Golperjogot

Golperjogot

প্রেম কাহিনী – স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প পর্ব 11 | Golpo

Prem Kahini 

Raj Choudhuri { Part 11 }

শায়লা বেগমবৌ-এর চেহারা দেখে যা বােঝার বুঝে গেলেন। আমিন অনেক রাত্রে ফিরে সব কিছু শুনে বেশ কিছুক্ষণ গুম হয়ে বসে রইল। তারপর বলল,তােমার চলে আসা উচিত হয় নি। বাবা-মাকে না জানিয়ে বিয়ে করলে সব বাবা-মাই ঐ রকম বকাবকি করেন।

কয়েকদিন থাকা তােমার উচিত ছিল। থাকলে দেখতে, রাগ পড়ে গেলে তারা কিছু একটা ব্যবস্থা করতেন। কিছুদিন যাক, ওনাদের রাগও পড়ক। তখন। গেলে আর এ রকম করবেন না। জামাই এর ব্যবসার জন্য টাকার দরকার ভেবে। নিজেরাই টাকাটা দিয়ে দেবেন।

ঝর্ণার মন এমনিই খারাপ, তার উপর এরকম কথা শুনে তার মনে খুব কষ্ট হল। বলল, আমি মরে গেলেও সেখানে আর যাব না। এত কিছু হয়েছে জেনেও যেতে বলছ। কি করে?

আমিন বলল, তা হলে এক কাজ কর, তােমার এক ভাই তাে আমেরিকায় থাকেন, তার কাছে চিঠি দিয়ে টাকাটার ব্যবস্থা করতে বল ।

ঝর্ণা যেন ক্রমশ আমিনের আসল মতলব বুঝতে পারছে। তখন তার বাবার কথা মনে পড়ল- ‘ছেলেটা টাকা কামাবার টোপ হিসাবে ব্যবহার করবে বলে তােকে বিয়ে করেছে।’ বেশ রাগের সঙ্গে বলল, তাও আমার দ্বারা সম্ভব নয়। আচ্ছা, একটা ব্যাপার। বুঝতে পারছি না, আমাদের বিয়ের এখনও একমাস হয় নি; এরই মধ্যে আমার বাবাভাইদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছ কেন?

আমিনের ঠোটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল। বলল, বুঝবে, আস্তে আস্তে সব বুঝবে। এখন ও কথা বাদ দিয়ে তােমার বাবা বা আমেরিকার ভাইয়ের কাছ থেকে যত তাড়াতাড়ি পার টাকার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এবার চল খেতে দেবে। ভার্সিটি খােলার পর ঝর্ণা ক্লাস করার কথা আমিনকে বলল।

আমিন বিদ্রুপের হাসি হেসে বলল, মেয়েদের বেশি লেখাপড়া করে লাভ কি শুনি? যতই উচ্চডিগ্রী নিক না কেন, সংসারের কাজ ও ছেলে-পুলে মানুষ করা তাদেরকে করতেই হবে। তবু যদি তােমার সখ হয়, তা হলে বাবা-ভাইদের কাছ থেকে মালপানি আনার ব্যবস্থা কর। তারপর না হয় দেখা যাবে।

বিয়ের আগে কি বলেছিলে মনে নেই?মনে থাকবে না কেন? জান না বুঝি, বিয়ের আগের কথা বিয়ের আগে পর্যন্ত ঠিক থাকে। বিয়ের পরে আর সেগুলাের কোনাে মূল্য থাকে না, বাসি ফুলের মতাে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হয়। ওসব পুরােন প্যাচাল বাদ দিয়ে টাকার ব্যবস্থা কর। এরপর থেকে ঝর্ণার জীবনে কালাে ছায়া নেমে এল। মাস দুয়েক স্বামী, শাশুড়ী অনেক বুঝিয়ে ও ভয় দেখিয়ে যখন ঝর্ণাকে দিয়ে টাকা আদায় করাতে পারল না তখন তারা তার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করতে লাগল ।

স্বামী-স্ত্রী একরুমে থাকলেও খাট আলাদা, শুধু রাতে দৈহিক সম্পর্ক ছাড়া আর কোনাে সম্পর্ক নেই। আমিন প্রয়ােজন ছাড়া তার সঙ্গে কথা বলে না। প্রয়ােজনের কথাগুলােও খুব গরম মেজাজে বলে। শাশুড়ীও তাকে একদম দেখতে পারেন না। সংসারের সব কাজ তাকে দিয়ে করান।

কাজের খুঁৎ ধরে মােটা মােটা কথা শােনান। বাপের বাড়ি থেকে কিছু আনতে পারে নি। বলে যখন তখন খোটা দেন। ঝর্ণা ভাগ্যের কথা ভেবে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে সব কিছু সহ্য করে যাচ্ছে।

একদিন বিকেলে আমিন বাসায় ফিরে হাসি মুখে ঝর্ণাকে বলল, বিয়ের পর থেকে কাজের চাপে তােমাকে কোথাও বেড়াতে নিয়ে যেতে পারি নি। আজ এক বন্ধু পার্টি দিচ্ছে, সেই পার্টিতে তােমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক অনুরােধ করে বলেছে।

সন্ধ্যে সাড়ে সাতটায় পার্টি শুরু হবে। আমরা সাতটার সময় বেরােব। তারপর ব্রীফকেস খুলে একটা প্যাকেট বের করে তার হাতে দিয়ে বলল, তােমাকে তাে আজ পর্যন্ত কোনাে ভালাে জামা-কাপড় দিই নি । তাই এগুলাে কিনে আনলাম। বন্ধুর পার্টিতে তাে আর যা-তা পরে যাওয়া যায় না।

অনেক দিন পর স্বামীকে হাসি মুখে কথা বলতে দেখে ও তাকে পার্টিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য দামী কাপড় কিনেছে দেখে ঝর্ণা মনে মনে খুশী হলেও বাইরে তা প্রকাশ করল না। শুধু একটু ম্লান হাসি হেসে বলল, আমার সৌভাগ্য।

পার্টি বলতে কি বােঝায় ঝর্ণা আগে তা জানত না। এখানে এসে যেন আজ আর একটা জগৎ দেখল। পার্টিতে তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, প্রৌঢ়-প্রৌঢ়া সবাই আছে। আমিন তার বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে একটু পরে আসছি বলে সেই যে গেছে, এক ঘন্টা পার হয়ে গেল, তবু তার পাত্তা নেই। স্বামীর বন্ধুকে ঝর্ণার খুব অভদ্র বলে মনে হল। কথা বলার সময় নানান ছুতােয় গায়ে হাত দিচ্ছে। একবার তাে বলেই ফেলল, আপনার মতাে এত সুন্দর ফিগারের মেয়ে আমি খুব কম দেখেছি।

আপনার ভাবি ভিতরে আপ্যায়নের কাজে ব্যস্ত আছে এলে পরিচয় করিয়ে দেব। দেখবেন, সেও সুন্দরী। তবে আপনার মতাে এত সুন্দর ফিগার তার নয়। এই রকম ফিগার না হলে বিছানায় আনন্দ পাওয়া যায় না। পরিচয়ের সময় তার। হুদা বলেছিল। এখন তার নির্লজ্জ ব্যবহার ও কথাবার্তা দেখে শুনে ঝর্ণার মনে হল, লােকটার নাম বেহুদা হলে ঠিক হত ।

পার্টির কাজ শেষ হতে রাত দশটা বেজে গেল। খাওয়া-দাওয়ার পর সবাইকে মদ খেতে দেখে ঝর্ণা খুব অবাক হল। এক ফাঁকে হুদা তার গিন্নীকে নিয়ে এসে ঝর্ণার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। তার নাম মিলি। ঝর্ণার মনে হল, মিলি তার থেকে কম সুন্দরী নয়। ডানা কাটা পরীর মতাে। সবাইর সঙ্গে হেসে হেসে কথা বলছে। শাড়ি-ব্লাউজ যেভাবে পরেছে, তাতে করে সবাই তার দিকে লােলুপ দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। সেদিকে মিলির কোনাে খেয়াল নেই। সবাইকে নিজের উদভ্রান্ত যৌবন দেখিয়ে বেড়ানই যেন।

তার প্রধান কাজ। পাতলা ফিনফিনে জর্জেটের শাড়ি পরনে, গায়ে তিন ইঞ্চি বহরের সাণ্ডো ব্লাউজ। ফর্সা ধব ধবে প্রায় গােটা পিঠটা দেখা যাচ্ছে। ব্লাউজের কাপড় এত পাতলা যে, ব্রা দেখা যাচ্ছে। ব্রাটা এমনভাবে পরেছে, যার ফলে তার সুউচ্চ উন্নত বক্ষ দুটো অর্ধেক বেরিয়ে রয়েছে। বুকের ওপরকার শাড়িটা সরে গিয়ে দুই পাহাড়ের গিরীপথ দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে জর্জেটের শাড়িটা বুক থেকে খসে পড়ে যাচ্ছে।

সেটাকে বেশি সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে যথাস্থানে রাখছে। ঝর্ণার মনে হল, মিলির যৌবন। দেখবার জন্য যেন এই পার্টির আয়ােজন। আর একটা জিনিস সে লক্ষ্য করল, পার্টির প্রধান অতিথিকে নিয়ে যেন মিলি বেশি ব্যস্ত। আর তার স্বামী অন্যান্য মেয়েদের সঙ্গে বেশ হাসাহাসি করছে। রাত যত বাড়তে লাগল, তত যেন পার্টির রং বদলে যেতে লাগল। এক সময় বড় বাতি অফ করে গাড় নীলাভ বাতি জ্বেলে দেয়া হল। ঝর্ণার গা ছম ছম করে উঠল। গােটা রুমটা কুয়াসার মত আচ্ছন্ন হয়ে গেল। কারাে মুখ চেনা যাচ্ছে না। নারী-পুরুষ যেন মিশে এক হয়ে যাচ্ছে। কে কাকে জড়িয়ে ধরছে সেদিকে কেউ লক্ষ্য করছে না, আর বাধাও দিচ্ছে না। ঝর্ণা এইসব দেখে খুব ব্ৰিত বােধ।

করছিল। হঠাৎ একজন প্রৌঢ় ভদ্রলােক এসে তার হাত ধরে বলল, আপনি একা কেন? আসুন একটু ফুর্তি করি । ঝর্ণার গােটা শরীরটা ঘৃনায় রি রি করে উঠল। ঝটকা মেরে আমিনের বলিষ্ঠ হাতের চড় খেয়ে ঝর্ণার মাথা ঘুরে গেল। গালটা ব্যথায় টনটন। করে উঠল। তার চোখ দুটো দিয়ে পানি পড়তে লাগল। গালে হাত বুলাতে বুলােতে ভাবল, আমিন যে এত নিচ, এত ছােটলােক, তা আগে বােঝা উচিত ছিল। বারবার।

তার বাবার কথা মনে পড়তে লাগল। তখন যদি বাবার কথামতাে আর ফিরে না আসত, তা হলে কত ভালাে হত। অনুশােচনায় তার মন খুব ভেঙ্গে পড়ল। ড্রেস চেঞ্চ করার কথা ভুলে গিয়ে বিছানায় শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ল।

প্রায় দু’বছর হতে চলল, শত লাঞ্ছনা, গঞ্জনা ও শংকর মাছের চাবুকের মার খেয়ে তাকে বিভিন্ন পার্টিতে যেতে হচ্ছে। ঝর্ণা ক্রমশঃ অতিষ্ঠ হয়ে উঠল। অনেকবার ভেবেছে, আত্মহত্যা করে এই পংকিল জীবনের অবসান ঘটাতে। কিন্তু পারে নি। শুধু ভাবে কি করে এই দুর্বিসহ জীবন থেকে পরিত্রাণ পাবে। কোনাে উপায় দেখতে না পেয়ে রাতকে রাত কেঁদে কাটাচ্ছে।

এদিকে আমিনের ব্যবসা দিনে দিনে ফুলে ফেঁপে উঠছে। গাড়ি কিনেছে। ঘরের পুরােন আসবাবপত্র বিক্রি করে নতুন কিনেছে। আগে পার্টিতে মদ খেত। এখন পুরাে মদখাের হয়েছে। প্রতিরাতে মদ খেয়ে ঝর্ণার উপর অত্যাচার করে। এবার সে একটা খুব বড় কন্ট্যাকের জন্য পার্টি দেবে। সে কথা একদিন ঝর্ণাকে জানিয়ে বলল, প্রথম যেদিন আমার বন্ধুর পার্টিতে তােমাকে নিয়ে গিয়েছিলাম, সেই পার্টিতে বন্ধুপত্নী যে ডাইরেক্টরের মন যুগিয়ে অর্ডার বাগিয়েছিল, তার সঙ্গে এবারে আমি কন্ট্যাক্ট করেছি।

এবারের অর্ডার দশলাখ। এটা যদি তুমি বন্ধুপত্নীর মতাে বাগাতে পার, তা হলে তুমি যা চাইবে তাই দেব।

ঝর্ণা শুনে চমকে উঠে ভাবতে লাগল, এতদিন সে নানান ছলচাতুরি করে নিজের ইজ্জৎ বাচিয়ে সব কাজ হাসিল করেছে। কিন্তু যে লােককে মিলি দেহ দিয়ে কাজ আদায় করেছে, তাকে দেহ না দিয়ে কি সে সাকসেসফুল হতে পারবে? লােকটাকে সেদিন দেখে মনে হয়েছে, বয়স হলে কি হবে, ভীষণ কামুক। মেয়েদের দিকে কি রকম লােভাতুর দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিল। তার উপর মদখাের।

তাকে চুপ করে থাকতে দেখে আমিন জিজ্ঞেস করল, কি ভাবছ? কিছু বললে না যে? ঝর্ণা রাগের সঙ্গে প্রতিবাদ করতে গিয়েও থেমে গেল। সামাল নিয়ে বলল, কি আর ভাববাে, তকদিরের কথা ভাবছিলাম

আমিন বলল, তকদিরকে মেনে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ। আমিন যেদিন অফিসে পার্টি দিবে, সেদিন সকালে অফিসে যাওয়ার সময় ঝর্ণাকে বলল, সন্ধ্যের আগে রেডী হয়ে থেক, এসে নিয়ে যাব। আজ আমার শরীর খারাপ, পার্টিতে যেতে পারব না।

আমিন বিরক্ত হয়ে বলল, যাব না বললেই হল, ওসব বাজে অজুহাত বাদ দিয়ে যা বললাম তাই করাে । তারপর সে বেরিয়ে গেল।ঝর্ণা সারাদিন চিন্তা করল, কি করবে? না গেলে আমিন নিশ্চয় খুব মারধর করবে। আর গেলে কি ইজ্জৎ বাঁচাতে পারবে? আজকাল শিক্ষিত সমাজে মদ আর মেয়ে মানুষ যেন একটা ফ্যাশানে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এরা কেমন শিক্ষিত? ব্যবসা করে টাকা কামনর

Leave a Comment