Golperjogot

Golperjogot

প্রেম কাহিনী – স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প পর্ব 7 | Love Story

ঝর্ণা সাইফুলের নিরুদ্দেশের পর থেকে তার কোনাে খবর জানে না! তাই তাকে আজ এখানে দেখে চমকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল।

সাইফুল বহুদিন তার মানস প্রতিমাকে এত কাছ থেকে দেখে নি । জিজ্ঞেস করল, কেমন আছ?
ঝর্ণা তখন সাইফুলের দিকে তাকিয়ে ভাবছিল, সাইফুল তা হলে ভার্সিটিতে পড়ছে। আগের সেই রােগা পেঁচকা হাড়গীলে সাইফুল এখন বেশ সুঠাম দেহের অধিকারী। গায়েও দামী প্যান্ট শার্ট। তাকে ভালাে মন্দ খোজ নিতে দেখে তেলে বেগুনের মতাে জ্বলে উঠল। কড়া কিছু বলতে গিয়ে সামলে নিল। আমিনের সামনে কোনাে সিন ক্রিয়েট করতে চাইল না। সংযত হয়ে বলল, সে কথা জেনে তােমার লাভ নেই। তারপর আমিনকে বলল, চল, দেরি হয়ে যাচ্ছে।

আমিন জিজ্ঞেস করল, ছেলেটা কে? ঝর্ণা বলল, আমাদের গ্রামের এক ভূমিহীন কৃষকের ছেলে। কারাে দয়ায় হয়তাে লেখাপড়া করছে।

আমিন সাইফুলকে একা বিদ্রুপের হাসি উপহার দিয়ে ঝর্ণার একটা হাত দুলাতে দুলাতে চলে গেল।
সাইফুল মৃদু হেসে লাইব্রেরীতে ঢুকল। এরপর থেকে সে আর ঝর্ণার কাছাকাছি যায় না, দূর থেকে দেখে।

আমিন বড়লােক না হলেও মােটামুটি স্বচ্ছল পরিবারের ছেলে। তার বাবার ছােট খাট ব্যবসা। বিভিন্ন অফিসে মাল সাপ্লাই দেন। ব্যবসা থেকে যা ইনকাম করেন এবং দোতলা বাড়ির উপরের দু’টো ফ্লাট থেকে যা ভাড়া পান, তাতে সংসারে কোনাে অভাব। নেই । আমিনের সঙ্গে ঝর্ণার পরিচয় ক্লাসমেট হিসাবে। আমিন সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী ।

নিয়মিত ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ করে। দেখতেও সুন্দর। পােষাক পরিচ্ছদ কেতা দুরস্ত। বড় বড় কথা বলে ফাট দেখায়। তার সবচেয়ে বড় গুণ সে মেয়েদেরকে কনভিন্স করতে ওস্তাদ। ঝর্ণা সুন্দরী, স্বাস্থ্যবতী, পড়াশুনায় ভালাে, তার ওপর।

বড়লােকের মেয়ে। পরিচয়ের পর তাই আমিন তার সঙ্গে প্রেমের খেলা খেলছে।
ঝর্ণার শেষ বর্ষ চলছে। আজ ভার্সিটি বন্ধ। আমিনের কথামত ঝর্ণা বেলা দেড়টার দিকে রােকেয়া হলের গেটের বাইরে এসে আমিনকে দেখতে না পেয়ে অপেক্ষা করতে লাগল । আমিন তাকে আজ চাইনিজ খাওয়াবে। হঠাৎ দেখতে পেল, গেটের পূর্বদিকে অল্প দূরে ফেরিওয়ালার কাছ থেকে সাইফুল বাদাম কিনছে।

সাইফুল দু’ঠোঙা বাদাম কিনে ঝর্ণার কাছে এগিয়ে এসে একটা ঠোঙা তার দিকে বাড়িয়ে ধরে বলল, নাও, বাদাম খাও।

লাইব্রেরীর বারান্দায় ঘটনার পর থেকে প্রায় দেড় বছর হতে চলল ঝর্ণা। সাইফুলকে আর তার কাছে আসতে দেখে নি। মাঝে মাঝে তাকে দূর থেকে লক্ষ্য করতে দেখেছে। তাকে না দেখার ভান করে সরে গেছে। সে সময় ভেবেছে, যার বাপ। কামলাগিরী করে খায়, সে কিনা ভাগ্যগুণে ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে বলে নিজেকে কি ভাবে কি জানি? যদি কোনােদিন আবার সামনে এসে কথা বলার চেষ্টা করে, তা হলে বাছাধনকে টের পাইয়ে ছাড়ব সাইফুলকে দেখেলেই ঝর্ণার পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঘূণায় রি রি করে উঠে। এখন তাকে বাদাম দিতে দেখে রাগে বারুদের মতাে জ্বলে।

 

উঠল। বাদামের ঠোঙাটা নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলল, তােমার মতাে নির্লজ্জ বেহায়া ছেলে জীবনে দেখি নি। তােমার কি আত্মসম্মান জ্ঞান বলতে কিছু নেই? তুমি তাে জান, আমি তােমাকে ইতর প্রাণীর চেয়ে বেশি ঘৃণা করি। তবু তুমি আমার পিছনে ঘুরাে কেন? তুমি কি নিজের পরিচয় জান না? কোন সাহসে তুমি আমার পিছনে লেগেছে? ভার্সিটিতে লেখাপড়া করছ, কমনসেন্স বলতে তােমর এককণাও নেই। চলে যাও, আর কোনাে দিন আমার সামনে আসবে না।

ঝর্ণা একটা ছেলেকে রাগারাগি করছে দেখে অনেক ছেলেমেয়ে দাড়িয়ে গেছে। কিছুক্ষণ আগে আমিন এসে তার কথাগুলাে শুনেছে। ঝর্ণা তাকে চলে যেতে বলা সত্ত্বেও ছেলেটাকে দাঁড়িয়ে বাদাম খেতে দেখে আমিন এগিয়ে এসে বলল, কি ব্যাপার? তােমাদের গ্রামের সেই ছেলেটা না? ওকি তােমাকে অপমান করেছে? ঝর্ণা বলল, হ্যা। আমার রূপে মুগ্ধ হয়ে আমাকে বাদাম খাওয়াতে চাচ্ছে।

আমিন তাই নাকি বলে সাইফুলের সামনে এসে বলল, এই যে ব্রাদার, সুন্দরী মেয়ে দেখলেই বুঝি জ্বিব দিয়ে লালা পড়ে? ভালই ভালই কেটে পড়ন, নচেৎ কপালে খারাবি আছে। যান চলে যান। আর কোনােদিন কোনাে সুন্দরী মেয়ের পিছনে লাগবেন । ভার্সিটিতে পড়ছেন অথচ ছােটলােকি ব্যবহার ত্যাগ করতে পারলেন না। সাইফুল তার কথায় কান না দিয়ে নির্দিধায় বাদাম খেতে লাগল।

তাই দেখে আমিনের গা জ্বলে উঠল। বলল, কি হল, কথা বুঝি কানে যাচ্ছে না? সাইফুল বলল, সৃষ্টিকর্তা দুটো কান যখন শােনার জন্য দিয়েছেন তখন নিশ্চয় সবকিছু গেছে। তবে এখান থেকে চলে যেতে বলার অধিকার শুধু আপনার একার নয়, সবাইয়ের মতাে আমারও আছে। এ জায়গাটাতাে কারাের নিজস্ব নয়।

আমিন রাগ সহ্য করতে পারল না, তার মুখে একটা ঘুসি মারতে গেল।

সাইফুলের মুখে ঘুসিটা লাগার আগে সে খপ করে তার হাতটা ধরে পিছন দিকে মুচড়ে ধরে রেখে বলল, ঢিল ছুড়লে পাটকেল খেতে হয়। তারপর হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলল, গায়ে শুধু শক্তি থাকলে হয় না, সেগুলাের প্রয়ােগ করার কৌশলও জানতে হয়। এবার আপনি বরং যান ঝর্ণাকে নিয়ে কোথায় যাবেন । বেচারি অনেকক্ষণ ধরে আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

আমিনের গায়ে প্রচুর শক্তি। কেউ সহসা তার সঙ্গে মারামারি করা তাে দূরের কথা, কথা কাটাকাটি করতে পর্যন্ত সাহস পায় না। সেই আমিন এতগুলাে ছেলেমেয়ে ও ঝর্ণার সামনে একটা একহারা ছেলের কাছে হেরে গিয়ে অপমানে ও রাগে লাল হয়ে গেল। ফুসতে ফুসতে বলল, আমিও দেখে নেব।

সাইফুল মৃদু হেসে বলল, নিজে একা দেখে বুঝি সাধ মিটল না? দলবল নিয়ে দেখতে চান? তাতেও সুবিধে করতে পারবেন না। ওরকম বদ খেয়াল ছেড়ে দিন। মনে রাখবেন আমিও ভার্সিটির ছাত্র।
যারা প্রথম থেকে ঘটনাটা দেখেছে, তারা সাইফুলের দোষ মনে করে আমিনের হয়ে কিছু বলবে বলে ভেবেছিল । কিন্তু তারা সাইফুলের কাণ্ড দেখে ও তার কথা শুনে ভয় পেয়ে চুপ করে রইল।

Leave a Comment