Golperjogot

Golperjogot

প্রেম কাহিনী – স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প পর্ব 13 | Golpo

Prem Kahini

Raj Choudhuri { Part 13 }

আর তুমিও পাবে। তার আগে শুনে রাখ, তুমি এত নীচ, এত ছােটলােক, এত ইতর, আগে যদি জানতে পারতাম, তা হলে … বলে মারের যন্ত্রণায় কঁকাতে লাগল।

তার কথা শুনে আমিন আরাে উত্তেজিত হয়ে বলল, তা হলে কি করতিস? তা হলে বুঝি তাের গ্রামের সেই সাবেক প্রেমিক সাইফুলকে বিয়ে করতিস?।

ঝর্ণা রেগে বলে উঠল, হ্যা তাই করতাম।। | তবে রে হারামজাদী বলে আমিন তাকে আবার মারতে লাগল। এক সময় ক্লান্ত হয়ে চাবুকটা যথাস্থানে রেখে হাঁপাতে হাঁপাতে বেরিয়ে যাওয়ার আগে বলল, ফিরে। এসে তােকে যেন আর না দেখি।

মার খেতে খেতে ঝর্ণার প্রায় মুচ্ছা যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। আমিন বেরিয়ে। যাওয়ার পর বেশ কিছুক্ষণ ঘরের মেঝেয় পড়ে কাঁদল। তারপর টলতে টলতে বাথরুম থেকে মুখ-হাত ধুয়ে এসে যে জামা কাপড় পরে এ বাড়িতে প্রথম এসেছিল, সেটা পরে। নিঃস্ব হাতে ঘর থেকে বেরিয়ে হাঁটতে আরম্ভ করল। কোথায় যাবে চিন্তা করে ঠিক। করতে না পেরে শুধু হেঁটেই চলল। কতক্ষণ হেঁটেছে তার খেয়াল নেই। সে খুব আনমনা অবস্থায় হাঁটছিল। সামনে থেকে একটা প্রাইভেট কার তাকে চাপা দেয় দেয়।

অবস্থায় পাশ কাটিয়ে চলে গেল। গাড়ীর হর্ণ ও তীব্র আলােয় ঝর্ণার সম্বিত ফিরে এল। বুঝতে পারল, সে রাস্তার মাঝখান দিয়ে হাঁটছে। তাড়াতাড়ি ফুটপাতে উঠে ধীরে ধীরে। যেতে যেতে ভাবল, এই রাতের বেলা কোথায় যাওয়া যায়? হঠাৎ করে বান্ধবী শিরীনের। কথা মনে পড়ল। অনার্স পড়তে পড়তে এক ডাক্তারের সঙ্গে তার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর একদিন হলে এসে তাকে বাসায় নিয়ে গিয়ে তার স্বামীর সঙ্গে পরিচয়। করিয়ে দিয়েছিল। সেখানে যাওয়ার মনস্থির করে একটা রিক্সায় উঠে ঠিকানা বলল। আমিনের বাসা বক্সিবাজারে। ঝর্ণা সেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে গুলিস্থান চলে এসেছিল। শিরীনরা আজিমপুরে একটা ফ্লাটে থাকে। কিছুদূর আসার পর মনে পড়ল। তার কাছে টাকা নেই, ভাড়া দেবে কি করে? ভাবল, রিক্সাওয়ালাকে সে কথা বলে নেমে যাই। আবার ভাবল, এতদূর কি এই অবস্থায় হেঁটে যেতে পারবে? তা ছাড়া রিক্সাওয়ালাই বা কি মনে করবে? শেষে ভাবল, শিরীনের কাছ থেকে নিয়ে দেবে। বাসায় পৌছে ঝর্ণা রিক্সাওয়ালাকে বলল, একটু দাঁড়াও ভাই, ভাড়া পাঠিয়ে দিচ্ছি।

রিক্সাওয়ালা কি আর বলবে, এরকম প্যাসেঞ্জার সে অনেক দেখেছে। বলল, একটু তাড়াতাড়ি পাঠাবেন আপা। শিরীন ঝর্ণার বিয়ের ব্যাপারটা জানত না। এতদিন পরে ঝর্ণাকে দেখে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে এগিয়ে এসে বলল, কিরে এখন কোথা থেকে এলি? তারপর তার বিধস্ত চেহারার দিকে লক্ষ্য পড়তে আতঙ্কিত স্বরে বলল, কি ব্যাপার, তাের এরকম অবস্থা কেন? র্ণা বলল, পরে সব বলব আগে দশটা টাকা কাউকে দিয়ে নিচে পাঠিয়ে দে, রিক্সাওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে।

শিরীন টাকাটা কাজের মেয়ের হাতে পাঠিয়ে দিল। তারপর ঝর্ণার হাত ধরে পাশাপাশি বসে বলল, কি ব্যাপার খুলে বলতাে? আমি কিন্তু তােদের কাছে কয়েকদিন থাকব বলে এসেছি। যতদিন ইচ্ছা থাকিস। আগে বল তাের এরকম অবস্থা কে করল?

ঝর্ণা বলতে গিয়ে ফুপিয়ে উঠে শিরীনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। | শিরীন ঝর্ণাকে দেখার পর থেকে আতঙ্কিত হয়ে আছে। এখন তাকে কাঁদতে দেখে। আরাে বেশি আতঙ্কিত হয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে প্রবােধ দিতে গেলে ঝর্ণা উহু লাগছে বলে হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলল, হাত দিবি না। সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা।। শিরীন অবাক হয়ে বলল, ব্যথা! কি হয়েছে বলতাে? ঝর্না সামলে নিয়ে পিঠের ও হাত-পায়ের কাপড় সরিয়ে বলল, আগে এগুলাে দেখ, তারপর বলছি।।

শিরীন দেখে চমকে উঠল। তার সারা শরীরে মারের আঘাতে জায়গাগুলাে ফুলে। গেছে। সেগুলাে থেকে রক্ত বেরিয়ে শুকিয়ে গেছে। সে বােবা হয়ে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তার। মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।। তাকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাতে দেখে ঝর্ণা বলল, কিরে, তুই মারের চিহ্ন দেখে ভয় পেয়ে গেলি? এ রকম মার খেলে তা হলে কি করতিস? শিরীন বলল, কি করতাম জানি না, এখন তুই বল কে তাের সঙ্গে এমন পশুরমতাে ব্যবহার করল? | ঝর্ণা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বিয়ে হওয়া থেকে আজ পর্যন্ত যা যা ঘটেছে। সব বলল। তারপর চোখ মুছে বলল, খুব পিয়াস লেগেছে, একগ্লাস ঠান্ডা পানি দেত।

Short Story

কাজের মেয়েটা রান্না ঘরে ছিল। শিরীন তাকে ডেকে বলল, এক জন মেহমানের জন্য বেশি করে রান্না করবে। এখন সিভিটা দিয়ে এক গ্লাস সরবত করে নিয়ে এস।

কাজের মেয়েটা সরবত দিয়ে চলে যেতে শিরীন বলল, তাের জন্য দুঃখ হচ্ছে। তুই কত বড়লােকের মেয়ে, তাের আজ এই অবস্থা? যা বললি তারপর তাে তুই আমিনের কাছে বা বাপের কাছে ফিরে যেতে পারবি না। কি করবি কিছু ভেবেছিস? ভাববার সময় পেলাম কই। তাের কাছে কয়েকদিন থেকে ভেবেচিন্তে যা হােক কিছু করব।

হ্যা, তাই করিস। তাের ডাক্তার এখনও ফিরে নি? সে এত তাড়াতাড়ি ফিরবে? বিকেলে মেডিকেল থেকে ফিরে ধানমণ্ডিতে একটা ক্লিনিকে বসে। ফিরতে রাত দশ-এগারটা বেজে যায়।। শিরীনের স্বামী জায়েদ এগারটায় ফিরে ঝর্ণার সব কথা শুনে দুঃখ প্রকাশ করে। বলল, আপনি যদি চান, তা হলে কেস করে পাষণ্ডটাকে জেলে পাঠাতে পারি ।।

ঝর্ণা বলল, সে সব পরে চিন্তা করব। আপাততঃ আপনি আমার জন্যে একটা চাকরির। ব্যবস্থা করুন। তা না হলে আত্মহত্যা করা ছাড়া আমার আর কোনাে রাস্তা খােলা নেই। জায়েদ বলল, এ রকম ভয়ঙ্কর কথা বলবেন না। আপনি শিরীনের বান্ধবী। আপনাকে আমি আপন বােনের মতাে মনে করে বলছি, যতটুকু পারি সাহায্য করব। কোনােদিন আত্মহত্যার কথা ভাববেন না। এই কাজ যারা করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করেন না।

শিরীনের আব্বা আহম্মদ উল্লাহ সাহেব ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি। একটা ইসলামী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। জায়েদ কলেজে পড়ার সময় থেকে ঐ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। আহম্মদ উল্লাহ সাহেব জায়েদের উন্নত চরিত্রে আকৃষ্ট হয়ে একমাত্র মেয়ে শিরীনের। সঙ্গে তাঁর বিয়ে দেন। তিনি একদিকে যেমন বিরাট ব্যবসায়ী, অন্যদিকে তেমনি দেশের ও দশের জন্যে নিবেদিত প্রাণ। বর্তমানে উচ্চ শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা যাতে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করে সেই মতাে চলে, সেই জন্য তিনি এই সংগঠন করেছেন। নিজের মেয়েকে কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেও ছােটবেলা থেকে ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে সেই মতাে মানুষ। করেছেন। তাই শিরীন ক্লাস নাইন থেকে ভার্সিটি পর্যন্ত বােরখা পরে ক্লাস করত ।

ভার্সিটিতে শিরীনের বােরখা পরা নিয়ে অনেক ছেলেমেয়ে হাসাহাসি করত। একদিন। কমন রুমে মেয়েরা শিরীনকে নিয়ে মজা করার জন্য তাদের মধ্যে একটা মেয়ে জিজ্ঞেস করল, তুই বােরখা পরিস কেন? তাের কি বিয়ে হয়ে গেছে? আমরা তাে জানি গোড়া মুসলমানের মেয়েরা বিয়ের পর বােরখা পরে ঘরের বাইরে বেরােয়। | শিরীন বলল, তােদের ঐ জানাটা ভুল। তােরা ধর্মীয় বই একদম পড়িস না বলে। এই রকম কথা বলছিস। যদি পড়তিস, তা হলে জানতে পারতিস পথিবীর সমস্ত সাবালিকা মেয়েদের বােরখা পরে ঘরের বাইরে বেরােন উচিত। যে কোনাে জিনিস আলােচনা করতে হলে, তা ভালাে-মন্দ জ্ঞান রাখতে হয়। এখন আমি যদি তােদেরকে বলি বােরখা পরার ভালাে-মন্দ বিশ্লেষণ কর, পারবি কি? পারবি না। এবার আমার প্রশ্নের উত্তর দে, মানুষ জামা-কাপড় কেন পরে?

Related Story

অন্য একটা মেয়ে বলল, এটা আবার একটা প্রশ্ন হল? সবাই জানে, ইজ্জৎ ঢাকার জন্য জামা-কাপড় পরে।শিরীন বলল, তাই যদি হয়, তা হলে পুরুষরা জামা-কাপড় পরে তাদের শরীরের কোনাে অংশ মেয়েদের দেখায় না। আর মেয়েরা কেন তা পরেও পুরুষদেরকে তাদের শরীরের অনেক লােভনীয় অংশ দেখায়? অথচ সবাই জানে পুরুষদের চেয়ে মেয়েদের। লজ্জা বেশি। এ কথারও তােরা উত্তর দিতে পারবি না। তােরা আমাকে ভুল বুঝিস না। কথাটা যখন তারা তুলেছিস তখন দু’একটা কথা না বলে পারছি না। আমরা বিভিন্ন । বিদ্যাপীঠে জ্ঞান অর্জন করার জন্য আসি। কিন্তু আমরা কি তা করছি? করছি না। আমরা শুধু ডিগ্রি নিতে আসি। অনেকে হয়তাে বলবি, আমরা ডিগ্রির সঙ্গে জ্ঞানও অর্জন করছি।

তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, জ্ঞান অর্জন করার পর কি কেউ অজ্ঞানের মতাে কাজ করতে পারে? মানুষ জ্ঞান অর্জন করে ভালােমন্দ বোেঝার জন্য। মন্দকে ত্যাগ করে ভালােকে গ্রহণ করার জন্য। আর তখনই জ্ঞান অর্জনের সার্থকতা যখন জ্ঞানের প্রতিফলন নিজের জীবনে প্রতিফলিত করবে। আসলে আমরা তা না করে শুধু ডিগ্রি নেয়ার জন্য উচ্চ শিক্ষা নিতে আসি। জ্ঞান অনুযায়ী কেউ অনুশীলন করাকে নির্বুদ্ধিতা। মনে করি। তাই আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা এবং হযরত মােহাম্মদ (দঃ)-কে পৃথিবীর সব যুগের শ্রেষ্ঠ মানব জেনেও তাদের আদেশ মেনে চলছি না। আর যারা আদেশ মেনে। চলার চেষ্টা করে, তাদেরকে নিয়ে আমরা বিদ্রুপ করি, হাসি মস্করাও করি।।শিরীনের কথা শুনে কেউ কোনাে কথা বলতে পারল না।

Click Here For Next :– চলবে

Writer :- Raj Choudhuri

Leave a Comment