Golperjogot

Golperjogot

প্রেম কাহিনী – স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প পর্ব 17 | Golpo

Prem Kahini

Raj { Part 17 }

ওড়না, শাড়ি, সায়া, ব্লাউজ এবং কত রকমের প্রসাধনী কিনে ঘরে সাজিয়ে রেখেছে, তার ইয়ত্তা নেই। দেখলে মনে হবে সে সুখী দাম্পত্য জীবন কাটাচ্ছে। শুধু গুলশানের বাড়িতে এ সব করে নি, এখানে যে রুমে থাকত সে রুমেও ঐ সব জিনিস আছে। একদিন আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, হ্যারে তুই বিয়ে করবি না বলিস, তবে আবার এ সমস্ত জিনিস কার জন্য কিনে ঘর ভরিয়ে রেখেছিস?

| তখন সাইফুল বলল, জান বুবু, ঝর্ণাকে এই সমস্ত জিনিস ব্যবহার করতে দেখেছি। তাই কিনে রেখেছি। তার পছন্দ মতাে জিনিস দেখে আমি মনে খুব শান্তি পাই। আলমারীতে ও ওয়ার্ডড্রবে যে কত জামা-কাপড় কিনে রেখেছে, তা যদি দেখতেন, তা হলে আপনি তাকে পাগল ছাড়া আর কিছু ভাবতেন না।

| ঝর্ণা মনিরার মুখে তার প্রতি সাইফুলের ভালবাসার কথা শুনতে শুনতে বাস্তব জ্ঞান। হারিয়ে ফেলল। বারবার তার মনে হতে লাগল, যে সাইফুলকে স্কুল জীবন থেকে সব থেকে বেশি ঘৃণা করে এসেছে, সেই সাইফুল তাকে এত ভালবাসে? এই দুনিয়ায় কোনাে ছেলে কি কোনাে মেয়েকে এত বালবাসতে পারে? তার তখন মনে হল, সাইফুলের মনে এত কষ্ট দিয়েছি বলে আল্লাহ আমার অবস্থা এইরকম করলেন। এখন সাইফুল যদি জানতে পারে, আমিনের সঙ্গে আমার ডির্ভোস হয়ে গেছে, আমি তার অফিসে চাকরি করছি এবং তার ভাগ্নিকে পড়াচ্ছি, তা হলে কি করবে? আমাকে সে কি গ্রহণ করবে? আর সে গ্রহণ করতে চাইলে আমি কোন মুখে তা স্বীকার করব? তৎক্ষণাৎ ঝর্ণার বিয়ের পরে সাইফুল যে কথা একদিন বলে এসেছিল, তা মনে পড়ল- তােমার বিয়ে হয়ে গেছে জেনেও আজীবন তােমার অপেক্ষায় থাকব। তােমাকে না পেলেও যতদিন বাঁচব ততদিন তােমার স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে থাকব।’

 

অনুশােচনায় ঝর্ণার অন্তর ছিড়ে যাওয়ার উপক্রম হল। সে চেয়ারে সােজা হয়ে বসে থাকতে পারল না। নিচু হয়ে হাতের উপর মাথা ঠেকিয়ে সামলাবার চেষ্টা করল।। মনিরা কথা বলতে বলতে ঝর্ণার মুখের অবস্থা মাঝে মাঝে করুণ হতে দেখেছে। এখন তাকে ঐভাবে থাকতে দেখে সন্দেহটা দৃঢ় হল। ভাবল, মেয়েটাকে প্রথম দিন দেখে চেনা চেনা লেগেছিল। আজ আবার সাইফুলের কথা শুনে এরকম করছে কেন? তা হলে কি এই ঝর্ণা? নাম জিজ্ঞেস করব না কি? আবার ভাবল, তা কি করে হয়? তার তাে বিয়ে হয়ে গেছে। হয়তাে ওনার প্রেসার আছে। সাইফুলের কথা শুনে দুঃখ পেয়ে প্রেসারের গােলমাল শুরু হয়েছে। জিজ্ঞেস করল, আপনি কি অসুস্থ বােধ করছেন?

ঝর্ণা আরাে কিছুক্ষণ ঐভাবে থেকে সামলে নিয়ে সােজা হয়ে বসে বলল, হ্যা, মানে হঠাৎ মাথাটা যেন ঘুরে গেল। তারপর দাড়িয়ে বলল, আজ আসি আপা।। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে যান। মাথা ঘুরছে বললেন না? এখন একটু সুস্থ বােধ করছি। আসি বলে সালাম বিনিময়ে করে চলে গেল। মনিরার মনে সন্দেহটা থেকেই গেল। ভেবে রাখল, কয়েকদিন যাক, তারপর চালাকি করে ওর পরিচয় জিজ্ঞেস করলে সব কিছু জানা যাবে।।

বাসায় ফিরে ঝর্ণা সাইফুলকে নিয়ে অনেক চিন্তা করল। তার কথা যত ভাবে তত চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে। চিন্তায় চিন্তায় দু’দিন অফিসেও গেল না এবং নাজনীনকে পড়াতেও গেল না।

প্রথম দিন শিরীন ঝর্ণার শুকনাে বেদনাভরা মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, কিরে তাের অসুখবিসুখ করেছে নাকি? তােকে ঐরকম দেখাচ্ছে কেন? তার উত্তরে ঝর্ণা বলেছিল, মাথা যেন কেমন করছে। তারপর তাকে দু’দিন ঘরে থাকতে দেখে দুপুরে খাওয়ার পর বলল, তাের কি হয়েছে বলতাে? ভালাে করে খাচ্ছিস না, অফিস কামাই করছিস, ছাত্রী পড়াতেও যাচ্ছিস না। অসুখবিসুখ হলে কোনাে ডাক্তারের কাছে যা। তারপর স্বামীর কথা বলে বলল, তাকেও তাে বলতে পারিস? অসুখবিসুখ কিছু হলে তাই করতাম।

তা হলে কি হয়েছে বলবি তাে? তাকে চুপ করে থাকতে দেখে আবার বলল, তা যদি না হয়, তবে কি কোনাে প্রবলেমে পড়েছিস? এই কথা বলার পরও ঝর্ণার কাছ থেকে উত্তর না পেয়ে গায়ে একটা হাত রেখে বলল, যদি কোনাে প্রবলেমে পড়ে থাকিস, তা হলে বল, সেটা সলভ করার চেষ্টা করব। ঝর্ণা শিরীনের দিকে তাকিয়ে কি ভাবে সাইফুলের কথা বলবে, চিন্তা করতে করতে তার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল।

শিরীন তাই দেখে আতঙ্কিত হয়ে বলল, কিরে আমিন তাের খোঁজ পেয়ে। শাসিয়েছে না কি? আমিনের সঙ্গে মাস ছয়েক আগে ডিভাের্স হয়ে গেছে। ঝর্ণা না বলে বান্ধবীকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। | শিরীন কিছু বুঝতে না পেরে বেশ অবাক হয়ে বলল, কি হয়েছে বল না? আমাকে বলতে তাের বাধা কোথায়? তুই কি আমাকে বিশ্বাস করিস না? ঝর্ণা সংযত হয়ে বলল, তুই যা ভাবছিস, সে সব কিছু নয়। ব্যাপারটা খুব দুঃখজনক। আর সেটার জন্য আমিই দায়ী। আমার ভাগ্যে বুঝি কোনাে দিন সুখশান্তি আসবে না। চিরকাল দুঃখের সাগরে ভেসে বেড়াতে হবে।

Short Story

শিরীন বলল, সুখ-দুঃখ নিয়েই মানুষের জীবন। আমিনের সঙ্গে দৈব দুর্ঘটনায় যা। হয়েছিল, ডিভাের্সের মধ্যে দিয়ে তার নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। তুই ইচ্ছা করলে তাের বাবা-মার কাছে ফিরে গিয়ে তাদেরকে জানিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিতে পারিস। তারপর ওনারা আবার ভালাে ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে সুখী করার চেষ্টা করবেন।

| ঝর্ণা মলিন মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল, মানুষ যা ভাবে তা যদি হত, তা হলে পথিবীতে দুঃখ বলে কিছু থাকত না। বাবা-মার কাছে কিছুতেই আমি ফিরে যেতে পারব না। নিজের কথা চিন্তা করে আমার এই অবস্থা হয় নি। আমার এই অবস্থা কেন, হয়েছে বললে, তুই যেমন অবাক হবি তেমনি দুঃখও পাবি। শিরীন বলল, আমার যাই হােক না কেন, তুই বল ।

ঝর্ণা তখন সেই স্কুল জীবন থেকে গত দু’দিন আগে পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে সব। খুলে বলল। | শিরীন শুনে সত্যি সত্যি যেমন অবাক হল তেমনি দুঃখও পেল। বলল, এরকম। একতরফা প্রেম কাহিনী কখনাে শুনি নি। তুই কি করবি ভেবে কিছু ঠিক করতে পেরেছিস? না, এখনাে ভেবে কিছু সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারি নি। তুই বল না, আমার কি করা উচিত? চাকরি ছেড়ে দেব?

আমার কথা যদি মেনে নিস, তা হলে বলব, সাইফুলের এই পরিণতির জন্য যখন তুই দায়ী তখন তাকে বাঁচানাের জন্য তােরই এগিয়ে যাওয়া উচিত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, তােকে সে ফিরিয়ে দেবে না। বিয়ের পর তােক তাে বলেছিল, তাের জন্য সে চিরকাল। অপেক্ষা করবে। তাের জন্যে চিরকাল তার মনের দুয়ার খােলা থাকবে। আর এখন চাকরি ছাড়িস না। সেটা যখন ইচ্ছা ছাড়তে পারবি। আরাে ভাবনাচিন্তা করে দেখ। আমার মনও তাই বলে। কিন্তু আমি কোন মুখে তার কাছে গিয়ে দাড়াব । কি বলে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে বলব, আমার ভুল ভেঙ্গেছে, এখন তােমার মতাে আমিও তােমাকে ভালবাসি? এত নিলজ্জ হব কি করে?

এত চিন্তা করছিস কেন? তুই তাে বললি, বিলেতে সে অসুখে ভুগছে। তাের। ছাত্রীর কাছ থেকে তার ঠিকানা নিয়ে সাইফুলকে চিঠিতে তাের বর্তমান অবস্থার কথা। জানা। উত্তরে কি বলে দেখ। তারপর যা কিছু করার করবি। সে কঠিন অসুখে ভুগছে। কঠিন অসুখের সময় সব মানুষই অতি প্রিয়জনকে পেলে বাঁচার জন্য ব্যকুল হয়ে উঠে। আমার মনে হয়, চিঠি পেয়ে সে নিজেই তাের কাছে ছুটে আসবে। এখন আমার কথা শােন, ভেঙ্গে না পড়ে মনকে শক্ত করে আল্লাহর কাছে সাহায্য চা। আর কাজকর্ম ঠিকমত করে যা। সাইফুলকে চিঠি দিয়ে অপেক্ষা কর। ততদিন তুইও চিন্তা কর, কিভাবে তার কাছে নিজেকে সমর্পণ করবি।

Related Story

তুই অবশ্য ভালাে কথাই বলেছিস ; কিন্তু আমি কিভাবে কি করবাে চিন্তা করে ঠিক করতে পারছি না। একটা কথা বুঝতে পারছিস না কেন? সাইফুলের সবকিছু জেনে তাের মনে বে। অনুশােচনার ঝড় বইছে, তার কারণ তুইও এখন তাকে ভালবেসে ফেলেছিস? আল্লাহ। না করুক, সত্যি সত্যি তার যদি কিছু হয়ে যায়, তা হলে তুই নিজেকে কি বলে বােধ। দিবি? তখন আর অনুশােচনা করেও কোনাে ফল হবে না। এখনও সময় আছে, যা বললাম তাই কর। তারপর তাের ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। একখাটা কথা জেনে রাখ, প্রেমিক-প্রেমিকাদের নিজেদের মধ্যে ক্ষমা চাওয়া-চাউয়ি করতে দ্বিধা থাকা উচিত।

। আর একটা জিনিস তাের বােঝা উচিত, তুই তাকে এখন ভালবাসিস বলে। কাঁদছিস, নচেৎ তার এই পরিণতি দেখে তাের তাে আনন্দ পাওয়ার কথা। ঝর্ণা চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল, তুই ঠিক বলেছিস। তাের কথামতাে আগে। • একটা চিঠি দেব; তারপর আমার তকৃদির আমাকে দিয়ে যা করাবে তাই করব।। পরের দিন ঝর্ণা সকলীভের দরখাস্ত লিখে নিয়ে অফিসে গেল। ফেরার পথে। নাজনীনকে পড়াতে গিয়ে জানল, তার আম্মা মীরপুর মাজারে গেছে।

আজ ঝর্ণার কেবল সাইফুলের কথা মনে পড়তে লাগল। এক সময় নাজনীনকে জিজ্ঞেস করল, তােমার মামাকে চিঠি দিয়েছ? হ্যা দিয়েছি। সেই সঙ্গে তাড়াতাড়ি ফিরে আসার জন্য টেলেক্সও করেছি। তােমার মামার ঠিকানাটা একটা কাগজে লিখে দাওতাে। নাজনীন টেবিলের ড্রয়ার খুলে মামার চিঠিটা বের করে খাতার পাতায় ঠিকানা। লিখে পাতাটা ছিড়ে আন্টির হাতে দিল ।

ঝর্ণা ঠিকানাটায় একবার চোখ বুলিয়ে ভাজ করে ভ্যানিটি ব্যাগে রেখে বলল, আজ পড়াতে ভালাে লাগছে না, তােমাদের বাসাটা একটু ঘুরে দেখি চল ।।

Click Here For Next :– চলবে

Writer :- Raj

Leave a Comment