Golperjogot

Golperjogot

প্রেম কাহিনী – স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প পর্ব 2 | Love Story

Prem Kahini

Raj Choudhuri { Part 2 }

কয়েকদিন পর একদিন টিফিনের সময় ঝর্ণার কাছে গিয়ে তার নাম জিজ্ঞেস করেছিল। ঝর্ণা তার দিকে একবার তাকিয়ে মাথা নিচু করে চুপ করেছিল। তখন তার সাথের মেয়েটা ঝর্ণার নাম বলে। আরাে অনেক পরে সাইফুল তার আব্বর নাম জেনেছিল হামিদ চেয়ারম্যান। ঝর্ণা হাই স্কুলের মর্নিং সিফটে বেতন দিয়ে ক্লাস ওয়ান থেকে পড়ে আসছে। আর সাইফুল গরিবের ছেলে বলে সরকারি ফি প্রাইমারী স্কুলে পড়েছে। তাই সে ঝর্ণাকে চিনত না।

ঝর্ণাও নিচের ক্লাস থেকে ফাষ্ট হয়ে এসেছে। সে বছর সিক্স থেকে সেভেনে ওঠার সময় সাইফুল ফাস্ট আর ঝর্ণা সেকেণ্ড হয়। রেজাল্টের দিন সেকেণ্ড হয়েছে জেনে ঝর্ণা কেঁদেছিল। সেই সঙ্গে সাইফুলের প্রতি তার খুব রাগ হয়েছিল, আর মনে মনে ভেবেছিল, সামনের বছর সাইফুল কেমন করে ফাস্ট হয় দেখবে।

কিন্তু সে বাসনা আজ পর্যন্ত পূরণ হয়নি। ফলে সাইফুলের প্রতি রাগ ও ঘৃণা বছরের পর বছর বাড়তেই থাকে। কোনাে কোনাে সময় সাইফুল তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে, ঝর্ণা মুখ ঘুরিয়ে চলে যায়। এখন তারা ক্লাস টেনে পড়ে।

গত সপ্তাহে যেদিন টেস্টের রেজাল্ট বেরােল, সেদিন ঝর্ণা প্রথম সাইফুলের সঙ্গে কথা বলে। ঐ দিন রেজাল্ট জানার জন্য সাইফুল স্কুলে গিয়ে দেখল, ঝর্ণা নােটিশ বাের্ডের কাছে কয়েকজন মেয়ের সাথে কথা বলছে।সাইফুলকে দেখে ঝর্ণা বিদ্রুপের হাসি হেসে বলল, তুমি আবার এসেছ কেন ? ভালাে ছাত্রদের রেজাল্ট তাে জানাই থাকে।

ঝর্ণার বিদ্রুপের হাসি সাইফুল বুঝতে পেরেও গায়ে মাখল না। যেচে কথা বলেছে। এটাই তার কাছে সৌভাগ্য বলে মনে হল। সেও হাসিমুখে বলল, ভালাে ছাত্ররাও অনেক সময় ফেল করে। তা ছাড়া তুমিও তাে ঐ দলের ; তবে তুমি কেন এসেছ? সাইফুলকে হেসে কথা বলতে দেখে ঝর্ণা মুখ ঘুরিয়ে সঙ্গিদের নিয়ে চলে গেল।

ঝর্ণার সঙ্গে কথা বলার পর সাইফুলের বেপরােয়া ভাবটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠে।

তাই ভালাে-মন্দ না ভেবে সে আজ তাকে চিঠি দেয়। স্কুলের পাশ দিয়ে একটা রাস্তা উত্তর-দক্ষিণে গেছে। ঝর্ণাদের ঘর উত্তর দিকের গ্রামের রাস্তার শেষ প্রান্তে। আর সাইফুলদের ঘর দক্ষিণ দিকের গ্রামের শেষ প্রান্তে। স্কুলে আসার আগে সাইফুল চিঠিটা লিখে এনেছিল। ভেবেছিল, কোনাে এক ফাকে ঝর্ণাকে দেবে। কিন্তু সে সুযােগ পেল । তাই ছুটির সময় সাইফুল আগে ক্লাস থেকে বেরিয়ে ঝর্ণাদের বাড়ির রাস্তায় কিছু দূরে এসে একটা বড় আমগাছের আড়ালে দাঁড়াল। সৌভাগ্যক্রমে রাস্তায় তখন কোনাে লােকজন ছিল না।

একটু পরে ঝর্ণাকে তাদেরই ক্লাসের বেলী নামে একটা মেয়ের সঙ্গে আসতে দেখল। কাছে এলে সাইফুল আমগাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে চিঠিটা তার হাতে একদম গুঁজে দিল।ঝর্ণা ভাবতেই পারেনি, সাইফুল তাকে চিঠি দেবে। প্রথমে ভ্যাবাচ্যাখা খেয়ে গিয়েছিল। পরক্ষণে যখন রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বলল, এটাতে কি লিখেছ? তখন সাইফুল ঐ কথা বলে নিজের বাড়ির দিকে হাঁটা দেয় ।

মাগরিবের নামায পড়ে ঘরে এসে সাইফুল পড়তে বসে কিছুতেই পড়ায় মন বসাতে পারল না। কেবল ঝর্ণার কথা মনে পড়তে লাগল।

পরের দিন স্কুলে এসে কয়েকবার আড়চোখে ঝর্ণার দিকে তাকিয়ে তার মনের ভাব কিছু বুঝতে পারল না।

প্রথম ক্লাস হেডমাস্টার তাহের সাহেবের। তিনি ক্লাস টেনের এই সেকশনে অংক করান। আজ ক্লাসে এসে রােল কল শেষ করে সাইফুলের কাছে অংকের বই চাইলেন। সাইফুল বইটা দেয়ার আগে ঝর্ণা এসে একটা চিঠি স্যারের টেবিলের উপর রেখে আস্তে আস্তে বলল, গতকাল সাইফুল আমাকে দিয়েছে। তারপর ফিরে এসে নিজের সিটে বসে পড়ল।

তাহের সাহেব সেটা পড়ে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে একবার ঝর্ণার দিকে তাকিয়ে সাইফুলের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। ঝর্ণাকে হেডস্যারের কাছে চিঠিটা দিতে দেখে সাইফুলের হৃৎকম্পন শুরু হল। তারপর স্যারকে ঐ ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভয়ে তার মুখ বিবর্ণ হয়ে গেল। সে অংকের বইটা দেয়ার জন্য বইটা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, সেই অবস্থায় সে মাথা নিচু করে রইল।

স্কুলের সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকা জানে, হেডস্যার তাহের সাহেব যেমন খুব ভালাে শিক্ষক তেমনি অত্যন্ত আদর্শবান। কোনাে অন্যায়কে তিনি প্রশ্রয় দেন না, তা সে যেই হােক না কেন? ঝর্ণা যখন চিঠিটা স্যারকে দেয় তখন ক্লাসের সব ছেলেমেয়ে সেদিকে চেয়েছিল। সবাই জানে হেডস্যার হঠাৎ রাগেন না।কিন্তু কোনাে কারণে রেগে গেলে তখন আর ওনাকে চেনা যায় না। ফর্সা গােলগাল মুখটা রাগে লাল হয়ে যায়। ঝর্ণার চিঠি পড়ে স্যারকে সাইফুলের দিকে ঐভাবে তকিয়ে থাকতে দেখে তারা ভয়ে আতংকিত হয়ে পড়ল। সবাই ফিস ফিস করে বলাবলি করতে লাগল, আজ সাইফুলের নিস্তার নেই। ছাত্র-ছাত্রীদের গুঞ্জন শুনে তাহের সাহেব টেবিলে ডাষ্টার ঠুকে গর্জে উঠলেন, চুপ কর।

স্যারের কথা শুনে ছেলেমেয়েরা সব চুপ হয়ে গেল । তাহের সাহেবের হাতে সব সময় একটা বেতের চাবুক থাকে। স্কুলে যতক্ষণ যেখানেই থাকেন, বেতটা সঙ্গে থাকবেই। অবশ্য কেউ গুরুতর অন্যায় না করলে কাউকে কখনাে বেত্রাঘাত করেন না। ছােটখাট অন্যায় কেউ করলে বেত নাচিয়ে ভয় দেখিয়ে বুঝিয়ে তাকে সাবধান করে দেন। তিনি চিন্তা করতেই পারছেন না, সাইফুলের মতাে ছেলে এই কাজ করবে। গম্ভীরস্বরে ডাকলেন, সাইফুল, এদিকে এস।

Short Story

হেডস্যারের এই স্বর সকলের জানা। তারা ভাবল, আজ সাইফুলের রক্ষা নেই। যারা সাইফুলকে দেখতে পারত না, তারা মনে মনে খুব খুশী হল। আর অন্যরা ভয়ে আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগল । সাইফুলও বুঝতে পেরেছে এখন কি ঘটবে। তাই সে স্যারের ডাক শুনে কয়েক সেকেন্ড দাঁড়িয়ে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে টেবিলের কাছে এসে দাঁড়াল। চিঠিতে সাইফুলের নাম নেই। তাহের সাহেব সাইফুলের হাতের লেখা চেনেন। এবং ঝর্ণাও তার নাম বলেছে। তবু সত্য মিথ্যা যাচাই করার জন্য জিজ্ঞেস করলেন, এটা তােমার লেখা? সাইফুল ভয়ে ও লজ্জায় কিছু বলতে পারল না। মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল।

তাহের সাহেব একই স্বরে বললেন চুপ করে দাঁড়িয়ে আছ কেন? উত্তর দাও। সাইফুল ঢােক গিলে কোনাে রকমে বলল, জি। তাহের সাহেব দাঁড়িয়ে সারা শরীরে বেতের পর বেত মেরে চললেন। সাইফুল ঠোটে ঠোট কামড়ে নিজেকে সামলানর আপ্রাণ চেষ্টা করল। মুখ দিয়ে কোনাে শব্দ বের হল না। শুধু চোখ দিয়ে অবিরল পানি পড়ছে। এক সময় তার মনে হল সে বুঝি অজ্ঞান হয়ে যাবে।মারতে মারতে তাহের সাহেব ক্লান্ত হয়ে মারা বন্ধ করে হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, যাও, বস গিয়ে। আর কখনাে এরকম ঘটনা যেন না শুনি। সাইফুল কোনােরকমে টলতে টলতে নিজের সিটে এসে বসে পড়ল।

তাহের সাহেব ছেলেদের জিজ্ঞেস করে দু’তিনটে হােম টাক্সের কঠিন অংক বাের্ডে করে বুঝিয়ে দিলেন। তারপর ঘন্টা পড়তে হােমটাক্স দিয়ে তিনি ছাত্র হাজিরা খাতা, ডাষ্টার, চক, বেত ও চিঠিটা নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

হেডস্যার চলে যাওয়ার পর ক্লাসের মধ্যে আবার গুঞ্জন উঠল। ছেলেরা মেয়েদের দিকে বাঁকা চোখে তাকাতে তাকাতে রাগে ফুলতে লাগল। মেয়েদের মধ্যে যারা চিঠির কথা জেনেছিল, তারা বলল, ঠিক হয়েছে। আর অন্যরা ঝর্ণার কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, সাইফুল তােকে কি এমন লিখেছিল, যার জন্য হেডস্যারকে দিয়ে মার খাওয়ালী? ঝর্ণা মুখ ঝামটা দিয়ে বলল, যা লিখেছে তা যদি তােদেরকে লিখতাে, তা হলে তােরাও আমার মতাে করতি।

গতকাল ঝর্ণা স্কুল থেকে ঘরে ফেরার সময় যখন তেমাথা রাস্তায় এল তখন সাইফুল এই চিঠিটা তাকে দেয়। ঝর্ণার একবার মনে হয়েছিল, চিঠিটা ছুঁড়ে ফেলে দেবে। কিন্তু সাইফুলের কথা শুনে কি লিখেছে জানার আগ্রহে তা না করে শুধু একবার তার দিকে অগ্নি দৃষ্টি হেনে চলে আসে। নিজের রুমে এসে চিঠিটা খুলে দেখতে পেল, পুরাে চিঠিটাতে শুধু “ঝর্ণা আই লাভ ইউ” লেখা । পড়ে তার মাথা গরম হয়ে গেল।

চাচাতাে বােন বেলী রাস্তায় ঝর্ণাকে বলেছিল, কিরে চিঠিতে সাইফুল কি লিখেছে পড়বি ? ঝর্ণা তখন বলেছে, ঘরে গিয়ে পড়ব। তুইও আমার সঙ্গে চল । এখন তার হাতে চিঠিটা দিয়ে বলল, পড়ে দেখ, ফকিরের ছেলের সাহস কত?

যার গায়ে তালি দেয়া ময়লা জামাকাপড় দেখলে বােঝা যায় তার বাপের অবস্থা। সে কি না আমাকে ভালবাসে। তারপর বলল, কি করা যায় বলতাে? চিঠিটা আব্বাকে দিয়ে ছেলেটাকে শায়েস্তা করতে বলবাে? বেলী বলল, তার চেয়ে হেডস্যারকে দিলে আরাে ভালাে হবে। গরিবের ঘােড়া রােগে ধরেছে। তুই হেডস্যারকেই দে। বাছাধনকে একদম প্রেমের ঘােল খাইয়ে। ছাড়বেন।

ঝর্ণা স্কুলে আসার পর থেকে চিন্তা করেছে, কখন চিঠিটা স্যারকে দেয়া যায় । রােল কলের পর দেবে ভেবে রেখেছিল। তাই স্যার যখন সাইফুলের কাছে অংকের বই চাইলেন তখন সে তার আগে চিঠিটা দিয়েছে। হেডস্যার যখন সাইফুলকে মারতে ছিলেন তখন ঝর্ণা তার করুন অবস্থা দেখে মনে মনে হেসেছে আর বলেছে, এখন বুঝে বড় লােকের মেয়েকে ভালবাসার ফল।

Related Story

ক্লাসের সব ছেলেমেয়েরা বুঝতে পারল, সাইফুল নিশ্চয় ঝর্ণাকে প্রেম পত্র দিয়েছিল। তবু কয়েকজন ছেলে তাকে জিজ্ঞেস করল, ঝর্ণাকে চিঠিতে কি লিখেছিলি? সাইফুল তাদের কথায় কান না দিয়ে বই খাতা নিয়ে বাড়ি চলে গেল? সাইফুলের আব্বা ওসমান ক্ষেতের কাজ সেরে স্কুলের সামনের রাস্তা দিয়ে ঘরে ফিরছিল। মােরসেদ তাকে দেখতে পেয়ে কাছে গিয়ে বলল, ওসমান চাচা, সাইফুল ঝর্ণাকে চিঠি দিয়েছিল বলে হেডস্যার তাকে ভীষণ মেরেছেন।

ওসমান জিজ্ঞেস করল, সাইফুল কোথায় ? মােরসেদ বলল, মার খাওয়ার পর সে ঘরে চলে গেছে। ওসমান তাকে আর কিছু না বলে ঘরের দিকে চলে গেল । মােরসেদ সাইফুলের বন্ধু। একই পাড়ায় ঘর ।

মােরসেদ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। সাইফুলকে হেডস্যার যখন মারতেছিলেন তখন তারও খুব কষ্ট হয়েছে। ঝর্ণাকে যে সাইফুল ভালবাসে, তা মােরসেদ জানত। কিন্তু চিঠি দেয়ার কথাটা জানত না। সাইফুল তাকে না জানিয়ে ঝর্ণাকে চিঠি দিয়েছে জেনে তার উপর মােরসেদের একটু মনে কষ্ট হল। বিকেলে তাদের ঘরে গিয়ে জ্বর শুনে তার কাছে গিয়ে কথাটা না বলে পারল না। তারপর আরাে বলল, তুই যদি আগে আমাকে চিঠির কথা জানাতিস, তা হলে এরকম হত না।

Click Here For Next :– চলবে

Writer :- Raj Choudhuri

Leave a Comment