Golperjogot

Golperjogot

প্রেম কাহিনী – স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প পর্ব 20 | Golpo

প্রেম কাহিনী – স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প পর্ব 20 | Golpo

সাইফুল একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, কাঁদছ কেন?
ভাগ্যে যা লেখা থাকে তা ঘটবেই। তাকে রােধ করার ক্ষমতা কারুর নেই। অতীতের কথা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা কর । তাই করেই তাে বেঁচে আছি। আমি নিজের কথা ভেবে কাদছি না, আমার জন্য। তােমার এই পরিণতি দেখে কাদছি।

তােমাকে আর পাব না জেনে এতদিন মৃত্যু কামনা করেছি। এখন তােমাকে দেখে বাচার জন্য আমার মন ব্যকুল হয়ে উঠছে। আমাকে বাচাবার জন্য তুমি কি এগিয়ে আসবে না? আমি তােমাকে বিয়ে করতে চাই।

ঝর্ণা, সাইফুল বলে আবার তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, আমি আমার প্রাণের বিনিময়েও তােমাকে বাঁচাব। সেইজন্যে তাে এলাম, এই অপবিত্র দেহ নিকা তােমাকে কথাটা বলতে এতক্ষণ বিবেকে বাধছিল, তাই বলি নি। আল্লাহ আমার মনের কথা তােমার মুখ দিয়ে বার করালেন।

সাইফুল তাকে মুক্ত করে ভিজে গলায় বলল, সারা জীবনের মধ্যে আজ সর্বতos তােমাকে এত কাছে পেয়ে আনন্দের উচ্ছাসে বিয়ের কথা বলে ফেলেছি। আমি মত দ্বারপ্রান্তে দাড়িয়ে আছি। বিয়ে করে আবার তােমাকে দুঃখের সাগরে ভাসতে দেব না মৃত্যুর সময় তােমার সেই দুঃখ আমি সহ্য করতে পারব না।

তুমি চলে যাও প্রিয়তমা। আমি তােমাকে না পেলেও এবার শান্তিতে মরতে পারব। আল্লাহর কাছে সব সময় জানাতাম, মৃত্যুর আগে একবারের জন্য হলেও যেন আমার চিরকাঙিক্ষত ঝর্ণাকে দেখতে পাই। তাই বােধ হয় তিনি তােমাকে এই শেষ সময়ে হাজির করেছেন। এমন সময় তার লিভারের। যন্ত্রণা প্রচণ্ডভাবে আরম্ভ হল। সাইফুল যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে জ্ঞান হারাল ।।

 

| ঝর্ণা সাইফুলকে ছটফট করতে দেখে জড়িয়ে ধরেছিল। তাকে নিথর হয়ে যেতে দেখে ভয় পেয়ে ছেড়ে দিয়ে কয়েকবার নাড়া দিয়ে ডেকে সাড়া না পেয়ে আরাে বেশি ভয়। পেয়ে মনিরাকে ডাকার জন্য ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। বারান্দায় নাজনীনকে দেখতে। পেয়ে বলল, তাড়াতাড়ি তােমার আমবমাকে ডাক, তােমার মামা অজ্ঞান হয়ে গেছে। নাজনীন বলল, আপনি মামার কাছে যান, আমি আম্মাকে নিয়ে আসছি।

মনিরা শুনে হাতের কাজ ফেলে একজন চাকরকে ডাক্তার আনতে পাঠিয়ে মেয়ের। সঙ্গে সাইফুলের রুমে এল। মনিরাকে দেখে ঝর্ণা বলল, আপা, শিঘ্রী কিছু ব্যবস্থা করুন। কথা বলতে বলতে হঠাৎ ছটফট করতে করতে অজ্ঞান হয়ে পড়েছে। মনিরা বলল, ডাক্তার আনতে পাঠিয়েছি। তারপর সাইফুলের মাথায় পানি ঢালার ব্যবস্থা করল।

পড়ুন  লাভার নাকি ভিলেন সিজন ২ – পর্ব ১ থ্রিলার গল্প | মোনা হোসাইন

ডাক্তার এসে পরীক্ষা করে বলল, এক্ষুনি হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করুন। একটা ইনজেকসন দিয়ে ডাক্তার চলে গেল। হাসপাতালে নেয়ার আগে সাইফুলের জ্ঞান ফিরল। জ্ঞান ফেরার পর ছটফট করতে করতে বলল, টেবিলের ওপর ওষুধের প্যাকেট থেকে দুটো ট্যাবলেট দাও। মনিরা তাকে ট্যাবলেট খাইয়ে বলল, ডাক্তার এনেছিলাম। বলে গেল তােমাকে হাসপাতালে নিতে।।

সাইফুল বলল, হাসপাতালে গিয়ে কি হবে? এখানকার ডাক্তাররা বই নকল করে পাশ করে। তারা আবার কি ডাক্তারী করবে? লন্ডনের হাসপাতালে কতদিন ছিলাম, তারাই কিছু। করতে পারল না। আমি হাসপাতালে যাব না। ঝর্ণার সঙ্গে কথা বলতে বলতে টাইম মতাে।

ওষধ খেতে ভুলে গিয়েছিলাম। তাই এরকম হল। এখন যন্ত্রণা কমেছে। | মনিরা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলল, তবু তুই মদ ছাড়বি না। এবার দেখব কেমন করে মদ খাস? নাজনীনকে থাকতে বলে ঝর্ণার একটা হাত ধরে মনিরা বলল, তুমি আমার সঙ্গে এস।

আম্মা ও আন্টি চলে যাওয়ার পর নাজনীন মামার মাথার কাছে বসে চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলল, আম্মা আন্টির পরিচয় জেনে গেছে। তুই জানিস নি? হা জানি।। কবে জানতে পারলি?

তােমার অসুখের চিঠি পাওয়ার পর। জান মামা, আন্টি খুব ধার্মিক। আমাদেরকে কত কুরআন-হাদিসের কথা বলেন। আমাকে কুরআন ও নামায পড়া শিখিয়েছেন। দেখাে, আন্টি তােমাকে আর মদ খেতে দেবেন না, আমিও দেব না। আর আম্মাও তাে। একটু আগে সে কথা বলেই গেল। তােরা ঘুমিয়ে পড়লে খাব।

ঘরে থাকলে তাে খাবে। তুমি যখন ঘুমিয়েছিলে তখন আম্মা তােমার ল্যাগেজ থেকে। সব বের করে চাকরকে দিয়ে রাস্তায় ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে। তা ছাড়া এখন আর খাবেই বা কেন? আন্টি যখন তােমার কাছে রয়েছেন। আন্টিকে ভুলে থাকার জন্যে তাে খেতে? তাের আন্টি কি চিরকাল আমার কাছে থাকবে? কেন থাকবে না? থাকার জন্য তাে এসেছেন। তুই কি করে বুঝলি?

তােমার চিঠি পাওয়ার পর আমি যেদিন তােমার অসুখের কথা আন্টিকে বললাম, সেদিন আমাকে নিয়ে ঐ বাসার তােমার রুমে গিয়েছিলেন। সবকিছু দেখে আন্টি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। আজ আবার আন্টির অবস্থা দেখে আমি বুঝতে পেরেছি আন্টির। সঙ্গে তােমার সম্পর্কে কথা। আম্মা আগেই বুঝতে পেরেছিল। তুই তাে দেখছি আমার আম্মার মতাে হয়েছিস। জানিস, শুধু ছেলে বেলায় নয়, মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত আম্মা আমার সব কিছু বুঝতে পারত।

পড়ুন  ভিলেন – থ্রিলার প্রেমের গল্প পর্ব 26 | Villain Bangla Story

এরা যখন মামা-ভাগ্নি কথা বলছে তখন মনিরা ঝর্ণাকে নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে। বলল, তােমাকে আর আপনি বলব না। আমি তােমার ও সাইফুলের সম্পর্ক বুঝতে পেরেছি। যা বলছি মন দিয়ে শােন, এখন তােমার উপর সাইফুলের জীবন মরণ নির্ভর করছে। অতীতে কি ঘটেছে, সে সব মন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা কর। আমাদের মতাে তুমিও নিশ্চয় বুঝতে পেরেছ, তােমার জন্য সাইফুলের এই অবস্থা? তারপর তার দুটো হাত ধরে বলল, তুমি তােমার মন থেকে সমস্ত দ্বিধা দ্বন্ধ ত্যাগ করে আমাদের বংশের ঐ একমাত্র বাতিকে বাচাবার চেষ্টা করবে না ভাই?

ঝর্ণা মনিরার চোখে পানি দেখে তাকে কদমবুসি করে উঠে জড়িয়ে ধরে চুকরে কেঁদে উঠে বলল, বুবু, আমিও যে তাই চাই। সেইজন্যেই তাে লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে ছুটে এসেছি। তুমি দোয়া কর বুবু, আল্লাহ যেন আমাকে সেই শক্তি দেন।

মনিরা তার পিঠে হাত বুলােতে বুলােতে বলল, ধৈর্য্য ধর বােন। দোয়া তাে নিশ্চয়। করব। তােমার উদ্দেশ্য সাইফুল জেনেছে? | ঝর্ণা বলল, জেনেছে। জানার পর বলল মত্য পথযাত্রী হয়ে বিয়ে করে তােমাকে আবার দুঃখের সাগরে ভাসাতে পারব না। আমিও তাকে বলেছি, তােমার কিছু হলে আমিও বাচব না। মনিরা শুনে আলহামদলিলাহ বলে তার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল, এবার তুমি সাইফুলের কাছে যাও, মাগরিবের নামাযের সময় হয়ে গেছে। গিয়ে নাজনীনকে পাঠিয়ে দাও ওখানে নামাযের পাটি আছে, নামায পড়ে নিও।।

সাইফুলের শত আপত্তি সত্ত্বেও মনিরা সেই রাত্রে কাজী ডেকে এনে কাবিন করে। তাদের বিয়ে পড়ার ব্যবস্থা করল। ঝর্ণা ফোন করে শিরীন ও জায়েদকে সব কথা জানিয়ে তাদেরকে আসতে বলল ।

ঝর্ণা যখন শিরীনের বাসায় ফোন করে তখন জায়েদ ক্লিনিকে ছিল। শিরীন তাকে ক্লিনিকে ফোন করে বলল, তােমার বন্ধুর সঙ্গে আমার বান্ধবীর একটু পরে বিয়ে হতে যাচ্ছে। ঝর্ণা ফোন করে আমাদের তাড়াতাড়ি যেতে বলল। তুমি এক্ষুনি চলে এস।

জায়েদ স্ত্রীর কাছ থেকে জেনেছে। ঝর্ণার জন্যই তার বন্ধুর এই পরিণতি। ঝর্ণার। বর্তমান মানসিক অবস্থার কথাও জেনেছে। লজ্জা পাবে মনে করে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করে নি। এখন তাদের বিয়ের কথা শুনে আল্লাহপাকের শােকর গুজারী করে বলল, তাই নাকি? তা হলে তাে এক্ষুনি যেতে হয়? শিরীন বলল, হ্যা, না গেলে তােমার বন্ধু যেমন তােমার উপর মনে কষ্ট পাবে, তেমনি আমার বান্ধবীও আমার ওপর মনে কষ্ট পাবে। তুমি দেরি না করে তাড়াতাড়ি চলে এস। তারা দু’জনে ঠিক সময়মতাে এসেছিল।

পড়ুন  বেপরোয়া ভালোবাসা – পর্ব 7 রোমান্টিক গল্প | মোনা হোসাইন

মামার নিষেধ উপেক্ষা করে নাজনীন যতটুকু পারল মামা-মামীর বাসর ঘর। সাজিয়েছে। বাসর ঘরে ঢুকে সাইফুল বিয়ের পােশাক চেঞ্জ করে ঝর্ণার হাত ধরে খাট থেকে নামিয়ে জড়িয়ে ধরে তার সমস্ত মুখে, ঘাড়ে, গলায় ও বুকে বেশ কিছুক্ষণ পাগলের। মতাে চুমাে খেতে লাগল। তারপর ঠোটে ঠোট রেখে ভিজে গলায় বলল, এতদিন পরে কেন তুমি আমার জীবনে এলে? তােমাকে দেয়ার মতাে আমার যে এখন আর কিছু নেই। তােমার স্মৃতি নিয়ে এই দুনিয়া থেকে চলে যেতে চেয়েছিলাম, সেটাই বােধ হয়। ভালাে হত। তােমার ছবি, তােমার স্মৃতি, আমার হৃদয়ে পাথরে খােদাই করার মতাে। খােদিত করে রেখেছি।

তাই দেখে এতদিন বেশ কেটে যাচ্ছিল। কেন তুমি এই জীবন। সায়াহ্নে এসে ধরা দিলে? মৃত্যু আমার শয়রে দাড়িয়ে আছে জেনেও কেন যে তােমার কথায় রাজি হয়ে গেলাম, তা জানি না। হয়তাে আজীবনের সাধনার ফল হিসাবে। তােমাকে পাব জেনে মনটা দুর্বল হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এখন অনুশােচনা হচ্ছে, জীবনের শেষ মুহূর্তে প্রিয়তমাকে পেয়ে কি লাভ হল? আমি তাে কয়েকদিনের মধ্যে। মরেই যাব। তবে কেন তােমাকে বিয়ে করলাম? কেন তােমাকে দুঃখের সাগরে ভাসাতে গেলাম? দীর্ঘ দিনের ঘৃণার পাত্রকে কেন তুমি বিয়ে করলে? বল, বল প্রিয়তমা। আমি যে আর কিছু ভাবতে পারছি না। শুধু মনে হচ্ছে মৃত্যুর আগে আমি স্বপ্ন দেখছি না। তাে? এমন সময় লিভারের তীব্র যন্ত্রণা আরম্ভ হতে ঝর্ণাকে আলিঙ্গণ মুক্ত করে শুয়ে

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Home
Stories
Status
Account
Search
Scroll to Top