Golperjogot

Golperjogot

শেষ ঠিকানা তুমি – প্রেমের গল্প পর্ব 17 | Bangla Golpo

Shes Thikana Tumi

Riya Singh { Part 17 }

আচ্ছা ঠিক আছে পাঠিয়ে দাও দেখি বলে নিজেই বেরোবে বলে তোড়জোড় করে উঠতে যাবে দেখলো অরিন্দম ঢুকছে। ওকে দেখে অয়ন্তিকার একটু অদ্ভুত লাগলো,

তুমি? তুমি এখানে কি করছো? তোমার তো এখানে আসার কথা নয় !হঠাৎ এই সময়ে তুমি কেন এখানে এসেছো?

সকালে কি বলেছিলাম ভুলে গেছো আর মনে করে দেখো নাকি আমি আরেকবার মনে করিয়ে দেবো তোমাকে? (অরিন্দম)

বলছিলে আমাকে আনতে আসবে বলেছিল কিন্তু সেটা এমন কোনো ইম্পরট্যান্ট কথা নয় যে আমার মনে থাকবে আর আমি আমার নিজের কাজ নিজে করতে পছন্দ করি। (অয়ন্তিকা)

আমিও জানি তুমি তোমার নিজের কাজ করতে খুবই পছন্দ করো তাই জন্য তো আমার এখন মনে হয়েছে আমার নিজের কাজগুলো করা উচিত বাবা নিজে করা কাজের মধ্যেই তোমাকে আনতে আসা টাও পড়ে বুঝলে?(অরিন্দম)

Short Story

ওয়েট ওয়েট তোমার কাজের মধ্যে কিভাবে আমি আসলাম?(অয়ন্তিকা)

কারণট তুমি জানো অয়ন্তিকা, তুমি মিস বসু থেকে মিসেস স্যানাল তিনমাস আগেই হয়ে গেছো আশা করি ভুলে যাওনি।(অরিন্দম)

কিন্তু… কিছু বলার আগেই অয়ন্তিকা কে থামিয়ে দিয়ে অরিন্দম বললো,

আপাতত ফেরার সময় কথাগুলো বলি,চলো দেখি।

অয়ন্তিকা আর সারা শব্দ করলো না চুপচাপ গাড়িতে বসে রইলো, কিছুক্ষণ পর একটা রেস্টুরেন্টে এসে যখন থামলো। অরিন্দম বললো,

আমার তো খিদে পেয়েছে তোমার ও নিশ্চিত পাওয়ার কথা।এটা ছোট হলেও বেশ সুন্দর রেস্টুরেন্ট তোমার ভালো লাগবে এসো। অয়ন্তিকা ওর পিছনে এসে এক কোণে একটা টেবিলে বসলো, সত্যি জায়গা সুন্দর সাধারণ অথচ।

তুমি কি খাবে বলো ? আমি অর্ডার করছি সেই মতোই (অরিন্দম)

আলাদা করে কিছু নয় এক রকম ই খাবো সেই বুঝে অর্ডার করো।

অয়ন্তিকার কথামতোই অরিন্দম খাবার অর্ডার দিলো, আর বললো,

আমি জানি আবার ও বলছি যা করেছি রাগ করা স্বাভাবিক কিন্তু আমি ঠিক এগুলো কমিয়ে দেবো চেষ্টা করছি কিন্তু তুমি অন্তত মুখ ফিরিয়ে থেকো না।

আমার পক্ষে সম্ভব নয় সময় লাগবে আগেই বলেছি তাও যে কেন জোর করো বুঝি না আমি।(অয়ন্তিকা)

সময় চলতে থাকে এই কটা মাসে অরিন্দম কম চেষ্টা করে নি অয়ন্তিকার মান অভিমান ভাঙ্গার। এমনকি ওর মা বাবাকে মানিয়ে নিয়েছে শুধু অয়ন্তিকা নিজে থেকে আসেনি। তাই অরিন্দম ঠিক করেছে ওদের বিয়ের একবছর পূর্ণ হওয়ার দিন ও ডিভোর্স পেপার আর ওর লন্ডন যাওয়ার কথাটা জানিয়ে চলে যাবে,সামনে থেকে হয়তো কষ্ট হবে তাই যেদিন যাবে সেদিন অনুর হাতে দিয়ে দেবে।

আজকেও অরিন্দম অফিসে থেকে গেছে কালকেই ওর ফ্লাইট। পাকাপাকি ভাবে লন্ডনের ব্রাঞ্চ টা ওই সামলাবে অবশ্য আগে ভেবেছিল যদি অয়ন্তিকা মেনে নিতো, ওখানে এমপ্লয়ী জয়েন করিয়ে ম্যানেজারকে বলে দেবে কিন্তু সেটাও হলো কোথায়? অয়ন্তিকা তো…

ফোন করে বাড়ি থেকে ওর যাবতীয় লাগেজটা নিয়ে নিল আর আজকে রাতটা এখানে থাকবে তারপর কাল সকালে লন্ডনের জন্য রওনা হয়ে যাবে। অয়ন্তিকার ফোনে ম্যাসেজ করে বলে দিয়েছে ডিভোর্সের কথা আপাতত ওর মুখোমুখি হয়ে এই কথাটা বলার সাহস নেই অরিন্দমের।ওর ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, সবাই দ্বিতীয় সুযোগ পায় ওকেও কি দেওয়া যেত না একবার নিজের দিকটা বলার। মানুষ জানি সুখী থাকতে চাই যদিও দূরে যাওয়া আছে সে ভালো থাকে তাহলে অরিন্দম সেটাই করবে আর কখনো ফিরে আসবে না ওখানেই একেবারে থেকে গিয়ে নিজের ভুলের দোষগুলো আজীবন ভোগ করবে।

সারাদিনের ক্লান্তিতে অয়ন্তিকার চোখদুটো বন্ধ হয়ে আসছে তাই খাবার না খেয়ে ও বিছানায় শুয়ে পড়লো। আজকেও অরিন্দম আসেনি মানে নিশ্চিত অফিসেই আছে ,কাল আসবে হয়তো ভেবে ঘুমিয়ে গেল।পরের দিন সকালে উঠেই অনু অয়ন্তিকা কে জিজ্ঞেস করলো,

দাদা লন্ডন চলে যাচ্ছে এই ব্যাপারে কি তুমি জানো কিছু? আমি আজ জানতে পারলাম আমাকে ও কিছু বলেনি।

অনুর কথা শুনে অয়ন্তিকার মুখটা এতো বড় হা হয়ে গেল, অরিন্দম লন্ডন কই ওকে তো বলেনি লাস্ট কদিন অরিন্দম চেষ্টা করলেও অয়ন্তিকা কোনরকম কথাবার্তা ওর সাথে বলেনি। শেষের দিকে অরিন্দম আর ওর সাথে কথা বলতে আসেনি ওর ইগনোর করা দেখে।তাই কোনরকম কিছু বলার ছিল না ওর কাছে তাই অনু কে বললো,

না রে কিছু বলেনি।

কিন্তু দি বলা তো উচিত তুমি ওর ওয়াইফ। কেন বলবে না ও তোমাকে? আই হোপ তোমাদের মধ্যে সব ঠিকঠাক হবে তাই না?

অনুর কথা শুনে মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে অয়ন্তিকা বললো,

না মানে…

এটা কি অস্বাভাবিক নয় দি? আমি বোন হিসেবে না জানলেও তুমি তার কাছের মানুষ হয়ে জানতে পারছো না সে কি ডিসিশনিনিচ্ছে তাহলে কি আমি ধরে নেবো তোমরা তোমাদের সবটা মিটিয়ে নাওনি?

অনুর কথা শুনে সত্যিই এবার অয়ন্তিকার খারাপ লাগছে,  একটা মানুষের অনবরত ওকে বোঝাতে চাওয়া সাথে মাফ চাওয়া টা কি খুব দোষের? যেখানে ওর বাবা মায়ের অনুমতি না নিয়ে বিয়ের জন্য ভুল শুধরে নেওয়ার সুযোগ থেকে শুরু করে মা বাবা কে মানিয়ে ওর জন্য একটানা সব করা।সবাই একটা সেকেন্ড চান্স ডিজার্ভ করে সেখানে অরিন্দমের ও পাওয়ার কথা।

অয়ন্তিকার মুখ দেখে অনুর খারাপ লাগলেও এখন ওকে অরিন্দম কে আটকাতে হবে।নয়তো এতো দূরত্ব এসে গেলে এদের ভিতরের সমস্যা মিটবে না।তাই অয়ন্তিকাকে বললো,

দাদার আরেকটু পরেই ফ্লাইট হয়তো এতোক্ষণে প্লেনেও উঠে পড়বে প্লিস চলো।না করো না তুমি কিন্তু সত্যি আফসোস করবে এরপর।

অয়ন্তিকা ও অনুর সাথে বেরিয়ে পড়লো, ও হয়তো আটকাতে পারবে না কিন্তু শেষ চেষ্টা করবে, এয়ারপোর্টে ওরা যখন পৌঁছালো। ততক্ষনে অরিন্দমের প্লেন উড়ে গেছে, একটু আগে এলেও হয়তো ও …

অনু অয়ন্তিকাকে বললো,

ঠিক করে বলোতো দি তোমাকে দাদা কিছু বলেনি? আমার যেন খটকা লাগছে মুখে না বললেও কিছু অন্তত ম্যাসেজ ! পেয়েছি দি তোমার ফোন কোথায়?

আমার কাছে,কেন?

অয়ন্তিকাকে কিছু বলতে না দিয়েই বললো, ফোনটা বের করে তো দেখো আগে।

অয়ন্তিক ফোনটা বের করে দেখল অরিন্দমের একটা ম্যাসেজ ও খুলে দেখলো,বেশ বড়সড় করে কিছু লেখা আছে। তারপর শেষ একটা ম্যাসেজে ওদের ডিভোর্স পেপার আর ওর লন্ডন যাওয়ার কথাটা।এটা দেখে ওর মাথা চাপড়াতে ইচ্ছে করলো,কেন আগে দেখলো না?

Related Story

দেখেছো দি আমি বলেছিলাম দাদা কিছু তো হিন্টস দিয়ে ই যাবে,আমাকে বলেনি যেহেতু ও চায়নি ভিতরের সমস্যা দেখে আমি কিছু জিগ্গেস করি তোমাকে তাই জন্য, এবার তো বোঝো আমার দাদা এতটা খারাপ কেউ নয়। প্লিস দি দাদা তো চেষ্টা করেছে এবার তুমি তো অন্তত বোঝো।

অনুর এইরকম জোরাজুরি দেখে অয়ন্তিকা বাড়িতে এলো আর চেম্বার এ সেদিন গেল না। ফিরে আসার কিছু পরে বাবা মায়ের সাথে কথা হলো, এতো দিন যে ওরা ভুল বুঝেছে সেটাও জানালো সাথে অরিন্দমের মতো ছেলে হয়না বলে ওকে আশীর্বাদ ও করলো।

অয়ন্তিকা সারাদিন শুয়ে বসে অরিন্দমের করা কাজগুলো মন দিয়ে ভাবতে শুরু করলো, ওর মনে আছে একদিন বাড়ি ফিরে দেখেছিল অরিন্দম ওর জন্য কিছু তৈরি করছে। কিন্তু ও খেয়ে কিছু বলেনি চুপচাপ উঠে চলে গেছিল। এরপরে ও বানালে জেনেও কিছু বলতো না কিন্তু এইরকম টুকটাক খেয়াল আগলে রাখতে পারা গুলো ও পছন্দ করতো যেটা এখন মিস করছে খুব। সত্যি মানুষ চোখের সামনে না থাকলে তার কদর বোঝা যায় না।যেটা এইমুহুর্তে অয়ন্তিকার কাছে খুব সত্যি অনেকটাই..

পরবর্তী পর্বের জন্য ক্লিক করুন :>> চলবে

Writer :- Riya Singh

Leave a Comment