Golperjogot

Golperjogot

প্রেম কাহিনী – স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প পর্ব 12 | Golpo

ঝর্ণা সারাদিন চিন্তা করল, কি করবে? না গেলে আমিন নিশ্চয় খুব মারধর করবে। আর গেলে কি ইজ্জৎ বাঁচাতে পারবে? আজকাল শিক্ষিত সমাজে মদ আর মেয়ে মানুষ যেন একটা ফ্যাশানে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এরা কেমন শিক্ষিত? ব্যবসা করে টাকা কামনর জন্য নিজের বৌদের ইজ্জৎ বিলিয়ে দিতে দ্বিধাবােধ করে না। বরং গর্ববােধ করে।

অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিল, আজ পার্টিতে যাবে না। তাতে কপালে যা আছে তাই হবে। | সন্ধ্যের সময় আমিন বাসায় ফিরে ঝর্ণাকে তৈরি থাকতে না দেখে বলল, কি। ব্যাপার, এখনও তুমি তৈরি হও নি? ঝর্ণা স্বামীর দু’পা জড়িয়ে ধরে বলল, মাফ কর, আজ পার্টিতে যেতে পারব না।।

আমিন পা দিয়ে তাকে ঠেলে দিয়ে রাগের সঙ্গে বলল, ওসব প্যানপ্যানানি আমি পছন্দ করি না। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নাও। ঝর্ণাকে বসে কাঁদতে দেখে আমিন তার। হাত ধরে তুলে বলল, তুমি না গেলে আজ যেমন আমার ইজ্জৎ ধুলাের সঙ্গে মিশে যাবে, তেমনি দশলাখ টাকার অর্ডারটাও হাত ছাড়া হয়ে যাবে। ভালাে চাওতাে যা বললাম করাে, নচেৎ শংকর মাছের চাবুক দিয়ে যা করার করব। শংকর মাছের চাবুকের কথা শুন ঝর্ণার মুখ বির্বণ হয়ে গেল।

আগে এক পার্টিতে যাওয়ার দিন সত্যি সত্যি ঝর্ণার শরীর খারাপ ছিল। সেই জন্যে পার্টিতে যেতে চাইনি। সেদিন আমিন তাকে সদ্য কিনে আনা শংকর মাছের চাবুক দিয়ে ধােলাই করেছিল। সেই ধােলাই খেয়ে কয়েকদিন ঝর্ণাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়েছিল। সমস্ত শরীর ফেটে । গিয়ে রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছিল। এখনও মারের দাগ আছে। সেই মারের কথা মনে পড়তে। শেষমেষ ঝর্ণা পার্টিতে গেল।

স্বামীর বন্ধুপত্নী মিলির মতাে ব্যবহার সবাইয়ের সঙ্গে করতে পারল না। কিন্তু খুব চালাকির সঙ্গে ডাইরেক্টরকে পটিয়ে কাজ আদায় করেছে। পাটিতে। অনেক ছলাকলা দেখিয়ে ইজ্জৎ রক্ষা করেছে বটে, কিন্তু দু’চারজন আলাপ করতে করতে। কাছে টেনে নিয়ে দু’একটা চুমাে খেতে ছাড়ে নি। ঝর্ণা ভাবল, আমিনের কথামতাে সে যদি মদ খাওয়া অভ্যাস করত, তা হলে সে ইজ্জৎ বাচাতে পারত না। বাসায় ফিরে আমিন খুশীতে স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরে কয়েকটা চুমাে খেয়ে বলল, তুমি আজ যা করলে, তার জওয়াব নেই। বল কি উপহার চাও? যা চাইবে তাই দেব।

আমিন তাকে জড়িয়ে চুমাে খেতে ঝর্ণার পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঘৃণায় ভরে গেল। ভাবল, পার্টিতে স্ত্রীর এই গালে কত লোেক চুমাে খেয়েছে জেনেও স্বামীর কোনাে। প্রতিক্রিয়া নেই। নিজেকে মুক্ত করে নিয়ে ম্লান হেসে বলল, যে নিঃস্ব সে আবার অন্যকে কি দেবে? আমিন কপাল কুচকে বলল, কথাটা বুঝলাম না? ঝর্ণা বলল, বােঝার আর দরকার নেই। আমি এখন ঘুমাব। বড় ক্লান্তি লাগছে।

আমিন জানে পার্টিতে ঝর্ণার খুব ধকল গেছে। তাই তার কথা শুনে আর কিছু বলল না। ড্রেস চেঞ্জ করার সময় শুধু বলল, যার কাছ থেকে তুমি অর্ডারটা সই করিয়ে। নিলে ওনার নাম আজিজ সাহেব। উনি কি বললেন জান? বললেন, আপনার ওয়াইফ যেমন সুন্দরী তেমনি বুদ্ধিমতী।। | আমিনের কথা শুনে ঝর্ণার পার্টির কথা মনে পড়ল। সবাইয়ের কাছ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে যখন আজিজ সাহেবের কাছে সই করাবার জন্য ফাইলটা খুলে ধরল।

তখন তিনি বললেন, ওটা তাে হবেই। তবে এখানে নয়, পাশের রুমে চলুন। আগে। একটু ফুর্তি করে নিই বলে তার একটা হাত ধরে উঠে দাঁড়ালেন। ঝর্ণা সরে এসে তার গা ঘেঁসে বলল, এত লােকজনের মধ্যে দিয়ে পাশের রুমে গিয়ে জুৎসই ফুর্তি করা যাবে না। কিছু হলেও শান্তি পাওয়া যাবে না। তার চেয়ে। আপনি সময় সুযােগ মতাে কোনাে হােটেলে অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যবস্থা করে আমাকে জানাবেন। তখন আর আপত্তি করব না।

আজিজ সাহেব তাকে শুধু একটা চুমাে খেয়ে মুচকি হেসে বললেন, আপনি শুধু সুন্দরী নন, বুদ্ধিমতীও। তারপর ফাইলটা নিয়ে অর্ডারে সই করে দেন। এখন স্বামীর কাছে আজিক সাহেবের সেই কথা শুনে ঝর্ণা মনে মনে ভয় পেলেও ঠোটে হাসি ফুটিয়ে বলল, আজিজ সাহেব যাই বলুন না কেন, তুমি কি মনে কর? আমিন হেসে উঠে বলল, আমি তােমাকে তাই জেনেই তাে ভালবেসে বিয়ে করেছি।

আমিনের মুখে ভালবাসার কথা শুনে ঝর্ণার আবার ঘনায় মনটা ভরে গেল। বলল, আমার আর কথা বলতে ইচ্ছে করছে না, ঘুম পাচ্ছে। বেশ কিছুদিন পর একদিন আমিন অফিস থেকে এসে বলল, আজিজ সাহেব কাল। একটা পার্টি দিচ্ছেন। আজ ফোনে সে কথা জানিয়ে আমাদেরকে নিমন্ত্রণ করলেন।

কথাটা শুনে ঝর্ণা চমকে উঠে বলল, আমি উনার পার্টিতে যেতে পারব না, তুমি। একা যেও। কেন? কেন আবার। সেদিন অনেক কষ্টে ওনার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছি। এবারে তিনি ছেড়ে কথা বলবেন না। ঐ সব নােংরামী জান গেলেও আমি করতে পারব না। ননাংরামী কাজ না করেও তাকে তুমি সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করবে। আমি কি তােমাকে নােংরামী করতে বলেছি?

ডাইরেক্ট না বললেও আমাকে দিয়ে যে কাজ করাচ্ছ, তাতে বােঝা যায়, ইনডাইরেক্ট বলছ। আমিন রেগে উঠে বলল, আমি তােমার অত কথা শুনতে চাই না। কাল তুমিও আমার সঙ্গে আজিজ সাহেবের পার্টিতে যাবে। যদি না যাই? তার পরিণতি তুমি জান ।। জানলেও যাব না। ঠিক আছে, কাল দেখা যাবে।

পরের দিন আমিন ঝর্ণাকে যাওয়ার জন্য প্রথমে অনেক বােঝাল। তাতে রাজি না। হতে রেগে গিয়ে গালাগালি করল। তারপর শংকর মাছের চাবুক দিয়ে আঘাতের পর। আঘাত করতে করতে বলল, আজ না গেলে সেই দশলাখ টাকার অর্ডারটা ক্যান্সেল। হয়ে যাবে। যদি আমার কথামতাে কাজ না করতে পারিস, তা হলে এক্ষুনি বেরিয়ে যা। যে স্ত্রী স্বামীর উন্নতি চায় না, তেমন স্ত্রী থাকার চেয়ে না থাকাই ভালাে। ঝর্ণা জানত, পার্টিতে না গেলে আমিন মারধর করবে।

কিন্তু এরকমভাবে ছােটলােকের মতাে ভাষা ব্যবহার করে গালাগালি করে এতবেশি মারবে তা ভাবতেই পারে নি। কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমি এ মুখ নিয়ে কোথায় যাব? তার চেয়ে মারছ। যখন, তখন একদম শেষ করে দাও। নচেৎ বিষ এনে দাও, খেয়ে নিজেও শান্তি পাব।

Leave a Comment