Golperjogot

Golperjogot

প্রেম কাহিনী – স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প পর্ব 10 | Golpo

প্রেম কাহিনী
পর্ব,,,১০
লেখকঃরাজ

হামিদ সাহেব কপাল কুচকে বললেন, তার আবার কি খবর?
তােমার মেয়ে ভালবাসা করে বিয়ে করেছে। ছেলেটার বাপের কি ব্যবসা ছিল। সে মারা যেতে ছেলে সেই ব্যবসা চালাচ্ছে। ব্যবসার জন্যে তার লাখ খানেক টাকা দরকার। সেই জন্যে তােমার মেয়ে এসেছে। সে এসে যে কথা বলেছে তা মিথ্যে।
হামিদ সাহেব নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলেন না। হতবাক হয়ে চিন্তা করতে লাগলেন, আমার মেয়ে হয়ে এরকম কাজ করবে তাও কি সম্ভব? আবার চিন্তা করলেন, সে যখন নিজের মুখে বলেছে, তখন তাে বিশ্বাস করতেই হয়। তারপর খুব রাগের সঙ্গে বললেন, এ বিয়ে আমি কখনাে মেনে নিতে পারব না। আমার মান ইজ্জৎ সব যাবে। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবকে আমি কোন মুখে একথা জানাব? ডাক তাকে, তার। মুখে আমি শুনতে চাই।

আফসানা বেগম মেয়েকে ডেকে নিয়ে এলেন। ঝর্ণা মায়ের সঙ্গে এসে জড়সড় হয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে ভয়ে কাঁপতে লাগল।
হামিদ সাহেব গম্ভীর স্বরে বললেন, তাের মাকে যা বলেছিস তা কি সত্যি? ঝর্ণা ভয়ে কথা বলতে পারল না। মাথা নিচু করে চুপ করে কাপতেই লাগল। কি হল কিছু বলছিস না কেন?
ঝর্ণা কোনাে রকমে কাঁপা গলায় বলল, জি, সত্যি।

হামিদ সাহেব হুংকার দিয়ে উঠলেন, স্বীকার করতে তাের লজ্জা করল না। বড় আশা করে উচ্চ শিক্ষা নেয়ার জন্য তােকে ভার্সিটিতে ভর্তি করেছিলাম। আর তুই কিনা এমন জঘন্য কাজ করলি? যার ফলে আমি কারাে কাছে মুখ দেখাতে পারব না। কোথাকার।
কেমন ছেলে, কার ছেলে, তা জানাবার দরকারও মনে কবলি না? যে ছেলে বিয়ের পরপর স্ত্রীকে টাকার জন্য তার বাবা-মার কাছে পাঠায়, সে কি ধরণের ছেলে আমার জানা আছে।
তাের যদি বুদ্ধি থাকত, তা হলে বুঝতে পারতিস, আমাদের সব কিছু জেনে তােকে টাকা কামাবার টোপ হিসাবে ব্যবহার করবে বলে বিয়ে করেছে। তুই না বুঝতে পারলেও আমি পেরেছি। তারপর স্বর নামিয়ে বললেন, খুব ভুল করে ফেলেছি। মা । যাক যা হবার
হয়েছে; তাের আর ফিরে যাওয়ার দরকার নেই। আমি ডিভাের্সের জন্য উকিলি চিঠি পাঠিয়ে দিচ্ছি। মনে হয় লাখ দু’য়েকের মধ্যে মিটমাট করে ফেলতে পারব।

বাবার স্বর নরম হতে দেখে ঝর্ণা সাহস করে বলল, তা হয় না বাবা। আমি তােমার সঙ্গে একমত নই। সে আর যাই হােক অত ছােট নয়।
হামিদ সাহেব মেয়ের কথা শুনে আবার রেগে গেলেন। তবু সংযত হয়ে গম্ভীরস্বরে বললেন, তুই এত লেখাপড়া করলে কি হবে, মানুষ চেনার জ্ঞান তাের এখনও হয়নি। আমি যা বললাম তাই হবে।
ঝর্ণা দৃঢ় কণ্ঠে বলল, আমি তা মেনে নেব না। যাকে ভালবেসে বিয়ে করেছি, তাকে বাদ দিয়ে অন্য ছেলেকে আবার বিয়ে করতে পারব না। বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করব, তবু তা পারব না।

হামিদ সাহেব এতক্ষণ অনেক ধৈৰ্য্য ধরে ছিলেন, এবার সীমার বাইরে চলে গেলেন। চিৎকার করে বললেন, তা হলে তুই জাহান্নামে যা, আমি আর তাের মুখ দেখতে চাই না। কাল যেন তাের ঐ মুখ আমি আর না দেখি। দূর হয়ে যা আমার সামনে থেকে। বিষ খেয়ে মর আর সেই ছােটলােকের ঘরে ফিরে যা, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। তােকে আমার মেয়ে ভাবতে ঘৃণা হচ্ছে। এক্ষুনি বেরিয়ে যা আমার ঘর থেকে। আর কোনােদিন এ মুখাে হবি না ।

বাবার কথা শুনে ঝর্ণার মনে প্রচণ্ড আঘাত লাগল। সে কাঁদতে কাঁদতে বলল, হ্যা, তাই চলে যাব বাবা। আর কোনােদিন তােমাদের কাছে আসব না। কথা শেষ করে সে ছুটে বেরিয়ে নিজের রুমে ঢুকে দরজা খিল দিয়ে বিছানায় উপুড় হয়ে ফুলে ফুলে কাঁদতে লাগল।
আফসানা বেগম মেয়েকে বোেঝাবার জন্য তার পিছনে যেতে উদ্দত হলে হামিদ সাহেব জোর গলায় বললেন, তুমি ওর কাছে যাবে না। গেলে তােমাকেও চিরকালের জন্য এ ঘর ত্যাগ করতে হবে।
আফসানা বেগম স্বামীর রাগ জানেন, চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বললেন, মেয়েটা যদি কিছু অঘটন ঘটিয়ে ফেলে? হামিদ সাহেব বললেন, অঘটন যা ঘটাবার তা তাে ঘটিয়েই ফেলেছে, আবার কি ঘটাবে? আফসানা বেগম আর কিছু না বলে বসে পড়লেন।
হামিদ সাহেব অনেক বছর ধরে ধলিবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। আর্থিক অবস্থা খুব ভালাে। ওনার তিন ছেলে এক মেয়ে । তিন ছেলেই গ্রাজুয়েট। বড় ছেলে আসার চাষবাস দেখাশােনা করে। বিরাট ইরি প্রজেক্ট আছে। মেজ ছেলে মারুফ রংপুর টাউনে একটা পাঁচতলা আবাসিক হােটেল করে সেটা পরিচালনা করে। ছােট ছেলে সবুজ আমেরিকায় উচ্চ শিক্ষা নিতে গিয়েছিল । শিক্ষা শেষে চাকরি করতে করতে একজন আমেরিকান মেয়েকে বিয়ে করে সেখানেই থাকে। ঝর্ণা সকলের ছােট।
ঝর্ণা সারা রাত কেঁদে কাটাল। অনেকবার চিন্তা করেছে, গলায় ফাঁস দিয়ে। আত্মহত্যা করবে। পরক্ষণে ভেবেছে এখানে আত্মহত্যা করলে বাবাকে আরাে অপমানিত হতে হবে। যদি একান্ত করতে হয়, ঢাকাতে গিয়েই করবে। ভােরে কেউ জাগার আগে সে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল। ঢাকায় আমিনদের বাসায় যখন পৌছাল তখন রাত আটটা। আমিন তখনও বাসায় ফিরে নি।

শায়লা বেগমবৌ-এর চেহারা দেখে যা বােঝার বুঝে গেলেন। আমিন অনেক রাত্রে ফিরে সব কিছু শুনে বেশ কিছুক্ষণ গুম হয়ে বসে রইল। তারপর বলল,তােমার চলে আসা উচিত হয় নি। বাবা-মাকে না জানিয়ে বিয়ে করলে সব বাবা-মাই ঐ রকম

Leave a Comment