Golperjogot

Golperjogot

বাংলা প্রেমের গল্প – রাগী স্যার যখন ডেভিল হাসবেন্ড পর্ব 17

আফরিন আনমনে হাঁটছে হঠাৎ সে কারো সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নিতেই কেউ একজন তাকে ধরে ফেলে।

আফরিন : আরে ভাবি তুমি?
নিলিমা : দেখে শুনে হাঁটা চলা কর এখনি তো পড়ে যেতি।
আফরিন : আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি এখানে কেনো?
নিলিমা : তোর ভাইয়া আমাদের সবাইকে ঘুরতে নিয়ে আসছে।
আফরিন : বাহ বাহ ভালোই।
নিলিমা : তুই এখানে কেনো? হানিমুনে এসেছিস বুঝি।(একটু মজা করে বললো)

এই কথা শুনে আফরিনের মুখ ফেখাসে হয়ে গেলো।

নিলিমা : কি হলো তোকে এরকম দেখাচ্ছে কেনো?

আফরিন আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না নিলিমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।

নিলিমা কিছু বুঝতে পারছে না। নিলিমাকে চেয়ারে বসিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে বললো,

নিলিমা : কি হয়েছে এইবার সব খুলে বল আমাকে।

আফরিন সেই দিনের সব ঘটনা বলে।

নিলিমা : ও তোকে আপন করে নিয়েছে এটা তো রাফির স্বামী হিসেবে অধিকার তাই না।
আফরিন : ও আমাকে ভালোবাসে না ও আরেকটা মেয়েকে ভালোবাসে।
নিলিমা : কিহ?

আফরিন : সে একটা মেয়েকে ভালোবাসে আমার জন্যই সেই মেয়েকে বিয়ে করতে পারছে না।

নিলিমা : তোর হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে।
আফরিন : আমার কোনো ভুল হচ্ছে না।

হঠাৎ কেউ একজন পেছন থেকে এসে বললো,

Someone : হুম তোমার ভুল হচ্ছে

আফরিন পেছনে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে।

আফরিন : আপনি কে?
Someone : গত পরশু তুমি যে মেয়ের জন্য রাফি কে ভুল বুঝেছিলে আমি সেই মেয়ে। আমার নাম রুপা

আফরিন : আমি ভুল বুঝিনি যা বুঝার আমি খুব ভালো করেই বুঝেছি।
রুপা : আমি রাফির বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার বিয়ে হয়ে‌ গেছে ১ বছর আগে।
আফরিন : তাহলে সেদিন রাফিকে I love you বলতে বলেছিলে কেনো?
রুপা : হে বলেছিলাম

আফরিন : তোমার তো বিয়ে হয়ে গেছে আর রাফিরও বিয়ে হয়ে গেছে তাহলে তুমি কেনো ওকে I love you বলতে বলেছো। তোমরা নিশ্চয়ই দুজন দুজনকে ভালোবাসো।

রুপা : আগে আমার পুরো কথা শুনো তারপর বলো। রাফিকে সেইদিন I love you বলতে বলেছিলাম। তবে সেইটা আমাকে না তোমাকে।

আফরিন : মানে?

রুপা : তোমাকে খুব ভালোবাসে। তোমাকে কলেজে প্রথম দেখেই ভালোবেসে ফেলেছিলো। যখনই তার মনের কথা বলতে গেছে তখনই কোনো না কোনো সমস্যা হয়েছে। এখন যখন সব ঠিক আছে তখন তার ভালোবাসার কথা বলতে চাইছিলো। তবে সাহস পাচ্ছিলো না। তাই আমি ওকে গাইড করছিলাম যাতে তোমাকে সে প্রোপোজ করতে পারে।

আফরিন দপ করে চেয়ারে বসে পরে। আর কান্না করতে থাকে।

নিলিমা : আমি বলেছিলাম না তোর বুঝতে ভুল হয়েছে। আমি জানি তুইও রাফিকে খুব ভালোবাসিস। তুই রাফিকে হারাতে চাস না তাই রাফিকে এতো সন্দেহ করিস। কিন্তু একটা সম্পর্কে শুধু সন্দেহ থাকলেই চলে না বিশ্বাসও থাকতে হয়।

রুপা : রাফি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে তাই সে তোমার সামনে আসতে পারছে না। আমাকে তোমার সব ভুল ভাঙানোর জন্য পাঠিয়েছে।

আফরিন : রাফি এখন কোথায় আমি ওর কাছে যাবো।
রুপা : ওর নাকি কি একটা কাজ আছে রাতে আসবে।
নিলিমা : রাফি আসার পর যদি ঝগড়া করিস তাহলে তোর খবর আছে।

আফরিন মৃদু হাসলো।

রুপা : তাহলে আমি আসি।
আফরিন : সরি রুপা আমি তোমাকে নিয়ে অনেক খারাপ খারাপ কথা বলেছি তুমি আমাকে মাফ করে দাও।
রুপা : আরে মাফ চাইছো কেনো? আমি যদি তোমার জায়গায় থাকতাম তাহলে আমিও তাই করতাম।

আফরিন : একদিন আমাদের বাসায় এসো।
রুপা : অবশ্যই আসবো। তাহলে এখন তাই। Bye
আফরিন : Bye
নিলিমা : Bye

আফরিন গালে হাত দিয়ে বসে আছে।

নিলিমা : কিরে কি ভাবছিস?
আফরিন : আচ্ছা রাফি আমাকে এতো ভালোবাসে সেইটা কি আমাকে বলতে পারতো না?
নিলিমা : ছেলেরা এরকমই। তোর ভাই আমার পিছনে দুই বছর ঘুরছে তাও একবারও মনের কথা বলে নাই‌।

আফরিন : কিন্তু এখন তো খুব ভালোবাসে।(একটু মজা করে)
নিলিমা : কি মেয়েরে বাবা কিছুক্ষণ আগে কান্নাকাটি করে ভাসিয়ে দিচ্ছিলো এখন আমার সাথে ফাজলামি করছে।

আফরিন হাসতে থাকে। নিলিমা ওঠে রুমে চলে যায়। আফরিন একা একা বসে গতকাল রাতের কথা ভাবছে। কাল রাতে বজ্রপাতের সময় রাফির সাথে কাটানোর সব কথা মনে পড়ছে। গত পরশু দিনের কথা মনে পড়তেই সে হাত দিয়ে লজ্জায় মুখ ডেকে গেলে।

সারাদিন আফরিন রাফির অপেক্ষায় ছিলো। ফোন অফ বলছিলো। ফোন অফ দেখে আফরিন খুবই চিন্তা করছিলো। অপেক্ষা করতে করতে রাত হয়ে যায়।

কিছুক্ষণ একটা কল আসলো। আফরিন ব্যাকুল হয়ে কল রিসিভ করে বললো,

আফরিন : কোথায় আপনি আপনার ফোন অফ ছিলো কেনো?
ফোনের অপর পাশ থেকে : আমি , হাসপাল থেকে বলছি। মিস্টার রাফি এক্সিডেন্ট করেছে। আপনি তাড়াতাড়ি চলে আসুন।

আফরিনের পুরো পৃথিবী জেনো থমকে গেলো। হাত থেকে ফোন পরে যায়। তাড়াতাড়ি দৌড়ে হোটেল থেকে বের হয়ে যায়। একটা ট্যাক্সি নিয়ে হাসপাতালে চলে যায়।

হাসপাতালে গিয়ে রাফিকে এদিক ওদিক খুঁজতে থাকে। একজন নার্সকে জিজ্ঞেস করে মিস্টার রাফি কোন কেবিনে আছে। নার্স দেখিয়ে দেয়। আফরিন দেখে ভেতরে অপারেশন চলছে।

আফরিন দরজার সামনে ঘুরাঘুরি করছে। ডাক্তার বেড়িয়ে আসতেই জিজ্ঞেস করে,

আফরিন : ডাক্তার আমার রাফি কোথায়। ও কেমন আছে।
ডাক্তার : অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে। কিন্তু ওনার একটু রেস্টের দরকার।
আফরিন : আমি কি ওনার সাথে দেখা করতে পারি।
ডাক্তার : কেবিনে শিফট করার পর দেখা করতে পারবেন কিন্তু এখন না।

রাফি কে কিছুক্ষণ পর একটা কেবিনে শিফট করা হয়। রাফি এক্সিডেন্ট করেছে এইটা আফরিন ছাড়া আর কেউ জানে না। আফরিন ইচ্ছে করে কাউকে জানায়নি। সবাই জানতে পারলে টেনশন করবে।

রাফিকে কেবিনে শিফট করার পর আফরিন কেবিনে প্রবেশ করে। দরজায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ রাফির দিকে তাকিয়ে আছে।

রাফির এখনো জ্ঞান ফেরেনি। হাতে পায়ে মাথায় সব জায়গায় বেন্ডেজ। আফরিনের চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পড়ছে। সে আস্তে আস্তে রাফির কাছে যায়। রাফির হাতে হাত রেখে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদতে শুরু করে। কাঁদতে কাঁদতে কখন সে ঘুমিয়ে পড়ে বুঝতে পারে না।

খুব সকালে রাফির জ্ঞান ফিরে। নড়াচড়া করতে চাইলে শরীরে ব্যাথা অনুভব করে। হাতের দিকে লক্ষ্য করতেই দেখে আফরিন রাফির একটা হাত খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে। হাত ধরেই ঘুমিয়ে পড়েছে।

রাফি মুচকি একটা হাসি দেয়। অন্য হাত দিয়ে আফরিনের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

মাথায় কারো হাত বুলানো অনুভব হতেই আফরিনের ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম ভেঙে যেতেই রাফির জ্ঞান ফিরতে দেখে বেকুল হয়ে ওঠে।

আফরিন : স্যার আপনি ঠিক আছেন তো? এখনো কি ব্যাথা করছে? আপনি কিভাবে এক্সিডেন্ট করলেন? গাড়ি কি দেখে শুনে চালাতে পারবেন না?

রাফি : আমাকে কি শুধু বকাঝকাই করবা?দেখো না আমি কতো অসুস্থ।
আফরিন : I’m sorry. এর পর থেকে দেখে শুনে গাড়ি চালাবেন।
রাফি : জ্বী মেম

আফরিন : আপনি একটু অপেক্ষা করুন আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।

রাফি : আরে দাঁড়াও।
আফরিন : কি?
রাফি : এতো সকালে কিছু খাবো না।
আফরিন : তা বললে হবে না। আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।

আফরিন চলে যায়। কিছুক্ষণ পর খাবার নিয়ে আসে। নিজ হাতে রাফিকে খাবার খাইয়ে দেয়। রাফি প্রথমে খেতে না চাইলেও আফরিনের জোড়াজোড়িতে খেয়ে নেয়।

খাওয়ার কিছুক্ষণ পর ডাক্তার আসে। রাফিকে চেকআপ করে।

রাফি : আমি যাবো কখন?
ডাক্তার : এখন আপনি যেতে পারবেন না। কয়েকদিন আপনাকে হাসপাতালে থাকতে হবে।
আফরিন : বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে না?

ডাক্তার : নিয়ে গেলে অনেক খেয়াল রাখতে হবে রুগীর। তারচেয়ে ভালো কয়েকদিন হাসপাতালে থাকুন।

আফরিন : ওনার যা খেয়াল রাখতে হয় আমি রাখবো।
ডাক্তার : তাহলে তো আর কোনো সমস্যা নেই। কাল নিয়ে যেতে পারেন।
আফরিন : ধন্যবাদ ডাক্তার

(তারা এখানে সিংগাপুরের ভাষায় কথা বলছে।কারণ তারা সিংগাপুরে ঘুরতে এসেছে মানে হানিমুনে এসেছে।)

পরদিন সকালে রাফি কে রিলিজ করে দেয়া হয়। তারা আর সিংগাপুরে থাকে না সোজা বাসায় চলে আসে। আসতে আসতে দুপুর হয়ে যায়। এখনো কেউ জানে না রাফির এক্সিডেন্টের কথা।

বাসায় ফিরলে রাফির আম্মু রাফির এই অবস্থা দেখে কান্না করে দেয়।

রাফির আম্মু : বাবা তোর এই অবস্থা হয়েছে কিভাবে?

রাফি : গাড়ি চালাচ্ছিলাম তারপর হঠাৎ সামনে থেকে একটা গাড়ি এসে ধাক্কা মারে। ঐ গাড়ির কন্ট্রোল হারিয়ে গেছিলো। মানে ব্রেক ফেইল করছিলো।

রাফির আম্মু : বউ মা রাফিকে রুমে নিয়ে যাও। আমি রাফির জন্য খাবারের ব্যাবস্থা করছি।
আফরিন : না মা আমি আসছি আমি এসে ওনার জন্য খাবার তৈরি করবো‌। আপনি এমনি অসুস্থ আপনার রান্না ঘরে যেতে হবে না।

আফরিন রাফি কে রুমে নিয়ে যায়। রাফি কে খাটে শুইয়ে দিয়ে নিচে এসে রাফির জন্য খাবার নিয়ে আসে। খাবার খাইয়ে দেয়।

তারপর ফ্রেশ হয়ে আফরিন রাতের জন্য রান্না বসায়। মাকে খাইয়ে দিয়ে রাফির জন্য খাবার নিয়ে যায়।

আফরিন : খাবার চলে এসেছে।
রাফি : তুমি খেয়েছো?
আফরিন : আপনি খান তারপর আমি খাবো।
রাফি : দুপুরে খেয়েছিলা?
আফরিন : দূর আপনি এতো প্রশ্ন করেন কেনো।

আফরিন খাবার নিয়ে রাফির মুখের সামনে ধরে।

আফরিন : নিন খান
রাফি : আগে তুমি খাও
আফরিন : কিন্তু
রাফি : কোনো কিন্তু না খাও বলছি মানে খাও।

তারপর রাফি আর আফরিন দুইজন মিলে খাওয়া দাওয়া শেষ করে। আফরিন থালা বাসন গুছিয়ে রুমে এসে দেখে রাফি উঠার চেষ্টা করছে।

আফরিন : কি হলো উঠছেন কেনো? কিছু চাই আপনার?
রাফি : না এমনি
আফরিন : আহা বলেন না
রাফি : ওয়াশ রুমে যাবো।
আফরিন : ও এই কথা। আসুন আমি নিয়ে যাচ্ছি।

আফরিন রাফির এক হাত কাঁধের উপর নিয়ে ধরে ওয়াশ রুমের সামনে নিয়ে যায়।

রাফি : তুমি এখানে দাঁড়াও।

রাফি ভেতরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর বাইরে আসে। দরজা খুলে পড়ে যেতে নিতেই আফরিন ধরে ফেলে। তারপর খাটে নিয়ে শুইয়ে দেয়।

Leave a Comment