Golperjogot

Golperjogot

প্রেম কাহিনী – স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প পর্ব 4 | Love Story

Prem Kahini

Raj Choudhuri { Part 4 }

জিজ্ঞেস করল, সাইফুলের কি হয়েছে? তুমি কিছু বলেছ? ওর সামনে পরীক্ষা।পড়াশােনা না করে ঘুরে বেড়াচ্ছে কেন? ওসমান একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে সব কথা বলল।

শুনে মনিরার মন খারাপ হয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে বলল, ও যা ছেলে, একবার যখন বলেছে এ বছর পরীক্ষা দেবে না তখন কি আর দেবে? আমার মনে হয় সে ঘরে না গিয়ে অন্য কোথাও চলে গেছে। তুমি ওর জন্য চিন্তা করাে না।

আব্বা। ছােট না, খাট না, অতবড় ছেলে হয়ে যদি নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারে, তাতে তােমার কি করার আছে? এবেলা থেকে খেয়েদেয়ে ওবেলা যাবে ।

এমন সময় মনিরার মেয়ে নাজনীন স্কুল থেকে এসে নানাকে দেখতে পেয়ে ছুটে এসে বই খাতা রেখে কদমবুসি করে বলল, কেমন আছেন নানা? নানি ভালাে আছে? মামা কালকে এসেছিল, আজ সকালে নাস্তা খেয়ে চলে গেল। কত করে বললাম থাকতে, থাকল না। আপনাকে আজ থাকতে হবে কিন্তু।

ওসমান নাতনীকে দু’হাতে ধরে কোলে বসিয়ে মাথায় চুমাে খেয়ে দোয়া করে বললেন, হ্যা ভাই আমরা সবাই ভাল আছি। তুমি এখন কোন ক্লাসে পড়?নাজনীন বলল, নানা ভাই, আপনি বডত ভুলে যান। সেবারে যখন এলেন তখন বলেছিলাম না, থ্রিতে পড়ি?

ওসমান মনিরাকে বলল, তাের মেয়ে একদিন লেখাপড়ায় খুব ভালাে হবে দেখিস।

Golperjogot Status

তারপর বলল, এবার যাই মা, তাের মা আবার ওদিকে চিন্তা করবে। মনিরা বলল, চিন্তা করবে কেন? আম্মা তাে জানে তুমি এখানে এসেছ।নাজনীন বলে উঠল, আমি আপনাকে যেতে দিলে তাে যাবেন। তারপর সে ছাতাটা নিয়ে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রেখে এসে বলল, এবার যান তাে দেখি কেমন করে যাবেন। গেলে রােদে মাথা ফেটে যাবে।ওসমান হেসে উঠে মনিরাকে বলল, তাের মেয়ের বুদ্ধি দেখেছিস? আমাকে যেতে দেবে না বলে আমার ছাতা লুকিয়ে রেখে রােদের ভয় দেখাচ্ছে।মনিরা হাসিমুখে নাজনীনকে বলল, তুই স্কুলের জামা খুলে এসে নানার সাথে গল্প। কর, আমি রান্নার ব্যবস্থা করি।

সেদিন বিকেলে ওসমান ঘরে ফিরে স্ত্রীকে সাইফুলের কথা জানাল? তারপর বেশ কিছুদিন পার হয়ে যেতেও যখন সাইফুল ফিরে এল না তখন তারা আল্লাহর কাছে ছেলের সহিসালামতের জন্য এবং তাকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য কান্নাকাটি করে দোয়া। চেয়ে সবুর করে রইল।মনিরা মাঝে মাঝে এসে আব্বা-আম্মাকে প্রবােধ দিয়ে যায়। সাইফুলের ঘটনা গ্রামের লােকজন জেনে অনেক দুঃখ প্রকাশ করল। কিন্তু ঝণী তাকে মনের মতাে শাস্তি দিতে পেরেছে ভেবে ও তার পড়াশােনা বন্ধ করে গ্রাম ছাড়া করতে পেরে খুব খুশী হয়েছে।সেদিন সাইফুল বুবুর বাড়ি থেকে ঢাকায় চলে আসে। ঢাকায় এসে ছেলে মেয়েদের পড়াবার বদলে থাকা-খাওয়ার লজিং এর অনেক চেষ্টা করল।

অচেনা ছেলেকে দরকার থাকলেও কেউ রাখতে চাইল না। থাকা-খাওয়ার তার খুব কষ্ট হতে লাগল। শেষে কোনাে উপায় না দেখে এক রিক্সাওয়ালাকে অনেক অনুনয় বিনয় করে তার কাছে রিক্সা চালান শিখে রিক্সা চালাতে লাগল। আর রিক্সার মালিককে বলে তার গ্যারেজে রাত কাটাত। শহরে এসে এতাে কষ্টের মধ্যেও সে কিন্তু নামায ছাড়ে নি। সে ফার্মগেটের গ্যারেজের রিক্সা চালায়।

একদিন ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমার সামনে রাত এগারােটার সময় হুড তুলে বসে আছে। তখন শ্রাবণ মাস। তিন-চার দিন একটানা বৃষ্টির পর আজ সকাল থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। সিনেমার প্যাসেঞ্জারদের জন্য সে অপেক্ষা করছে। এই সময়ে প্যাসেঞ্জারদের কাছ থেকে ভালাে ভাড়া পাওয়া যায়। এমন কি নিরাপদে পৌছে দিলে দু’পাঁচ টাকা বখশীষও মিলে। সিনেমা সাড়ে এগারােটায় ভাঙ্গল। ভাগ্যক্রমে মীরপুর এক নাম্বারের দু’জন প্যাসেঞ্জার পেল। এতরাতে অতদূরে যাওয়ার ইচ্ছা সাইফুলের না। থাকলেও পঁচিশ টাকা ভাড়া দেবে শুনে রাজি হয়ে গেল।

এক নাম্বার পানির ট্যাংকীর পাশে একটা গলিতে নেমে ভাড়া দেওয়া তাে দূরের কথা, তারা দু’জনে দুটো চাকু বের করে ভয় দেখিয়ে সাইফুলের সারাদিনের রােজগার কেড়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি কেটে পড়তে বলল । চালাকি করে লােকজন ডাকার চেষ্টা করলে, জানে শেষ করে দেবার হুমকিও দিল তাদের দু’জনের কাছে দুটো চাকু ছিল বলে সাইফুল কিছু বলল না। মনের কষ্ট মনে চেপে ফিরে আসতে লাগল।

Related Story

আজ চার মাস হল সে ঢাকায় এসেছে। রিক্সা চালিয়ে সারাদিনে যা রােজগার করে, তা থেকে নিজের খরচ ও রিক্সার জমা টাকা দিয়ে যা বাঁচে তার সবটাই গ্যারেজের মালিকের কাছে জমা রাখে। তার ইচ্ছা প্রয়ােজন মতাে টাকা জমা হলে স্কুলে ভর্তি হয়ে এস.এস.সি. পরীক্ষা দিবে। আজ তার বেশ ভালাে উপার্জন হয়েছিল। এতগুলাে টাকা খােয়া গেল ভেবে তার চোখে পানি এসে গেল। কল্যাণপুর পার হয়ে পােলটার উপর উঠেছে এমন সময় শুধু কোমরে চট জন একজন ফকিরের মতাে লােক তার পথ আগলে বলল, এই বেটা, তাের কাছে কি আছে দে। আজ তিন দিন আমার কিছু খাওয়া হয় নি।

সাইফুল রিক্সা থেকে নেমে বলল, আমার আজকের সব রােজগর একটু আগে দু’জন প্যাসেঞ্জার কেড়ে নিয়েছে। কিছু থাকলে নিশ্চয় দিতাম। আপনি আমার রিক্সায় উবুন। আমি যেখানে থাকি, সেখানে নিয়ে গিয়ে খাওয়াব। ফকিরটা হাে হাে করে হেসে উঠল।রাত প্রায় একটার মত । এই গভীর রাতে ফকিরের হাসির শব্দে সাইফুল ভয় পেয়ে গের। সাহস করে বলল, হাসছেন কেন? গেলে চলুন। দেখছেন না, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ভিজে গেছি। আমার ঠান্ডা লাগছে।ফকিরটা সাইফুলের কাছে এসে নিজের আঙ্গুল থেকে একটা আংটি খুলে তার ডান হাতের মধ্যমায় পরিয়ে দিয়ে বলল, যা বেটা, তুই কি আমাকে খাওয়াবি। আসমানের দিকে আঙ্গুল তুলে আবার বলল, আল্লাহ সবার রেজেকদাতা। সেই সবাইকে খাওয়ায়।

তুই খুব সাবধানে থাকবি। ফরয নামায আর ফরয রােযা জীবনে কখনাে ছাড়বি না। যদি ছাড়িস তা হলে এই আংটি তাের কাছে থাকবে না। আর তুই বিপদেও পড়বি। সব সময় আল্লাহকে স্মরণ করবি। তা হলে তাের মনস্কামনা পূরণ হবে।

Click Here For Next :– চলবে

Writer :- Raj Choudhuri

Leave a Comment