Golperjogot

Golperjogot

প্রেম কাহিনী – স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প পর্ব 1 | Prem Kahini

Prem Kahini 

Raj Choudhuri { Part 1 }


তিস্তা নদীর পাড়ে বসে সাইফুল পানির দিকে তাকিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন।
আজ স্কুল থেকে ফেরার পথে সে ঝর্ণাকে একটা চিঠি দিয়েছে। চিঠি নিয়ে ঝর্ণা যে রকম রাগের সঙ্গে তাকিয়েছিল, তাতে করে বেপরােয়া স্বভাবের সাইফুল প্রথমে একটু ভয় পেলেও পরক্ষণে বলেছিল,
রাগ করাে আর যাই করাে, চিঠিটা পড়ার পর করাে। চিঠিটা কি সে না পড়ে ছিড়ে ফেলেছে, না-পড়ে ছিড়েছে? যদি পড়ে থাকে, তা হলে সে কি করবে, এই কথাই সে ভাবছে। নদীর স্রোতের কুলকুল ধ্বনি তার কানে প্রবেশ করছে।

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। রাখাল ছেলেরা নদীর চর থেকে গরু-ছাগল নিয়ে বাড়ি ফিরছে। নানা রকম পাখি দলবেঁধে কিচির মিচির করতে করতে নিজেদের বাসায় ফিরে যাচ্ছে। সাইফুল প্রতিদিন সন্ধ্যে পর্যন্ত নদীর পাড়ের এই জায়গায় বসে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে আনন্দ উপভােগ করে। আজ কোনাে দিকে তার খেয়াল নেই গ্রামের মসজিদ থেকে মাগরিবের আযান শুনে ত্রস্তাপদে নামায পড়ার জন্য মসজিদের দিকে যেতে যেতে ভাবল, ঝর্ণাকে চিঠিটা দেয়া বােধ হয় ঠিক হয় নি।

উত্তর বাংলার কুড়িগ্রাম জেলার তিস্তা নদীর পূর্ব দিকে অনন্তপুর গ্রাম। রাক্ষসী তিস্তা এই গ্রামের অনেক লােককে পথে বসিয়েছে। তবু যেন তার ক্ষুধা মিটছে না ।

ঘরবাড়ি গ্রাস করেই চলেছে। গ্রামের মাঝখানে সেমীপাকা হাইস্কুল। তার পাশে সরকারি ফ্রি প্রাইমারি স্কুল। সাইফুলের পূর্ব পুরুষদের বাড়ি ছিল এই গ্রামের পশ্চিম প্রান্তে। তিস্তা তখন তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যেত। হঠাৎ একদিন তিস্তা ক্ষেপে গিয়ে ঘরবাড়ি গ্রাস করতে লাগল । তখন সইফুলের দাদাজীর আমল । ওর দাদাজীর নাম কলিম উদ্দিন। কলিম উদ্দিনের বাস্তুভিটা, জমি-জায়গা, পুকুর-ডােবা ও আগান- বাগান নেহাত কম ছিল না। তিস্তা সবকিছু কেড়ে নিয়ে তাকে পথের ভিখারি করে দিল।

শেষে কলিম উদ্দিন একই গ্রামের শ্বশুরের একটা পড়াে জমিতে দু'খানা বেড়ার ঘর উঠিয়ে বাস করতে লাগলেন। বার মাস যার বাড়িতে কামলারা কাজ করত, সে এখন অন্যের বাড়িতে কামলাগিরী করে সংসার চালায়। তার একমাত্র ছেলে ওসমান।

সেও বাপের সঙ্গে অন্যের ক্ষেত-খামারে কামলাগিরী করছে। যে বছর এক রকম নিঃস্ব হয়ে কলিম উদ্দিন এই গ্রামে চলে আসেন, সে বছর ওসমান এস. এস. সি’তে ভালাে রেজাল্ট করেও আর পড়াশােনা করতে পারে নি। কলিম উদ্দিন নিজের ভাগ্যের দুরাবস্থার কথা চিন্তা করে দিনের পর দিন ভেঙ্গে পড়তে লাগলেন। কলিম উদ্দিন ধার্মিক লােক। তিনি ছেলেকে ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে মানুষ করেছেন।

পড়ুন  মুখোশ – রহস্যময়, রোমান্টিক প্রেমের গল্প পর্ব ১৩ | মোনা হোসাইন

ওসমানের কলেজে পড়ার খুব ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তার আব্বার শরীরের দিকে তাকিয়ে এবং আর্থিক দুরাবস্থার কারণে সংসারে হাল ধরতে বাধ্য হয়েছে। তার মামাদের অবস্থাও তেমন ভালাে নয়। কোনাে দিকে আশার আলাে দেখতে না পেয়ে ওসমান গ্রামের লােকজনের ক্ষেত-খামারে কাজ করে সংসার চালাতে লাগল। একবার রংপুরে অথবা ঢাকায় এসে চাকরির চেষ্টা করবে বলে তার আম্মাকে বলেছিল ।
জেবুন্নেসা তখন বলেছিলেন, তুই আমাদের একমাত্র ছেলে। তাের আব্বা আর খাটাখাটনি করতে পারে না। তুই শহরে গিয়ে চাকরি করে কবে টাকা পাঠাবি তার কোনাে ঠিক আছে। ততদিন আমাদের চলবে কি করে? এই কথা শােনার পর সে শহরে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে দেশেই কামকাজ করতে লাগল । আর রাতে কয়েক ছেলেকে প্রাইভেট পড়িয়ে যা আয় করত, তা থেকে কিছু জমা রাখত। এভাবে কয়েক বছর কঠোর পরিশ্রম করে সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতা এনেছিল।

 

এক সময় আব্বা-আম্মার জেদাজেদিতে মামাতাে বােন মালেকাকে বিয়ে করে। বিয়ের তিন বছর পর মালেকা একটা কন্যা সন্তান প্রসব করে। কলিম উদ্দিন নাতনির নাম রাখলেন মনিরা বেগম । মনিরা জন্মাবার এক বছর পর দেড় মাসের ব্যবধানে কলিম উদ্দিন ও জেবুন্নেসা মারা যান। ওনাদের মৃত্যুর পাঁচ বছর পর সাইফুলের জন্ম হয়। ওসমান সাইফুলকে প্রথমে ফোরকানিয়া মাদ্রাসায় আরবি পড়তে দেয়। আর একটু বড় হতে স্কুলে ভর্তি করে।

সাইফুল ছােট বেলা থেকে খুব মেধাবী পড়াশােনায়ও খুব মনােযােগী। কিন্তু ভীষণ চঞ্চল ও বেপরােয়া। পাড়ার ছেলেদের সাথে নিজেও যেমন মারামারি, ঝগড়া-ঝাটি করে, তেমনি অন্যদের দ্বারা ঐ সব করাতেও ওস্তাদ।

সাইফুল যখন কিশাের বয়সে পড়ল তখন ওসমান ছেলেকে কড়া শাসনে ধর্মীয় শিক্ষা। দিয়ে সেই মতাে চালাত। হাই স্কুলে ভর্তি হয়ে তার স্বভাবের সবকিছু পরিবর্তন হল।
কিন্তু বেপরোয়া ভাবটা রয়ে গেল। সমাজের কেউ কিছু অন্যায় করলে, তার বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাকে ছেড়ে কথা কয় না। শিশুকাল থেকে সাইফুল একটু রােগা। এখন সে তরুণ। মাঝারি ধরনের লম্বা একহারা শরীর। গায়ের রং ঠিক ফর্সা নয়, ঈষৎ চাপা। উন্নত নাক, মুখের দিকে তাকালে বেপরােয়া ভাবটা বেশ বােঝা যায়।


পড়ুন  মুখোশ সব পর্বের লিংক । মোনা হোসাইন

নিচের ক্লাস থেকে সে ফাস্ট হয়ে আসছে। সেই জন্যে তার বেপরোয়া স্বভাব জেনেও স্কুলের ছাত্র- ছাত্রীরা এমন কি শিক্ষকরাও তাকে মনে মনে ভালবাসে। এই গ্রামে মেয়েদের জন্য কোনাে আলাদা স্কুল না থাকায়, ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে ক্লাস করে। প্রত্যেক ক্লাসে ছেলেরা একদিকে বসে, আর মেয়েরা অন্য দিকে । মধ্যখান দিয়ে যাতায়াতের রাস্তা।

সরকারি ফ্রি প্রাইমারী স্কুল থেকে সাইফুল বৃত্তি নিয়ে পাশ করে হাই স্কুলে ক্লাস সিক্সে ভর্তি হয়। প্রথম যেদিন সাইফুল স্কুলে আসে, সেদিন ঝর্ণার দিকে সে বারবার তাকিয়ে দেখেছে । ক্লাসের সব মেয়েদের চেয়ে বর্ণাকে বেশি সুন্দরী মনে হয়েছিল।
ছোটবেলা থেকে সে যেকোনাে সুন্দর জিনিসকে ভালবাসে। প্রাকৃতিক দৃশ্য তাকে সব থেকে বেশি আকর্ষণ করে। তাই সে খেলাধূলার চেয়ে নদীর পাড়ে ঘুরে ঘুরে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে।

ঝর্ণাকে দেখার পর থেকে তার সঙ্গে কথা বলার জন্য সাইফুলের মন ছটফট করত। কয়েকদিন পর একদিন টিফিনের সময় ঝর্ণার কাছে গিয়ে তার নাম জিজ্ঞেস করেছিল। ঝর্ণা তার দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে চুপ করেছিল। তখন তার সাথের মেয়েটা ঝর্ণার নাম বলে। আরাে অনেক পরে সাইফুল তার আব্বর নাম জেনেছিল হামিদ চেয়ারম্যান। ঝর্ণা হাই স্কুলের মর্নিং সিফটে বেতন দিয়ে ক্লাস করে।

Click Here For Next :চলবে

Writer :- Raj Choudhuri

Leave a Comment

Home
Stories
Status
Account
Search