Golperjogot

Golperjogot

প্রেম কাহিনী – স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প পর্ব 21 |

প্রেম কাহিনী

Raj { Part 21}

পড়ে কাতরাতে  কাতরাতে বলল, কি ভুলই না করে ফেললাম। এ নরক যন্ত্রণা থেকে আর কোনােদিন আরােগ্য লাভ করব না। তুমি আমাকে একটু বিষ এনে দিতে আর যে সহ্য করতে পারছি না। আমার জন্যে যদি তােমার অন্তরে একটু দয়াএ থাকে, তবে একটু বিষ এনে দাও প্রিয়তমা। আমি আমার প্রিয়তমার হাতের বিষকে অমৃত মনে করে খেয়ে; তার বুকে মাথা রেখে মরতে চাই।

 

ঝর্ণা প্রথম দিকে স্বামীর কথায় যেমন মরমে মরে যাচ্ছিল, তেমনি দুঃখে ও লাচনায় তার অন্তর ক্ষত বিক্ষত হচ্ছিল। পরে স্বামীর লিভারে যন্ত্রণা আরম্ভ হয়েছে পেরে সেও খাটে উঠে তাকে জড়িয়ে ধরে দরবিগলিত চোখে স্বামীর সারা মুখে খেতে খেতে বলল, থাম প্রিয়তম এবার থাম। আমি যে কত বড় অন্যায় করেছি, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। তােমার কষ্ট ও যন্ত্রণা আমাকেও সমভাবে কষ্ট ও যন্ত্রা দচ্ছে। আমি কেন তােমাকে বিয়ে করেছি শুনবে? তােমার কষ্ট ও যন্ত্রণা লাঘব করার জন্য। ইনশাআল্লাহ তােমাকে আমি ভালাে করে তুলবই।

 

এমন কি সে জন্যে যদি আমার জীবন উৎস্বর্গ করতে হয়, তাও করব। তবু তােমাকে আমি মরতে দেব না।। তারপর কাউকে কিছু না বলে নিজে ড্রাইভারকে সঙ্গে করে ডাক্তার নিয়ে এল। | ডাক্তার এসে সবকিছু শুনে তাকে একটা ঘুমের ইনজেকসান দিয়ে বললেন, এ রকম রুগী বাসায় রাখা ঠিক নয়। কখন কি হয় বলা যায় না। হসপিটালে ভর্তি করে দিন। ঝর্ণা কোনাে কথা না বলে ডাক্তারকে বিদায় করে সারারাত স্বামীর পাশে বসে বসে কাঁদতে কাঁদতে স্বামীর রােগ মুক্তির জন্য আল্লাহপাকের দরবারে দোয়া চাইল।

 

পরের দিন মনিরার সঙ্গে কথা বলে পিজির বড় বড় ডাক্তারদের কল দিয়ে বাসায়। এনে একটা বাের্ড তৈরি করে স্বামীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করল।

ডাক্তাররা বললেন, কোনাে ওষুধপত্র খেয়ে এ রােগ ভালাে হবে না। তবে মদ খাওয়া ছেড়ে দিলে কম থাকবে। সম্পূর্ণ ভালাে করতে হলে অপারেশন করাতেই হবে। মদ আর চুতে দেবেন না। আমরা ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করছি। একটু সুস্থ হওয়ার পর অপারেশন করাবেন।

 

ডাক্তারদের বিদায় করার পর ঝর্না মনিরাকে বলল, বুবু, আমি ওকে নিয়ে। সুইজারল্যান্ডে চলে যাব। সেখানকার আবহাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালাে। অপারেশন। যদি করাতে হয়, তা হলে সেখানেই করাব।

 

মনিরা বলল, বেশ, তুমি যা ভালাে বুঝ করবে, আমি বাধা দেব না।

আজ পনের দিন হল তাদের বিয়ে হয়েছে। মানসিক কিছুটা উন্নতি হলেও রােগের। তেমন উন্নতি হয় নি। প্রথম প্রথম তিন-চার দিন সাইফুল দৈনিক এক বােতল মদের জন্যে ঝর্ণার কাছে কাকুতি-মিনতি করেছে। ঝর্ণা না দিয়ে বলেছে, ঐ বিষ আর তােমাকে খেতে দেব না। আল্লাহ ও তার রাতূল (দঃ) যে জিনিসকে হারাম করেছেন, সে জিনিস কিছুতেই তােমাকে খেতে দেব না।

 

সাইফল রাগ সহ্য করতে না পেরে একদিন ঝর্ণার গালে একটা চড় মেরে বলল, যদি না দিতে পার, তা হলে আমার কাছে আর এস না, বুবুর কাছে থাকবে। চড় খেয়ে তার আমিনের কথা মনে পড়ল। সে মারত তাকে দিয়ে পাপ কাজ করিয়ে টাকা রােজগার করার জন্য। আর সাইফুল মারল, তাকে হারাম জিনিস খেতে দেই নি বলে । মারের আঘাতে ঝর্ণার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে পড়ল। তবু হাসি মুখে বলল, ব্যাস,

 

শুধু একটা চড় মেরে কি আর কাজ হয়? আরাে যত ইচ্ছা মেরে রাগের ঝাল মেটাও, তবু কিন্তু একফোটাও তােমাকে মদ দিচ্ছি না। সাইফুল রাগের বসে মেরে মনে মনে অনুশােচনা করছিল। ঝর্ণার কথা শুনে মাথা নিচ করে ভিজে গলায় বলল, অসুস্থ শরীরে রাগের মাথায় কাজটা করে ফেলেছি। তারপর তার হাত দুটো ধরে চোখের দিকে তাকিয়ে বলল, অন্যায় করেছি, মাফ করে দাও।

 

| ঝর্ণা সাইফুলের চোখে পানি দেখে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে চোখ মুছে দিয়ে বলল, স্ত্রীর কাছে স্বামীর মাফ চাইতে নেই। তুমি যেমন আমার কোনাে অন্যায়কে মনে না। করে আনন্দ পাও তেমনি তােমাকে ভালবেসে আমিও তাই পাচ্ছি।

Also Read

 

এই কয়েকদিনের মধ্যে স্বামীকে ঝর্ণা নামায ধরিয়েছে। তার আগে একদিন ঝর্ণা। সকালের দিকে বিছানা ঝেড়ে ঠিক করার সময় সাইফুলের বালিশের নিচে পাথর বসান। একটা রূপাের আংটি দেখে অবাক হয়ে সেটা নিয়ে সাইফুলের হাতে দিয়ে বলল, এটা। বালিশের নিচে পেলাম। কই, এই কদিন তাে তােমার হাতে এটা দেখি নি? আংটিটা দেখে সাইফুল চমকে উঠল। তখন তার সেই ফকিরের কথা মনে পড়ল ।

 

যে দিন ঝর্ণার বিয়ের কথা শুনে সারাদিন নামায না পড়ে রাত্রে মদ খেয়ে বাসায়। ফিরেছিল, তারপরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আংটি হাতে না দেখে অনেক খুজাখুজি করেছে। কিন্তু পায় নি। তখন সে ভেবেছিল, গতকাল নামায পড়ি নি, তার ওপর মদ খেয়েছি, তাই ফকিরের কথামতাে আংটি চলে গেছে। তারপর সে আংটির। কথা একদম ভুলে গিয়েছিল। সেই আংটি ফিরে পেয়ে ভাবল, আল্লাহ এতদিন। অপকর্মের জন্য আমার উপর অসন্তুষ্ট ছিল। ঝর্ণা এসে সেই অপকর্ম বন্ধ করে দিয়েছে। বলে আল্লাহ আবার সেই আংটি ফিরিয়ে দিয়েছেন। কৃতজ্ঞতায় ও আনন্দে তার চোখ। পানিতে ভরে উঠল।

 

স্বামীকে আংটির দিকে এতক্ষণ তাকিয়ে থেকে চিন্তা করতে দেখে ও তার চোখে পানি দেখে ঝর্ণা বেশ অবাক হয়ে বলল, কি ব্যাপার, আংটিটা দেখে এত কি ভাবছ? আর তােমার চোখে পানি কেন?

 

সাইফুল ঝর্ণার কপালে একটা চুমাে খেয়ে বলল, তােমার এই কপালের গুণে। আমার ভাগ্যকে ফিরে পেলাম। ঝর্ণা আরাে অবাক হয়ে বলল, ব্যাপারটা খুলে বলবে তাে?

সাইফুল আংটি কিভাবে পেয়েছিল এবং তারপর সে কি করে এই সাহেবের ছেলে। আরজু হয়ে লেখাপড়া করল, তা সব বলল। ঝর্ণা বলল, সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছায় হয়ে থাকে। কিন্তু নামায ছাড়লে কেন? ছােটবেলা থেকে তাে নামায পড়তে।।

 

| সাইফুল বলল, তােমার বিয়ে হয়ে গেছে জানতে পেরে আমি আর আমার মধ্যে ছিলাম না । আজ সকাল থেকে সাইফুলের সহ্যমত লিভারের যন্ত্রণা হচ্ছে। যন্ত্রণা শুরু হওয়ার পর পরই ঝর্ণা ডাক্তার আনিয়েছিল। দুপুরের দিকে একটু কমতে তাকে ভাত খাইয়ে শুতে বলল । সাইফুল ঘুমিয়ে পড়তে যে ওষুধটা এখানকার দোকানে পাওয়া যায় নি, সেটা কেনার জন্য মিটফোর্ড গেল। সেখানেও অনেক দোকানে না পেয়ে আরাে অনেক দোকানে খোঁজ করতে করতে শেষে একটা দোকানে পেল। বিদেশী ওষধ, তার উপর মার্কেটে

 

নেই। দোকানদার তিন-চারগুণ বেশি দাম রাখল। ঝর্ণা তা বুঝতে পেরেও কিছু বলল না। ওষুধটা যে সে পেল এটাই সৌভাগ্য বলে মনে করল। তার ফিরতে বেশ দেরি হল।। এদিকে জোহরের আযান শুনে সাইফুলের ঘুম ভেঙ্গে যায়। উঠে নামায পড়ার সময় আবার লিভারের যন্ত্রণা শুরু হল। কোনাে রকমে চার রাকায়াত ফরজ নামায আদায় করে বিছানায় শুয়ে ছটফট করতে লাগল, ঝর্ণা তুমি কোথায় গেলে, আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না। আল্লাহ গাে তুমি আমাকে মাফ করে দাও। আমার পাপের। ফল আর কতদিন দিবে? ইয়া আল্লাহ, তুমি রহমানুর রহিম, আমার উপর রহম কর। সে খাটের উপর গড়াগড়ি দিতে দিতে আর ঐ সব বলে কাতরাতে লাগল।

 

কাজের মেয়ে সাবুর মাকে মনিরা কয়েক দিন হল এই বাসায় রেখেছে। সে। সাহেবের কাতরানির আওয়াজ পেয়ে রুমে এসে বলল, কিছু লাগবে সাহেব?। সাইফুল বলল, তােমার আপা কোথায়? জলদি তাকে ডেকে দাও।। সাবুর মা বলল, আপা ওষুধ কিনতে গেছেন। যাওয়ার সময় আপনার দিকে। আমাকে লক্ষ্য রাখতে বলে গেলেন।

 

সাইফুল বলল, তুমি কি লক্ষ্য রাখবে? যাও এখান থেকে। তারপর কাতরাতে কাতরাতে আবার বলল, এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে কেন? বাইরে গিয়ে দেখ, তােমার আপা আসছে কিনা। ঝর্ণা ফিরে এসে বারান্দা থেকে স্বামীর কাতরানি শুনতে পেয়ে প্রায় ছুটতে ছুটতে আসার সময় সাবুর মায়ের সঙ্গে দেখা।।

 

সাবুর মা বলল, আপা জলদি যান, সাহেবের বােধ হয় আবার পেটের যন্ত্রণা হচ্ছে। কখন থেকে আপনাকে ডাকাডাকি করছেন। | ঝর্ণা রুমে এসে তাড়াতাড়ি বােরখা খুলে ওষুধের শিশি থেকে দুটো ট্যাবলেট বের করে স্বামীকে খাইয়ে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলল, তােমাকে ঘুমাতে দেখে এই ওষুধটা আনতে মিটফোর্ড গিয়েছিলাম। তারপর আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতে লাগল, ইয়া আল্লাহ, তুমি সর্বজ্ঞ। তােমার অজানা কিছুই নেই। তুমি আমাদের দীলের খবর জান। আমরা আমাদের কৃত গােনাহর জন্য মাফ চাইছি। তুমি মাফ না করলে আর কে করবে? তুমি গােনাহ মাফ করে দিয়ে আমার স্বামীকে আরাম দাও। তাকে আরােগ্য করে দাও। আমার জন্য আমার স্বামী এই রকম কষ্ট পাচ্ছে।

 

তুমি আমার স্বামীর রােগ আমাকে দিয়ে তাকে ভালাে করে দাও। তা না হলে আমাকে যত খুশী শাস্তি দিয়ে তার রােগের উপশম কর। আমি একমাস নফল রােযা রাখার ও একশত রাকাত নফল নামায পড়ার মানত করছি। তােমার পেয়ারা রাসূল হযরত মহাম্মদ মােস্তফা (দঃ) এর রওজা মােবারকে শত কোটী দরুদ ও সালাম জানিয়ে। দোয়া করছি, তুমি আমার দোয়া কবুল কর, আমিন সুম্মা আমিন, তারপর সে স্বামীর। মুখটা দু’হাত দিয়ে ধরে সারা মুখে চুমাে খেতে খেতে বলল, তােমার জ্বিটা আমার। মুখের মধ্যে দাও। আমি চুষবাে, যাতে করে তােমার রােগটা আমার মধ্যে সংক্রামিত হয়। তােমার কষ্ট আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না, কথা শেষ করে স্বামীর ঠোটে নিজের ঠোট ঘষতে ঘষতে বলল, কই দাও না তােমার জ্বিবটা আমার মুখের মধ্যে।

 

সাইফুল স্ত্রীর কথা ও আচরণ দেখেশুনে লিভারের যন্ত্রণা ভুলে গিয়ে চিন্তা করল, ঝর্ণা আমাকে এত ভালবাসে? মনে হচ্ছে আমার কষ্ট দেখে ওর যেন আমার থেকে বেশি।

 

Click Here For Next :– চলবে

Writer :- Raj

Leave a Comment