প্রেম কাহিনী
Raj { Part 26}
এখানে একটা বাড়ি করার ইচ্ছা করেছি।
একটা পুকুরও কাটাব। আপনারা আবার দুঃশ্চিন্তা করবেন না। আপনাদেরকে এখান থেকে চলে যেতে বলব না। আপনারাই ঐ বাড়িতে থেকে দেখাশােনা করবেন। আমরা মাঝে মাঝে এসে বেড়িয়ে যাব।
সাইফুলের আব্বা ওসমান ক্ষেতে-খামারে কাজ করলে কি হবে, সৎ ও ধার্মিক ছিল। বলে গ্রামের প্রায় সকলে তাকে ভক্তি শ্রদ্ধা করত, জহুরও করত। সাইফুলের কথা শুনে আবার তার চোখ দুটো পানিতে ভরে উঠল। বলল, তােমার আব্বা ও আম্মার মতাে লােক এযুগে খুব কম দেখা যায়। আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতি করুক। তুমিও তােমার বাপের মতাে হয়েছ। তােমাকে আল্লাহ বড় করেছে, আরাে করুক। তােমাদেরকে সুখী করুক।
সিতারা বানু সরু চাকলি করে দুধ চিনিতে ভিজিয়ে মেয়েকে ডেকে বললেন, কিরে শুধু গল্প করবি নাস্তা খাওয়াবি না? তারানা বলল নাস্তা তৈরি করতে তােমারই তাে দেরি হল । দাও নিয়ে যাই।।
নাস্তা খেয়ে আসরের নামায পড়ে সাইফুল ঝর্ণাকে নিয়ে তিস্তা নদীর পাড়ে হাঁটতে হাটতে একটা বট গাছের তলায় বসল। কিছুক্ষণ নদীর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, জান ঝর্ণা; স্কুলে পড়ার সময় এই জায়গাটা আমার খুব প্রিয় ছিল। প্রতিদিন বিকেলে। এখানে বসে সন্ধ্যে পর্যন্ত প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতাম, আর তােমার কথা ভাবতাম।। তুমি কবে থেকে আমার কথা ভাবতে?
স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম যেদিন ক্লাসে গেলাম, সেদিন তােমাকে দেখে আমার খুব ভালাে লাগল। তারপর তােমার পরিচয় পেয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু মনকে মানাতে পারি নি। তাই তােমার দিকে যখন তখন করে তাকিয়ে থাকতাম। মাঝে। মাঝে তােমার চোখে চোখ পড়ে গেলে তুমি রাগে মুখ ফিরিয়ে নিতে।। তােমাকে দেখলেই আমি রেগে যেতাম এবং আমার ঘৃণা হত, একথা জানার পরও ঐভাবে চিঠি দিলে কেন? তখন তােমার ভয় করে নি?
প্রথম দিকে ভালবাসা-টালবাসা তাে বুঝতাম না। ছােটবেলা থেকে আমি সুন্দর। জিনিষ খুব ভালবাসি। তাই তােমাকে খুব সুন্দরী দেখে শুধু দেখতাম। নাইনে উঠার পর। তােমাকে ভালবেসে ফেললাম। তখন মনে হত তােমাকে ছাড়া অন্য কোনাে মেয়েকে বিয়ে করতে পারব না। সে সময়ে ভয়ে তােমাকে কিছু জানাতে পারি নি।
তারপর টেস্ট পরীক্ষার পর তােমাকে আর দেখতে পাব না মনে করে ভালবাসার কথা জানাবার জন্য আমার মন পাগল হয়ে উঠেছিল। আর একটা কথা মনে হয়েছিল, আমি তােমাকে ভালবাসি জানার পর তুমি হয়ত একটু নরম হবে। তাই সাহস করে চিঠি দিয়েছিলাম।
| হেডস্যারের হাতে মার খাওয়ার পর আমার ওপর তােমার রাগ হয় নি? অথবা আমার প্রতি তােমার ভালবাসা ছুটে যায় নি? যদি তাই হত, তা হলে তােমাকে কি আজ পেতাম?
ঝর্ণা অশ্রুভরা চোখে বলল, সেসব কথা মনে হলে আমি মরমে মরে যাই। আমার মনের মধ্যে যে কি রকম অনুশােচনা ও কষ্ট হচ্ছে তা আল্লাহকে মালুম। চোখ মুছে আবার বলল, সেসবের জন্যে তুমি যদি কিছু শাস্তি দিতে, তা হলে হয়ত কিছুটা শান্তি পেতাম।।
আমি শাস্তি দেয়ার আগেই তাে কাদছ। শাস্তি দিলে কি করবে তা হলে? তােমার। কোনাে ব্যবহারই আমার মনে প্রতিহিংসা জাগাতে পারে নি। কারণ আমি আমার
ভাগ্যকে সব সময় মেনে নিয়ে সবর করে থাকি। তাই আল্লাহ সেই সবরের ফলস্বরূপ চিরকাঙ্ক্ষিত ঝর্ণাকে দান করে আমাকে ন্য করেছেন। পরে তুমিও তােমার ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে আমাকে পাওয়ার জন্য সবর করেছিলে। তাই তিনি তােমারও মনের আশা পূরণ করেছেন। একটা কথা জেনে নাও, সবরের গাছ খুব তীতা আর ফল খুব মিষ্টি। আমরা সবর করার দরুন তিনি আমাদের মনের আশা পূর্ণ। করেছেন। সেজন্যে আমরা চিরকাল তার শােকর গােজার করতে থাকব। খুব খাঁটি কথা বলেছ। এবার চল মাগরিবের নামাযের সময় হয়ে আসছে।
ঝর্ণার ভাবিরা ননদের পেটে বাচ্চা আছে জানতে পেরে মহা খুশী। তারা শাশুড়ীকে সে কথা বলতে আফসানা বেগম আনন্দে আত্মহারা হয়ে স্বামীকে জানালেন। হামিদ সাহেব শুনে শােকর আলহামদুলিল্লাহ বলে হাসি মুখে বললেন, ওকে দেখে। আমি সেই রকমই অনুমান করেছিলাম। আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে। আফসানা বেগম বললেন, শুধু আনন্দ পেলে চলবে? মেয়ে জামাইকে একদিন ভালাে করে খাওয়াতে হবে। হামিদ সাহেব বললেন, ওরা কি রােজ খারাপ খাচ্ছে?
আফসানা বেগম হেসে উঠে বললেন, তুমি অত জ্ঞানীলােক হয়ে আমার এই সামান্য কথা বুঝতে পারলে না। মেয়েদের পেটে প্রথম বাচ্চা এলে তাকে নানারকম পিঠে-পাঠা ও ভালাে-মন্দ জিনিস করে খাওয়াতে হয়, বুঝেছ?
হামিদ সাহেবও হেসে উঠে বললেন, আবসার যখন তােমার পেটে ছিল তখন তােমার আব্বা-আম্মা বুঝি তাই করে খাইয়েছিলেন? আফসানা বেগম কপট রাগ দেখিয়ে বললেন, খাইয়েছিলেন বইকি। ফিরে আসার সময় আমাদেরকে নতুন জামা-কাপড়ও পরিয়ে বিদায় করেছিলেন। তুমি সেসব ভুলে গেলে কি করে? আমাদেরকে এখন সেইসব করতে হবে।
হামিদ সাহেব বললেন, ওসব মেয়েদের ব্যাপার, আমাদের মনে থাকে না। যা করার তাই কর। তােমাকে নিষেধ করেছে কে? আফসানা বেগম বললেন, তাতাে করবই।
পনের দিন পর ওরা ঢাকায় ফিরে এল। ঢাকায় ফেরার কয়েকদিন পর একদিন বেশ রাত করে সাইফুল বাসায় ফিরলে ঝর্ণা জিজ্ঞেস করল, আজ এত দেরি হল যে?। আজ অফিসে একটা পার্টি দিয়েছিলাম, সেই জন্য দেরি হল।
পার্টির কথা শুনে ঝর্ণার আমিনের পার্টির কথা মনে পড়ল। ভাবল, সে রকম পার্টি। নয় তাে? মনে হচ্ছে কিছু যেন ভাবছ? পার্টিতে মেয়ে মানুষ থাকে তাই না?
সাইফুল হেসে উঠে বলল, মদ, মেয়ে মানুষ না হলে পার্টিই হয় না। এটা পার্টির । প্রধান উপকরণ। হঠাৎ একথা জিজ্ঞেস করলে কেন?
পাটির কথা মনে হলে, প্রচণ্ড ঘৃণা ও ভয় হয়। আমাকে কি তুমি অবিশ্বাস কর? |
ঝর্ণা স্বামীকে জড়িয়ে ধরে ভিজে গলায় বলল, তােমাকে অবিশ্বাস করার আগে। যেন আমার মৃত্যু হয়।
সাইফুল তার পিঠে আদরের চপেটাঘাত করে বলল, এরকম কথা বলতে নিষেধ করেছি না। তারপর তাকে খাটে বসিয়ে বলল, প্রথম ব্যবসায় নেমে পাটিতে মদ ও মেয়ে মানুষের দিকে কোনাে নজর দিই নি। তােমার বিয়ের পর মদের দিকে ঝুঁকে পড়লেও তােমার স্মৃতি মেয়ে মানুষের নেশা থেকে রক্ষা করেছে। আর এখন তােমাকে পেয়ে মদও ছেড়েছি। এর ফলে তােমার ব্যবসায় ক্ষতি হয় না? আমি তাে জানি ব্যবসায় বড় বড় অর্ডার আদায়ের জন্য ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্ত্রীকে ডানাকাটা পরীর মতাে সাজিয়ে হত্তাকত্তাদের মন জুগিয়ে কাজ হাসিল করে।।
তােমার জানাকে অস্বীকার করব না। আজকাল শতকরা নিরানব্বই জন ব্যবসায়ী তাই করে। তারা এই জন্য করে, তাদের কাছে ধর্মের চেয়ে টাকাটা বড়। আমিও প্রথম প্রথম মেয়ে মানুষ ভাড়া করে এনে লাভারের ভূমিকায় অভিনয় করে কাজ হাসিল। করেছি।
এখন পার্টি করলেও মদ ও মেয়েমানুষ বাদ দিয়ে করছি। তােমার সান্নিধ্যে এসে আল্লাহ আমাকে জানিয়েছেন, টাকার চেয়ে ধর্ম বড়।' সেইজন্যে মনে হয়, আল্লাহ মদ ও মেয়ে মানুষ ছাড়াই আমার কাজ হাসিল করিয়ে দিচ্ছেন। তাই পাটি শেষে মসজিদে এশার নামাযের দু'রাকাত শােকরানার নামায পড়ে এলাম। ঝর্ণা শােকর আলহামদুলিল্লাহ বলে স্বামীর দুটো হাত ধরে বলল, তােমাকে পার্টির ঐ সব কথা জিজ্ঞেস করে অন্যায় করে ফেলেছি। মাফ করে দাও। সাইফুল দুষ্টুমী করে বলল, যদি না করি? তা হলে পায়ে ধরে কাদব। . আগে তাই করে দেখাও, তারপর চিন্তা করব।
ঝর্ণা তার হাত ছেড়ে দিয়ে বসে তার পায়ে হাত দিতে গেলে সাইফুল তাকে ধরে বুকে জড়িয়ে বলল, যাও, মাফ করে দিলাম। তারপর বলল, তােমার কোনাে অন্যায়। হয় নি। আমি তােমার সঙ্গে একটু জোক করছিলাম। তােমার পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে যে জিজ্ঞেস করেছ, তা আমি বুঝতে পেরেছি। তা ছাড়া তােমার কথা তাে মিথ্যে না। এখন চল খেতে দেবে। খিদে পেয়েছে।
ওমা, পার্টি থেকে এসে খেতে চাচ্ছ, সেখানে কিছু খাওনি? খেয়েছি, তবে সামান্য। কেন?
তােমার সঙ্গে না খেলে আমার তৃপ্তি হয় না। তা ছাড়া আমি না খেলে, তুমি না খেয়ে থাকবে যে ।
আবার অন্যায় করে ফেললাম, মাফ করে দাও। বারবার তুমি অন্যায় করলে মাফ করতে পারব না। শাস্তি পেতে হবে।।