Golperjogot

Golperjogot

অর্কিড – পর্ব ৩ রোমান্টিক প্রেমের গল্প | মনা হোসাইন

Orkid

Mona Hossain পর্ব 2 }

নিঝুমকে দেখেই চেঁচিয়ে উঠল অর্কিড।

–“এই মেয়েটা যদি অফিসে থাকে তাহলে i am sorry পাপা। আমি অফিসে আসতে পারব না।আর আমার এসিস্ট্যান্ট হওয়ার তো কোন যোগ্যতাই ওর নেই মানে তুমি কি দেখে ওকে চাকরি দিয়েছো আমি তো সেটাই বুঝতে পারছি না।

অর্কিড অফিসের সবার সামনেই বলে বসল –“পাগলাগারদ থেকে পালিয়ে আসা কোন মেয়ে আমার এসিস্ট্যান্ট হতে পারে না।

সবার সামনে অপমানিত হয়ে নিঝুমের প্রায় কাঁদো কাঁদো অবস্থা হয়ে গেছে।

অর্কিডের কথায় মিঃচোধুরী অবাক হয়ে এগিয়ে এসে বলল,-“কি বলছো এসব অর্কিড বিহেভ ইউরসেল্ফ. নিঝুম এই অফিসের সবচেয়ে দায়িত্বশীল স্টাফ তার ব্যাপারে এমন কথা তোমার কাছ থেকে আশা করছি না।তুমি ওকে কিভাবে চিনো বা তোমাদের মধ্যে কি হয়েছে সেটা বলার জায়গা এটা না। ভিতরে চলো তারপর শুনছি।

নিঝুম চোখ মুছতে মুছতে বলল,-“না আংকেল ভিতরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই স্যার যখন চাচ্ছেন না তখন আমি আর কাল থেকে আসব না।

তবে অর্কিড স্যার আপনাকে কয়েকটা কথা বলি আমি পাগল নই আমি গরিব ঘরের মেয়ে প্রতিদিন বাসে করেই অফিসে আসি। আজ আসতে দেরি হয়ে গিয়েছি বাস মিস করব ভেবে তাড়াহুড়ো করে রাস্তা পার হতে গিয়ে আপনার গাড়ির সামনে চলে আসি। মানছি এক্সিডেন্টে আমারেই দোষ ছিল।

বাস মিস করায় মাথা কাজ করছিল না কারন আজ অফিসে আমার স্যার প্রথম জয়েন করছেন সময়মত অফিসে পৌছানো টা আমার দায়িত্ব মনে করেছিলাম তাই বিভিন্ন বাহানা করে আপনার সাথে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম যা করেছিলাম নিজের দায়িত্ব পালন করার জন্যই করেছিলাম। তাই বলে আমি পাগলাগারদ থেকে পালিয়ে আসা পাগল নই। বলতে পাড়েন রাস্তায় যা যা করেছি হয়ত ঠিক হয়নি আসলে আপনাদের মত হাই সুসাইটিতে বড় হয় নি তাই এত গুছিয়ে চলাফেরার অভ্যাস হয়ে উঠে নি ফোনে কথা বলার সময় হয়ত চারপাশ টা লক্ষ্য করিনা। আর ছোটলোক তো তাই নিজের সীমা টা ঠিক বুঝতে পারি নি কিন্তু আমার মত ছোট লোকের কাছে যদি কেউ একটা টিস্যু চাইত কোন প্রশ্ন ছাড়াই দিয়ে দিতাম। আপনারা বড়লোক তাই হয়ত আমার চাওয়াটা আপনার কাছে দৃষ্টিকটু লেগেছে।আর গানের ব্যাপারটা….আসলে আমার খুব টেনশান হচ্ছিল যে সময় মত অফিসে আসতে পারব কিনা তাইতাই মাইন্ড ডাইভার্ট করতে গান চালাতে বলেছিলাম। জানি আমার এমন আচারন আপনার খুব অসহ্য লেগেছে তার জন্য ক্ষমা চাইছি পারলে ক্ষমা করবেন।

Short Story

আমি পাগলামি হয়ত করেছি তবে সেটা দায়িত্বপালন করার জন্যই করেছি। তাই আমি এই অফিসের যোগ্য না এই কথাটা বলবেন নাএকটা কথা মনে রাখবেন একজন চোরও অনেক সময় একজন দায়িত্ববান বাবা হতে পারে…অনেক সময় আমরা যা দেখি তা ঘটে না আর যা ঘটে তা দেখি না….তাই আশা করছি এরপর থেকে কাউকে ভালভাবে না জেনে মন্তব্য করবেন না।আংকেল আমি চলে যাচ্ছি যদি ভুল কিছু বলে থাকি আমাকে ক্ষমা করবেন কথাগুলি বলেই নিঝুম সেখান থেকে চলে গেল।

মিঃ চোধুরীঃ কিছুটা রেগে বললেন,–“তোমার কাছ থেকে এমন কিছু আশা করি নি অর্কিড। অন্তত একটা মেয়ে হিসেবে নিঝুমকে সম্মান দেখানো উচিত ছিল।তুমি সবার সামনে ওকে এভাবে কি করে বলতে পারলে ভাবতেই অবাক লাগছে।

অর্কিড নিজের বাবার কথা তেমন গায়ে মাখল না।–“আজব তো…. কার মনে কি আছে তা জানার দায়িত্ব কি আমার নাকি? আমি যা দেখিছিলাম তাই বলেছি, ভুল কি করেছি। আর তোমার সিনসিয়ার ম্যাডাম সবার সামনে ভদ্র ভাষায় অনেক অপমান করে গেলেন সেটা তোমার চোখে পড়ে নি তাই না? আমার অফিসের প্রথম দিনটা নস্ট করে দিয়েছে। চিন্তা করো না অর্কিড চৌধুরী কারোর ঋন রাখে না। সব শোধে আসলে শোধ করে দিব। আর আমার এসিস্ট্যান্ট উনিই থাকবেন তাই তোমার চাপ নেয়ার দরকার নেই। চলো ভিতরে চলো।

বলেই অর্কিড পড়ে থাকা ফুলের মালা হাতে নিয়ে বাঁকা হাসল।.🍁.অর্কিড অফিসের ডিটেল থেকে নিঝুমের এর কন্টাক্ট নাম্বার নিয়ে নিল। রাতে বাসায় ফিরে নিঝুমের নাম্বারে কল দিল। অপর পাশ থেকে ফোন তুলতেই অর্কিড বলল

–” হ্যালো মিস নিঝুম বলছেন?

–“হ্যা বলছি কিন্তু আপনি কে বলছেন?

অর্কিড উত্তর–“আপনার নতুন বস বলছি….

নিঝুম তাছিল্য নিয়ে জবাব দিল,-“বস? সরি ভুল করছেন আমি এখন আর কোন অফিসে চাকরি করি না।

–“কিন্তু অফিস আপনাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে চায় না।

নিঝুম সরাসরি বলল,—“কিন্তু আমি চাই.

অর্কিড বাঁকা হাসল,–“বেশ তো ভাল কথা তাহলে কাল অফিসে এসে রিজাইন দিয়ে যাবেন।

নিঝুম রেগেই বলল,—“ঠিক আছে….

ফোন টা রেখে নিঝুম লম্বা নিঃশ্বাস নিল।সাথে সাথে পাশের ঘর থেকে মামীর গলা ভেসে আসল।নিঝুম উঠে দরজায় গিয়ে দাঁড়াতেই মামী বললেন,—“আজ তো মাসের এক তারিখ বেতন পেয়েছিস?বাসা ভাড়া দিতে হবে। তোর মামার ওষুধও শেষ কাল ফিরার পথে নিয়ে আসিস। নিঝুম মাথা নেড়ে নিজের ঘরে ফিরে আসল।

নিঝুমের মা অনেক আগেই মারা গেছে।বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছে সে এখন মামার বাড়ি থাকে।মামা আগে রোজগার করত এখন বয়স হয়েছে কিছুটা অসুস্থ তাই কোন চাকরি করতে পারেননা ।বাড়িতে একমাত্র নিঝুমেই উপার্জনক্ষম। একটা মামাতো ভাই আছে পড়াশুনায় খুব ভাল বিদেশে গিয়ে পড়তে চায়। নিঝুম তার পড়ার খরচ চালায়।এছাড়াও মামাত বোন আছে তার চেয়ে কয়েক বছরের বড় কোন চাকরি করে না।তার বয়স বেড়ে যাচ্ছে বিয়ে দিতে হবে।সংসার চালাতে অনেক টাকার দরকার।মামি আগে নিঝুম কে এখানে রাখতে চায় নি মামা জোর করে এনেছিল।যতদিন মামা সুস্থ ছিল নিঝুমকে ভালভাবেই বড় করেছেন।এখন নিঝুম তার শোধ দিতে চায়।তাই সংসারের সমস্থ খরচ চালায় তাই মামিও এখন নিঝুম কে পছন্দ করে কারন নিঝুম যা ইনকাম করে সব সংসারের পিছনে খরচ করে।

নিজের ঘরে ফিরে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে কপালের উপর হাত রেখে চোখ বন্ধ করতেই দুশ্চিন্তারা এসে ভীড় জমালো। চাকরিটা ছেড়ে দিলে সংসার কিভাবে চলবে?মামি ওকে বাড়িতে রাখবে কিনা সন্দেহ আছে।সংসারে ইনকাম করার মত আর কেউ নেই। ভেবেই নিঝুম ভয়ে পড়ে গেল।পরক্ষনেই গাঁ ঝেড়ে নিজেই নিজেকে বলল,

–” যাই হয়ে যাক এত অপমানের পর ওই অফিসে আর চাকরি করা যায় না। ছোট্ট জীবনে আত্মসম্মানই না থাকলে আর রইল কী? কাল গিয়ে রিজাইন দিয়ে দিবে।নতুন একটা চাকরি খুজতে হবে।

পরদিন সকালে রুপ অফিসে গেল।অর্কিডের দরজায় দাঁড়িয়ে বলল

–“স্যার আসব…?

অর্কিড বাঁকা হাসল–” জ্বি আসুন

নিঝুমের রিজাইন লেটার দিতে ইচ্ছা করছে না তাও লেটার টা এগিয়ে দিল অর্কিডের দিকে।

অর্কিড সাথে সাথেই বলল,–“ধন্যবাদ,কিন্তু মিস নিঝুম আপনি কি জানেন আপনি চাইলেই এই মুহূর্তে চাকরিটা ছাড়তে পাড়বেন না।

Related Story

নিঝুম ভ্রু কুচকাল,–“কেন ….???

–“আপনার রিজাইন গ্রহন করা হল কিন্তু আগামি মাস পর্যন্ত আপনার কাজ টা করতে হবে মানে যতক্ষন মালিক পক্ষ চাচ্ছে আপনি এখানে কাজ করতে বাধ্য।মালিক পক্ষ চাইলে যখন তখন যে কাউকে বরখাস্ত করতে পারে কিন্ত কর্মচারী চাইলেই চাকরি ছাড়তে পাড়ে না। চাকরি ছেড়ে দিতে চাইলে ১ মাস আগে সেটা জানাতে হবে কারন আপনার পদের জন্য নতুন নিয়োগ দিতে ১ মাসের মত সময় লাগবে সে পর্যন্ত আপনার দায়িত্ব পালন করতে হবে। রুলসটা নিশ্চয় আপনার জানা আছে।

নিঝুম মাথা নাড়ল,–“ঠিক আছে আমি আসব। নিঝুম হাঁফ ছেড়ে বাঁচল (যাক বাবা নতুন কাজ খোজার জন্য ১ মাস সময় পাওয়া গেল মনে মনে)

অর্কিড বলল,–“আসবেন না এসে গেছেন…. যান নিজের ডেস্কে যান।

পরবর্তী পর্বের জন্য ক্লিক করুন :>> চলবে

Writer :- মোনা হোসাইন

Leave a Comment