Golperjogot

Golperjogot

প্রেম কাহিনী – স্কুল জীবনের প্রেমের গল্প পর্ব 8 | Love Story

আমিন বুঝতে পেরেছে ছেলেটা রােগা হলে কি হবে, গায়ে অসুরের শক্তি। সম্মুখ সমরে তার কিছু করতে পারবে না ভেবে শুধু বলল, আমি এর প্রতিশােধ নেই ।

তারপর ঝর্নাকে বলল, এস অনেক দেরি হয়ে গেল। তারা একটা রিকশায় উঠে চলে যাওয়ার পর নকীব নামে একটা ছেলে সাইফুলকে বলল, আচ্ছা একহাত দেখালেন ভাই। সত্যিই আপনার জওয়াব নেই। আপনার নামটা জানতে পারি?

সাইফুল বলল, নাম জেনে আর কি হবে? তবু যখন জানতে চাইছেন তখন বলাই উচিত, কি বলেন? তারপর সেও একটা রিকশায় উঠে বলল, আমার নাম সাইফুল ।

নকীব নাম শুনে চমকে উঠে হাঁ করে সাইফুলের চলে যাওয়া রিক্সার দিকে চেয়ে রইল । তার অবস্থা দেখে অন্য একটা ছেলে তাকে জিজ্ঞেস করল, কি ব্যাপার? আপনি ওর নাম শুনে চমকে উঠে অমন করে চেয়ে রয়েছেন কেন?

নকীব বলল, কুংফু মাস্টার সাইফুলের নাম আপনি শােনেন নি? যার নাম কুংফু জগতে বিখ্যাত। আমি ওনার নাম অনেক শুনেছি। কিন্তু চোখে কোনাে দিন দেখি নি। আজ দেখলাম। সত্যি ওনাকে দেখলে কিন্তু সে রকম বিখ্যাত লােক বলে বিশ্বাস হয় না।

ছেলেটা বলল, আমিও ওনার নাম শুনেছি, কিন্তু দেখি নি। আর উনিই যে তিনি, তা আপনি বুঝলেন কি করে? নকীব বলল, দেখলেন না, প্রতিপক্ষের আক্রমণ কত সহজে ব্যর্থ করে কি ভাবে তাকে কুপােকাত করে ফেললেন।

ঐ যে ছেলেটা ঘুসি মারতে গিয়েছিল, তাকেও আমি চিনি। ওনার নাম আমিন । সেরা ব্যায়ামবীর। উনি যেখানে ব্যায়াম করেন, আমিও সেখানে কিছু দিন হল প্রাকটিস করছি। ছেলেটা বলল, আপনার কথা হয়তো ঠিক।

পরের দিন নকীব যখন আমিনকে সাইফুলের কথা বলছিল তখন ঝর্ণা সেখানে ছিল। শুনে সে বেশ অবাক না হয়ে পারে নি। পরে আমিনকে এক সময় বলল, তুমি সাইফুলের ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামিও না।

কথাটা শুনে আমিনের মনে অনেক প্রশ্ন এসে ভীড় করল। সেগুলােকে প্রশ্রয় না দিয়ে বলল, গ্রামের চেনা জানা ছেলে। তাই হয়তাে তােমাকে বাদাম খাওয়াতে চেয়েছিল। তাতে তুমি অত রেগে গিয়েছিলে কেন?

ঝর্ণা বলল, তাই বলে আমি তার কাছ থেকে খাব? ও খুব নিচু বংশের ছেলে। ওর বাবা আমাদের ক্ষেতে কামলার কাজ করে। বাদ দাও ওর কথা ।

আমিনের বাবা হঠাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেলেন। বাবার ব্যবসা ও সংসারের হাল আমিনকে ধরতে হল। তিন ভাইয়ের মধ্যে আমিন বড়। ছােট দুজনের একজন ইন্টারমিডিয়েট পড়ে। আর অন্যজন ক্লাস সেভেনে। তাই বাধ্য হয়ে লেখাপড়া বন্ধ করে সবকিছু দেখতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে ভার্সিটিতে এসে ঝর্ণার সঙ্গে দেখা করে ।

আমিন বাবার ব্যবসাটা বড় করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগল। কিন্তু ব্যবসার প্রগ্রেস করতে হলে প্রচুর টাকার দরকার। বড় বড় মার্চেন্ট অফিসের টেণ্ডার ধরতে হলে পার্টি দিতে হয়। পার্টি দিয়ে কাজ পেতে হলে প্রচুর টাকার সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরী ললনা দরকার । আমিন সে সব পাবে কোথায়। কয়েক জায়গায় টেণ্ডার না পেয়ে তার মন খারাপ হয়ে গেল। কি করে এই প্রবলেম সলভ করা যায়, সেই কথা একদিন শুয়ে শুয়ে চিন্তা করছিল।

হঠাৎ ঝর্ণার কথা মনে পড়তে তার মন বলে উঠল, একে দিয়ে তুমি তােমার প্রবলেম সলভ করতে পারবে এবং একে একে উন্নতির সােপান অতিক্রম করে তােমার মনের বাসনা পূরণ করতে পারবে। কথাটা তার খুব পছন্দ হল। পরের দিন ভার্সিটিতে গিয়ে আমিন ঝর্ণার সঙ্গে দেখা করে বিয়ের প্রস্তাব দিল।

ঝর্ণা বিয়ের কথা শুনে মনে মনে খুব খুশী হল। কিন্তু রাজি হল না। বলল, এত তাড়াহুড়াে করছ কেন? আগে পরীক্ষা দিয়ে নিই, তারপর দেখা যাবে।

আমিন বলল, বিয়ের পরও তুমি পড়াশােনা করতে পারবে। বাবা হঠাৎ মারা যাওয়ার পর আমাকে তার ব্যবসা চালাতে হচ্ছে। মায়ের শরীর ভেঙ্গে পড়েছে। মা বলছে, এবার একটা বৌ এনে দে। আমি আর তােদের সংসারে ঝামেলা বইতে পারছি না। তাের বাবা বৌ দেখে যেতে পারল না। আমার শরীরের অবস্থাও তেমন ভালাে না। কবে কি হবে জানি না। মরার আগে আমিও দেখে মরব না? মায়ের কথাটা সে নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য মিথ্যা করে বানিয়ে বলল ।

ঝর্ণা তবু প্রথম দিকে রাজি হল না। বলল, তােমাকে তাে আগে বলেছি, আমার বাবা ভীষণ কড়া লােক । সারা রংপুরে তার খুব নাম ডাক। সে কি এখন আমার বিয়ে দিতে রাজি হবে? তা ছাড়া তাকে এ ব্যাপারে কে বলবে?

ঝর্ণার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর আমিন তাদের বাড়ির সব খবর নিয়ে তার সঙ্গে ভালবাসা করেছে। তার বাবার অবস্থা খুব ভালাে। তিন ভাইয়ের-এক বােন। এক ভাই আবার আমেরিকায় থাকে। ঝর্ণাকে বিয়ে করতে পারলে শ্বশুরের কাছ থেকে অনেক টাকা পয়সা পাওয়া যাবে। তখন আর ব্যবসার উন্নতির পথে কোনাে বাধা থাকবে না।
তাই তাড়াতাড়ি বিয়ে করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। ঝর্ণার কথা শুনে বলল, তুমি অত কিছু চিন্তা করছ কেন? আমরা কোট ম্যারেজ করার পর তােমার বাবা মাকে জানাব। প্রথম প্রথম রাগারাগি করলেও পরে মেনে নেবেন।

মায়ের কথা ভেবে তাড়াতাড়ি করছি, নচেৎ তােমার কথামতাে তাই করতাম। তাকে চুপ করে থাকতে দেখে আবার বলল, তুমি কি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছ না? বিয়ের কথা শুনে বাবা কি করবেন, ঝর্ণা এতক্ষণ সেকথা চিন্তা করছিল।

আমিনের কথা শুনে বলল, বিশ্বাস করব না কেন? ভাবছি বাবার কথা ।

আমিন বলল, ভাবনাটা আমার উপর ছেড়ে দাও। আমি যেমন করে হােক ম্যানেজ করব। তােমাকে দু’একদিনের মধ্যে কোর্ট ম্যারেজ করে ঘরে তুলতে চাই। তাতে তুমি রাজি আছ কিনা বল?

ঝর্ণার তখন সাইফুলের কথা মনে পড়ল। আমিন ভার্সিটিতে পড়াশােনা বন্ধ করার পর সাইফুল তার কাছাকাছি ঘােরাঘুরি করে। তবে কোনাে দিন কথা বলে নি। সাইফুলকে দেখলে ঝর্ণার আগে সব সময় রাগ ও ঘৃণা হত। সেদিনের ঘটনার পর সেই সঙ্গে ভয়ও করে। সাইফুলকে জব্দ করার জন্য বলল, বেশ আমি রাজি। তবে ফাইন্যাল পরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত বাবাকে জানান চলবে না।

Leave a Comment