Golperjogot

Golperjogot

প্রেম কাহিনী – স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প পর্ব 3 | Love Story

Prem Kahini

Raj Choudhuri { Part 3 }

মােরসেদ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে। সাইফুলকে হেডস্যার যখন মারতেছিলেন তখন তারও খুব কষ্ট হয়েছে। ঝর্ণাকে যে সাইফুল ভালবাসে, তা মােরসেদ জানত। কিন্তু চিঠি দেয়ার কথাটা জানত না। সাইফুল তাকে না জানিয়ে ঝর্ণাকে চিঠি দিয়েছে জেনে তার উপর মােরসেদের একটু মনে কষ্ট হল। বিকেলে তাদের ঘরে গিয়ে জ্বর শুনে তার কাছে গিয়ে কথাটা না বলে পারল না। তারপর আরাে বলল, তুই যদি আগে আমাকে চিঠির কথা জানাতিস, তা হলে এরকম হত না।

সাইফুল স্লান হেসে বলল, তুই মনে কষ্ট নিস না। চিঠি দেয়ার কথা আমার আগে মনে হয় নি। আজ স্কুল যাওয়ার আগে হঠাৎ খেয়াল টাঘাড়ে চাপে। তাই তখনই লিখি । স্কুলেও তােকে জানাবার সুযােগ পাইনি।ওসমান মােরসেদের কাছে ছেলের অপকর্মের কথা শুনে খুব রেগে যায়। ঘর এসে ছেলের ওপর ভীষণ রাগারাগি করল। ঐদিন রাত থেকে সাইফুল কয়েকদিন জ্বরে ভুগল। খবর পেয়ে হেডস্যার তাহের সাহেব সাইফুলকে একদিন এসে দেখে গেছেন।

ঐদনি রেগে দিয়ে তিনি সাইফুলকে কঠিন শাস্তি দিয়েছিলেন বটে, কিন্তু পরে সে কথা চিন্তা করে ওঁর চোখ দুটো পানিতে ভরে গেছে। ভাবলেন, তাকে বেশি ৱেহ করি বলে কি শাসনটাও বেশি করে ফেললাম? তাকে স্কুলে আসতে না দেখে মােরসেদকে জিজ্ঞেস করেন, সাইফুল স্কুলে আসছে না কেন তুমি জান?

মােরসেদ বলল, তার জ্বর হয়েছে। সেইদিনই তিনি সাইফুলকে দেখতে যান ।

সাইফুলের বড় বােন মনিরা যখন ক্লাস এইটে পড়ে তখন ওসমান ভালাে সম্বন্ধ পেয়ে তার বিয়ে দিয়ে দেন সাইফুলের ঘটনাটা সে জানতে পারল না। সাইফুল ভালাে। হয়ে বলল, আমি আর ঐ স্কুলে পড়ব নাশুনে ওসমান রেগে গিয়ে বলল, অন্যায় করেছিলি, সে জন্যে মাস্টার শাসন। করেছেন। তাতে স্কুল কি দোষ করল?সাইফুল বলল, আমি কিছুতেই ঐ স্কুলে আর পড়বাে না।

Related Story

ওসমান চিন্তা করল, মনিরা পরের ঘরে, সাইফুলকে কড়াকড়ি করলে সে যদি কোথাও চলে যায়? তাই বেশি বকাবকি না করে বুঝিয়ে বলল, কয়েক মাস পরে তাের ফাইন্যাল পরীক্ষা। সে জন্যে স্কুলের বেতন, কোচিং চার্জ ও পরীক্ষার ফি সবকিছু দেয়া হয়ে গেছে। তা ছাড়া এখন তাে তুই অন্য স্কুল থেকেও পরীক্ষা দিতে পারবি না। ওসব পাগলামি ছাড়, এই কটা মাস মন দিয়ে পড়াশােনা করে পরীক্ষাটা দিয়ে দে। তারপর তুই তাে কলেজে পড়বি।

সাইফুল স্পষ্ট জানিয়ে দিল, আমি এবছর পরীক্ষা দেব না, পরের বছর দেব। ওসমান ছেলের কথা শুনে খুব রেগে গেলেও কিছু বলল না। চুপি চুপি হেডস্যারের কাছে গিয়ে ছেলের মতামতের কথা বলে বােঝাতে বলল।

তাহের সাহেব বললেন, অত ভালাে ছেলে শিক্ষকের হাতে মার খেয়ে পরীক্ষা দেবে না, এ কেমন কথা? স্কুলে আসতে যদি তার লজ্জা হয়, তা হলে বাড়িতে পড়ে। পরীক্ষা দিক। সাইফুল যে স্কলারশীপ পাবেই সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত। স্কলারশীপ পেলে আমাদের স্কুলের ও গ্রামের কত গৌরব হবে। না-না তা হতে দিতে পারি না। চলুন, আমি আপনার সঙ্গে গিয়ে বােঝাব।সাইফুল দূর থেকে আব্বার সঙ্গে হেডস্যারকে আসতে দেখে ঘরের পিছনের কলাবাগান দিয়ে পালিয়ে গেল। তারপর সে আর ঘরে ফিরল না। সেদিন বিকেলে মধুপুরে বুবুদের বাড়িতে এসে রাত কাটাল। সকালে মনিরার কাছ থেকে কয়েকটা টাকা চেয়ে নিয়ে ঢাকায় রওয়ানা দিল ।

এদিকে ওসমান হেডস্যারকে বসতে বলে সাইফুলকে দেখতে না পেয়ে স্ত্রীকে তার কথা জিজ্ঞেস করল। মালেকা বলল, একটু আগেও তাে ঘরে ছিল। মনে হয় তােমার সাথে হেডস্যারকে। আসতে দেখে বাইরে চলে গেছে।ওসমান স্ত্রীকে কিছু নাস্তার ব্যবস্থা করতে বলে স্যারের কাছে এসে বলল, ওর আম্মা বলল, একটু আগে ঘরে ছিল, আমাদের আসতে দেখে পালিয়েছে। হেডস্যার বললেন, এখন তা হলে চলি; আর একদিন আসব। ওসমান বলল, একটু বসুন। গরিবের বাড়ি এসেছেন, কিছু মুখে না দিয়ে যেতে পারবেন না।

হেডস্যার নাস্তা খাওয়ার পরও সাইফুলের জন্য বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ফিরে গেলেন। সেদিন রাতেও যখন সাইফুল ফিরে এল না তখন মালেকা স্বামীকে বলল, ও বােধ হয় মনিরাদের বাড়ি গেছে। তুমি কাল সকালে গিয়ে নিয়ে এস। ওসমান তখন স্ত্রীকে কিছু না বললেও সকালে নাস্তা খেয়ে মেয়ের বাড়িতে রওয়ানা দিল।

Related Story

মাইল তিনেক দূরে মধুপুর গ্রামে মনিরার বিয়ে হয়েছে। জামাইয়ের নাম কাওসার। সুন্দর স্বাস্থ্যবান ছেলে। মা-বাপ নেই। এক ফুফু তাকে মানুষ করেছে। ফুফু নিঃসন্তান বিধবা। তিন কূলে তারও কেউ নেই। সেই ফুফুর বাস্তু ভিটা, আগান-বাগান ও কিছু ক্ষেতি জমি আছে। কাওসার ফুফুকেই মা বলে জানে। তার জন্মের কয়েকদিন পর তার মা মারা যায়। ফুফু পনের দিনের ভাইপেকে নিয়ে এসে মানুষ করেছে।

নিঝঞাট সংসার দেখে ওসমান মনিরাকে সেই ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে। বিয়ের বছর দুই পরে মনিরার একটা মেয়ে হয়। ওসমান খবর পেয়ে নাতনিকে দেখতে গিয়ে তার নাম রাখে নাজনীন । নাজনীন যখন দু’বছরের তখন মনিরার ফুফুশাশুড়ী মারা যায়। কাওসার খুব কর্মঠ ছেলে। নিজের ও গ্রামের লােকের ক্ষেতে-খামারে কাজ করে। বেশ ভালাে ভাবেই সংসার চালিয়ে আসছে। ওসমান যখন মেয়ের বাড়ি গিয়ে পৌছাল তখন বেলা দশটা।

মনিরা আব্বাকে এক বদনা পানি দিয়ে বলল, অজু করে ঠান্ডা হন। ওসমান ওজু। করে বসার পর মনিরা একটা বড় গ্লাসে করে একগ্লাস পানি, এক গ্লাস সরবৎ ও পানের সরঞ্জাম নিয়ে এসে সামনে রেখে হাত পাখা দিয়ে আব্বাকে বাতাস করতে করতে খবরা-খবর জিজ্ঞেস করল ।ওসমান সরবৎ খেয়ে একটা পান সেজে মুখে দিয়ে সাইফুল এখানে এসেছিল কিনা জিজ্ঞেস করল।মনিরা বলল, সাইফুল কাল বিকেলে এসেছিল। আজ সকালে নাস্তা খেয়ে আমার কাছ থেকে বিশ টাকা চেয়ে নিয়ে গেল। আবার কপালে চিন্তার ছাপ দেখতে পেয়ে

Click Here For Next :– চলবে

Writer :- Raj Choudhuri

Leave a Comment