Golperjogot

Golperjogot

শেষ ঠিকানা তুমি – প্রেমের গল্প পর্ব 14 | Bangla Golpo

Shes Thikana Tumi

Riya Singh { Part 14 }

বাবা! তোর দেখছি আজকাল ঘন ঘন পছন্দ বদলাচ্ছে, কি ব্যাপার বলতো ? খোলসা করে বল দেখি?

অনুর কথা শুনে অরিন্দম বললো,

সে অনেক কিছুই সময়ের সাথে বদলায়,আমিও ফেলেছি সেগুলো বদলে। তুই কেন এরকম গোয়েন্দাদের মতো নজরদারি করিস? বড় হই তো সবসময় এরকম পিছনে লাগিস কেন রে?

এই দাদা বলে মাথা কিনে নিয়েছিস নাকি! বেশ করবো আরো জ্বালাবো কি করবি? বলতে না বলতেই অরিন্দম অনুর চুল ধরে টেনে দিলো।একমনে দুই ভাই বোন এর খুনসুটি দেখছিল অয়ন্তিকা। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে হবার সুবাদে ওর এসবের অভিজ্ঞতা হয়নি,বাবার বা মায়ের আত্মীয়ের বাচ্চা থাকলেও সেরকম টান কখনো অনুভব করেনি যতটা অনু কে দেখলে আপন মনে হয় ওর। এদের দেখলে মনে হয় ভাই বোনের সম্পর্কটা বোধহয় এমন সুন্দর ই হয়। অয়ন্তিকার মনে হয় ভাগ্যিস ওর একটা ভাই বা বোন থাকতো তাহলে খুনসুটি গুলো ওর সাথে ঘটতো।

দি দেখো না চুল টানছে, কিছু বলো না ওকে।

অনুর কথা শুনে অয়ন্তিকার বাস্তবে হুঁশ ফিরল। ও শুধু একটু মুচকি হাসলো আর দুজনের দিকে তাকিয়ে বললো,

আমি বাপু ভাইবোনের মধ্যে নেই যা মিটমাট করা যা করার নিজেরাই মেটাও , তোমাদের ভিতরের ব্যাপার-স্যাপার এ আমি নাক গলাচ্ছি না।

অনু অয়ন্তিকার কথাবার্তা শুনে মুখ ফুলিয়ে বললো তুমিও পালটি খাচ্ছো শেষে দাদার বন্ধু হয়ে দাদার দলেই নাম লেখাচ্ছে তাই না? যাও কারোর সাথে কথা নেই আমার।সব পচা লোকজন।

থাক থাক আমার নামে আর‌ বদনাম করতে হবে না তোকে, সেই পিছনে লাগার জন্য আমাকেই টার্গেট করিস সবসময়।(অরিন্দম)

অরিন্দম কেও অনুর সাথে বাচ্চাদের মত আচরন করতে দেখে অয়ন্তিকা ভাবল এই মানুষটার কতগুলো রূপ, এক সময় এক রকম কখনো মনে হয় বদমেজাজী কখনো বোনের সাথে বাচ্চা হয়ে যায়।

দি তাহলে আজ বানবে স্পেশাল বিরিয়ানি? আমি কিন্তু আজ ইচ্ছে হয়েছে খাবো তোমার হাতের বিরিয়ানি।

অনুর কথায় ওর গাল দুটো টিপে দিয়ে আদুরে গলায় অয়ন্তিকা বললো,

যা বলবি তাই কিন্তু একটু হেল্প করে দিলে জলদি জলদি হবে রান্নাটা।

তাহলে দাদাকে নিয়ে যাও,আমরা গল্প করি ও থাক নয়তো রনি আছে যাও।ও কাজের ছেলে খুব হেল্পফুল।

অনুকে থামিয়ে দিয়ে অরিন্দম বললো,

থাক তোরা গল্প কর আমিই যাচ্ছি তো না বলিনি যে।

অনু মুখ টিপে হেসে বললো,

আচ্ছা যা তাহলে। আমার কি? কেউ একজন গেলেই হলো।

তাহলে আমিই যাই। ভালোর জন্য ই বললাম তো।(অরিন্দম)

অরিন্দম অয়ন্তিকা ছাদ থেকে নেমে যাওয়ার পর অনু একচোট সমানে হেসে নিলো।এদিকে রান্নাঘরে আসার পর অরিন্দম কে অয়ন্তিকা বললো,

রামুকাকা কে ডেকে দাও বরং সাহায্য করতে পারবে,তুমি তো বোধহয় রান্নাঘরে ই আসোনি কখনো। কিভাবে সাহায্য করবে?

এ এমন কি কাজ? চেষ্টা করলেই হবে।

ঠিক আছে তুমি তাহলে স্যালাড গুলো কাটো আমি চাল টা ভিজিয়ে দিয়েছি বাকি সব উপকরণ গুলো রেডি করে নিচ্ছি।

Golperjogot Status

কিছুক্ষণ পর সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে এসে দেখলো অরিন্দম এর চোখ থেকে টপ টপ করে জল পড়ছে আর না টানছে। এদিকে শশাগুলো ট্যারা বাঁকা হয়েছে আর পিঁয়াজের অবস্থা আর বলা লাগবেনা।এসব দেখে চরম হাসি পাচ্ছে অয়ন্তিকার কিন্তু মায়াও হচ্ছে ওর মুখটা দেখে।

একি করেছো? সরো দেখি আমি সব করে নিচ্ছি, চুপচাপ ওখানে বসো নাহয় দাঁড়িয়ে দেখো কিভাবে কি করতে হবে।

বলেই অয়ন্তিকা নিজেই সবটা ঠিকঠাক করে নিল।সবটা করার পর দেখলো অরিন্দমের মুখটা ফ্যাকাশে,কি হয়েছে বলে এগিয়ে হাতটা ধরতেই আহ: বলেই ছাড়িয়ে নিল অরিন্দম হাতটা আর লুকিয়ে ফেললো। অয়ন্তিকা পিছন থেকে অরিন্দমের হাতটা টেনে দেখলো আঙুলের কাছটা অল্প কেটে গেছে।

ইশশ্ এতোটা কেটে গেছে, কিরকম চেপে গেল দেখো এদিকে ব্যাথা করছে সেটা তো লুকোতে পারছে না। বাচ্চাদের মতো যতো জেদ এদিকে তো কাজ বাড়িয়ে বিপদ এনে হাজির করবে বলেই অয়ন্তিকা সমানে গজগজ করছিল।

অরিন্দম একমনে অয়ন্তিকা কে লক্ষ্য করছিল, ওর কেমন অয়ন্তিকার কাছাকাছি এসে বকাটা খুব ভালো লাগলো। মা থাকতে এরকম করতো বহুদিন পরে এরকম কেউ যত্ন করছিল। এই দিনগুলো খুব মিস করছিলো অরিন্দম,আজ যেন না চাইতেও পেয়ে মন ভালো হয়ে গেল।

অয়ন্তিকা অরিন্দমের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো ও একমনে ওকে দেখছে, এবার ওর একটু অস্বস্তি হলো। এইভাবে ওর খেয়াল নেই বকাবকি করেও দিলো আবার হাসছে এরকম ব্যাথা পেয়ে কে এমন করে?

পাগল হয়ে গেছো নাকি? এইরকম হাত কেটে গেছে কে হি হি করে হাসে?

অয়ন্তিকার কথা শুনে অরিন্দম অবাক হয়ে বললো,

এমনিই তোমাকে দেখে ভালো লাগছিল।

অয়ন্তিকা অরিন্দমের কথা শুনে ভালো করে ওর মুখটা দেখে বললো,

কেন আমার মুখে ঠাকুর দেখা দিয়েছে নাকি?

অরিন্দম ভাবলো অয়ন্তিকা ভালো ই ক্ষেপে আছে,তাই কোনরকমে ওর মুখের সামনে পড়া চুলগুলো কানের পাশে সরিয়ে দিলো। অয়ন্তিকা তাকালে ওকে বললো,

সামনে পড়ছিল তাই সরিয়ে দিলাম।

অরিন্দম এর এরকম বাচ্চার মতো সরল কথা বলা দেখে অয়ন্তিকার রাগ টা কমে গেলেও মুখটা গম্ভীর করে রাখলো আর‌ বললো হুঁ।

এরপরে রান্না শেষ করে সবার খাওয়ার সময় খেতে বসলেও অরিন্দম চুপচাপ বসে আছে দেখে অনু বললো,

কি রে দাদা খা,রান্না তো সুন্দর হয়েছে।

অরিন্দম হবে কথা বলবে তার আগেই অয়ন্তিকা বললো, ওর হাতটা কেটে গেছে তাই।

ওহ কখন কাটলো? প্রথমবার কাজ করতে গিয়ে হাত কেটে বসে আছিস। তুই কিভাবে খাবি? চামচ ও ধরতে পারবি না বোধহয়।রামু কাকা কে বলবো খাইয়ে দিতে নাকি!

না না আমি দেখছি বলেও অরিন্দম অনেক ক্ষণ চেষ্টা করেও যখন মুখে কিছু তুলতে পারলো না তখনই অয়ন্তিকা কিছুটা বিরিয়ানি হাতে নিয়ে ওকে হা করতে বললো,ওর এরকম গালে তুলে খাইয়ে দেওয়া দেখে অরিন্দমের সত্যি গালটা হা হয়ে গেল।

কি হলো খাও? আরে পুরোটা খেতে হবে নাকি!

বলে অয়ন্তিকা খাওয়ানোর সময় অনু আর রনি গোল গোল চোখ করে ওদের দিকে তাকিয়ে দেখলো। এরপর বাড়ি ফেরার সময় রনি অয়ন্তিকা কে পৌঁছে দিলো, অরিন্দম আজ হাতের এরকম অবস্থা দেখে রাগ না করেই ছেড়ে দিলো।

রাতে অরিন্দম অয়ন্তিকা কে ফোন করার পর জিজ্ঞেস করলো ঠিকঠাক পৌঁছে গেছে কিনা? এর সাথে টুকটাক কথা বার্তা আজকের একটু বেশি হলো। এদিকে অনু রনির সাথে কথাবার্তা বলে খুশিমনে ফোন রেখে দিলো।

এরমধ্যে অনু একদিন অরিন্দম কে বললো,জানিস দাদা রনি বলছিল ওর মা বাবাকে বলবে অয়ন্তিকা দির বাড়ি যেতে। আসলে ওর দিকে পছন্দ হয়েছে বাড়িতে জানিয়েছে, তাই আর কি ভালো মানাবে বল,

Related Story

অরিন্দম কিছুক্ষণ গুম মেরে বসেও উত্তর না দিয়ে উঠে গেল।অনু তখন ও বলে যাচ্ছে দিও রাজি বুঝলি নয়তো রনিকে না করে দিতো। এদিকে অরিন্দমের মুখটা আরো রাগেতে লাল হয়ে গেল, তাই অফিসের মিটিং টা পোস্ট পন্ড করে অয়ন্তিকা কে ফোন করে বললো তুমি কোথায়?

কেন? আমি হসপিটালে। (অয়ন্তিকা)

এক্ষুনি ঠিকানা টা ম্যাসেজ করছি চলে আসো।(অরিন্দম)

কিন্তু!(অয়ন্তিকা)

আসতে বলেছি আসবে নয়তো তুলে আনবো আশা করি সেটা ভালো হবেনা?(অরিন্দম)

অয়ন্তিকা বুঝলো অরিন্দম রেগে আছে তাই কোনরকমে ওকে শান্ত করতে বললো,আসছি আমি। তুমি এখানে এসো না।

অয়ন্তিকা অরিন্দমের কথামতো গিয়ে দেখলো সামনে মন্দির একটা,খুব পুরনো কিন্তু বেশ বড় মতো। চারপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো অরিন্দম এখানে কেন ডাকলো?

Click Here For Next :– চলবে

Writer :- Riya Singh

Leave a Comment