Golperjogot

Golperjogot

প্রেম কাহিনী – স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প পর্ব 28/শেষ পর্ব

  প্রেম কাহিনী

Raj { Part 28/ Last Part}

যেই সে দরজা খুলেছে অমনি গুণ্ডা দুটো একসঙ্গে তাকে আক্রমণ করে অজ্ঞান করে দারােয়ানের মতাে বেধে ফেলল। তারপর তাকে তার রুমে বন্ধ করে ভিতর বারান্দায়। দুটো থামের আড়ালে দু’জনে আত্মগােপন করে সুযােগের অপেক্ষায় রইল।ঝর্ণা ও সাইফুল যখন কোমর ধরাধরি করে রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দা দিয়ে ডাইনিং রুমের দিকে যাচ্ছিল তখন গুণ্ডাদের একজন থামের আড়াল থেকে বেরিয়ে তাদের দিকে পিস্তল তাক করে বলল, হান্ডস আপ।সাইফুল কংফু মাস্টার ছিল। বিপদের সময় কি করা উচিত তার জানা। পিছন দিক। থেকে কথাটা শুনেছে। ঝর্ণাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিচ্ছে প করে ঘুরে গুণ্ডাটাকে দেখে সেখান থেকে জাম্প করে উড়ে এসে তার উপর পড়ল ।গুণ্ডাটার চোখে ধা ধা লেগে গেল ।তার মনে হল ভেল্কী দেখছে। ঘাের কাটিয়ে ওঠার আগেই সাইফুল তার উপর পড়তে দু’জনে মেঝেয় পড়ে গের। পিমতলটা গুণ্ডাটার হাত থেকে ছিটকে পড়ে দেয়ালের কাছে চলে গেল। সাইফুল তার গর্দানে কয়েকটা চাপ মারতে সে জ্ঞান হারাল।অন্য গুণ্ডাটা থামের আড়াল থেকে দেখে তার চোখেও ভেল্কী বলে মনে হয়েছিল। সাথির অবস্থা দেখে সে সাবধান হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি থামের আড়াল থেকে বেরিয়ে ঝর্ণার একটা হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে করতে সাইফুলের দিকে পিস্তল তাক করে বলল, খবরদার, আর একচুল নড়বেন না, নচেৎ গুলি করতে বাধ্য হব। তারপর ঝর্ণাকে বলল, আপনার স্বামীকে যদি বাচাতে চান, তা হলে চলুন আমার সঙ্গে।ঝর্ণা তখন ভয়ে থর থর করে কাঁপছে। সে সাইফুলের দিকে তাকিয়ে কি করবে না করবে ভাবতে লাগল। গুণ্ডাটা অধৈর্য স্বরে বলল, কুইক।দেরি দেখে মনিরা কাজের মেয়েটাকে সাইফুল ও ঝর্ণাকে ডাকতে পাঠিয়েছিল । সে বারান্দায় এসে ঐরকম ঘটনা দেখে প্রথমে খুব ভয় পেয়ে থতমত খেয়ে যায়। তারপর দৌড়ে ফিরে গিয়ে ব্যাপারটা মনিরাকে জানাল।শুনে নাজনীন বলল, আম্মা তাড়াতাড়ি থানায় ফোন করে দাও, আমি ওদিকে দেখছি। কথা শেষ করে নাজনীন যখন বারান্দার দরজার পর্দা ফাক করে উঁকি মারল, তখন গুণ্ডাটা ঝর্ণাকে তাগিদ দিয়ে বলছে, আমার সঙ্গে না গেলে আপনার স্বামীকে। কুকুরের মত গুলি করে মারব।| ঝর্ণা সাইফুলের চোখের দিকে তাকিয়েছিল। বুঝতে পারল, সে তাকে ইশারা করে। যেতে বলছে। ঝর্ণা ধীরে ধীরে পা পা করে এগােচ্ছে, এমন সময় নাজনীনকে মেঝেয়। দেওয়ালের কাছে পড়ে থাকা পিস্তলটার দিকে এগিয়ে যেতে দেখে সাইফল বলল নাজ তুই তাের হাতের লাঠিটা দিয়ে গুণ্ডাটার মাথায় খুব জোরে আঘাত কর।গুণ্ডাটার পিছনের দিকে থেকে নাজনীন আসছিল। সেদিক তাকিয়ে সাইফুলকে। কথা বলতে শুনে সত্য-মিথ্যা দেখার জন্য গুণ্ডাটা একবার মুখ ঘুরিয়ে দেখতে গেল। সাইফুল এই সুযােগের অপেক্ষায় ছিল। জাম্প করে উড়ে তার কাছে আসতে চাইল । কিন্তু এই গুণ্ডাটা আগেরটার চেয়ে বেশি চালাক। পিছনে এক মুহুর্তের জন্য তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে সাইফুলকে উড়ে আসতে দেখে পরপর তিনটে গুলি করল।প্রথম দুটো মিস হলেও শেষেরটা সাইফুলের পেটে লাগল। ততক্ষণে সাইফুল তার ঘাড়ের উপর এসে পড়ে পিস্তলটা কেড়ে নিয়ে নাজনীনের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলল, থানায় জলদি ফোন করে দে। তারপর গুটার কানের নীচে ও তলপেটে কয়েকটা ঘুষি মেরে অজ্ঞান করে ফেলল।তখন সাইফুলের রক্তে জামা কাপড় ভিজে মেঝেয় গড়িয়ে পড়ছে। গুণ্ডাটা অজ্ঞান হয়ে যেতে বসে পড়ে একহাতে পেট ধরে একটা চাকরকে দেখতে পেয়ে বলল, রশি দিয়ে এদের হাত-পা শক্ত করে বেঁধে ফেল।ঝর্ণা এতক্ষণ ঘােরের মধ্যে ছিল। স্বামীর রক্ত দেখে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, আল্লাহ গাে একি হল? তুমি রহম কর। তারপর নাজনীনকে বলল, জলদি ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বল, এক্ষুনি মেডিকেল নিয়ে যেতে হবে। নাজনীন ছুটে বেরিয়ে গেল ড্রাইভারকে গাড়ি বের করার কথা বলতে।মনিরা থানায় ফোন করে এসে সাইফুলের রক্ত দেখে সেও তাকে জড়িয়ে ধরে। কাঁদতে কাঁদতে বলল, কই দেখি কোথায় গুলি লেগেছে? সাইফুল গুলি খাওয়া জায়গাটা দু’হাত দিয়ে চেপে ধরে রেখেছে, তবু রক্ত গল গল করে বেরােচ্ছে। সে ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে আসতে লাগল। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল, বুবু, ঝর্ণাকে তােমার হাতে তুলে দিচ্ছি, ওর পেটে বাচ্চা আছে, ওদেরকে তুমি দেখাে। তারপর উপরের দিকে তাকিয়ে বলল, আল্লাহপাক, তােমার ইশারা ছাড়া কোন কিছু হয়। । তুমি আমাকে ক্ষমা করাে। এদের সবাইকে হেফাজত করাে।ঝর্ণা স্বামীকে বুকে করে ধরে রেখে বলল, কথা বলতে তােমার কষ্ট হচ্ছে, তুমি ।এবার চুপ কর।সাইফুল ঝর্ণার গালে গাল ঠেকিয়ে বলল, প্রিয়তমা আমার, তােমাকে নিয়ে বেশি দিন ঘর সংসার করা আমার ভাগ্যে নেই। তাই আল্লাহ আমার সমস্ত কামনা বাসনা পূরণ করে দুনিয়া থেকে তুলে নিচ্ছেন। ঝর্ণাকে কাঁদতে দেখে বলল, কাদছ কেন? তার। ইচ্ছায় চলে যেতে হচ্ছে।আল্লাহর কাছে ধৈর্য ধরার ক্ষমতা চাও। এবার কান্না থামিয়ে আমাকে বিদায় দাও প্রিয়তমা। ঝর্ণা ভুলে গেল এখানে বড় ননদ, নাজনীন ও চাকর-চাকরানীরা রয়েছে। সে স্বামীর মাথা দু’হাত দিয়ে ধরে তার সারা মুখে চুমাে খেয়ে বলল, বিদায় তােমাকে আমি নিতে দেব না, যেমন করে থােক ইনশাআল্লাহ বাচাবই। তারপর নাজনীনকে দেখে। বলল, ড্রাইভার এখনও গাড়ি বার করে নি?।ডাইভার গাড়ি বের করে সাহেবকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ঘরে ঢুকে ঝর্ণার কথা। শুনতে পেয়ে বলল, তাড়াতাড়ি চলুন। সাইফুল টেনে টেনে বলল, শুধু শুধু তােমরা আমাকে মেডিকেলে নিয়ে যাচ্ছ। তারপর ঝর্ণাকে বলর, খুব পিয়াস লেগেছে, পানি দাও।। নাজনীন শুনতে পেয়ে তাড়াতাড়ি এক গ্লাস পানি নিয়ে এল।ঝর্ণা গ্লাসটা স্বামীর মুখে ধরতে সাইফুল বিসমিল্লাহ বলে খেয়ে আলহামদুলিলা বলে ডান হারাল। সাইফলকে চুপ করে যেতে দেখে সবাই মিলে ধরাধরি করে গাড়িতে ত মেডিকেলে রওয়ানা দিল। চাকর-চাকরানী ছাড়া সবাই মেডিকেলে গেল। যাওয়ার সময় মনিরা চাকরদের বলল, পুলিশ এলে তাদেরকে ঘটনাটা বলে এদেরকে নিয়ে যেতে বলবে।মেডিকেল আসার পর ডাক্তারা সাইফুলকে পরীক্ষা করে বলল, হি ইজ ডেড ।।শুনে মনিরা ও নাজনীন হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।আর ঝর্ণা প্রথমে কয়েক সেকেণ্ড থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল তারপর না ….. বলে স্বামীর বুকের উপর আছড়ে পড়ে জ্ঞান হারাল।

 The End​​​

Writer :- Raj

Leave a Comment