরু করলে এতক্ষন এখানে দাঁড়াতে পারতেন না। ভালয় ভালয় রাস্তা ছাড়ুন। রুলস আমি ভাঙ্গিনি আপনি ভেঙ্গেছেন।

-“আপনি জানেন আপনি আমার কত বড় ক্ষতি করেছেন?

-“উফফ ভাংগা রেকর্ডার টা একটুখানী বন্ধ করবেন প্লিজ?আমার অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে।বলুন কত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে?

নিঝুম রেগে তেঁতে উঠল,-“আপনার মনে হয় টাকা দিয়ে সব ক্ষতি পূরণ যায়?

-”নাহ যায় না যদি যেত এতক্ষনে আপনাকে চাপা দিয়ে ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিতাম তবুও বক বক শুনতাম না।

-“আপনার মত বেয়াদব কখনো দেখিনি।একটা মেয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটাও জানেন না?

-“মেয়ে, মানব জাতির অন্তর্ভুক্ত নয় এই ব্যাপারটা তো আমার জানা ছিল না। তাদের সাথে অন্য ভাষায় কথা বলতে হয়? তা কোন বই পুস্তকে সেই ভাষা লিখা আছে যদি একটু বলে দিতেন সুবিধা হত।

-“আপনি এত অসভ্য কেন? আপনার জন্য আমার কতটা ক্ষতি হল আপনার কোন৷ ধারনা আছে? আজ আমার প্রমোশন হওয়ার কথা ছিল আপনার জন্য সময় মত যেতে পারিনি প্রমোশন টা আর হবে না।তারউপর পায়েও ব্যাথা পেয়েছি বলেই কেঁদে দিল নিঝুম

অর্কিড ভ্যাবাচেকা খেল। সে হা হয়ে তাকিয়ে বলল,-“এক্সকিউজ মি! আপনার বয়স কত? এত বড় মেয়ে এইটুকু ব্যাথার জন্য এভাবে কাঁদে এই প্রথম দেখলাম।

নিঝুম চোখের পানি নাকের পানি মুছতে মুছতে চেঁচাল,-“চুপ করুন আমার কষ্ট আপনি কি করে বুঝবেন? আপনাদের তো দামি গাড়ি আছে হাঁটার কষ্ট আপনি কি করে বুঝবেন।

অর্কিড দম নিল,-“বেশ! আসুন আমি আপনাকে অফিসে পৌঁছে দিচ্ছি। তবুও রাস্তার মাঝখানে এভাবে কেঁদে গোটা মেয়ে জাতিকে অপমান করবেন না।মেয়েরা এতটাও দুর্বল না বুঝেছেন? আসুন অফিসের সময় এখনো বাকি আছে।

নিঝুম আর কোন কথা না বলে হুট করে গাড়িতে উঠে বসল সাথে সাথেই অর্কিড চেঁচিয়ে উঠল-“আমাকে কী আপনার ড্রাইভার মনে হচ্ছে? সামনে এসে বসুন।

নিঝুম এসে অর্কিডের পাশাপাশি বসেছে। এতক্ষন মেয়েটাফ কার্যকলাপ বাচ্চামী মনে হলেও সময়ের সাথে অর্কিডের মনে হচ্ছে মেয়েটা নির্ঘাত পাগলাগারদ থেকে পালিয়েছে।

মেয়েটি ফোনে কথা বলতে বলতে হাসিতে ফেটে পড়ছে। সে অপরিচিত কারো পাশে বসে আছে সেটা ভুলেই গেছে। ফোনে কথা শেষ করেই নিঝুম বলল,

-“একটা গান চালান তো।

অর্কিড ভ্রু কুচকে তাকাল নিঝুমের দিকে।-“মানে?কি বলছেন এসব? আমরা কি পিকনিকে যাচ্ছি যে গান চালাবে?

নিঝুম হাসল,-“গান হল মনে খোরাক গান শুনলে টেনশান কমে অবশ্য আপনার মত মানুষ এসব বোঝবে না। যা বলছি তাই করুন মনে রাখবেন আমি আপনার সাথে আসিনি আপনি নিয়ে এসেছেন তাই আমি যা বলব তাই করতে হবে আপনাকে।

-“আপনার যদি গান শুনতে ইচ্ছে হয় হেডফোনে শুনুন না….

-“আপনি এত কথা বলেন কেন? যা বলছি করবেন নাকি আমি চেঁচাব?

-“চেঁচাব মানে কী?

-“চেঁচিয়ে দেখাব চেঁচানো কাকে বলে? পরে লোক জন আপনাকে ধাওয়া করলে আমাকে আবার দোষারোপ করবেন না কিন্তু।

গাড়িতে গান বাজছে আর সেই গাড়ি থেকে অর্কিড একটা মেয়েকে নিয়ে নামছে সেটা যদি তার বাবার কান পর্যন্ত পৌঁছায় পরদিনেই এই মেয়ের সাথে তার বিয়ে দিয়ে কোন সন্দেহ নেই। ভেবেই গায়ে কাঁটা দিল অর্কিডের। কেন যে মেয়েটাকে সাথে এনেছে ভেবেই রাগ হচ্ছে।

তার ভাবনা শেষ হওয়ার আগেই গাড়িতে গান বাজা শুরু হয়েছে। হরেক রকমের গান বাজছে,বাজাচ্ছে নিঝুম। অর্কিডের ইচ্ছে করছে নেমে পালিয়ে যেতে কিন্তু অফিসে সময়মত যেতে হবে তাই সহ্য করতে হচ্ছে।গান শুনে অর্কিডের মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে কিন্তু নিঝুম ব্যাপারটা খুব উপভোগ করছে সাথে আবার চকলেট ও খাচ্ছে তাও বাচ্চাদের মত সারামুখ মাখিয়ে। অর্কিডে আড় চোখে দু একবার দেখেছিলো তার পর আর তাকায় নি। ভাল করে দেখলে গা গুলিয়ে উঠবে তাই তাকায় নি। কিছুক্ষনের মধ্যেই নিঝুম বলল,

-“আপনার কাছে টিস্যু হবে?

-“আমাকে বলছেন?

-“তো কাকে বলব? এখানে আর কে আছে?

অর্কিড সোজাসুজি জবাব দিল,-” না নেই….

বলার আগেউ অবাক হয়ে গেল সে কারন নিঝুম নামের মেয়েটির কান্ডে সে অবাক হয়েছে,

-“আশ্চর্য্য কি করছেন এসব?

-“ভালভাবে চাইলাম দিলেন না তাই নিয়ে নিচ্ছি।

-“আজব তো আপনি যা চাইবেন আমার আপনাকে দিতেই হবে এটা কোথায় লিখা আছে নাকি? আর এটা টিস্যু না আমার রুমাল।আপনি অনুমতি ছাড়া একটা ছেলের পকেটে হাত দিচ্ছেন?

-“তো কি হয়েছে? আপনার গাড়িতেই তো বসে আছি ওয়ালেট নিয়ে পালানোর চান্স নেই।

-“আমি কি বুঝিয়েছি আপনি বুঝেন নি?

-“না আপাতত বুঝতেও চাচ্ছিও না। মুখে চকলেট লেগে গেছে মুছতে হবে এভাবে অফিসে যাব কি করে?

-” তাই বলে আমার রুমাল দিয়ে মুছবেন?

অর্কিডের কথা মুখে থাকতে থাকতেই নিঝুম তার রুমালে চকলেট মুছে সেই রুমাল এগিয়ে দিয়ে বলল,-“এই নিন আপনার রুমাল আপনাকে দিয়ে দিলাম।

অর্কিড এবার আর নিয়ে পারল না তাড়াতাড়ি ব্রেক চাপল,-“আরে থামুন থামুন কি করছেন এসব? আমার দরকার নেই রুমালের, ইয়াক…সরান এটা।

কি আজব!এই তো রুমালেত জন্য মরে যাচ্ছিলেন তাছাড়া আপনার জিনিস আমি কেন নিব…বলেই রুমালটা অর্কিডের পকেটে ডুকিয়ে দিল।

অপরিচিত কোন মেয়ের মুখে লেগে থাকা চকলেট এখন তার পকেটে ভেবেই অর্কিডের গা গুলিয়ে উঠছে। এমন কোন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে জানলে সে হেঁটে হেঁটে অফিসে যেত তবুও গাড়ি আনত না।

-“এই আপনি নামুন আপনাকে আমি নিয়ে যাব না।

নিঝুম পিটপিটিয়ে তাকাল,-“আপনার কথায় হবে নাকি? নিয়ে যাবেন না তো এনেছিলেন কেন? চুপ চাল ড্রাইভ করুন না হলে ফল ভাল হবে না বলে দিলাম।লোক ডেকে বলব আপনি আমায় কিড*ন্যাপ করেছেন।

-“কি অদ্ভুত মেয়ে?!

-“আপনি যাবেন কী?

অর্কিড বাধ্য হয়েই ড্রাইভ শুরু করল।যাক অবশেষে রাস্তা শেষ হল। মেয়েটা নেমে দাঁড়ল,

-“কত টাকা দিতে হবে আপনাকে?

অর্কিড চোখ বড় বড় করে তাকাল,-“কিসের টাকা?

-“বাড়ে এই যে নিয়ে আসলেন?

-“আমাকে কি আপনার ড্রাইভার মনে হয়?

-“আমাকে কি আপনার গার্লফ্রেন্ড মনে হয়? যে বিনা পয়সায় গাড়িতে নিয়ে ঘুরবেন?

-“আপনি যান প্লিজ আপু।

-” এই বেয়াদব ছেলে,আমাকে কি আপনার ভিখারি মনে হচ্ছে নাকি? যতসব ফাউল একটু ভাল জামা কাপড় পড়ে ছেলেরা এত ভাব কেন নেয় বোঝি না।দেখলেই গা জ্বলে যায়। জানেন আমি কে?

-“না! আর আমার জানারো দরকার নেই।আমি ভাবছি এরকম পাগলিকে বাবা মা একা ছেড়ে দেয় কি করে?

-“কি বললেন আপনি?

-“কিছু না আপনি যান আমার টাকা লাগবে না।

নিঝুম অর্কিডের কোন কথায় শুনল না কিছু টাকা তার ধরিয়ে দিয়ে তবেও বিদায় হল।অর্কিড কিছুক্ষন হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থেকে অফিসের দিকে পা বাড়াল।.অফিসে ঢুকার আগে লিফটের সামনে যেতেই ঠাসসসসস…..কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেল সে।

মনে হচ্ছে আজকের দিনটাই খারাপ কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছে না। ভাবতে ভাবতে চোখ তুলে তাকাল অর্কিড।সাথে সাথেই তার চক্ষু চরকগাছ।

-“আপনি এখানে কি করছেন?

নিঝুম দ্বীগুন তেজে বলে উঠল,-“সেটা তো আমি জিজ্ঞাস করব. ফাজলামি করার জায়গা পান না যেই দেখেছেন সুন্দরী মেয়ে ওমনি ফলো করা শুরু করে দিয়েছেন?

-“মানে কী? কিসব আবল তাবল বকছেন?আর কে সুন্দরী? আপনাকে তো আমার কোনভাবেই সুন্দরী মনে হচ্ছে না। আমি কেন আপনাকে ফলো করব বরং আপনি সেই কখন থেকে আমাকে জ্বালিয়ে মারছেন।

নিঝুম উঠে দাঁড়িয়ে বলল,-“আমার মনে হয় আপনার চোখগুলি আজ নিজের জিএফ এর ব্যাগে রেখে এসেছেন তাই কিছুই দেখতে পারছেন না।

-“হ্যা আর আপনার ব্রেইনটা বাজারে রেখে এসেছেন তাই চোখ থাকতেও বার বার আমার সাথে ধাক্কা খাচ্ছেন।

-“চুপ ফাউল ছেলে কোথাকার আর একটাও বাজে কথা বলবেন তো আপনার খবর আছে। খবরদার আমার পিছু পিছু আসবেন না।

বলে অর্কিডকে শাঁশিয়ে চলে গেল নিঝু।

অর্কিড তো পুরই অবাক…..ভাবছে আশেপাশে কোন পাগলাগারদ থাকলে সে নিজে গিয়ে একে সেখানে রেখে আসত। কিন্তু এখন সে সময় নেই অলরেডি লেইট হয়ে গেছে অফিসের সকল স্টাফ হয়ত তা জন্য অপেক্ষা করছে……

অর্কিড অফিসে ঢুকতেই সবাই হাত তালি দিয়ে তাকে ওয়েলকাম জানাল।মিস্টার চৌধুরী এগিয়ে এসে ছেলের কাঁধে হাত রাখলেন-“please welcome my son. শুধু ছেলে বললে ভুল হবে আমার একমাত্র আশা ভরসা। যদিও আমার ছেলে সবসময় বাবা মায়ের আশা পূরণ করে তবুও আজ থেকে আমি পুরো পুরি নিশ্চিন্ত। ছেলে দেশে ফিরেছে অফিসের দায়িত্ব নিচ্ছে এর চেয়ে সুখের আর কি হতে পারে?

Related Story

মিঃ চৌধুরী সবার সাথে অর্কিডকে পরিচয় করিয়ে দিলেন অর্কিডেরো বেশ ভাল লাগছে। আগের ঘটে যাওয়া সেই পাগলির কথা মোটামুটি ভুলেই গিয়েছিলো কিন্তু হটাৎ করেই তার বাবা বলে উঠলেন,মিস.নিঝুম মালা নিয়ে আসুন আপনার বসকে স্বাগতম জানান। অর্কিড মিট ইউর পার্সনাল এসিস্ট্যান্ট মিস নিঝুম। এতদিন অফিস স্টাফ ছিল আজ প্রমোশন পেয়েছে।

মেয়েটিত দিকে তাকিয়ে অর্কিড অবাক হয়ে তাকাল। অর্কিড ঘুরে তাকাতে টুপ করে হাতের মালাটা পড়ে গেল। নিঝুম চেঁচিয়ে উঠল,

-“আপনি! আপনি আমার বস? অসম্ভব এ কিছুতেই হতে পারে না।

অর্কিড চোখ কপালে তুলে বলল,-“মানে কী?যে মেয়ের পা*গলাগারদে থাকার কথা সে আমার অফিসে কি করছে?

এভাবেই দেখা হয়েছিল অর্কিড নিঝুমের। তারপর কি হল জানতে চলে চোখ রাখুন পর্ববর্তী পর্বে।

পরবর্তী পর্বের জন্য ক্লিক করুন :>> চলবে

Writer :- মোনা হোসাইন

Leave a Comment