Golperjogot

Golperjogot

প্রেম কাহিনী – স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প পর্ব 15 | Golpo

Prem Kahini

Raj { Part 15 }

নাজনীন নাম্বার বলে বলল, সকাল আটটার মধ্যে করবেন। এখন উনি ঘুমিয়ে পড়েছেন। আরজু এ বাসায় বলে রেখেছে, রাত্রে তাকে কেউ ফোন করলে ঘুমিয়ে পড়েছে বলতে।। | তাই করবাে বলে জায়েদ রিসিভার ক্রাডেলে রেখে বলল, কাল তার অফিসে। একবার ফোন করে যােগাযােগ করব। এখনও তা হলে সে বিলেত চলে যাই নি।

পরের দিন মেডিকেল থেকে জায়েদ আরজুর অফিসে ফোন করে পেল না। বিকেলে ক্লিনিকে এসে আবার ফোন করার জন্য ডায়েল করছে এমন সময় তাকে স্বশরীরে ঢুকতে দেখে রিসিভার রেখে সালাম ও কুশলাদি বিনিময় করে বলল, তােমাকে। এক্ষুনি ফোন করছিলাম। আরজু হাসি মুখে বলল, আমার সৌভাগ্য। যাক, কি জন্যে ফোন করছিলে বল?

জাযেদ পিয়নকে দুটো চায়ের অর্ডার দিল। তারপর বলল, আগে তােমার বিলেত যাওয়ার খবর বল। কাল সকালের ফ্লাইটে যাচ্ছি। কতদিনে ফিরছ? তা এখন ঠিক বলতে পারছি না। কেন? ভাবছি সহসা ফিরব না।। তা কি করে হয়? এখানকার ব্যবসা, বাড়িঘর দেখাশুনা করবে কে?

ম্লান হেসে আরজু বলল, ওসবের ওপর আমার তেমন কোনাে টান নেই। ম্যানেজারকে বলেছি দেখতে। আর মাঝে মাঝে আমিও আসব। বুবু আর তার মেয়ে না থাকলে হয়তাে আর আসতাম না। আমার কথা বাদ দাও, কেন ফোন করতে যাচ্ছিলে বল।

, মানে আমার স্ত্রীর এক বান্ধবি ভাগ্য বিপর্যয়ে পড়ে আমাদের কাছে এসে উঠেছে। মেয়েটা শিক্ষিতা। তুমি সেদিন তােমার ভাগ্নিকে পড়াবার জন্যে প্রাইভেট টিউটরের কথা বলেছিলে না, সেই ব্যাপারে আলাপ করতে চেয়েছিলাম।

ভাগ্য বিপর্যয়ের কথা শুনে আরজুর নিজের ভাগ্যের কথা মনে পড়ল। মৃদু হেসে বলল, যাদের ভাগ্যে বিপর্যয় আসে, পরে আবার তাদের ভাগ্যে সৌভাগ্যও আসে। ঠিক আছে, উনি কাল থেকে পড়াতে আসুক। আমি বুবুকে সে কথা বলে রাখব।

আমার ফ্লাইট খুব ভােরে। তুমি প্রথম দিন বাসা চিনিয়ে দিও। খুব ব্যস্ত আছি, এখন চলি। যাওয়ার আগে তােমার সঙ্গে একটু দেখা করতে এলাম বলে দাড়িয়ে আবার বসে বলল, তােমার ফোনটা একটু এদিকে দাওতাে। এক সপ্তাহ আগে ম্যানেজার তার একজন পি.এ. দরকার জানিয়েছিল। তাকে আমি অর্ডারও দিয়েছিলাম। ফোন করে দেখি সেই পােস্ট খালি আছে কি না।

জায়েদ ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলল, তােমার অফিস এখনও খােলা আছে? ম্যানেজারের বাসায় ফোন করব। তারপর ফোন করে তার সঙ্গে আলাপ করে। ফোন ছেড়ে দিয়ে বলল, তােমার স্ত্রীর বান্ধবীর সৌভাগ্যের চাবি এখন থেকেই হাতে। আসতে আরম্ভ করল।

তারপর একটা ভিজিটিং কার্ড বের করে তার উল্টো দিকে দ’কলম লিখে সিগনেচার দিয়ে বলল, এটা নিয়ে কালই অফিস আওয়ারে যেতে বলবে। আমি ম্যানেজারকে বলে দিয়েছি, এ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার দিয়ে দেবেন। আর ওনাকে বায়ােডাটা ও ছবিসহ একটা এপ্লিকেশন নিয়ে যেতে বলবে। দেখছে, ভাগ্য কাকে বলে? একসঙ্গে দুটো চাকরি। প্রাইভেট টিউটর ও ম্যানেজারের পি.এ.। যাক, উঠি তা হলে, এখনাে অনেক কাজ বাকি আছে। তারপর হাত মােসাফাহা ও সালাম বিনিময় করে আরজু চলে গেল।

জায়েদ রাত্রে বাসায় ফিরে স্ত্রী ও ঝর্ণাকে সব কথা জানাল। শুনে দুজনে আল্লাহর শােকর আদায় করল। জায়েদ ঝর্ণাকে জিজ্ঞেস করল, কোনটা করবেন? আমাদের ক্লিনিকের। রিসেপসনিস্ট, না অফিসের ম্যানেজারের পি. এ? আমার মনে হয় ক্লিনিকের চেয়ে অফিসের চাকরিটা ভালাে।।

শিরীন বলল, অফিসের বেতন স্কেল কত এবং প্রাইভেট পড়াবার জন্য কত দেবে জিজ্ঞেস কর নি?। জায়েদ বলল, যে নিজে থেকে সব কিছু ব্যবস্থা করল, তাকে কোন মুখে বেতনের কথা জিজ্ঞেস করব?

ঝর্ণা বলল, ডাক্তার ভাইয়ের কথা ঠিক। উনি যে নিজের থেকে এতকিছু করলেন সেটাই যথেষ্ট। এরপর বেতনের কথা ভােলা প্রেসটিজের ব্যাপার না? দিন দুই পরে ঝর্ণা বােরখা পরে সময় মতাে অফিসে গিয়ে পিয়নকে জিজ্ঞেস করতে সে ম্যানেজারের কাছে নিয়ে গেল।

ম্যানেজার খুব সৎলােক। অনেক দিন থেকে এখানে কাজ করছেন। বয়স প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি। সৌম্য শান্ত চেহারা। তিনি একমনে একটা ফাইল দেখছিলেন। ফাইলের কাজ শেষ করে সেটা বন্ধ করার সময় বােরখা পরা একটা অপূর্ব সুন্দরী। মেয়েকে টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলেন, কে আপনি? কেন এসেছেন বলুন?

ঝর্ণা ম্যানেজারের রুমে ঢুকে মুখের নেকাব সরিয়ে দিয়েছে। ম্যানেজারের কথার উত্তরে সালাম দিয়ে সব কাগজপত্রের সঙ্গে আরজুর দেয়া কার্ডটাও দিল। ম্যানেজার সেগুলাের উপর একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে তটস্থ হয়ে তাকে বসতে। বলে বললেন, কিছু মনে করবেন না। ছােট সাহেব বিলেত যাওয়ার আগের দিন তা হলে আপনার ব্যাপারে আমার সঙ্গে আলাপ করছিলেন। কিন্তু আপনি যে পর্দানসীন। মহিলা সে কথা বলেন নি। তারপর তার কি কাজ বুঝিয়ে দিয়ে কলিংবেল বাজিয়ে।

পিয়নকে ডাকলেন। পিয়ন আসার পর ঝর্ণাকে বললেন, আপনি ওর সঙ্গে আপনার। রুমে যান। আমি এ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পাঠিয়ে দিচ্ছি। ম্যানেজারের পাশের রুমটা পি.এ.র জন্য ঠিক করা হয়েছে। পিয়ন ঝর্ণাকে সেখানে পৌঁছে দিয়ে চলে গেল। ঝর্ণা নিজের সিটে বসে রুমটার চারদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগল। ম্যানেজারের রুমটার মতাে এ রুমও এয়ার কন্ডিশান করা। মেঝেয় কার্পেট বিছান। টেবিলের। উপর পুরু কাচ। এক সাইডে একটা স্টীলের নতুন আলমারী। চাবিটা কীহােলে

লাগান। তার পাশে … স্টীলের সেলফ। থরে থরে ফাইল সাজান রয়েছে। টেবিলের এক পাশে ইনটারকম রয়েছে। | একটু পর পিয়ন এসে একগ্লাস পানি টেবিলের এক পাশে রেখে সিরামিকের ছােট প্লেট চাপা দিয়ে চলে গেল।

ঝর্ণার পিয়াস লেগেছিল। পানিটা খেয়ে গ্লাস রাখছে এমন সময় ইন্টারকমে পিক পিক শব্দ হতে রিসিভার তুলে কানের কাছে ধরতে ম্যানেজারের গলা শুনতে পেল, আট নাম্বার। ফাইলটা নিয়ে আসুন। ঝর্ণা সেলফের কাছে গিয়ে ফাইল নিয়ে ম্যানেজারের রুমে এল।

Short Story

ম্যানেজার তাকে বসতে বলে ফাইলটা খুলে কি করতে হবে বুঝিয়ে বললেন, প্রথম। প্রথম একটু অসুবিধে হবে। পরে ঠিক হয়ে যবে। এবার যান, যা বললাম সেভাবে কা=ে করুন। কোনাে অসুবিধে হলে আমার কাছে আসবেন, বুঝিয়ে দেব।

এ দিন ফেরার পথে ঝর্ণা ভাবল, আজ সাহেবের বাসায় গিয়ে ছাত্রীর সঙ্গে আলাপ করে যাই, কাল থেকে পড়ান যাবে। গেটে দারােয়ান বাধা দিলে ঝর্ণা পরিচয় দিতে গেট খুলে দিল। ঝর্ণা ভিতরে গিয়ে বারান্দায় উঠে একটা কাজের মেয়েকে দেখতে। পেয়ে বলল, আমি সাহেবের ভাগ্নিকে পড়াতে এসেছি।

কাজের মেয়েটা তাকে সঙ্গে করে ড্রইংরুমে বসিয়ে ভিতরে খবর দিতে চলে গেল । একটু পরে ফিরে এসে অন্য একটা রুমে নিয়ে গেল। | ঝর্ণা রুমে ডুকতেই বুঝতে পারল, এটা ছাত্রীর রুম। একদিকে একটা শােবার খাট। অন্য দিকে একটা টেবিল। তারপাশে দেওয়ালের গায়ে বুক সেলফ। টেবিলের উপর ছিব্বা ঢাকা একটা প্লেট। পাশে পানির জগ ও গ্লাস।

কাজের মেয়েটা ঝর্ণাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল, আপনি অফিস থেকে তাে আসছেন, তাই আপা বললেন, ওনাকে হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা খেয়ে নিতে বল। নাজনীন। একটু পরে আসবে। কথা শেষ করে চলে গেল।

ঝর্ণা দুপুরে কিছু খায় নি। প্রথম দিন বলে খাবার সঙ্গে আনে নি। সে খুব ক্লান্ত ও। ক্ষুধা অনুভব করছিল। কাজের মেয়েটা চলে যাওয়ার পর এটাচড বাথরুম থেকে হাতমুখ ধুয়ে এসে নাস্তা খেয়ে রুমালে হাত-মুখ মুচছে এমন সময় দেখল, স্যালােয়ারকামিজ পরা একটা ফুটফুটে সুন্দরী তরুণীর সঙ্গে সেই কাজের মেয়েটা এক কাপ চা। নিয়ে আসছে। বুঝতে পারল, এ মেয়েটাই সাহেবের ভাগ্নি। নাজনীন কাছে এসে সালাম দিল। আর কাজের মেয়েটা চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে ফিরে গেল।

ঝর্ণা সালামের উত্তর দিয়ে তাকে বসতে বলল। নাজনীন বসার পর চা খেয়ে কাপটা টেবিলের একপাশে মেঝেয় রেখে বলল, আজ পড়াতে আসি নি, তােমাদের সঙ্গে আলাপ করতে এলাম। কাল থেকে পড়াব। তােমার নাম কি ? নাজনীন নাম বলল। তােমার আম্মাকে ডেকে আন, আলাপ করব।

নাজনীন চলে যাওয়ার পর ঝর্ণা একটু ভয়ে ভয়ে চিন্তা করতে লাগল, যদি আরজু সাইফল হয়, তা হলে তার বােন আমাকে চিনে ফেলতে পারে। আচ্ছা, আমিও কি। তাকে চিন্তেত পারব ? সে তখন সাইফুলের বড় বােনের মুখ মনে করার চেষ্টা করল।

কিন্তু কত বছর আগে কয়েকবার মাত্র তাকে দেখেছে, তাই মনে করতে পারল না।। কিছুক্ষণ পরে বাইরে পায়ের শব্দ পেয়ে দরজার দিকে তাকাল।। একটু পরে নাজনীনের সঙ্গে মনিরা পর্দা ঠেলে রুমে ঢুকে এগিয়ে এল। ঝর্ণা দাঁড়িয়ে সালাম দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে চিনবার চেষ্টা করল। কিন্তু মনে। করতে পারল না।।

  1. মনিরা কাছে এসে সালামের উত্তর দিয়ে বলল, দাড়ালেন কেন বসুন। তারপর ঝর্ণার দিকে তাকিয়ে চেনা চেনা লাগল। কিন্তু ঠিক কোথায় দেখেছে মনে করতে পারল না। ভাবল, হয়তাে এনার মতাে কোনাে মেয়েকে কোথাও দেখেছে। তার মুখের দিকে নাজনীনের আম্মাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ঝর্ণা ভয়ে ভয়ে। আলাপ করার চেষ্টা করল। মনিরা বেশিক্ষণ বসল না, দু’চারটে কথা বলে চলে গেল।

ঝর্ণা নাজনীনকে জিজ্ঞেস করল, তােমার আম্মা কি অসুস্থ? নাজনীন বলল, না। আমার নানা-নানি মারা যাওয়ার পর থেকে আম্মা সব সময়। গম্ভীর হয়ে থাকে। কারাে সঙ্গে বড় একটা কথা বলে না। ঝর্ণা বলর, ঠিক আছে, আজ তা হলে চলি, কাল এসে পড়াব।

Related Story

শিরীন জানে আজ ঝর্ণা অফিসের পর সাহেবের ভাগ্নিকে পড়াতে যাবে। তাই দেরি। করে ফেরার জন্যে কৈফিয়েৎ না চেয়ে জিজ্ঞেস করল, কিরে, ছাত্রী কেমন? তাদের বাসার লােকজন দেখে কি মনে হল? ঝর্ণা বলল, ডাক্তার ভাই তাে সেদিন তাদের বাসার সব কথা বললেন। ছাত্রী মােটামুটি ভালাে হবে বলে মনে হয়।

পরের দিন থেকে ঝর্ণা প্রতিদিন অফিস থেকে ফেরার পথে নাজনীনকে পড়িয়ে বাসায় আসে। প্রথম মাসের বেতন পেয়ে ঝর্ণা নিজের দুটো শাড়ি, ব্লাউজ ও সায়া এবং শিরীনের জন্য একটা ভালাে শাড়ি ও ডাক্তার ভাইয়ের জন্য একটা পাঞ্জাবী কিনে আনল। ঝর্ণা। প্রাইভেট পড়িয়ে ও অফিসের বেতন বাবদ মােট সাড়ে চার হাজার টাকা আজ পেয়েছে।

তাদের জন্য কাপড় কিনেছে দেখে শিরীন কপট রাগ দেখিয়ে বলল, ঋণ পরিশােধ। করতে চাচ্ছিস? ঝর্ণা বলল, তােদের ঋণ কি আমি জীবনভাের শােধ করতে পারব? রাগ করছিস। কেন? তােদেরকে খুশী করার জন্য দিচ্ছি না, প্রথম রােজগারের টাকা পেয়ে নিজের খুশীর জন্য দিলাম।

কয়েকদিন পর ঝর্ণা শিরীনের সামনে জায়েদকে বলল, আপনাদের ঘাড়ের ওপর বসে এতদিন খেলাম। এখন তাে উপায় করছি। এবার নিজের ভার নিজেকে বহন করার সুযােগ দিন। সেই সঙ্গে আমার ডিভাের্সের ব্যবস্থা করে দিন। জায়েদ বলল, আরাে কিছুদিন অপেক্ষা করে দেখুন, উনি কি করেন। আর আপনিও ভাবনা চিন্তা করুন।

Click Here For Next :– চলবে

Writer :- Raj

Leave a Comment